আফিয়ার নামে সহিংসতা করবেন না -বোন ফওজিয়া সিদ্দিকীর আর্তি
পাকিস্তানের আলোচিত বন্দি আফিয়া সিদ্দিকীর
নামে কোন সহিংসতা চায় না তার পরিবার। সিএনএন-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ
কথা জানিয়েছেন আফিয়া সিদ্দিকীর বোন ফওজিয়া সিদ্দিকী। তিনি একই সঙ্গে আইসিস
জঙ্গিদের আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন আটক বন্দিদের ছেড়ে দেয়। ফওজিয়া
সিদ্দিকী বলেন, আমি আফিয়ার বোন। আমরা আফিয়ার পরিবার। আমরা একই সঙ্গে তার
মুখপাত্র হিসেবে কথা বলি। আমরা আফিয়ার নামে কোন সহিংসতা চাই না। আমাদের সব
সংগ্রাম এক ধরনের, তা হচ্ছে মহৎ, শান্তিপূর্ণ ও বৈধ। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে
নিউ ইয়র্কের একটি আদালত আফিয়া সিদ্দিকীকে ৭টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে।
এর মধ্যে রয়েছে হত্যাচেষ্টা ও মার্কিন কর্মকর্তাদের গুলি করার মতো অভিযোগ।
বর্তমানে টেক্সাসের একটি আদালতে ৮৬ বছরের সাজা খাটছেন আফিয়া। ২০০৮ সালে
তিনি আফগানিস্তানের গজনির গভর্নরের বাসভবনের বাইরে থেকে গ্রেপ্তার হন। তাকে
তখন বোমা, রাসায়নিক অস্ত্র, জৈব অস্ত্র ও রেডিওলজিক্যাল অস্ত্র তৈরির
ডকুমেন্ট বহন করার অভিযোগে আটক করা হয়। আফিয়ার বিরুদ্ধে কখনওই সন্ত্রাসে
জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল না। তবে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেপ্তারের
বহু আগে একবার আল কায়েদার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তার নাম তালিকাভুক্ত করেছিল।
২০০৪ সালে এফবিআই-এর ‘সতর্ক-তালিকা’য় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে তার
পরিবার সব সময় সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে তার কোন যোগসূত্রের ধারণা দৃঢ়ভাবে
অস্বীকার করে আসছে। ফওজিয়া বলেন, তার সঙ্গে আল কায়েদা বা অন্যান্য
সন্ত্রাসী সংগঠনের কোন সম্পর্ক ছিল না। তার বিরুদ্ধে এমনকি সন্ত্রাসবাদের
অভিযোগও নেই। কিন্তু সমপ্রতি তথাকথিত আইএস ডকুমেন্টে তার নাম এসেছে।
আইএস-এর হাতে শিরশ্ছেদ হওয়ার আগে মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফোলের পরিবারের
নিকট একটি চিঠি পাঠায় আইএস। সেখানে বলা হয়েছে, জেমস ফোলের মুক্তির জন্য
মার্কিন সরকারকে বহু প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সেখানে আফিয়া সিদ্দিকীর নামটা
ছিল। চিঠিতে লেখা ছিল, আমরা আমাদের বোন ড. আফিয়া সিদ্দিকীর মতো মুসলিম
বন্দিদের মুক্তির পরিবর্তে জেমস ফোলের মুক্তি দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম।
কিন্তু খুব দ্রুতই তোমরা প্রমাণ করে দিলে যে, আসলে তোমরা এটা নিয়ে উৎসাহী
নও। এর ফলে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, আফিয়া সিদ্দিকীর সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের
সম্পর্ক না থাকলে আইএস তার মুক্তি দাবি করলো কেন? এদিকে ফওজিয়া সিদ্দিকী
বলেছেন, তার বোনের নাম সন্ত্রাসীরা নিজেদের সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছে নিজেদের
বিশেষ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। তিনি বলেন, আইসিস, আফিয়া ব্রিগেড, যে কোন
ধরনের অপহরণকারী বা যে-ই আফিয়াকে দাবি করুক না কেন, তা সঠিক নয়। তিনি বলেন,
‘লেডি আল কায়েদা’, ‘গ্রে লেডি অব বাগ্রাম’- তার বোনকে মিডিয়ার দেয়া এসব
বিশেষণ তাকে অনেক কষ্ট দেয়। তার ভাষায়, যখন আমি এসব শুনি, যেমন- লেডি আল
কায়েদা, আমি আসলে আর একবারও উচ্চারণ করতে চাই না এসব। আপনি জানেন, এসব কতটা
কষ্ট দেয়। তিনি বলেন, আফিয়া একজন আইকন। তিনি কেবল এক নারীই নন, বরং চরম
দুর্দশাগ্রস্ত মুসলিম নারীদের সংহতি প্রকাশক এক আইকন। উল্লেখ্য, ফওজিয়া
নিজেও হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল থেকে প্রশিক্ষিত একজন নিউরোলজিস্ট। ২০০৩
সালে আফিয়া তিন সন্তান নিয়ে নিখেঁাঁজ হয়ে গেলে কতটা কষ্টে ছিল তার পরিবার
সেটিও উল্লেখ করেন ফওজিয়া। আফিয়ার নিউরোসায়েন্সে নিজের গবেষণা শেষ করে
ইসলামাবাদ পৌঁছার কথা ছিল। কিন্তু তিনি কখনই পৌঁছাননি। তার সবচেয়ে ছোট
সন্তানটির বয়স ছিল মাত্র ৬ মাস। ফওজিয়া বলেন, এটা অনেকটা এমন, কেউ দুনিয়া
থেকে পড়ে গেল মহাশূন্যে। আমি আপনাকে বলতে পারবো না, বোন সম্পর্কে কিছু না
জানতে পারাটা কতটা কষ্টের। কেউ মারা গেলে আপনি জানতে পারবেন। কিন্তু আফিয়ার
সম্পর্কে কোন কিছুই জানা ছিল না তখন। আফিয়াকে ঘিরে পাঁচ বছর ধরে গুজব
শোনার পর ২০০৮ সালে এসে তার পরিবার জানতে পারে আফিয়া মার্কিন কারাগারে
বন্দি। আইনজীবীরা দাবি করলেন, আফিয়া এফবিআইয়ের দুই বিশেষ এজেন্ট,
সেনাবাহিনীর এক ওয়ারেন্ট অফিসার ও ক্যাপ্টেনকে গুলি করেছেন। এরপর তাকে
পাল্টা গুলি চালায় ওয়ারেন্ট অফিসার। তার পরিবারের দাবি, ঘটনার এই অফিসিয়াল
সংস্করণ মিথ্যায় পরিপূর্ণ। ফওজিয়া বলেন, তিনি ছিলেন কারাগারে। সেখান থেকে
কি করে তিনি রাইফেল তুলে নিতে পারেন? ৬ জন সশস্ত্র প্রশিক্ষিত সৈন্যের মধ্য
থেকে একজন মহিলা কি করে এই কাজ করতে পারে? এদের মধ্যে এফবিআই-এর উচ্চ
প্রশিক্ষিত দুই বিশেষ এজেন্টও ছিল। এটার কোন ভিত্তিই নেই। ফওজিয়া বলেন, তার
বোন আসলে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’র বলি। তার ভাষায়, এটা অনেকটা এরকম
যে, মুসলিমদের বিচার ছাড়াই অপরাধী তকমা লাগিয়ে দেয়া হলো। নিজেদের নির্দোষ
প্রমাণের সুযোগটাও দেয়া হলো না। এই জিনিসটিই ঘটেছে আমার বোনের ক্ষেত্রে।
পাকিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে নিজের লব্ধ জ্ঞান প্রয়োগ করতে
চাওয়া আফিয়ার ব্যাপারে প্রচুর মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়ানো হয়েছে। তার পরিবার
একই সঙ্গে দাবি করেছে, ৯/১১ হামলার পরিকল্পনাকারী খালিদ শেখ মুহাম্মদের
সঙ্গে কখনওই বিয়ে হয়নি আফিয়ার। এদিকে হোয়াইট হাউসের প্রতি আফিয়ার মুক্তির
দাবিতে একটি অনলাইন পিটিশনে কয়েক সপ্তাহেই এক লাখেরও বেশি মানুষ সমর্থন
জানিয়ে স্বাক্ষর করেছেন। বর্তমানে তার পরিবার আফিয়ার মুক্তি দাবি করছে।
ফওজিয়া বলেন, আফিয়াকে মুক্তি দেয়া উচিত। তবে কোন মুক্তিপণ বা কিছুর বিনিময়ে
বা জঙ্গিদের দ্বারা অপহৃত কারও বিনিময়ে নয়। তাকে মুক্তি দেয়া উচিত, তার
প্রতি এটিই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।
No comments