কুতুবদিয়ায় ঘরহারা মানুষের চরম দুর্গতি জোয়ারের পানিতে ক্ষতি ৫ কোটি টাকা by এম.এ মান্নান
কুতুবদিয়ায় গত এক সপ্তাহে ভরা পূর্ণিমার জোয়ারের পানি উঠে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকার বেশি। উত্তর ধুরুং ইউনিয়নে,কাইছার পাড়া, পূর্ব চর ধুরুং বেড়িবাধঁ ভেঙে এবং উপজেলার আলী আকবর ডেইল,তাবোরের চর, কুমিড়া ঘোনা, বড়ঘোপ দক্ষিণ অমজাখালী,কেয়ারবিল মলম চর, পশ্চিম ঘিলা ছড়ি প্রভৃতি স্থানের ভাঙা বেড়িবাধঁ দিয়ে অবাধে পূর্ণিমার ফুঁসে ওঠা পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। এতে ঘরহারা মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
গত ৭ দিনে সব চেয়ে ক্ষতি হয়েছে উত্তর ধুরুং ইউনিয়নে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বে জোয়ারের মাত্র দু‘দিন আগে পূর্ব চর ধুরুং ৩০০ মিটার ভাঙা বেরিবাধঁ জরুরী মেরামত শেষ করেন হারুন ও গিয়াস নামের দু‘জন ঠিকাদার। জমানো বস্তার পরিবর্তে সেখানে কাচা মাটি দিয়ে সংস্কার করায় জোয়ারের পানির ধাক্কায় দ্রুত ভেঙে যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দা মিজবাহ উদ্দিন অভিযোগ করেন। সেখানে শক্ত ভাবে কাজ না হওয়ায় পুরো ইউনিয়নে ৭ দিন চলে লোনা পানির তান্ডব।
তলিয়ে যায় প্রায় ৫‘শ কাচা ঘর-বাড়ি সহ ৫‘শ হেক্টর সদ্য রোপিত আউশ জমিতে। মাটির দেয়াল সহ অন্তত: ৩০০ বাড়ি দেবে গেছে দু‘দিনের মধেই। হাঁস-মুরগী,গরু.ছাগল,পুকুর মাছ কিছুই বাদ যায়নি ক্ষতির কবল থেকে। অনেকে বাড়ির আসবাব-পত্র বের করার সুযোগও পাননি। আশ্রয় নিয়েছে আজম সড়কে। ওই ইউনিয়নে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে আউশ চাষ করা হয়েছিল। লোনা পানিতে ধান মরে যাওয়ার আশংকায় দিন কাটছে চাষিদের। নয়াকাটা,জইজ্যার পাড়া,মনছুর হাজীর পাড়া, চাইন্দার পাড়া,কাইছার পাড়া প্রভৃতি গ্রামে চলছে শোকের ছায়া।এখন পর্যন্ত সরকারি কোন সাহায্য মেলেনি দূর্ভোগী-গৃহহারাদের। প্রশিক্ষন গ্রহণের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান,ভাইস চেয়ারম্যান,মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান,নির্বাহি অফিসার সবাই দ্বীপের বাইরে রয়েছেন।এমনকি দূর্যোগপূর্ণএলাকা উত্তর ধুরুং ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজউদ্দৌলাহ তিনিও মামলার দরুণ লাপাত্তা। পাশে নেই কেউ। দক্ষিন ধুরুংইউপি চেয়ারম্যান নিজ উদ্যোগে ১২১ পরিবারে চাল,চিড়া,নগদ অর্থ প্রদান করলেও তা যথেষ্ট নয় বলে জানান ইউপি সদস্য ওমর ফারুক।উপজেলায় জোয়ারে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছে ভূক্তভোগীরা জানান।
এ দিকে আলী আকবর ডেইল, তাবারের চর, খুদিয়ার টেক, জেলে পাড়া, অমজাখালী, নাছিয়ার পাড়া,কিরণ পাড়া, কৈয়ারবিল, লেমশীখালীর উপকুল এলাকায় অন্তত: দেড় হাজার হেক্টর রোপিত আউশ দু‘দফায় বিনষ্ট হয়ে পড়েছে। নাছিয়ার পাড়ার চাষি মৌং জয়নাল আবেদীন বলেন, তার ৩ একর রোপিত আউশ বিনষ্ট হয়ে গেছে। আবার রোপন করার চারা নেই তার।উপজেলা উদ্বিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন বলেন,উত্তর ধুরুংইউনিয়নে আউশ চাষের ৭০০ হেক্টর জমি রয়েছে। বেশ কয়েকজন চাষীদের মতে দেড়‘শ হেক্টর জমির চারা বিনষ্ট হতে পারে বলে জানান। তবে বৃষ্টি হলে ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়া ক্ষতি- গ্রস্ত পরিবারের সাহায্যে সরকারি ত্রাণ পৌছেনি। খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে শত শত গৃহহারা মানুষ। গতকাল বৃহ:বার জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মুহাম্মদ শফিউল আলম কুতুবী বৃহস্পতিবার দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থদের খোঁজ-খবর নেন। বেড়িবাঁধের জরুরী নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পোঁছানোর জন্য সরকারের প্রতি জোরালো দাবী জানিয়েছেন তিনি। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাটির জরুরী বাঁধ সংস্কারের টেন্ডার হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্তা ব্যক্তি ও সংষ্ট দুর্নিতিবাজ টিকাদারের অবহেলায় এই মানবিক বিপর্যয়সহ খাদ্য নরাপত্তার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন কুতুবদিয়া বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আ.স.ম.শাহরিয়ার চৌধূরীসহ আরো অনেকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উত্তর ধূরুংয়ের চরধূরুং এলাকা দিয়ে আসা পানি পশ্চিম চরধূরুং, জমির বাপের পাড়া, কাইছার পাড়া, পিল্লার পাড়া, কালারমার পাড়া, ফুড়ার পাড়া ও হায়দার পাড়া তলিয়ে গিয়েছে। পরে আজম রোড ভেঙ্গে দক্ষিণে মনছুর আলী হাজী পাড়া, নয়া পাড়া, আইক্কার পাড়া, চাইন্দার পাড়া, জহির আলী সিকদার পাড়া, নাপিত পাড়া, চাটি পাড়া, ফরিজ্যার পাড়া, আজিম উদ্দিন সিকদার পাড়া, ছাদের ঘোনা, বাঁকখালী, মনু সিকদার পাড়া, আকবরবলী পাড়া, নজুমিয়া বাপের পাড়া, ফয়জানি বাপের পাড়া ধ্বসে গিয়ে ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে। দক্ষিণ ধূরুংয়ের মদন্যা পাড়া, অলি পাড়া, বাতিঘর পাড়া, লেমশীখালীর পেয়ারাকাটা, কৈয়ারবিলের মলমচর, বিন্দাপাড়া, বড়ঘোপের দক্ষিণ মুরালিয়া, আলী আকবর ডেইলের তাবালেরচর এলাকায় ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে অনবরত সমুদ্রের পানিতে জোয়ারভাটা চলছে। এতে করে এলাকার পুকুর-জলাশয় লবণ পানিতে টইটম্বুর। নলকূপ বিকল হয়ে সুপেয় পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গেল ‘জো-র’ পানি নেমে গেলে সংশ্লিষ্ট কাজের টিকাদারের নিয়োগকৃত সাব টিকাদার নামমাত্র মাটির কাজ করে বরাদ্ধের সমুদয় টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন। হাজার হাজার হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে বেড়িবাধের বাইরে থাকা প্রায় ৯শ’পরিবারের জরুরী পুনর্বাসন দাবী করেন কৈয়ারবিলর ইউপি চেয়ারম্যান আজমগীর মাতবর। দ্বীপটির ৪০কি.মি. বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ১৫ কি.মি. অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনিসহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা কুমিল্লার বার্ডে প্রশিক্ষণে থাকার কথা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুমিনুর রশিদ।
No comments