অধিকারহারা নারী by সালমা খান
দেশের সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশের নারীর ব্যাপক অবদান; বিশেষত, মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর অর্জনের মূল চালিকাশক্তি নারী। এটি প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও দারিদ্র্যপীড়িত ও সম্পদবঞ্চিত জনগণের সিংহভাগ নারী, তা আবারও প্রতীয়মান হলো সাম্প্রতিক এক গবেষণাতথ্যে। এতে দেখা গেছে, দেশের ৭০ শতাংশ নারীর কোনো সম্পদ নেই। নারী-পুরুষনির্বিশেষে সাংবিধানিক ক্ষমতার নিশ্চয়তা সত্ত্বেও পারিবারিক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সম–অধিকার আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
বিদ্যমান বৈষম্য সামলে নিয়ে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পারিবারিক সম্পদ উত্তরাধিকারের হার নারী-পুরুষের একই হওয়ার কথা। কারণ, যখনই একজন পুরুষ কিছু উত্তরাধিকার করেন, তার একটি অংশ নারীরও প্রাপ্য—অর্থাৎ, সম্পদের পরিমাপে ব্যতিক্রম হলেও হার একই হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সমাজে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপকতা ও ধর্মীয় অপব্যাখ্যার কারণে নারী বঞ্চিত হচ্ছেন অর্থনৈতিক ন্যায্যতা থেকে।
ভাইয়ের অনুকূলে প্রাপ্য সম্পত্তি ত্যাগ করার, পারিবারিক চাপ এবং লিঙ্গনির্বিশেষে সম্পদে সম–অধিকারের আইনি দুর্বলতার কারণে ঘরে-বাইরে সমান অথবা ক্ষেত্রবিশেষে অধিক শ্রমদান করেও নারীর অর্থনৈতিক ভিত্তি সামগ্রিকভাবে পুরুষের তুলনায় অনেক দুর্বল থেকে যাচ্ছে।
বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন ও স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট কর্তৃক পরিচালিত গবেষণায় প্রতীয়মান হয়, সম্পত্তিহীনতার ব্যাপারটি ওতপ্রোতভাবে নারী উদ্যোক্তা ও প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারে প্রবেশের সঙ্গে জড়িত। পারিবারিকভাবে দুর্বল অবস্থান নারীর জন্য অর্থনৈতিক ন্যায্যতা সৃষ্টিতে প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি করে।
১৯৯৫ সালে চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনে গৃহীত বেইজিং ঘোষণায় পরিবারে নারীর সমান অধিকার না পাওয়াকে নারীর বঞ্চনা ও দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা আজও বিদ্যমান। যেহেতু নারী সন্তান ও পরিবারের কল্যাণকে পুরুষের তুলনায় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন, তাই দারিদ্র্য পুরুষের তুলনায় নারীর জীবনে সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে, যা অর্থনৈতিক সুযোগে প্রবেশগম্যতার ক্ষেত্রে নারীর জন্য অধিক সমস্যার সৃষ্টি করে।
উল্লিখিত গবেষণায়ও দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ নারী শ্রমিক পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে প্রায় অর্ধেক মজুরি পেয়ে থাকেন। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় লিঙ্গভিত্তিক মজুরিবৈষম্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে নেতিবাচক। বাংলাদেশের দরিদ্র নারীদের সিংহভাগ, যাঁরা গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োজিত, তাঁদের জন্য নিম্নতম মজুরি ও কর্মঘণ্টা আজও নির্ধারিত হয়নি। অর্থনৈতিক সুযোগে নারীর প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতকরণ, নারী উদ্যোক্তার প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা এবং মজুরিবৈষম্য দূর করতে হলে পরিবারের সদস্য হিসেবে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করার আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পরিবর্তন আনা অতি জরুরি। আমাদের মনে রাখতে হবে, সম্পদহীনতার সঙ্গে নারীর নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টিও জড়িত।
সালমা খান: অর্থনীতিবিদ, নারীনেত্রী।
বিদ্যমান বৈষম্য সামলে নিয়ে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পারিবারিক সম্পদ উত্তরাধিকারের হার নারী-পুরুষের একই হওয়ার কথা। কারণ, যখনই একজন পুরুষ কিছু উত্তরাধিকার করেন, তার একটি অংশ নারীরও প্রাপ্য—অর্থাৎ, সম্পদের পরিমাপে ব্যতিক্রম হলেও হার একই হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সমাজে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপকতা ও ধর্মীয় অপব্যাখ্যার কারণে নারী বঞ্চিত হচ্ছেন অর্থনৈতিক ন্যায্যতা থেকে।
ভাইয়ের অনুকূলে প্রাপ্য সম্পত্তি ত্যাগ করার, পারিবারিক চাপ এবং লিঙ্গনির্বিশেষে সম্পদে সম–অধিকারের আইনি দুর্বলতার কারণে ঘরে-বাইরে সমান অথবা ক্ষেত্রবিশেষে অধিক শ্রমদান করেও নারীর অর্থনৈতিক ভিত্তি সামগ্রিকভাবে পুরুষের তুলনায় অনেক দুর্বল থেকে যাচ্ছে।
বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন ও স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট কর্তৃক পরিচালিত গবেষণায় প্রতীয়মান হয়, সম্পত্তিহীনতার ব্যাপারটি ওতপ্রোতভাবে নারী উদ্যোক্তা ও প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারে প্রবেশের সঙ্গে জড়িত। পারিবারিকভাবে দুর্বল অবস্থান নারীর জন্য অর্থনৈতিক ন্যায্যতা সৃষ্টিতে প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি করে।
১৯৯৫ সালে চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনে গৃহীত বেইজিং ঘোষণায় পরিবারে নারীর সমান অধিকার না পাওয়াকে নারীর বঞ্চনা ও দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা আজও বিদ্যমান। যেহেতু নারী সন্তান ও পরিবারের কল্যাণকে পুরুষের তুলনায় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন, তাই দারিদ্র্য পুরুষের তুলনায় নারীর জীবনে সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে, যা অর্থনৈতিক সুযোগে প্রবেশগম্যতার ক্ষেত্রে নারীর জন্য অধিক সমস্যার সৃষ্টি করে।
উল্লিখিত গবেষণায়ও দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ নারী শ্রমিক পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে প্রায় অর্ধেক মজুরি পেয়ে থাকেন। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় লিঙ্গভিত্তিক মজুরিবৈষম্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে নেতিবাচক। বাংলাদেশের দরিদ্র নারীদের সিংহভাগ, যাঁরা গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োজিত, তাঁদের জন্য নিম্নতম মজুরি ও কর্মঘণ্টা আজও নির্ধারিত হয়নি। অর্থনৈতিক সুযোগে নারীর প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতকরণ, নারী উদ্যোক্তার প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা এবং মজুরিবৈষম্য দূর করতে হলে পরিবারের সদস্য হিসেবে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করার আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পরিবর্তন আনা অতি জরুরি। আমাদের মনে রাখতে হবে, সম্পদহীনতার সঙ্গে নারীর নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টিও জড়িত।
সালমা খান: অর্থনীতিবিদ, নারীনেত্রী।
No comments