ব্যথিত, ক্ষুব্ধ বিশ্ব সমাজ
অশ্রুসিক্ত আতিকা আবদুল রহমান। বিধ্বস্ত মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের বৈমানিক ওয়ান আমরানের ভাগনি তিনি। গতকাল কুয়ালালামপুর থেকে তোলা ছবি। |
মাত্র চার মাস আগে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়। সেই শোক হালকা হতে না হতেই আরেক শোকের হানা। এবারও সেই মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসেরই উড়োজাহাজ। এবার উড়োজাহাজটিকে গুলি বা ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় স্বজন হারানো দেশগুলো যেমন শোকে কাতর হয়েছে, তেমনি সম্ভাব্য এই ভয়ংকর অপরাধের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়েছে বিশ্বসমাজ। মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের ফ্লাইট এমএইচ১৭ গত বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুরে ফেরার পথে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের একটি গ্রামের কাছে বিধ্বস্ত হয়ে ২৯৮ আরোহীর সবাই মারা যান। রয়টার্স, বিবিসি ও এএফপি। উড়োজাহাজটির যাত্রী হিসেবে ছিলেন মালয়েশিয়ার নাগরিক নুর সাজনা সালেহ। ৩১ বছর বয়সী এই নারীর বাবা সালেহ শামসুদ্দিন মালয়েশিয়ার একটি টেলিভিশনকে বলেন, ‘আমরা জানি, অনেকেই মারা গেছেন। তবু আমরা আশা করছি, সে বেঁচে আছে... কোনো প্রকারে সে নিরাপদ আছে এবং বাড়ি ফিরে আসবে।’ যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ইন্দোনেশীয় বংশোদ্ভূত ডাচ নাগরিক নিনিক ইউরিয়ানি। ৫৬ বছর বয়সী ওই নারী আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে জাকার্তায় যাচ্ছিলেন। তাঁর বোন অ্যানি নুরাহেনি বলেন, ‘আমার মাকে এ খবর বলতে পারছি না।
তিনি খুবই দুর্বল। এ খবর তিনি সইতে পারবেন না।’ আরোহীদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক ছিলেন ১২ জন। দেশটির প্রেসিডেন্ট সুসিলো বামবাং বলেছেন, যদি উড়োজাহাজটিকে সামরিক অস্ত্র ব্যবহার করে ভূপাতিত করা হয়ে থাকে, তবে সেটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। অস্ট্রেলিয়াও ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চায়। দেশটির ২৮ নাগরিক ওই উড়োজাহাজে ছিলেন। অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোট নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ শনিবার দেশের সরকারি ভবনগুলোতে পতাকা অর্ধনমিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রও ঘটনার তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও তাঁর শীর্ষ কমর্কতাদের একটি বৈঠকে ডেকেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘কিছু লোক ভেবেছিল ইউক্রেনের কিছুই করার নেই। কিন্তু এখন তারা নিজেদের ভুলগুলো খুঁজে বের করছে।’ দলনিরপেক্ষ বিশ্লেষকেরা বলছেন, মালয়েশিয়ান বিমান ট্র্যাজেডি ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সংঘর্ষের বিষয়টিকে বিশ্বের নজরে আনবে। এদিকে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং ব্যক্তিগত ফেসবুক পাতায় বলেন, উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার খবরে তিনি শোকাহত, ব্যথিত। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রজাক বলেন, ‘এটা একটা মর্মান্তিক দিন। মালয়েশিয়ার জন্য এ বছরটিই মর্মান্তিক বছরে পরিণত হয়েছে।’
No comments