অদেখা হুমায়ূন আহমেদ by নাসির আলী মামুন
তিনি এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। এমন ঘরানার
সাহিত্যিক, যিনি ছোটগল্প লিখে আলোড়ন তুলেছেন, উপন্যাস দিয়ে মোহগ্রস্ত
করেছেন পাঠকদের। সৃজনশীলতার প্রায়
সব শাখায় পাঠক ও দর্শকদের নিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন অন্তরালে।
মনে পড়ে, তাঁর ৪৮তম জন্মদিনকে সামনে রেখে আমি একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। সেটি প্রথম আলোয় ছাপা হয়েছিল। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি শিওর, একদিন ক্যানসারমুক্ত পৃথিবী হবে।’ আরেকবার বলেছিলেন, ‘যেদিন ক্যানসারের ওষুধ আবিষ্কার হবে, সেদিন পৃথিবীর সমস্ত জনগণ একসঙ্গে উল্লাস করবে।’
সব শাখায় পাঠক ও দর্শকদের নিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন অন্তরালে।
মনে পড়ে, তাঁর ৪৮তম জন্মদিনকে সামনে রেখে আমি একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। সেটি প্রথম আলোয় ছাপা হয়েছিল। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি শিওর, একদিন ক্যানসারমুক্ত পৃথিবী হবে।’ আরেকবার বলেছিলেন, ‘যেদিন ক্যানসারের ওষুধ আবিষ্কার হবে, সেদিন পৃথিবীর সমস্ত জনগণ একসঙ্গে উল্লাস করবে।’
২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে নুহাশপল্লীতে এসেছিলেন কলকাতার সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। সেদিন সুইমিংপুলের পাশে দুই কিংবদন্তির উপস্থিতি এবং সিগারেট ধরানোর দৃশ্য আমার ক্যামেরায় বন্দী হয়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলছিলেন, তিনি আর সিগারেট ধরাবেন না। কারণ, এতে ক্যানসারের ঝঁুকি বাড়ে। পাশে বসা হুমায়ূন বললেন, সিগারেট খেলে যদি ক্যানসার হয়, যারা খায় না, তাদের কেন হয়? এ নিয়ে কথা-চালাচালি শেষ না হতেই ফুলপ্যান্ট পরে পানিতে নেমে পড়লেন হুমায়ূন। আর যাঁরা উপস্থিত ছিলেন একে একে প্রায় সবাই পানিতে নেমে পড়লেন। সুনীল উদোম গায়ে পায়জামা পরে সুইমিংপুলে সাঁতরালেন, সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদ। এমন বিরল দৃশ্য ভুলি কী করে!
মৃত্যুর কদিন আগে, ৯ মে ২০১২, তাঁর নিউইয়র্কের ভাড়া বাড়িতে দেখা করতে গিয়ে অন্য আরেক মানুষকে পেলাম। ফুলহাতা লাল চেক শার্ট। মাথায় পশ্চিমা ঘরানার হ্যাট। বাড়ির সামনে তাঁর ছবি তুললাম আমি। ক্যানসারে ক্ষতবিক্ষত মানুষটির ফুর্তি এতটুকুও কমেনি। হ্যাট খুললে দেখি মাথায় চুল নেই, শরীর কম্পমান। কোথাও বসলে উঠতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কথা বলছেন অনর্গল। মনে হলো, তাঁর কঠিন কিছু হয়নি। তিনি আবার সেরে উঠবেন ঠিকঠাক।
ক্যানসারের চিকিৎসা চলাকালেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তিনি ঢাকায় এলেন। চলে গেলেন তাঁর ঠিকানায় নুহাশপল্লীতে। সবাইকে সময় দিয়েছেন তিনি। এর আগেও বেশ কয়েকবার নুহাশপল্লীতে তাঁর ছবি তুলতে গেছি। কিন্তু সেদিনটা ছিল অন্য রকম। সেদিন কেন যেন মনে হলো তাঁর হাতে লাগানো ফুল লতাপাতা—সবাই তাঁকে দেখছে, স্পর্শ করতে চাইছে। তিনিও সবকিছুর সঙ্গে নিজেকে সমর্পণ করে দিচ্ছেন। আমার ক্যামেরায় তিনি প্রিয় গাছ ও ফুলগুলোর সঙ্গে ছবি তুললেন। সুইমিংপুলের পাশে সিমেন্টের হাঁ করা অতিকায় মুখোশের ভেতর দিয়ে অনর্গল পানি ঝরছে। সেখানে দাঁড়িয়ে একটা ছবি তুলে দিতে অনুরোধ করলেন।
তারপর দেখা হয়েছে ধানমন্ডির দখিন হাওয়ার বাসায়। প্রতিটি মুহূর্তের ছবি তুলেছি আর ভেবেছি। তিনি যে হারিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই সংকেত যেন আমি আমার ক্যামেরায় অনুধাবন করতে পারছিলাম। এখন আর মাতম করলেও ফির পাব না তাঁকে। শুধু গভীর মমতায় তাঁর আলোকচিত্রগুলো আঁকড়ে আছি। আমি যেদিন থাকব না সেদিন কি হবে ছবিগুলোর?
No comments