নিউ মিডিয়া by নাজিব তারেক
ভারতীয় ষড়ঙ্গ বা নন্দনতত্ত্ব (এটাকে বৈদিক
নন্দনতত্ত্ব বলাই যৌক্তিক) শিল্পের যে সীমানা বর্ণনা করে তাহাতে চিত্রকলা,
সাহিত্য, নাটক, সঙ্গীত, ক্রীড়া ইত্যাদি ১৮ রাজ্য নিয়ে শিল্প রাষ্ট্র।
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য তার দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য মাত্র। কিন্তু ইউরোপে
আর্ট (Art) বলতে চিত্রকলা ও ভাস্কর্য বোঝায়, ইউরোপের ভূমিতে সংগঠিত যে
যুদ্ধকে আমরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বলে জানি তাহার পটভূমিতে ইউরোপীয় দাদারা
(Dada) চিত্রকলা ও ভাস্কর্য-এর সনাতন ধারণার বাইরে কিছু উপস্থাপনের যে
প্রয়াস নিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় স্থাপনাশিল্প বা Installation, ধারণাশিল্প
বা Conceptual Art, তামাশাশিল্প বা Performance ভিডিওআর্ট (Vedio Art)
ইত্যাদীর জাল বিছিয়ে দেয়া হল সারা বিশ্বে। যাকে আজ নিউ মিডিয়া নামে বয়ান
করা হয়।
আমরা জানি ইউরোপীয় চিন্তাশীলতায় সৃষ্টিশীলতা অর্থ নতুন চিন্তার সন্ধান, শিল্পের প্রধান উদ্দেশ্যও তাই নতুন কল্পনার সন্ধান ও তা উপস্থাপনের কৌশল উৎদ্ভাবন। রেনেসাঁ থেকে উনবিংশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত একাডেমি (অপধফবসু) বা প্রতিষ্ঠান পুরনো কল্পনা ও কৌশলের নিরিখে নতুন কল্পনা ও কৌশলকে গ্রহণ করেছে। এটাই ছিল শিল্প না কারুকর্ম তা নির্ধারণের পদ্ধতি। একাডেমি নির্ধারণ করে দিত কোনটি শিল্প কোনটি নয়। আর সমাজ এ নির্ধারণের ভার একাডেমিকে প্রদান করে নিশ্চিন্তে সুখনিদ্রা দিত, দেয়, দিচ্ছে...*
ইউরোপীয় শিল্পবিপ্লবের (industrial revolution) পর প্রতিচ্ছায়াবাদী (Impressionism) চিত্রকর ও তাদের সমর্থকরা এ ব্যবস্থাকে মেনে নিতে অস্বীকার করল। তারপর সময়ের দৌড়ে এলো সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব-বিমূর্ততা (Abstract), ঘনকবাদ (Surreal), df (Fav), দাদা (Dada), প্রকাশবাদ (Expressionism), বিশ্বযুদ্ধ-পরাবাস্তব (Surreal), বিশ্বযুদ্ধ-আমেরিকান বিমূর্ততা-cc (PoP), অপ (Op) বা দৃষ্টি বিভ্রম ইত্যাদি, শতাব্দীর দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আজকের নিউ মিডিয়া (New Media)। ওহ! ইউরোপীয় (বা পশ্চিমা) একাডেমির নতুন শাস্ত্র।
হ্যাঁ এ গ্লোবাল বাজারে নিজের উৎপাদিত পণ্য বেচতে এ শাস্ত্রকে তো মানতেই হবে। শিল্পী আমার হতেই হবে, আমার ভাবনা কিংবা চিন্তাহীন ভাবনাকে নিউ মিডিয়ার মোড়কে ছেড়ে দিলেই কেল্লাফতে। ট্রাস্ট, ফাউন্ডেশন, ক্যাম্প, আরও কত কি আছে আমায় শিল্পী ঘোষণা করার জন্য। ছিলেন সমালোচকেরা, তারা আজো আছেন; এসে গ্যাছেন শিল্প রক্ষক বা কিউরোটরেরাও। সব শেষে একাডেমি আর পুরস্কারের ঝাঁপি তো আছেই।
আই. এস. ও. মোহর বা শিল আমাদের সব পণ্যের গায়েই লাগাতে হবে, নচেৎ গ্লোবাল বাজারে তা বিকোবে না। আমার অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগে যে গার্মেন্ট শিল্প, অথবা উত্তর আমেরিকা-ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্য-পূর্ব এশিয়ার বাজারে আমার যে জনশক্তি, যা আমার অর্থনীতিকে চালাচ্ছে, তা সবই গ্লোবাল বাজারকে সেবা দেয়ার জন্য। আমার শিল্পকেও তাই বৈশ্বিক ধারণায় পুষ্ট হতে হয়। ইংরেজরা আমাদের আর্ট স্কুল বানানো শিখিয়েছে, আর্ট বলতে শিখিয়েছে। আমার কোটি মানুষের শিল্প শিক্ষা সে স্কুলেই হতে হবে, অৎঃ হতে হবে। আর কতখানি শিখলাম বর্তমানে তার পরীক্ষা হবে নিউ মিডিয়া শাস্ত্র অনুসারে। হাজার বছর প্রাচীন ষড়ঙ্গ আমার শাস্ত্র নয়।
বদলেয়ার বলেছিলেন শিল্পী রচনা করেন আজানা বাজারের জন্য। নিউ মিডিয়ার বাজারটি কি অজানা?
মান বা গুণ বিচার, এটাই সামন্ত ও বুর্জোয়া পদ্ধতি, সমাজতন্ত্র এ পদ্ধতিরই আর এক রূপ হতে পারে মাত্র। পূর্ব পুরুষের বা অগ্রজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় বাস করার জন্য এটাই এখন পর্যন্ত সর্বত্তম উপায়। আর এটা না মানতে চাইলে-মুখের সামনে যা পাও খাও, মরে অথবা বেঁচে থেকে প্রমাণ কর এটা বিষ না পুষ্টিবর্ধক খাদ্য। তবে এ পদ্ধতি মানবার ফল হল মানুষ নামক প্রাণীটি জঙ্গলবাসী প্রাণী থেকে সামাজিক প্রাণীতে রূপান্তরিত হয় মাত্র। মানুষ অধরাই রয়ে যায়।
আমরা জানি ইউরোপীয় চিন্তাশীলতায় সৃষ্টিশীলতা অর্থ নতুন চিন্তার সন্ধান, শিল্পের প্রধান উদ্দেশ্যও তাই নতুন কল্পনার সন্ধান ও তা উপস্থাপনের কৌশল উৎদ্ভাবন। রেনেসাঁ থেকে উনবিংশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত একাডেমি (অপধফবসু) বা প্রতিষ্ঠান পুরনো কল্পনা ও কৌশলের নিরিখে নতুন কল্পনা ও কৌশলকে গ্রহণ করেছে। এটাই ছিল শিল্প না কারুকর্ম তা নির্ধারণের পদ্ধতি। একাডেমি নির্ধারণ করে দিত কোনটি শিল্প কোনটি নয়। আর সমাজ এ নির্ধারণের ভার একাডেমিকে প্রদান করে নিশ্চিন্তে সুখনিদ্রা দিত, দেয়, দিচ্ছে...*
ইউরোপীয় শিল্পবিপ্লবের (industrial revolution) পর প্রতিচ্ছায়াবাদী (Impressionism) চিত্রকর ও তাদের সমর্থকরা এ ব্যবস্থাকে মেনে নিতে অস্বীকার করল। তারপর সময়ের দৌড়ে এলো সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব-বিমূর্ততা (Abstract), ঘনকবাদ (Surreal), df (Fav), দাদা (Dada), প্রকাশবাদ (Expressionism), বিশ্বযুদ্ধ-পরাবাস্তব (Surreal), বিশ্বযুদ্ধ-আমেরিকান বিমূর্ততা-cc (PoP), অপ (Op) বা দৃষ্টি বিভ্রম ইত্যাদি, শতাব্দীর দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আজকের নিউ মিডিয়া (New Media)। ওহ! ইউরোপীয় (বা পশ্চিমা) একাডেমির নতুন শাস্ত্র।
হ্যাঁ এ গ্লোবাল বাজারে নিজের উৎপাদিত পণ্য বেচতে এ শাস্ত্রকে তো মানতেই হবে। শিল্পী আমার হতেই হবে, আমার ভাবনা কিংবা চিন্তাহীন ভাবনাকে নিউ মিডিয়ার মোড়কে ছেড়ে দিলেই কেল্লাফতে। ট্রাস্ট, ফাউন্ডেশন, ক্যাম্প, আরও কত কি আছে আমায় শিল্পী ঘোষণা করার জন্য। ছিলেন সমালোচকেরা, তারা আজো আছেন; এসে গ্যাছেন শিল্প রক্ষক বা কিউরোটরেরাও। সব শেষে একাডেমি আর পুরস্কারের ঝাঁপি তো আছেই।
আই. এস. ও. মোহর বা শিল আমাদের সব পণ্যের গায়েই লাগাতে হবে, নচেৎ গ্লোবাল বাজারে তা বিকোবে না। আমার অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগে যে গার্মেন্ট শিল্প, অথবা উত্তর আমেরিকা-ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্য-পূর্ব এশিয়ার বাজারে আমার যে জনশক্তি, যা আমার অর্থনীতিকে চালাচ্ছে, তা সবই গ্লোবাল বাজারকে সেবা দেয়ার জন্য। আমার শিল্পকেও তাই বৈশ্বিক ধারণায় পুষ্ট হতে হয়। ইংরেজরা আমাদের আর্ট স্কুল বানানো শিখিয়েছে, আর্ট বলতে শিখিয়েছে। আমার কোটি মানুষের শিল্প শিক্ষা সে স্কুলেই হতে হবে, অৎঃ হতে হবে। আর কতখানি শিখলাম বর্তমানে তার পরীক্ষা হবে নিউ মিডিয়া শাস্ত্র অনুসারে। হাজার বছর প্রাচীন ষড়ঙ্গ আমার শাস্ত্র নয়।
বদলেয়ার বলেছিলেন শিল্পী রচনা করেন আজানা বাজারের জন্য। নিউ মিডিয়ার বাজারটি কি অজানা?
মান বা গুণ বিচার, এটাই সামন্ত ও বুর্জোয়া পদ্ধতি, সমাজতন্ত্র এ পদ্ধতিরই আর এক রূপ হতে পারে মাত্র। পূর্ব পুরুষের বা অগ্রজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় বাস করার জন্য এটাই এখন পর্যন্ত সর্বত্তম উপায়। আর এটা না মানতে চাইলে-মুখের সামনে যা পাও খাও, মরে অথবা বেঁচে থেকে প্রমাণ কর এটা বিষ না পুষ্টিবর্ধক খাদ্য। তবে এ পদ্ধতি মানবার ফল হল মানুষ নামক প্রাণীটি জঙ্গলবাসী প্রাণী থেকে সামাজিক প্রাণীতে রূপান্তরিত হয় মাত্র। মানুষ অধরাই রয়ে যায়।
No comments