গারোদের শেষকৃত্য অতীত বর্তমান by আবু সাঈদ কামাল
গারোদের
আদি ধর্ম মতে তাদের কোনো সদস্য মারা গেলে সঙ্গে সঙ্গে রাং-থ্রাম বাজিয়ে
মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা হয়। শোক সংবাদ শুনে আত্মীয়স্বজনরা ছুটে আসে। মৃত
ব্যক্তিটি যদি পুরুঘ হয়, তাহলে মৃত্যু সংবাদ প্রথম পাঠাতে হয় মৃতের
মাতৃগোষ্ঠীর কাছে। মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় গারো পুরুষদের সাধারণত
স্ত্রীর বাড়িতে চলে যেতে হয়। মৃত্যুর সংবাদ শুনে মা-বাবা তড়িঘড়ি চলে আসতে
পারেন না। আর্থিক অবস্থাভেদে মা-বাবাকে ষাঁড় বা গরু, ছাগল, শূকর,
মোরগ-মুরগি ইত্যাদি সঙ্গে নিয়ে যেতে হয় মৃতের বাড়িতে। সাংসারেক গারো
সদস্যের মৃত্যুর পর তার মায়ের গোত্রের মেয়েরা এসে মৃতকে স্নান করায়। মৃত
ব্যক্তি ধনী হলে সে ক্ষেত্রে চু বা গারো মদ দিয়ে তার মরদেহ স্নান করানোর
নিয়ম রয়েছে। আবার গরিব হলে জল দ্বারা স্নান করানো হয়।
সাংসারেক গারোরা জন্মান্তরে বিশ্বাসী। হিমাংশু মজুমদার তার ভারতের আদিবাসী গ্রন্থে উল্লেখ করেন, মৃত্যু সম্পর্কে গারোদের বিশ্বাস; শরীরের মাঝে আত্মা বাস করে। মৃত্যুর ফলে আত্মা শরীর ছেড়ে মাংরু এবং মাংরাম নামক স্থানে চলে যায়। মাংরু এবং মাংরাম হল আত্মার ভালো-মন্দের বিচারের স্থান। যতদিন না পুনর্জন্ম হয় ততদিন আত্মা সেখানে স্থায়ী হয় বলে তাদের বিশ্বাস। তাদের মতে মৃত্যুর কারণ অনুযায়ী আত্মার পরিণতি ঘটে। যেমন কেউ ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করলে সে গোবরে পোকারূপে পুনর্জন্ম নেয়। আবার বাঘ বা হাতির আক্রমণে নিহত হলে বা মারা গেলে সে জন্তুরূপে জন্ম নেয়। কখনও আর মানুষরূপে পুনর্জন্ম নিতে পারে না।
অন্যদিকে সুভাষ জেংচাম তার ‘বাংলাদেশের গারো সম্প্রদায়’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, গারোদের (সাংসারেক গারোদের) বিশ্বাস জন্মান্তর গ্রহণের প্রস্তুতি পর্বে বিদেহী আত্মা সাময়িকভাবে চিকমাং পাহাড়ে অবস্থান করে। এ চিকমাং পাহাড়টি গারো পাহাড়ের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। যা বাংলাদেশের কলমাকান্দা দুর্গাপুর এলাকা থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। সড়কপথে ভ্রমণ করলে ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা পথে শ্যামগঞ্জ থেকে শুরু করে নেত্রকোনা ঠাকুরাকোনা থেকেও উত্তর দিগন্ত বরাবর তাকালে চিকমাং পাহাড় চূড়াটি দেখা যায়। তারপর যতই উত্তরে যাওয়া যায় চিকমাং পাহাড়ের চূড়াটি ততই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সুভাষ জেংচামের মতে চিকমাং পাহাড় চূড়াটি দেখতে অনেকটা পিরামিডের মতো।
মৃতদেহ সৎকারের ক্ষেত্রে গারোদের ভিন্ন ভিন্ন গোত্রে ভিন্ন ভিন্ন রীতি প্রচলিত। কোনো কোনো গোত্রে মরদেহ আগুনে পোড়ানো হয়। আবার কোনো গোত্রে মাটিতে সমাহিত করা হয়। অবশ্য মাটিতে পুঁতে রাখার রীতি শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন কেউ যদি কলেরা, বসন্ত, কুষ্ঠ, কালাজ্বরের কবলে পড়ে মারা যায়, তাদের মরদেহ মাটিতে পুঁতে দেয়া হয় বা সমাধিস্থ করা হয়। সময় তাদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র মরদেহের সঙ্গে দেয়া হয়। বার্ধক্যজনিত কারণে কিংবা স্বাভাবিক মৃত্যু হলে সে ক্ষেত্রে মরদেহ কাঠের বেদিতে দাহ করার রীতি রয়েছে। তারা সদলবলে শোভাযাত্রা করে মরদেহ গাংচি বা খাটিয়ায় করে দাহ করার জন্য শ্মশানে নিয়ে যায়। দাহ স্থানে প্রথমে চার কোণে চারটি খুঁটি পুঁতে তার ওপর বড় বড় কাঠ সজ্জিত করা হয়। এ ক্ষেত্রেও মৃতের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র শবদাহের সময় সঙ্গে দেয়া হয়। কারণ তাদের বিশ্বাস মৃতের আত্মাকে বিভ্রান্ত করার জন্য পরপারে অপদেবতা ওঁৎ পেতে থাকে। তখন মৃতের ব্যবহার্য ওই সব তৈজষপত্র বা অন্যান্য জিনিসপত্র ওই অপদেবতাকে দিয়ে মৃতের আত্মা নির্বিঘ্নে তার গন্তব্যে চলে যেতে পারে। মৃতদেহকে কাঠের ওপর রেখে তারপর আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। সাধারণত দাহ কাজে মাদার বা পারিজাত গাছের কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দাহ করা মরদেহের অদগ্ধ হাড় ও চিতার ছাই একটি পাত্রে পুরে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। মৃতের সঙ্গে দেয়া জিনিসপত্র অদগ্ধ অবস্থায় থাকলে মৃতদেহ দাহকারী স্বজনেরা সেগুলো নিয়ে যেতে পারে। অতঃপর সে স্থানে ছোট ত্রিকোণাকৃতির একটি ছোট ঘর তৈরি করে খড় দিয়ে ছেয়ে রাখা হয়। সে ঘরকে বলা হয় দেল্লাং। গারোদের বৃহৎ বার্ষিক অনুষ্ঠান ওয়ানগাল্লা। কোনো কোনো গোত্রের রীতি অনুযায়ী ওই ওয়ানগাল্লা বা চুগান পালনের সময় ওসব দেল্লাং বা খ্রমগুলো পুড়িয়ে দেয়া হয়। এভাবে এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মৃতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়।
এ কথা সত্য যে গারোদের আদি ধর্মে বিশ্বাস তথা সাংসারেক সদস্যের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। শতকরা তা তিন থেকে পাঁচ ভাগের বেশি হবে না। ১৮৬৩ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি, রোববার মি. ব্রনসন নামক জনৈক শ্বেতাঙ্গ ব্যাপটিস্ট মিশনারি আসামের গৌহাটির অদূরে সুখেশ্বর ঘাট নামক স্থানে উমেদ ও রামখে নামে দুজন গারো যুবককে প্রথম খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত করেন। সেই থেকে গারোরা খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রভাবে ধর্মান্তরিত হতে শুরু করে। এখনও সে প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। অবশিষ্ট তিন থেকে পাঁচ ভাগ গারো, যারা এখনও আদি ধর্মে বিশ্বাস নিয়ে আছে, তারাও বোধ হয় এক সময় খ্রিস্টান হয়ে যাবে। অতি অল্প সংখ্যক আদি ধর্ম বিশ্বাসী গারো বা সাংসারেক যারা আজও আদি রীতি মেনে চলছে, তা একদিন শূন্যের কোঠায় পৌঁছবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ধর্মান্তরিত গারোরা তাদের আদি সামাজিক নিয়মাচারের বৃত্ত থেকে সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে আসতে পারেনি।
সাংসারেক রীতি অনুযায়ী কোনো গারো সদস্য মারা গেলে সেখানে রাং থ্রাম বাজিয়ে শোক সংবাদ প্রচার করা হতো, এখন সে স্থান দখল করেছে খ্রিস্ট রীতির ঘণ্টাধ্বনি। ধর্মান্তরিত কোনো গারো সদস্য মারা গেলে মৃত্যু সংবাদ এখনও প্রথমে তার মাতৃগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো হয়। মৃত্যু সংবাদ শুনে এখনও সীমান্তের ওপারে তথা মেঘালয়ে ধর্মান্তরিত গারোদের আত্মীয়স্বজনরা মৃতের বাড়িতে যাওয়ার সময় গরু-ছাগল-শূকর-হাস-মুরগি ইত্যাদি নিয়ে যায়। ওসব পশু-পাখি মেরে সেগুলোর মাংস দিয়ে মৃতের বাড়িতে ভোজনানুষ্ঠান করা হয়। কিন্তু এপারে অর্থাৎ বাংলাদেশে খ্রিস্টান গারোরা অবশ্য মৃত্যু সংবাদ শুনে ছুটে আসে। যথারীতি খ্রিস্ট নিয়মে মৃতকে কবর দেয়া হয়। তবে মৃতের বাড়িতে কোনো ভোজনানুষ্ঠান হয় না। মৃত্যুর কিছুদিন পর অনুষ্ঠানটি করা হয়, সে সময় আত্মীয়স্বজনরা তাদের সামর্থ্যানুযায়ী গরু-ছাগল-শূকর-হাস-মুরগি ইত্যাদি নিয়ে এসে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। ধর্মান্তরিত গারোরা এখন ওয়ানগালা অনুষ্ঠান করে শুধু অতীত ঐতিহ্য রক্ষার জন্য, ধর্ম বিশ্বাসের কারণে নয়। গারোদের শেষকৃত্য এখন না পুরোপুরি খ্রিস্ট ধর্ম রীতিতে, না আদি সাংসারেক রীতিতে হচ্ছে। বরং বলা যায় উভয় রীতির গ্রহণযোগ্য এক সমন্বিত নিয়মে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে ধর্মান্তরিত গারোদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান।
সাংসারেক গারোরা জন্মান্তরে বিশ্বাসী। হিমাংশু মজুমদার তার ভারতের আদিবাসী গ্রন্থে উল্লেখ করেন, মৃত্যু সম্পর্কে গারোদের বিশ্বাস; শরীরের মাঝে আত্মা বাস করে। মৃত্যুর ফলে আত্মা শরীর ছেড়ে মাংরু এবং মাংরাম নামক স্থানে চলে যায়। মাংরু এবং মাংরাম হল আত্মার ভালো-মন্দের বিচারের স্থান। যতদিন না পুনর্জন্ম হয় ততদিন আত্মা সেখানে স্থায়ী হয় বলে তাদের বিশ্বাস। তাদের মতে মৃত্যুর কারণ অনুযায়ী আত্মার পরিণতি ঘটে। যেমন কেউ ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করলে সে গোবরে পোকারূপে পুনর্জন্ম নেয়। আবার বাঘ বা হাতির আক্রমণে নিহত হলে বা মারা গেলে সে জন্তুরূপে জন্ম নেয়। কখনও আর মানুষরূপে পুনর্জন্ম নিতে পারে না।
অন্যদিকে সুভাষ জেংচাম তার ‘বাংলাদেশের গারো সম্প্রদায়’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, গারোদের (সাংসারেক গারোদের) বিশ্বাস জন্মান্তর গ্রহণের প্রস্তুতি পর্বে বিদেহী আত্মা সাময়িকভাবে চিকমাং পাহাড়ে অবস্থান করে। এ চিকমাং পাহাড়টি গারো পাহাড়ের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। যা বাংলাদেশের কলমাকান্দা দুর্গাপুর এলাকা থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। সড়কপথে ভ্রমণ করলে ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা পথে শ্যামগঞ্জ থেকে শুরু করে নেত্রকোনা ঠাকুরাকোনা থেকেও উত্তর দিগন্ত বরাবর তাকালে চিকমাং পাহাড় চূড়াটি দেখা যায়। তারপর যতই উত্তরে যাওয়া যায় চিকমাং পাহাড়ের চূড়াটি ততই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সুভাষ জেংচামের মতে চিকমাং পাহাড় চূড়াটি দেখতে অনেকটা পিরামিডের মতো।
মৃতদেহ সৎকারের ক্ষেত্রে গারোদের ভিন্ন ভিন্ন গোত্রে ভিন্ন ভিন্ন রীতি প্রচলিত। কোনো কোনো গোত্রে মরদেহ আগুনে পোড়ানো হয়। আবার কোনো গোত্রে মাটিতে সমাহিত করা হয়। অবশ্য মাটিতে পুঁতে রাখার রীতি শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন কেউ যদি কলেরা, বসন্ত, কুষ্ঠ, কালাজ্বরের কবলে পড়ে মারা যায়, তাদের মরদেহ মাটিতে পুঁতে দেয়া হয় বা সমাধিস্থ করা হয়। সময় তাদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র মরদেহের সঙ্গে দেয়া হয়। বার্ধক্যজনিত কারণে কিংবা স্বাভাবিক মৃত্যু হলে সে ক্ষেত্রে মরদেহ কাঠের বেদিতে দাহ করার রীতি রয়েছে। তারা সদলবলে শোভাযাত্রা করে মরদেহ গাংচি বা খাটিয়ায় করে দাহ করার জন্য শ্মশানে নিয়ে যায়। দাহ স্থানে প্রথমে চার কোণে চারটি খুঁটি পুঁতে তার ওপর বড় বড় কাঠ সজ্জিত করা হয়। এ ক্ষেত্রেও মৃতের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র শবদাহের সময় সঙ্গে দেয়া হয়। কারণ তাদের বিশ্বাস মৃতের আত্মাকে বিভ্রান্ত করার জন্য পরপারে অপদেবতা ওঁৎ পেতে থাকে। তখন মৃতের ব্যবহার্য ওই সব তৈজষপত্র বা অন্যান্য জিনিসপত্র ওই অপদেবতাকে দিয়ে মৃতের আত্মা নির্বিঘ্নে তার গন্তব্যে চলে যেতে পারে। মৃতদেহকে কাঠের ওপর রেখে তারপর আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। সাধারণত দাহ কাজে মাদার বা পারিজাত গাছের কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দাহ করা মরদেহের অদগ্ধ হাড় ও চিতার ছাই একটি পাত্রে পুরে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। মৃতের সঙ্গে দেয়া জিনিসপত্র অদগ্ধ অবস্থায় থাকলে মৃতদেহ দাহকারী স্বজনেরা সেগুলো নিয়ে যেতে পারে। অতঃপর সে স্থানে ছোট ত্রিকোণাকৃতির একটি ছোট ঘর তৈরি করে খড় দিয়ে ছেয়ে রাখা হয়। সে ঘরকে বলা হয় দেল্লাং। গারোদের বৃহৎ বার্ষিক অনুষ্ঠান ওয়ানগাল্লা। কোনো কোনো গোত্রের রীতি অনুযায়ী ওই ওয়ানগাল্লা বা চুগান পালনের সময় ওসব দেল্লাং বা খ্রমগুলো পুড়িয়ে দেয়া হয়। এভাবে এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মৃতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়।
এ কথা সত্য যে গারোদের আদি ধর্মে বিশ্বাস তথা সাংসারেক সদস্যের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। শতকরা তা তিন থেকে পাঁচ ভাগের বেশি হবে না। ১৮৬৩ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি, রোববার মি. ব্রনসন নামক জনৈক শ্বেতাঙ্গ ব্যাপটিস্ট মিশনারি আসামের গৌহাটির অদূরে সুখেশ্বর ঘাট নামক স্থানে উমেদ ও রামখে নামে দুজন গারো যুবককে প্রথম খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত করেন। সেই থেকে গারোরা খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রভাবে ধর্মান্তরিত হতে শুরু করে। এখনও সে প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। অবশিষ্ট তিন থেকে পাঁচ ভাগ গারো, যারা এখনও আদি ধর্মে বিশ্বাস নিয়ে আছে, তারাও বোধ হয় এক সময় খ্রিস্টান হয়ে যাবে। অতি অল্প সংখ্যক আদি ধর্ম বিশ্বাসী গারো বা সাংসারেক যারা আজও আদি রীতি মেনে চলছে, তা একদিন শূন্যের কোঠায় পৌঁছবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ধর্মান্তরিত গারোরা তাদের আদি সামাজিক নিয়মাচারের বৃত্ত থেকে সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে আসতে পারেনি।
সাংসারেক রীতি অনুযায়ী কোনো গারো সদস্য মারা গেলে সেখানে রাং থ্রাম বাজিয়ে শোক সংবাদ প্রচার করা হতো, এখন সে স্থান দখল করেছে খ্রিস্ট রীতির ঘণ্টাধ্বনি। ধর্মান্তরিত কোনো গারো সদস্য মারা গেলে মৃত্যু সংবাদ এখনও প্রথমে তার মাতৃগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো হয়। মৃত্যু সংবাদ শুনে এখনও সীমান্তের ওপারে তথা মেঘালয়ে ধর্মান্তরিত গারোদের আত্মীয়স্বজনরা মৃতের বাড়িতে যাওয়ার সময় গরু-ছাগল-শূকর-হাস-মুরগি ইত্যাদি নিয়ে যায়। ওসব পশু-পাখি মেরে সেগুলোর মাংস দিয়ে মৃতের বাড়িতে ভোজনানুষ্ঠান করা হয়। কিন্তু এপারে অর্থাৎ বাংলাদেশে খ্রিস্টান গারোরা অবশ্য মৃত্যু সংবাদ শুনে ছুটে আসে। যথারীতি খ্রিস্ট নিয়মে মৃতকে কবর দেয়া হয়। তবে মৃতের বাড়িতে কোনো ভোজনানুষ্ঠান হয় না। মৃত্যুর কিছুদিন পর অনুষ্ঠানটি করা হয়, সে সময় আত্মীয়স্বজনরা তাদের সামর্থ্যানুযায়ী গরু-ছাগল-শূকর-হাস-মুরগি ইত্যাদি নিয়ে এসে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। ধর্মান্তরিত গারোরা এখন ওয়ানগালা অনুষ্ঠান করে শুধু অতীত ঐতিহ্য রক্ষার জন্য, ধর্ম বিশ্বাসের কারণে নয়। গারোদের শেষকৃত্য এখন না পুরোপুরি খ্রিস্ট ধর্ম রীতিতে, না আদি সাংসারেক রীতিতে হচ্ছে। বরং বলা যায় উভয় রীতির গ্রহণযোগ্য এক সমন্বিত নিয়মে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে ধর্মান্তরিত গারোদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান।
No comments