ফের তৃণমূলে যাচ্ছেন খালেদা by কাজী সুমন
দেশব্যাপী অব্যাহত গুম-খুনসহ সরকারবিরোধী
জনমত গড়তে ফের তৃণমূলে যাচ্ছেন বিরোধী জোট নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা
জিয়া। আগামীকাল মুন্সীগঞ্জ জেলা সফর করবেন তিনি। ওই দিন শহরের লঞ্চঘাট
এলাকায় জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন। এরই
ধারাবাহিকতায় পরে ময়মনসিংহ, সিলেট, ফেনী, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম,
সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তার সফর করার কথা রয়েছে। আগামী ২৯শে মে
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৩তম শাহাদত বার্ষিকী
উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য
রাখবেন খালেদা জিয়া। এরপর ৩০শে মে রাজধানীর শেরেবাংলানগরস্থ জিয়াউর রহমানের
মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। আগামী জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে চিকিৎসার
জন্য সিঙ্গাপুর যেতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে
দু’একটি জেলা সফর করতে পারেন। আগামী জুনের শেষ দিকে পবিত্র রমজান শুরু হবে।
রমজানের পর ফের সরকার পতন আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো সফর করবেন
তিনি। বছরের শেষ দিকে সরকার পতন আন্দোলনে ভূমিকা রাখা জেলাগুলোতে আগে সফর
করবেন খালেদা জিয়া। এ সফরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে
যে জেলাগুলোতে দলীয় নেতাকর্মীরা বেশি নিহত ও আহত হয়েছেন সেই জেলাগুলোকে
বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। সেই লক্ষ্যে তার দেশব্যাপী সফরকে কেন্দ্র করে
ইতিমধ্যে একটি সফরসূচি তৈরি করা হয়েছে। এর দায়িত্বে ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কবে, কখন, কোন জেলায় সফর করবেন, দলের
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ওই সফরসূচি দেখে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন। এদিকে চলতি
মাসে খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকটি সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। গত ১৩ই মে
নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারগুলোকে সমবেদনা জানাতে
সমাবেশ আহ্বান করেছিলেন খালেদা জিয়া। নারায়ণগঞ্জে সেই সমাবেশের অনুমতি চেয়ে
আবেদনও করেছিল জেলা বিএনপি। কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে স্থানীয়
প্রশাসন সেই সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। পরে বাধ্য হয়ে নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল
ও আইনজীবী চন্দন সরকারের বাসায় গিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা
জানান বিরোধী জোট নেতা। এরপর চলমান গুম-খুনের প্রতিবাদে গত ১৭ই মে রাজধানী
যাত্রাবাড়ীতে সমাবেশের জন্য তিনটি স্থানের নাম উল্লেখ করে ডিএমপির কাছে
আবেদন জানায় বিএনপি। কিন্তু যাত্রাবাড়ীতে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি
পুলিশ। সমাবেশ করতে না পেরে সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।
এরপর গত ২২শে মে রাজধানীতে গুম হওয়া ২২ নেতাকর্মীর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে
ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর
বিএনপি। কিন্তু পুলিশ ওই সমাবেশও করতে দেয়নি তাদেরকে। পরে গুলশান কার্যালয়ে
গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মতবিনিময় করেন খালেদা জিয়া। এরপর আইনজীবী
চন্দন সরকার হত্যাসহ সারা দেশে গুম-খুনের প্রতিবাদের গত ২৪শে সুপ্রিম
কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবী সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
কিন্তু ‘অনুমতি নেই’ অজুহাত দেখিয়ে বিএনপিকে সেই সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ।
পরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের হলরুমে স্বল্প পরিসরে আইনজীবীদের আয়োজিত সমাবেশে
বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়া।
আসন্ন সফরে দেশব্যাপী অব্যাহত গুম-খুনের পাশাপাশি সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের দুর্নীতি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মের চিত্র তুলে ধরবেন খালেদা জিয়া। এছাড়া তৃণমূল নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার পাশাপাশি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে জনমত গড়ে তুলবেন। সংগঠন গোছানো, মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার পাশাপাশি সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন মাত্রা পাবে খালেদা জিয়ার এ সফর। তাই রমজানের আগ পর্যন্ত ইস্যুভিত্তিক ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচি দিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত রাখতে চায় দলটি।
এদিকে গতকাল নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, আগামী ২৮শে মে মুন্সীগঞ্জ যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শহরের লঞ্চঘাটে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখবেন তিনি। রিজভী আহমেদ বলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই আমাকে জানিয়েছেন, জেলা কর্তৃপক্ষ থেকে জনসভার করার অনুমতি পাওয়া গেছে। বিকাল ২টায় সমাবেশ শুরু হবে। খালেদা জিয়া সমাবেশস্থলে উপস্থিত হবেন বিকাল ৩টায়। ইতিমধ্যে জনসভার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে স্থানীয় বিএনপি। এর আগে ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর সর্বশেষ গত ১লা মার্চ রাজবাড়ীতে ১৯ দল আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রেখেছিলেন খালেদা জিয়া।
No comments