‘মুক্ত’ মোদির রাজনৈতিক পরীক্ষা
নরেন্দ্র মোদি আজ সোমবার ভারতের সবচেয়ে কঠিন দায়িত্বটি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করবেন, তখন তিনি হবেন একজন ‘মুক্ত’ মানুষ৷ কারণ, তাঁকে জোটের শরিকদের মতামতের ওপর নির্ভর করে পথ চলতে হবে না৷ তবে তাঁর সমর্থক বিভিন্ন সংগঠনকে সামলানোটা হবে আসলেই এক রাজনৈতিক পরীক্ষা৷ খবর হিন্দুস্তান টাইমসের৷ ১৯৮৯ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া ভি পি সিং, চন্দ্রশেখর, পি ভি নরসীমা রাও, অটল বিহারি বাজপেয়ি, এইচ ডি দেবগৌড়া, আইকে গুজরাল ও মনমোহন সিং—সবাই জোটের শরিক দলগুলোর ওপর নির্ভরশীল ছিলেন৷
কিন্তু মোদির প্রতি যে বিপুল জনসমর্থন রয়েছে, তা গত কয়েক দশকে কোনো সরকারপ্রধানের ছিল না৷ ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি ছিল, তা বাস্তবায়নের স্বাধীনতা পাবেন মোদি৷ মন্ত্রিসভা ও আমলাতন্ত্রের ওপরও তিনি শক্ত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ পাবেন৷ তাঁর দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম ২৭২টি আসনের চেয়ে বেশি আসন পেয়েছে৷ অন্যদিকে বিরোধী দলের আকারও হয়ে গেছে অনেক ছোট৷ প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সাফল্য নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর মোদি সরকারের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হবে সমমনা একগুচ্ছ সংগঠনের প্রত্যাশা পূরণ করা, যাদের সমর্থন নিয়ে েমাদি এত দূর এসেছেন৷ প্রথমত, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এবং করপোরেট ভারতের কথাই ধরা যাক৷ আরএসএস-বিজেপির ঐতিহ্যবাহী বন্ধনে ছোটখাটো দোকানদারদের ভূমিকা অনেক৷ এই ব্যবসায়ীরা আবার খুচরা বাজারে বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ঘোর বিরোধী৷ কিন্তু দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এফডিআই জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ উত্তর ভারতের বিশাল হিন্দু জনগোষ্ঠীর সমর্থন পেয়েছে বিজেপি৷
সাম্প্রদায়িক ভোট’ না হলেও বিভিন্ন শ্রেণির ভোটাররা নানা রকম প্রত্যাশা নিয়ে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন৷ সাংগঠনিক সমর্থন বৃদ্ধির জন্য রামমন্দির নির্মাণ ও হিন্দুত্ববাদী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবি তুলতে পারে আরএসএস৷ এ ছাড়া সংগঠনটি নিজেদের লোকজনকে সরকারি বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্যও মোদিকে চাপ দিতে পারে৷ মোদির সম্ভাব্য পররাষ্ট্রনীতি নিয়েও রয়েছে অনেক জল্পনা-কল্পনা৷ নির্বাচনী প্রচারাভিযানে পাকিস্তানবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য দিলেও নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাজনৈতিক উদারতা ও কূটনৈতিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন মোদি৷ বিজেপির একজন শীর্ষ নেতা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, মোদি ভালো করেই জানেন, ভারত মানে শুধু গুজরাট নয়৷ তবে তিনি গুজরাটে সরকার পরিচালনার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও আদর্শ বাতিলও করে দেবেন না৷ কারণ, সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি বড় সাফল্য পেয়েছেন৷ এবার নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হবে খুবই শক্তিশালী, অনেকটা ইন্দিরা গান্ধীর আমলের মতো৷ সেখানে একদল গুরুত্বপূর্ণ আমলা কাজ করলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বময় ক্ষমতা থাকবে কেবল মোদির হাতে৷ মোদিকে হয়তো একটি প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানকে উপেক্ষা করতে হবে৷ পাশাপাশি তাঁর জন্য কঠিন কাজ হবে, মন্ত্রিসভার সদস্যদের ব্যক্তিগত বন্ধুর পরিবর্তে শুধু সহকর্মী হিসেবে মূল্যায়ন করা৷ তবে যত প্রত্যাশাই থাক, সব মিলিয়ে ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে৷ জনগণ তাঁকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তা পালনে মোদি কতটা সফল হবেন, সময়ই বলে দেবে৷
No comments