বিদায়ী বছরের ব্যর্থতাগুলো কাটিয়ে সামনে এগোতে হবে by তারেক শামসুর রেহমান
২০১৩
সালের বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে আস্থাহীনতা। বছরের
পুরোটা সময় এ আস্থাহীনতা বজায় থাকে এবং এ আস্থাহীনতার অভাবেই একদলীয় একটি
নির্বাচনের আয়োজন করতে হচ্ছে সরকারকে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তথা ১৮ দলীয়
জোটকে সারাটা বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকার তথা নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে
আন্দোলন করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে সরকারকে দেখা গেছে সংবিধানের দোহাই দিয়ে
প্রধান বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে এককভাবে নির্বাচনের পথে এগিয়ে যেতে।
আস্থাহীনতার অভাবে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে
না। এমনকি নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করলেও সব দলের অংশগ্রহণে একটি
নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হয়নি। একটি ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠিত হয়েছে
বটে, কিন্তু দেখা গেছে, যে দলগুলোকে নিয়ে মহাজোট গঠিত হয়েছিল, তারাই
মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মন্ত্রিসভায় স্থান
পায়নি। এক্ষেত্রেও আস্থাহীনতা ছিল প্রধান কারণ। যদিও প্রধানমন্ত্রীকে
একাধিকবার বিএনপিকে মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানাতে দেখা গেছে।
এক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান ছিল মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়া নয়, বরং নির্বাচনকালীন
সরকারের প্রধান কে হবেন, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর একটি সিদ্ধান্তের
পক্ষে। বিএনপি বছরের শুরু থেকেই বলে আসছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
বিকল্প নিরপেক্ষ কোনো ব্যক্তিকে ‘নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান’ করা হলে
তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো আপত্তি নেই। এ নিয়ে বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোট
একের পর এক হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি দিলেও সরকারের মনোভাবের এতটুকু পরিবর্তন
হয়নি। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত
ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করলেও সরকার তার সিদ্ধান্তে ছিল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
সরকার ও বিরোধী দলের মাঝে এ আস্থাহীনতা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে একটি প্রশ্নের মাঝে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা আন্তর্জাতিক আসরে প্রশংসিত হলেও আস্থাহীনতা যে একটি দেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে কত বড় বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিতে পারে এবং বিশ্ব আসরে দেশটির ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে, ২০১৩ সালের বাংলাদেশের রাজনীতি তার বড় প্রমাণ। দুটি বড় শক্তির (বিএনপি আর আওয়ামী লীগ) মাঝে আস্থার সম্পর্ক ছিল বিধায় ১৯৯১ সালে আমরা অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে পঞ্চম সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে পেরেছিলাম। এমনকি ৭ম, ৮ম, ৯ম সংসদ নির্বাচনেও একটি আস্থার সম্পর্ক ছিল। এ সম্পর্কের অবনতি ঘটে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করার পর।
চলতি বছর সারাটা সময়জুড়ে ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা আর সহিংসতা। বিরোধী দল একের পর এক হরতাল, পরে লাগাতার অবরোধ দিয়ে রাজনীতিতে নতুন একটি মাত্রা এনে দেয়। চলতি বছরের একটা বড় সময় আমরা দেখেছি একের পর এক বিদেশী দূতদের বাংলাদেশে আসা ও সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেয়া। তারানকো, ওয়ারসি কিংবা নিশার মতো বিদেশীরা চেষ্টা করেছেন সরকার ও বিরোধী দলকে একটা সমঝোতায় উপনীত করতে। দাতাগোষ্ঠী পুরোটা সময়েই একাধিকবার এটা স্পষ্ট করেছে যে, তারা চায় সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন হোক। কিন্তু তা হয়নি। বিদেশীদের মাঝে তারানকো আর সুজাতা সিংয়ের সফর নানা কারণে গুরুত্ব পেয়েছে বেশি। তারানকো জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত ও জাতিসংঘের কর্মকর্তা। আর সুজাতা সিং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। তারানকোর উপস্থিতিতে সরকার ও বিরোধী দল সংলাপে বসলেও তা কোনো ফল বয়ে আনতে পারেনি। এমনকি তারানকো বাংলাদেশ ত্যাগ করার পর সংলাপের ব্যাপারে সরকারি পক্ষের কোনো আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়নি। তারানকো বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে উভয় পক্ষকে ‘ছাড়’ দেয়ার যে মানসিকতার কথা বলে গিয়েছিলেন, তার প্রতি কোনো পক্ষই সম্মান দেখায়নি। তবে সুজাতা সিংয়ের বক্তব্য (যা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে) বাংলাদেশে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। জাতীয় পার্টি প্রধান এইচএম এরশাদের সঙ্গে দেখা করার পর তার যে অভিমত পাওয়া যায় (নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ, আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় গেলে এখানে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটবে), তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ‘হস্তক্ষেপে’র শামিল বলে অনেকে অভিমত পোষণ করেছেন। অনেকেরই অভিমত, বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে ভারত বাংলাদেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কিংবা একটি রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করতে পারে না এবং কোনো ‘উপদেশ’ও দিতে পারে না। সেই একই ধরনের অভিযোগ ওঠে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যখন পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে কাদের মোল্লার ফাঁসির ঘটনায় একটি নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের বলার কিছু নেই। চলতি বছর রাজনীতিতে দুটো বিষয় বেশি করে আলোচিত হয়। একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি, দ্বিতীয়টি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। বিএনপি তথা ১৮ দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সারাটা বছর আন্দোলন করেছে। তারা সংবিধান সংশোধনেরও দাবি করে। এ দাবির পক্ষে একটা সর্বজনগ্রহণযোগ্যতাও লক্ষ্য করা যায়। বছরের শেষের দিকে, বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে সরকারকে কিছুটা নমনীয় হতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর বদলে (যিনি সংবিধান সংশোধনীর ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পান) রাষ্ট্রপতি অথবা স্পিকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন আয়োজন করারও প্রস্তাব দেয় বলে শোনা গেছে। কিন্তু সরকার তাতে ইতিবাচক মনোভাব দেখায়নি। ফলে সংকটের গভীরতা বৃদ্ধি পায়। এক পর্যায়ে বিএনপি নেত্রীকে একটি চূড়ান্ত কর্মসূচি দিতে দেখা যায়। খালেদা জিয়া গত ২৪ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা অভিমুখে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র আহ্বান করেন। গণতন্ত্র রক্ষায় তিনি এ ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’র ডাক দেন। এমনকি স্থবির হয়ে যাওয়া সংলাপ শুরু করারও আহ্বান জানান তিনি। এটা বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে নতুন একটি মাত্রা এনে দেয়। সরকার তার টার্ম শেষ করলেও সরকারের জন্য একটা বড় ব্যর্থতা ছিল, তারা দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে আনতে পারেনি। এমনকি ১৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির জন্য একটি কলংকজনক ঘটনা। এ ঘটনা প্রমাণ করে, নির্বাচন কমিশন এই ভোটারবিহীন নির্বাচন রোধ করতে পারেনি। বরং কমিশন কার্যত সরকারের একটি অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছে। একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ছাড়া যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তা আবারও প্রমাণিত হল। একজন দলীয় প্রধান হিসেবে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী যদি অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থেকে যান, তাহলে তিনি বা তার দল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটাবেন। পঞ্চম সংসদে দ্বাদশ সংবিধান সংশোধনী (সংসদীয় রাজনীতি) এনে আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রবর্তন করেছিলাম। কিন্তু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের ঘটনা অতীতের সব রেকর্ড শুধু ভঙ্গই করেনি, বরং গণতান্ত্রিক চর্চার পেছনে ছুরিকাঘাত করেছে। জাতীয় পার্টির ঘটনা (নির্বাচনে আছে, নির্বাচনে নেই; মন্ত্রিসভায় আছে, মন্ত্রিসভায় নেই; পার্টি প্রধানের অসুস্থতা ইত্যাদি) জনমনে নানা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
এটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে, এদেশের রাজনীতিতে দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মাঝে একটি ‘শান্তিপূর্ণ’ সহাবস্থান ছাড়া কোনো সমঝোতা সম্ভব নয়। দুর্ভাগ্য এখানেই যে আমাদের রাজনীতিকরা এ সত্যটি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের রাজনীতি এ দুটি প্রধান দলকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। এর বাইরে তৃতীয় কোনো জোট বা পক্ষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। তবে রাজনীতিতে নতুন একটি মাত্রা যোগ হয়েছে, আর তা হচ্ছে ‘জোট রাজনীতি’। অর্থাৎ দুটি প্রধান দলকে ঘিরে ছোট ছোট অনেক দল জোটবদ্ধ হয়েছে। ধারাটি স্পষ্ট- একদিকে রয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি, একুশ শতকের সমাজতন্ত্রের অনুসারীরা, যারা এক ব্যানারে একত্রিত হয়েছেন। অন্যদিকে রয়েছে ইসলাম পছন্দ অনুসারীরা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও মুক্তবাজারের প্রবক্তারা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দুই ধারার রাজনীতির নেতৃত্ব দিচ্ছে। গেল এক বছরের রাজনীতিতে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ছোট ছোট রাজনৈতিক সংগঠন, যারা এ পরস্পরবিরোধী দুই ধারার রাজনীতি সমর্থন করে, তারা বড় দল দুটোর পেছনে একত্রিত হয়েছে। এবং বাংলাদেশে একটি জোট রাজনীতি শুরু করেছেন। এর বাইরে তৃতীয় একটি ‘জোটজন্মপ্রকাশ করলেও জনসাধারণের মাঝে তাদের আবেদন খুবই সীমিত। কাদের সিদ্দিকী, আসম রব, বি চৌধুরীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা থাকলেও দলীয়ভাবে তারা বড় দুর্বল। গেল এক বছর তারা ব্যক্তি পর্যায়ে থেকে সোচ্চার হয়েছেন, এটা সত্য। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে কোনো ‘আবেদন’ রাখতে পারেননি। এটা সত্যিই একটা উল্লেখ করার বিষয় যে, নয়াদিল্লিতে শুধু দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আম আদমি পার্টি ও অরবিন্দ কেজরিওয়াল ‘দিল্লির মসনদ’ দখল করতে পেরেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে ড. কামাল হোসেনের মতো ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েও আদৌ কোনো আবেদন রাখতে পারেননি। গণফোরাম এখন শুধু ‘বেইলি রোডকেন্দ্রিক’ তার অস্তিত্ব নিয়ে টিকে আছে। ২০১৪ সালে এসে বাংলাদেশের রাজনীতিকরা ভেবে দেখতে পারেন তাদের ব্যর্থতা কোথায়।
ডিসেম্বরে (২০১৩) পত্র-পত্রিকায় আমাদের রাজনীতিকদের (ইসিতে দেয়া হলফনামা অনুযায়ী) অর্থ সম্পদের যে বিবরণ ছাপা হয়েছে, তা দেখে অবাক হতে হয়। কী বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক তারা হয়েছেন! রাজনীতি কি তাহলে শুধু অর্থ সম্পদ বানানোর একটি মাধ্যম। আবার অর্থমন্ত্রীর মতো একজন প্রবীণ ও শিক্ষিত ব্যক্তি যখন বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকলে অর্থ সম্পদ বাড়ে’ তখনও অবাক হতে হয়! একজন শিক্ষিত ব্যক্তি কিভাবে এমন কথা বলতে পারেন! একজন কেজরিওয়াল দেখিয়ে দিয়েছেন রাজনীতিতে যদি সততা ও কমিটমেন্ট থাকে, তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব। আমাদের রাজনীতিকরা কেজরিওয়ালের কাছ থেকে শিখবেন বলে মনে হয় না। ভারতের রাজনীতির সঙ্গে আমাদের পার্থক্য এখানেই।
চলতি বছর বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির একটি বিষয় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে আর তা হচ্ছে, দেশে একটি নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো বিকল্প নেই। ২০১৪ সালে এটা হচ্ছে রাজনীতির মূল বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘তৃতীয়বারের মতো’ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন বটে। কিন্তু রাজনীতিতে স্থায়ী আবেদন রাখতে হলে তত্ত্বাবধায়কের বিকল্প একটি ‘নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা’ প্রবর্তন করতে হবে। বিগত দিনের ঘটনাবলী প্রমাণ করে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক সমাজের মতো বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিনির্মাণ অত সহজ নয়। পশ্চিমা সমাজের গণতন্ত্রের ‘স্পিরিট’ আমরা গ্রহণ করেছি, কিন্তু গণতন্ত্র চর্চায় পশ্চিমা সমাজকে আমরা অনুসরণ করিনি। পাশের দেশ ভারতের দিল্লির ‘হেভিওয়েট’ মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষিত যখন অখ্যাত এক কেজরিওয়ালের কাছে হেরে যান, তখন সেখানে নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি ওঠে না। ভারতের গণতন্ত্রের এটাই সৌন্দর্য। আমরা এ থেকেও কিছু শিখিনি। ইতিহাসে শেখ হাসিনা কিভাবে চিহ্নিত হবেন জানি না। কিন্তু তিনি তার ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে পারবেন যদি তিনি নির্বাচনকালীন একটি সরকারের রূপরেখা দশম সংসদে পাস করে ২০১৪ সালেই আরেকটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। এক্ষেত্রে সবার মতামত তিনি নিতে পারেন। একটি কমিশনও গঠন করতে পারেন। যদি তিনি দলীয় লোকদের নিয়ে ‘কমিশন’ করেন, তাহলে তাদের লক্ষ্য হবে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় রাখা। জাতি এ থেকে কিছুই পাবে না। তাই তিনি যদি নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিশন করেন, আমার বিশ্বাস এতে তার সম্মান পুনরুদ্ধার হবে। তার উপদেষ্টারা তাকে সঠিক উপদেশ দিয়েছেন, এটা আমি বিশ্বাস করি না। একটা ভুল সিদ্ধান্ত আরেকটি ভুল সিদ্ধান্তকে ‘টেনে’ আনে। জোর করে ক্ষমতায় থাকার মাঝে কোনো সার্থকতা নেই। বরং সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়া, তাদের মতামত নেয়া, তাদের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখাই হওয়া উচিত রাজনীতির মূল লক্ষ্য। মানুষ চেয়েছে একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকার। চেয়েছে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে হলেও সত্য, তা হয়নি। এ থেকে যদি আমরা শিক্ষা নেই, তার মাঝেই আমাদের মঙ্গল নিহিত।
ড. তারেক শামসুর রেহমান : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সরকার ও বিরোধী দলের মাঝে এ আস্থাহীনতা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে একটি প্রশ্নের মাঝে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা আন্তর্জাতিক আসরে প্রশংসিত হলেও আস্থাহীনতা যে একটি দেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে কত বড় বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিতে পারে এবং বিশ্ব আসরে দেশটির ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে, ২০১৩ সালের বাংলাদেশের রাজনীতি তার বড় প্রমাণ। দুটি বড় শক্তির (বিএনপি আর আওয়ামী লীগ) মাঝে আস্থার সম্পর্ক ছিল বিধায় ১৯৯১ সালে আমরা অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে পঞ্চম সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে পেরেছিলাম। এমনকি ৭ম, ৮ম, ৯ম সংসদ নির্বাচনেও একটি আস্থার সম্পর্ক ছিল। এ সম্পর্কের অবনতি ঘটে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করার পর।
চলতি বছর সারাটা সময়জুড়ে ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা আর সহিংসতা। বিরোধী দল একের পর এক হরতাল, পরে লাগাতার অবরোধ দিয়ে রাজনীতিতে নতুন একটি মাত্রা এনে দেয়। চলতি বছরের একটা বড় সময় আমরা দেখেছি একের পর এক বিদেশী দূতদের বাংলাদেশে আসা ও সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেয়া। তারানকো, ওয়ারসি কিংবা নিশার মতো বিদেশীরা চেষ্টা করেছেন সরকার ও বিরোধী দলকে একটা সমঝোতায় উপনীত করতে। দাতাগোষ্ঠী পুরোটা সময়েই একাধিকবার এটা স্পষ্ট করেছে যে, তারা চায় সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন হোক। কিন্তু তা হয়নি। বিদেশীদের মাঝে তারানকো আর সুজাতা সিংয়ের সফর নানা কারণে গুরুত্ব পেয়েছে বেশি। তারানকো জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত ও জাতিসংঘের কর্মকর্তা। আর সুজাতা সিং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। তারানকোর উপস্থিতিতে সরকার ও বিরোধী দল সংলাপে বসলেও তা কোনো ফল বয়ে আনতে পারেনি। এমনকি তারানকো বাংলাদেশ ত্যাগ করার পর সংলাপের ব্যাপারে সরকারি পক্ষের কোনো আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়নি। তারানকো বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে উভয় পক্ষকে ‘ছাড়’ দেয়ার যে মানসিকতার কথা বলে গিয়েছিলেন, তার প্রতি কোনো পক্ষই সম্মান দেখায়নি। তবে সুজাতা সিংয়ের বক্তব্য (যা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে) বাংলাদেশে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। জাতীয় পার্টি প্রধান এইচএম এরশাদের সঙ্গে দেখা করার পর তার যে অভিমত পাওয়া যায় (নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ, আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় গেলে এখানে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটবে), তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ‘হস্তক্ষেপে’র শামিল বলে অনেকে অভিমত পোষণ করেছেন। অনেকেরই অভিমত, বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে ভারত বাংলাদেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কিংবা একটি রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করতে পারে না এবং কোনো ‘উপদেশ’ও দিতে পারে না। সেই একই ধরনের অভিযোগ ওঠে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যখন পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে কাদের মোল্লার ফাঁসির ঘটনায় একটি নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের বলার কিছু নেই। চলতি বছর রাজনীতিতে দুটো বিষয় বেশি করে আলোচিত হয়। একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি, দ্বিতীয়টি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। বিএনপি তথা ১৮ দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সারাটা বছর আন্দোলন করেছে। তারা সংবিধান সংশোধনেরও দাবি করে। এ দাবির পক্ষে একটা সর্বজনগ্রহণযোগ্যতাও লক্ষ্য করা যায়। বছরের শেষের দিকে, বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে সরকারকে কিছুটা নমনীয় হতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর বদলে (যিনি সংবিধান সংশোধনীর ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পান) রাষ্ট্রপতি অথবা স্পিকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন আয়োজন করারও প্রস্তাব দেয় বলে শোনা গেছে। কিন্তু সরকার তাতে ইতিবাচক মনোভাব দেখায়নি। ফলে সংকটের গভীরতা বৃদ্ধি পায়। এক পর্যায়ে বিএনপি নেত্রীকে একটি চূড়ান্ত কর্মসূচি দিতে দেখা যায়। খালেদা জিয়া গত ২৪ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা অভিমুখে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র আহ্বান করেন। গণতন্ত্র রক্ষায় তিনি এ ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’র ডাক দেন। এমনকি স্থবির হয়ে যাওয়া সংলাপ শুরু করারও আহ্বান জানান তিনি। এটা বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে নতুন একটি মাত্রা এনে দেয়। সরকার তার টার্ম শেষ করলেও সরকারের জন্য একটা বড় ব্যর্থতা ছিল, তারা দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে আনতে পারেনি। এমনকি ১৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির জন্য একটি কলংকজনক ঘটনা। এ ঘটনা প্রমাণ করে, নির্বাচন কমিশন এই ভোটারবিহীন নির্বাচন রোধ করতে পারেনি। বরং কমিশন কার্যত সরকারের একটি অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়েছে। একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ছাড়া যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তা আবারও প্রমাণিত হল। একজন দলীয় প্রধান হিসেবে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী যদি অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থেকে যান, তাহলে তিনি বা তার দল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটাবেন। পঞ্চম সংসদে দ্বাদশ সংবিধান সংশোধনী (সংসদীয় রাজনীতি) এনে আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রবর্তন করেছিলাম। কিন্তু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের ঘটনা অতীতের সব রেকর্ড শুধু ভঙ্গই করেনি, বরং গণতান্ত্রিক চর্চার পেছনে ছুরিকাঘাত করেছে। জাতীয় পার্টির ঘটনা (নির্বাচনে আছে, নির্বাচনে নেই; মন্ত্রিসভায় আছে, মন্ত্রিসভায় নেই; পার্টি প্রধানের অসুস্থতা ইত্যাদি) জনমনে নানা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
এটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে, এদেশের রাজনীতিতে দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মাঝে একটি ‘শান্তিপূর্ণ’ সহাবস্থান ছাড়া কোনো সমঝোতা সম্ভব নয়। দুর্ভাগ্য এখানেই যে আমাদের রাজনীতিকরা এ সত্যটি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের রাজনীতি এ দুটি প্রধান দলকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। এর বাইরে তৃতীয় কোনো জোট বা পক্ষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। তবে রাজনীতিতে নতুন একটি মাত্রা যোগ হয়েছে, আর তা হচ্ছে ‘জোট রাজনীতি’। অর্থাৎ দুটি প্রধান দলকে ঘিরে ছোট ছোট অনেক দল জোটবদ্ধ হয়েছে। ধারাটি স্পষ্ট- একদিকে রয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি, একুশ শতকের সমাজতন্ত্রের অনুসারীরা, যারা এক ব্যানারে একত্রিত হয়েছেন। অন্যদিকে রয়েছে ইসলাম পছন্দ অনুসারীরা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও মুক্তবাজারের প্রবক্তারা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দুই ধারার রাজনীতির নেতৃত্ব দিচ্ছে। গেল এক বছরের রাজনীতিতে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ছোট ছোট রাজনৈতিক সংগঠন, যারা এ পরস্পরবিরোধী দুই ধারার রাজনীতি সমর্থন করে, তারা বড় দল দুটোর পেছনে একত্রিত হয়েছে। এবং বাংলাদেশে একটি জোট রাজনীতি শুরু করেছেন। এর বাইরে তৃতীয় একটি ‘জোটজন্মপ্রকাশ করলেও জনসাধারণের মাঝে তাদের আবেদন খুবই সীমিত। কাদের সিদ্দিকী, আসম রব, বি চৌধুরীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা থাকলেও দলীয়ভাবে তারা বড় দুর্বল। গেল এক বছর তারা ব্যক্তি পর্যায়ে থেকে সোচ্চার হয়েছেন, এটা সত্য। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে কোনো ‘আবেদন’ রাখতে পারেননি। এটা সত্যিই একটা উল্লেখ করার বিষয় যে, নয়াদিল্লিতে শুধু দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আম আদমি পার্টি ও অরবিন্দ কেজরিওয়াল ‘দিল্লির মসনদ’ দখল করতে পেরেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে ড. কামাল হোসেনের মতো ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েও আদৌ কোনো আবেদন রাখতে পারেননি। গণফোরাম এখন শুধু ‘বেইলি রোডকেন্দ্রিক’ তার অস্তিত্ব নিয়ে টিকে আছে। ২০১৪ সালে এসে বাংলাদেশের রাজনীতিকরা ভেবে দেখতে পারেন তাদের ব্যর্থতা কোথায়।
ডিসেম্বরে (২০১৩) পত্র-পত্রিকায় আমাদের রাজনীতিকদের (ইসিতে দেয়া হলফনামা অনুযায়ী) অর্থ সম্পদের যে বিবরণ ছাপা হয়েছে, তা দেখে অবাক হতে হয়। কী বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক তারা হয়েছেন! রাজনীতি কি তাহলে শুধু অর্থ সম্পদ বানানোর একটি মাধ্যম। আবার অর্থমন্ত্রীর মতো একজন প্রবীণ ও শিক্ষিত ব্যক্তি যখন বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকলে অর্থ সম্পদ বাড়ে’ তখনও অবাক হতে হয়! একজন শিক্ষিত ব্যক্তি কিভাবে এমন কথা বলতে পারেন! একজন কেজরিওয়াল দেখিয়ে দিয়েছেন রাজনীতিতে যদি সততা ও কমিটমেন্ট থাকে, তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব। আমাদের রাজনীতিকরা কেজরিওয়ালের কাছ থেকে শিখবেন বলে মনে হয় না। ভারতের রাজনীতির সঙ্গে আমাদের পার্থক্য এখানেই।
চলতি বছর বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির একটি বিষয় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে আর তা হচ্ছে, দেশে একটি নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো বিকল্প নেই। ২০১৪ সালে এটা হচ্ছে রাজনীতির মূল বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘তৃতীয়বারের মতো’ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন বটে। কিন্তু রাজনীতিতে স্থায়ী আবেদন রাখতে হলে তত্ত্বাবধায়কের বিকল্প একটি ‘নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা’ প্রবর্তন করতে হবে। বিগত দিনের ঘটনাবলী প্রমাণ করে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক সমাজের মতো বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিনির্মাণ অত সহজ নয়। পশ্চিমা সমাজের গণতন্ত্রের ‘স্পিরিট’ আমরা গ্রহণ করেছি, কিন্তু গণতন্ত্র চর্চায় পশ্চিমা সমাজকে আমরা অনুসরণ করিনি। পাশের দেশ ভারতের দিল্লির ‘হেভিওয়েট’ মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষিত যখন অখ্যাত এক কেজরিওয়ালের কাছে হেরে যান, তখন সেখানে নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি ওঠে না। ভারতের গণতন্ত্রের এটাই সৌন্দর্য। আমরা এ থেকেও কিছু শিখিনি। ইতিহাসে শেখ হাসিনা কিভাবে চিহ্নিত হবেন জানি না। কিন্তু তিনি তার ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে পারবেন যদি তিনি নির্বাচনকালীন একটি সরকারের রূপরেখা দশম সংসদে পাস করে ২০১৪ সালেই আরেকটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। এক্ষেত্রে সবার মতামত তিনি নিতে পারেন। একটি কমিশনও গঠন করতে পারেন। যদি তিনি দলীয় লোকদের নিয়ে ‘কমিশন’ করেন, তাহলে তাদের লক্ষ্য হবে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় রাখা। জাতি এ থেকে কিছুই পাবে না। তাই তিনি যদি নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিশন করেন, আমার বিশ্বাস এতে তার সম্মান পুনরুদ্ধার হবে। তার উপদেষ্টারা তাকে সঠিক উপদেশ দিয়েছেন, এটা আমি বিশ্বাস করি না। একটা ভুল সিদ্ধান্ত আরেকটি ভুল সিদ্ধান্তকে ‘টেনে’ আনে। জোর করে ক্ষমতায় থাকার মাঝে কোনো সার্থকতা নেই। বরং সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়া, তাদের মতামত নেয়া, তাদের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখাই হওয়া উচিত রাজনীতির মূল লক্ষ্য। মানুষ চেয়েছে একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকার। চেয়েছে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে হলেও সত্য, তা হয়নি। এ থেকে যদি আমরা শিক্ষা নেই, তার মাঝেই আমাদের মঙ্গল নিহিত।
ড. তারেক শামসুর রেহমান : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
No comments