স্থিতিশীল বাংলাদেশই চায় বিশ্বসম্প্রদায় by শমসের মবিন চৌধুরী
বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংকট আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কী প্রভাব ফেলতে পারে, কীভাবে দেশে একটি সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরে আসতে পারে, সে বিষয়ে প্রথম আলো মুখোমুখি হয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শমসের মবিন চৌধুরীর
প্রথম আলো নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি কম আন্দোলন করল না, ২৫ নভেম্বর থেকে দফায় দফায় টানা অবরোধ কর্মসূচি হলো, কিন্তু সরকার তো একতরফা নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে?
শমসের মবিন চৌধুরী বিএনপির কর্মসূচি সফল হয়নি, তা বলা যাবে না। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে দেশের মানুষ এমন নির্বাচন চায় না। এটা তো শুধু ভোটারবিহীন নয়, প্রার্থীবিহীন নির্বাচন হচ্ছে। ১৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সংবাদমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। জনগণকে আমরা সচেতন করতে পেরেছি। প্রার্থী যাঁরা হয়েছেন, তাঁরা ঠিকমতো প্রচার-প্রচারণাও করতে পারছেন না। এটা তো আমাদের আন্দোলনের ফলেই হয়েছে।
প্রথম আলো আপনাদের চিন্তা-ভাবনা কী?
শমসের মবিন চৌধুরী খালেদা জিয়া ২৪ ডিসেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, গণতন্ত্র হচ্ছে আর্ট অব কম্প্রোমাইজ। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে এটা করতেই হবে। তিনি সেদিন এটা পরিষ্কার করেছেন যে দলের চেয়ে দেশ ও দেশের জনগণ বড়। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের সময় ও সুযোগ আছে। আইনগত বা সাংবিধানিক—সবভাবেই তা সম্ভব। সংসদ এখনো বহাল রয়েছে, আমরা আজকেই সংলাপে বসে একটি পথ খুঁজে বের করতে পারি।
প্রথম আলো বিএনপি কি আপস করতে প্রস্তুত রয়েছে?
শমসের মবিন চৌধুরী আমরা তো সব সময়ই বলে আসছি সংলাপে বসলে দুই পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধানে আসা সম্ভব। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত তারানকোর সঙ্গে যখন আমরা বৈঠক করেছি, তখন আমরা বলেছি যে তফসিল বাতিল, আটক নেতাদের মুক্তি—এ ধরনের কিছু উদ্যোগ নেওয়া হোক, আমরা আলোচনায় বসে সমাধানের একটি পথ খুঁজে বের করতে পারব। দেশকে বাঁচানোর সদিচ্ছা যদি সরকারের থাকে, তাহলে এটা সম্ভব। আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই, এখন সরকার যদি গায়ের জোরে একতরফা নির্বাচন করতে চায়, তাহলে তো আর হবে না।
প্রথম আলো বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ যে দাবি আদায়ে দলটি দেশের জনগণ নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে?
শমসের মবিন চৌধুরী এটা নিছক অপপ্রচার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের যে যোগাযোগ রয়েছে, সেটা গতানুগতিক। বিএনপি সব সময়ই জনগণের দল, নির্বাচনমুখী দল। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এবং জনগণের সমর্থনেই দলটি কাজ করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আওয়ামী লীগেরও যথেষ্ট যোগাযোগ রয়েছে এবং তা আমাদের চেয়ে কোনোভাবেই কম নয়। মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার অন্তত ছয়জন সরকার ও দলটির পররাষ্ট্রবিষয়ক দিকগুলো দেখছেন।
প্রথম আলো বিএনপির রাজনীতিতে ভারতবিরোধী অবস্থান স্পষ্ট, আবার এখন দেখা যাচ্ছে, ভারতের সমর্থন পাওয়ার বিষয়টিকেও দলটি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। বিএনপি কি অবস্থান পরিবর্তন করছে?
শমসের মবিন চৌধুরী ২০১২ সালে বেগম খালেদা জিয়া যখন ভারত সফরে গিয়েছিলেন, তখন তিনি দেশটির রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তিনি এটা স্পষ্ট করেছেন, যেকোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক লাভ ও পারস্পরিক সমমর্যাদা। ভারত এখন এটা বুঝতে পেরেছে যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে গেলে সেটা রাখতে হবে দেশটির জনগণের সঙ্গে, কোনো বিশেষ দলের সঙ্গে নয়। ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি যখন অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন, তখন তিনি এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছিলেন। ভারতের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এখন এ বিষয়টি খুবই গুরুত্ব পাচ্ছে যে একটি দলের সঙ্গে বাড়তি সম্পর্ক রাখার বিষয়টি খুব কাজের কথা নয়।
প্রথম আলো দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারত বাড়তি কোনো ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন কি?
শমসের মবিন চৌধুরী দেখুন, জনগণের মধ্যে এ ধরনের একটি ধারণা রয়েছে। ভারতের কিছু কিছু গণমাধ্যমে এমন কিছু খবর বের হয়েছে, তাতে এটা মনে হওয়া খুব স্বাভাবিক যে এখনকার নির্বাচন নিয়ে দেশটির বাড়তি আগ্রহ রয়েছে। আগামী ৫ জানুয়ারি যে একতরফা নির্বাচন করতে যাচ্ছে সরকার, সেখানে এরই মধ্যে পর্যবেক্ষক না পাঠানের ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও কমনওয়েলথসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। অর্থাৎ এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণেরও অযোগ্য। ভারত দেশ হিসেবে পর্যবেক্ষক না পাঠালেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সূত্রে পর্যবেক্ষক পাঠিয়ে থাকে। এই নির্বাচনের ব্যাপারে দেশটির কাছ থেকে আমরা এখনো স্পষ্ট করে কিছু শুনিনি। ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ, সেখানে এর ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে এখনকার গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার প্রতিও ভারতের সমর্থন থাকাটাই স্বাভাবিক। আর বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ভারতের জন্যও একটি জরুরি বিষয়। অস্থিতিশীল বাংলাদেশ ভারতের স্বার্থের অনুকূলে যেতে পারে না।
প্রথম আলো তারানকোর উদ্যোগ তো কার্যত ব্যর্থ হলো, যখন এই সমঝোতা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তখন আপনাদের প্রত্যাশা কী ছিল?
শমসের মবিন চৌধুরী আমরা আসলে যা চেয়েছিলাম তা হচ্ছে, নির্বাচনের তফসিল স্থগিত করা এবং আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি করা। নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের চাওয়া হচ্ছে নিরপেক্ষতা ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সেই নির্বাচনের পন্থাটি ঠিক হবে, সেটাই ছিল আমাদের প্রত্যাশা।
প্রথম আলো বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনারা জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তরফে নতুন কোনো উদ্যোগ আশা করছেন কি না?
শমসের মবিন চৌধুরী জাতিসংঘ আবার কোনো উদ্যোগ নেবে কি না, সেটা তাদের ব্যাপার। জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবাই বাংলাদেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখতে চায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ব্যাপারে সচেতন রয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান ভৌগোলিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক—সব বিবেচনাতেই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাওয়া। প্রথম আলো সাম্প্রতিক কালে বিএনপির নেতৃত্বে ১৮-দলীয় জোট যে আন্দোলন করল, তাতে দুর্বৃত্তপনা ও সহিংসতার ঘটনাই বেশি ঘটেছে। আপনাদের পক্ষ থেকে এসব ঘটনার নিন্দা জানানো হয়নি। শমসের মবিন চৌধুরী দেখুন, এসব ঘটনার সঙ্গে আমাদের কর্মসূচির সম্পর্ক নেই। সর্বশেষ বাংলামোটর এলাকায় পুলিশ সদস্যের দুঃখজনক মৃত্যুর ঘটনাটি যখন ঘটে, তখন আমাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। আর এসব বর্বরতা ও সহিংসতার নিন্দা দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনেও নিন্দা জানিয়েছেন। আর প্রকাশ্যে নিন্দা- প্রতিবাদ জানানোর পথ তো সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের কোথাও সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না, সভানেত্রীর বাসা, অফিস অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। দলের কার্যালয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রথম আলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে আপনাদের অবস্থান কিন্তু এখনো পরিষ্কার নয়।
শমসের মবিন চৌধুরী আমরা এখন বিরোধী দলে, সরকারে যখন যাব তখন পরিষ্কার হবে যে এ ব্যাপারে আমরা কী করব। বিরোধী দলে বসে তা পরিষ্কার করা কঠিন। যুদ্ধাপরাধের বিচার অবশ্যই অব্যাহত থাকবে, তবে বিচার-প্রক্রিয়া গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের করা হবে। এখন যাদের বিচার চলছে, এর বাইরেও অনেকে নানা রাজনৈতিক বিবেচনায় এই প্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছেন, সবাইকেই বিচারের আওতায় আনা হবে।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
শমসের মবিন চৌধুরী ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এ কে এম জাকারিয়া
প্রথম আলো নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি কম আন্দোলন করল না, ২৫ নভেম্বর থেকে দফায় দফায় টানা অবরোধ কর্মসূচি হলো, কিন্তু সরকার তো একতরফা নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে?
শমসের মবিন চৌধুরী বিএনপির কর্মসূচি সফল হয়নি, তা বলা যাবে না। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে দেশের মানুষ এমন নির্বাচন চায় না। এটা তো শুধু ভোটারবিহীন নয়, প্রার্থীবিহীন নির্বাচন হচ্ছে। ১৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সংবাদমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। জনগণকে আমরা সচেতন করতে পেরেছি। প্রার্থী যাঁরা হয়েছেন, তাঁরা ঠিকমতো প্রচার-প্রচারণাও করতে পারছেন না। এটা তো আমাদের আন্দোলনের ফলেই হয়েছে।
প্রথম আলো আপনাদের চিন্তা-ভাবনা কী?
শমসের মবিন চৌধুরী খালেদা জিয়া ২৪ ডিসেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, গণতন্ত্র হচ্ছে আর্ট অব কম্প্রোমাইজ। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে এটা করতেই হবে। তিনি সেদিন এটা পরিষ্কার করেছেন যে দলের চেয়ে দেশ ও দেশের জনগণ বড়। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের সময় ও সুযোগ আছে। আইনগত বা সাংবিধানিক—সবভাবেই তা সম্ভব। সংসদ এখনো বহাল রয়েছে, আমরা আজকেই সংলাপে বসে একটি পথ খুঁজে বের করতে পারি।
প্রথম আলো বিএনপি কি আপস করতে প্রস্তুত রয়েছে?
শমসের মবিন চৌধুরী আমরা তো সব সময়ই বলে আসছি সংলাপে বসলে দুই পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধানে আসা সম্ভব। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত তারানকোর সঙ্গে যখন আমরা বৈঠক করেছি, তখন আমরা বলেছি যে তফসিল বাতিল, আটক নেতাদের মুক্তি—এ ধরনের কিছু উদ্যোগ নেওয়া হোক, আমরা আলোচনায় বসে সমাধানের একটি পথ খুঁজে বের করতে পারব। দেশকে বাঁচানোর সদিচ্ছা যদি সরকারের থাকে, তাহলে এটা সম্ভব। আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই, এখন সরকার যদি গায়ের জোরে একতরফা নির্বাচন করতে চায়, তাহলে তো আর হবে না।
প্রথম আলো বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ যে দাবি আদায়ে দলটি দেশের জনগণ নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে?
শমসের মবিন চৌধুরী এটা নিছক অপপ্রচার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের যে যোগাযোগ রয়েছে, সেটা গতানুগতিক। বিএনপি সব সময়ই জনগণের দল, নির্বাচনমুখী দল। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এবং জনগণের সমর্থনেই দলটি কাজ করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আওয়ামী লীগেরও যথেষ্ট যোগাযোগ রয়েছে এবং তা আমাদের চেয়ে কোনোভাবেই কম নয়। মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার অন্তত ছয়জন সরকার ও দলটির পররাষ্ট্রবিষয়ক দিকগুলো দেখছেন।
প্রথম আলো বিএনপির রাজনীতিতে ভারতবিরোধী অবস্থান স্পষ্ট, আবার এখন দেখা যাচ্ছে, ভারতের সমর্থন পাওয়ার বিষয়টিকেও দলটি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। বিএনপি কি অবস্থান পরিবর্তন করছে?
শমসের মবিন চৌধুরী ২০১২ সালে বেগম খালেদা জিয়া যখন ভারত সফরে গিয়েছিলেন, তখন তিনি দেশটির রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তিনি এটা স্পষ্ট করেছেন, যেকোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক লাভ ও পারস্পরিক সমমর্যাদা। ভারত এখন এটা বুঝতে পেরেছে যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে গেলে সেটা রাখতে হবে দেশটির জনগণের সঙ্গে, কোনো বিশেষ দলের সঙ্গে নয়। ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি যখন অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন, তখন তিনি এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছিলেন। ভারতের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এখন এ বিষয়টি খুবই গুরুত্ব পাচ্ছে যে একটি দলের সঙ্গে বাড়তি সম্পর্ক রাখার বিষয়টি খুব কাজের কথা নয়।
প্রথম আলো দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারত বাড়তি কোনো ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন কি?
শমসের মবিন চৌধুরী দেখুন, জনগণের মধ্যে এ ধরনের একটি ধারণা রয়েছে। ভারতের কিছু কিছু গণমাধ্যমে এমন কিছু খবর বের হয়েছে, তাতে এটা মনে হওয়া খুব স্বাভাবিক যে এখনকার নির্বাচন নিয়ে দেশটির বাড়তি আগ্রহ রয়েছে। আগামী ৫ জানুয়ারি যে একতরফা নির্বাচন করতে যাচ্ছে সরকার, সেখানে এরই মধ্যে পর্যবেক্ষক না পাঠানের ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও কমনওয়েলথসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। অর্থাৎ এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণেরও অযোগ্য। ভারত দেশ হিসেবে পর্যবেক্ষক না পাঠালেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সূত্রে পর্যবেক্ষক পাঠিয়ে থাকে। এই নির্বাচনের ব্যাপারে দেশটির কাছ থেকে আমরা এখনো স্পষ্ট করে কিছু শুনিনি। ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ, সেখানে এর ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে এখনকার গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার প্রতিও ভারতের সমর্থন থাকাটাই স্বাভাবিক। আর বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ভারতের জন্যও একটি জরুরি বিষয়। অস্থিতিশীল বাংলাদেশ ভারতের স্বার্থের অনুকূলে যেতে পারে না।
প্রথম আলো তারানকোর উদ্যোগ তো কার্যত ব্যর্থ হলো, যখন এই সমঝোতা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তখন আপনাদের প্রত্যাশা কী ছিল?
শমসের মবিন চৌধুরী আমরা আসলে যা চেয়েছিলাম তা হচ্ছে, নির্বাচনের তফসিল স্থগিত করা এবং আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি করা। নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের চাওয়া হচ্ছে নিরপেক্ষতা ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সেই নির্বাচনের পন্থাটি ঠিক হবে, সেটাই ছিল আমাদের প্রত্যাশা।
প্রথম আলো বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনারা জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তরফে নতুন কোনো উদ্যোগ আশা করছেন কি না?
শমসের মবিন চৌধুরী জাতিসংঘ আবার কোনো উদ্যোগ নেবে কি না, সেটা তাদের ব্যাপার। জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবাই বাংলাদেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখতে চায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ব্যাপারে সচেতন রয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান ভৌগোলিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক—সব বিবেচনাতেই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাওয়া। প্রথম আলো সাম্প্রতিক কালে বিএনপির নেতৃত্বে ১৮-দলীয় জোট যে আন্দোলন করল, তাতে দুর্বৃত্তপনা ও সহিংসতার ঘটনাই বেশি ঘটেছে। আপনাদের পক্ষ থেকে এসব ঘটনার নিন্দা জানানো হয়নি। শমসের মবিন চৌধুরী দেখুন, এসব ঘটনার সঙ্গে আমাদের কর্মসূচির সম্পর্ক নেই। সর্বশেষ বাংলামোটর এলাকায় পুলিশ সদস্যের দুঃখজনক মৃত্যুর ঘটনাটি যখন ঘটে, তখন আমাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। আর এসব বর্বরতা ও সহিংসতার নিন্দা দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনেও নিন্দা জানিয়েছেন। আর প্রকাশ্যে নিন্দা- প্রতিবাদ জানানোর পথ তো সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের কোথাও সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না, সভানেত্রীর বাসা, অফিস অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। দলের কার্যালয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রথম আলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে আপনাদের অবস্থান কিন্তু এখনো পরিষ্কার নয়।
শমসের মবিন চৌধুরী আমরা এখন বিরোধী দলে, সরকারে যখন যাব তখন পরিষ্কার হবে যে এ ব্যাপারে আমরা কী করব। বিরোধী দলে বসে তা পরিষ্কার করা কঠিন। যুদ্ধাপরাধের বিচার অবশ্যই অব্যাহত থাকবে, তবে বিচার-প্রক্রিয়া গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের করা হবে। এখন যাদের বিচার চলছে, এর বাইরেও অনেকে নানা রাজনৈতিক বিবেচনায় এই প্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছেন, সবাইকেই বিচারের আওতায় আনা হবে।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
শমসের মবিন চৌধুরী ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এ কে এম জাকারিয়া
No comments