জীবনের লাল ট্যাবলেট!
“সি ইউ হানি” বলে হোন্ডাটা স্টার্ট দেয়
রুমন। আমি চেয়ে থাকি ওর চলে যাওয়ার দিকে। রাতের অন্ধকারে ওর হোন্ডার
ব্যাক লাইটটা, এক চোখা দানোবের মতন আলো ছড়িয়ে, গলির মোড়ে হারিয়ে যায়।
আমার
সব কিছু কেমন যেন অবাক-অবাস্তব লাগে। আমি কিছু বলিনা, কেবল চেয়ে থাকি ওর
চলে যাবার দিকে। নিঃসঙ্গ এই আমি, আবার একা হয়ে যাই। অনন্তের মতন সিড়ি
বেয়ে, ছাদে চলে যাই। ছাদের অপেক্ষাকৃত নির্জন জায়গাটায় গিয়ে দাড়াই।
টুপ করে লাফ দিলে, কেমন হয়?! সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, এক লাফে। না,
মায়া লাগে খুব জীবনটার জন্য। বেচে থাকার আনন্দ ভর করে মাথায়। কিন্তু রাত
যত গভীর হয় মনের ভেতরে না পাওয়ার কষ্ট গুলোও গভীর হতে থাকে। কিছুতেই ঘুম
আসতে চায়না, কষ্ট হয় আমার। বুকের ভেতরটা কেমন মুচড়ে ওঠে। কান্না পায়,
প্রতি রাতেই এরকম হয়। তবে এই কষ্ট গুলো এখন আমার বড় বেশি চেনা বা আপন
হয়ে গেছে। চোখ বন্ধ করে ভেরা গুনি। একশ, নিরনব্বাই, আটানাব্বই……। নাহ ঘুম
আসতে চায়না কিছুতেই। ঘুমটা আমার ব্যাপারে খুব হারামি জিনিষ। কেবল মনে হয়
কি প্রয়োজন এই বেচে থাকার! চোখের সামনে দিয়ে বাল্যকাল বেনী দোলাতে-দোলাতে
কোথায় হারিয়ে গেলো? তবুও আমি পরে আছি জীবন নামের এই বাতিল আস্হাবলে। সেই
ছোট বেলা ছোট চাচা কাধে করে আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতো, সন্ধ্যা হলে মা
পড়াতেন,”হাম্টি ডাম্টি, হাম্টি ডাম্টি, স্যাট ওন এ ওয়াল।”
আজ সেই আমি কলেজে পড়ি “দি লানসন।”
অবাক লাগে আমার, কেমন করে বড় হয়ে গেলাম! বুক ভারা নারীত্ব বা যৌবনা। মাসের ভেতর সাতদিন অসুস্হ থাকি। শরিরের ভেতর এক প্রকার শির-শিরে অনুভুতি, একে কি কামনা বলে? কি এক অজানা অনুভুতির চাপে, কাউকে কাছে পেতে মন কেমন করে! কারো হাতের মোহন স্পর্শের আকুতিতে কেপে যায়, জীবনের সূচনার দরজা। মনের ভেতরকার পাপবোধ, বাধা দেয়। এভাবে হয়না, তবুও গদবাধা জীবনের অফুরন্ত নিয়মের ভেতর চলতে-চলতে, আজকাল খুব ক্লান্ত লাগে। তাই সবকিছুর পরিবর্তন চাই, চাই নতুনত্ব।
এখোনো মাঝে মাঝে বাবা কে খুব মিস করি। বাবা হ্যা বাবাইতো, আমার হাত ধরে হাটি-হাটি পা-পা যে শিখিয়েছেন। সেই লোকটা যার বুকের উপর শুয়ে আমি রাজকন্যার গল্প শুনেছি, “স্নোহোয়াইট” বন্ধী হয়ে আছে এক দুর্গের উপর। আর এক রাক্ষস পাহারা দিচ্ছে, অনবরত। রাজ পুত্র আসবে, আর ঘুম থেক তুলে নিয়ে যাবে রাজকন্যকে। বাবা জানেনা তার ছোট্ট “সুজানা” আজ বড় হয়ে গেছে। তারো একটা রাজপুত্রের দরকার। বাবা কেন এভাবে একা ফেলে চলে গেলো আমাকে, সেটা আমি জানি। কিন্তু একবারও কি বাবার মনে পরে নি আমার কথা, এই ১৮ বসন্তে!
বাবা তুমি বলেছিলে মানুষ চেনা নাকি খুব কঠিন। কিন্তু সেই মানুষ আমাকে কে চিনিয়ে দেবে, বাবা? কলেজ ফ্রেন্ড “রুমন” আমাকে লিফ্ট দেয় হোন্ডায়। আইল্যান্ডের উপরে গিয়ে জোড়ে ব্রেক কষে, আমি বুঝি এসব। মাঝে মাঝেই বলে হোন্ডার দুই পাশে পা দিয়ে বসতে, কিন্তু আমি বসিনা। আমি তারপরো ওর সাথে মেলা-মেশা বন্ধ করে দেই না। কেউতো অন্তত কিছুটা সময় আমাকে দিচ্ছে। সব কিছুর জন্যই মানুষ বিনিময় চায়, ফ্রিতে কেউ আর কিছু দেয়না। বান্ধবীরা ঠাট্টা করে- কেনো আমি স্লিভলেস পরিনা, কেনো আটো সাটো জিন্স পরিনা। বাবার কি একবারো মনে হয়নি আমার মেয়েটা মানুষ চিনতে ভুল করতে পারে, আমার যাওয়া দরকার মেয়েটার কাছে অথবা বাবা কেনো ভাবেনা আমার “স্নোহোয়াইট” মেয়েটা আজকে এক প্রাসাদে বন্ধী। ওকে মুক্ত করতে হবে। বাবা কি জানে, আমি এখোনো ওনার হাত ধরে, এগোলি-ওগলি হাটতে চাই। আমার কেন জেনো বার-বার বাবাকে মাফ করে দিতে ইচ্ছে করে। বাবা নামের মানুষটা হয়তো নিরুপায় হয়েই চলে গিয়েছিলেন, আমাকে ছেড়ে।
অফিসের “পি, এ” কে বিয়ে করে, বাবা সংসারী হয়ে গেলো। বাবা কে তখনো খুব বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো,- “বাবা তুমি ঠিকই করেছ।” বলা হয়নি, সব কথা কি আর বলা যায়, এক জীবনে? কথাটা বাবা শুনতেও চায়নি কোন দিন। নবীন বরনের দিন আমার এক কলেজ ফ্রেন্ড আমার চেহারা দেখে বলেছিলো “অপুর্ব”। আমার সৌন্দর্য আমার মনের ভেতরে স্পর্শ করেনা। কিন্তু এটুকু খুব বুঝি, আমি বাবা-মা কারোর মতন হইনি। মাঝে মাঝে এই প্রশ্নটা আমার মাথার ভেতর ঘোর পাক খায়, তাহলে? আমি কি বাবার মেয়ে না!
“মা” হ্যা, চিরো মমতার এক অদ্ভুত রুপ “মা”। কিন্তু বন্ধুদের এমন কথায় আমি তাল মেলাতে পারিনা। আমার কেন জেনো মনে হয়, মা আমাকে কিছুই দেয়নি মমতা বা ভালোবাসা অথবা সময়, কারন সময় নামক অদ্ভুত এক জিনিষ মায়ের কিভাবে যেনো, কেটে যায়। যেটা আমার কাটতে চায়না, কিছুতেই। কয়েকটা বয়ফ্রেন্ডকে সময় দিতে গিয়ে মায়ের আমাকে সময় দেবার ইচ্ছা থাকেনা। নানার রেখে যাওয়া এই ধানমন্ডির বাড়িটাতে আমি আছি, পড়ে থাকার মতন। বাবার বলা স্নোহোয়াইটের দুর্গ টার মতন এই বাড়িটা আমাকে আগলে রাখে। আমি অপেক্ষা করি একদিন আসবে, যেদিন বাবা-মা আবার এখানে থাকবে। আমরা তিন জনে মিলে থাকবো এই বাড়িটায়। কি জানি সেই অপেক্ষা কোন দিন শেষ হবে কিনা?!
রুমন একটা ওষুধ দিতে চেয়েছিলো, আমাকে। লাল রংয়ের ট্যাবলেট। বলেছিলো ওটা খেলে সব দুঃখ চলে যাবে, এক নিমিষে। সব উধাও হয়ে যাবে রাগ, অভিমান, ক্ষোভ। মাঝে-মাঝে মনে হয় ধুৎ ছাই, আর পারিনা। এবার পালবোই, এই সঙ্খনীল কারাগার থেকে।
সিড়ি বেয়ে ছাদ থেকে নামি। আমার রুমের দিকে যাই, মায়ের রুমে আলো জ্বলছে। ওনার রুম থেকে খিল-খিলে এক প্রকারের নেশা জড়ানো হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। আমি ভাবতে চাইনা মায়ের রুমের লক করা দরজার ওপাসে কি ঘটছে? কেবল বলতে চাই, “মা” এবার থামো, আমি বড় হয়েছি। বাবা ও থাকতে পারলো না তোমার সাথে। এভাবে হয়না “মা”। মরে যাওয়ার চিন্তাটা আবার মাথা চাড়া দেয়, আমার। মৃত্যুকে খুব ভয় করে, কিভাবে মারা গেলে একটু আরামে মরা যায়, ভাবি। ছাদ দিয়ে লাফ দিতে ইচ্ছে করেনা। মাথা ফেটে ঘিলু বের হয়ে যায়, বিভৎস। খুব ভয় করে আমার, মরে যেতে। মা-বাবা কি এটা জানে? নাকি ওনারা চান আমি মরে যাই। তাহলে পথের কাটা দুর হয়।
“মিস অনিমা চৌধুরী” আমার “মা” ওনাকে সব সময় “মিস” ডাকতে হবে নাহলে খুব রাগ হয়, ওনার। “মা” সিগারেট খায়। শ্লিভ লেছ ব্লাউজ পরে, চুল বব কাটা, আমার চিরো আধুনিক মাকে, আমার বড় ভয় হয়। যে বয়সের ছেলে গুলোর, এখন আমার বয় ফ্রেন্ড হবার কথা। মা সে গুলোকে নিয়ে আসেন, ওনার শোবার ঘরে। উনি একটা এ্যাড ফার্ম চালান, ছেলে গুলো প্রায় সবি উঠতি মডেল।
এই গল্পটা এখানে থামিয়ে দিতে, ইচ্ছে করছে আমার। মা-বাবা নামের দুটো পবিত্র শব্দকে নেগেটিভ ক্যারেক্টারে লিখতে, হাত থেমে আসছে। বরং গল্প টাকে অন্য দিকে ঘুড়িয়ে দেয়া যাক। যদিও জীবন গল্পের মতন হয় না। জীবন চলে তার নিয়মে।
সুজনাকে পাওয়া যাচ্ছে না, ও নেই কোথাও নেই। তন্য তন্য করে খোজার পর মিস অনিমা চৌধুরীর মনে একটা খটকা লাগে। মেয়েকে ওর বাবা ধরে নিয়ে গেলো নাতো। নাহ ঐ লোক তো এই মেয়ের বাবাই না, তাহলে ও কেন করাতে যাবে এমন। তবুও লোকটা খুব আদর করত সুজানাকে। কিন্তু এই এত বছরে যে লোকটা একটা ফোন পর্যন্ত করেনি, সেই লোক এভাবে এই মেয়েকে নিয়ে যাবে এটা ভাবা যায়না। তাহলে কি হতে পারে? মেয়েটা কি কোন বিপদে পরেছে।
অনিমা চৌধুরী থানায় বসে আছেন। সামনের চেয়ারে বসা, থানার সেকেন্ড অফিসার জানতে চাইলেন - কবে থেকে পাচ্ছেন না?
গত কাল থেকে।
-মেয়ের ছবি এনেছেন?
অনিমা চৌধুরী মেয়ের একটা ছবি ওনার কাছে দিলেন।
- এই মেয়ে আপনার!
হ্যা, কোন ডাউট আছে?!
- না মানে, এর পোষাক আশাকের সাথে তো আপনার অবস্হার কোন মিলই নেই!
দেখুন আপনি ফ্যাশন ডিজাইনার নন। আপনি আমার মেয়েকে খুজে বের করুন।
- বাসা থেকে কোন দামি কিছু খোয়া গেছে?
এতো বড় বাসা আমি সব কিছুর খোজ রাখি নাকি?
- না মানে টাকা পয়সা, গহনা।
না?
- মেয়ে কি নেশা টেশা করে?
না ওসবের ধারে কাছে ঘেসে না।
- আপনি কাউকে সন্দেহ করেন?
মেয়ের বাবা, করে থাকতে পারে।
- কেনো আপনারা এক সাথেক থাকেন না?
না।
-ওনার কোন ঠিকানা বা ফোন নাম্বার থাকলে দিন।
আজাহার সাহেবের মন ভালো নেই, ওনার দ্বিতীয় স্ত্রীর বুকে ক্যান্সার হয়েছে। ডাক্তার বলেছে খুব বেশিদিন, বাচবেনা। তার মন খুব খারাপ লাগছে, এক প্রকারের ভোতা ভাব মনের ভেতর ভর করছে। এই ঘরে তার কোন ছেলে পুলে হয়নি, নানান টেষ্ট করানোর পর ডাক্তার বলল আপনার স্পার্ম নেই, আপনি কখনো বাবা হতে পারবেন না। তার জীবনটা এরকম হচ্ছে কেনো? প্রথম স্ত্রী অনিমাকে সে পাগলের মতন ভালো বাসতো, একটা মেয়ে আছে তার। মেয়েটার জন্য তার বুকের ভেতর হুহু করে, অনিমার সাথে ছাড়া ছাড়ির পরও তিনি চেয়েছিলেন মেয়েটার সাথে যোগা যোগ রাখতে। কিন্তু অনিমার টাকার বড় উকিলের জোড়, আর আদালতে ওর মায়া কান্না, মেয়েটা কে ছিনিয়ে নিলো আমার কাছে থেকে। কিন্তু যাবার সময় বলে গেল এই মেয়ে তোমার না। আমার আগের কোনো প্রেমিকের হবে হয়তো। এতেও উনি রাগ করেননি, মেয়েটা ওনাকেই বাবা বলে জানে, কতটা আদর করে ডাকতো “ড্যাড্ডু”।
অনিমার বাবার অফিসে চাকরি করত আজাহার সাহেব। অনিমার বাবার অনুরোধেই তার বখে যাওয়া মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে ছিলেন তিনি, তবুও কেনো জেনো ভালো বেসে ফেলেছিলো অনিমা কে।
ফোনটা বাজছে,
হ্যালো বলে ফোন ধরতেই, ও পাস থেকে শোনা গেলো,
আমি থানার সেকেন্ড অফিসার বলছি, আপনাকে একটু থানায় আসতে হবে।
-কেনো?
আপনার মেয়ে সুজানাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
-পাওয়া যাচ্ছে না মানে?
আপনি প্লিজ একটু থানায় আসুন
-জি।
এত গুলো বছর পর অনিমা চৌধুরীকে দেখে আজাহার সাহেবের মনের ভেতর কেমন জেনো করে। বুকের ভেতর এক প্রকারের টান-টান ভাব কাজ করে। অনিমা চৌধুরী আজাহার সাহেবের দিকে ফিরেও তাকালেন না, কেবল একটা হুমহ সুচক শব্দ করলেন।
আজাহার সাহেব আর অনিমা এক রুমে বসে আছেন, পুলিশ নানান জায়গায় খবর নিচ্ছে। অনিমার কেমন যেনো কান্না পাচ্ছে, তবু তিনি কাদতে পারছেন না। আজাহারের মতন একজনের সামনে কাদতে তার মনের ভেতর এক প্রকার দন্দ কাজ করে, এই লোকের সামনে নিজে কে ছোট বা দুর্বল দেখানোর কোন কারন নেই। এত দিন সে সুজানাকে নিয়ে ভাবেনি কিন্তু ও হারিয়ে যাওয়ার পর থেকেই মনের ভেতর এক ধরনের নেই-নেই অনুভুতি কাজ করছে। উনি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেন না ওনার চিরো ভয়ের কান্নাটা ডুকরে বেড়িয়ে আসে। ইচ্ছা করে চিৎকার করে কাদতে। অনিমা কে কাদতে দেখে আজাহার সাহেব কেমন যেন দুর্বল হয়ে যায়। ওনারা অপেক্ষা করতে থাকেন মেয়ের ফিরে আাসার জন্য, ওনাদের এই অপেক্ষা কোন দিন শেষ হবে কি না জানা নেই। তবে একটি রাত শেষ হয়ে যায় দুজনার এক কামরায়।
“দেব” বসে আছে মুব্বাইয়ের একটা নাইট ক্লাবে, দুরে একটা মেয়ে ডিজের তালে নাচছে।
নাচের তালে তার শরিরের ভেতর এক প্রাকের কামুক দুলুনি কাজ করছে। তার ঠোটে গাড় লিপিষ্টিক, চেহারা দামি মেকাপে ঢাকা, পরনে মিনি স্কার্ট আর লাল রংয়ের টপস। ধোয়ার আড়ালে, নেশার ঘোরে টলছে মেয়েটা। দেব মেয়েটাকে ইসারায় কাছে ডাকে, মেয়েটা নাচতে নাচতে ছেলেটার কাছে আসে, কিতনে ইনকাম হুয়া।
- জাদা নেহি। আভিতো পুরে রাত বাকি।
হ্যা ঠিকসে কাম কারো, জিতনে জালদি মেরা প্যায়সা। মিলেগা ইতনে জলদি তুমহারা আজাদী মিলেগা, সামঝা।
- আভি কিতনে রুপিয়া দেনা পারেগা।
তুমহারা বয় ফ্রেন্ডনে পুরে ২০ লাখ লিয়া থা। আভি বহোত বাকি হ্যা।
তুমহারা আসলি নাম কিসোকো ভি মাত কাহো।
নকলি নাম কে ভিড়মে হামার আসলি যো নাম সুজানা হ্যা। বো খো গায়াহ্যা বাবু।
শেষ কথাঃ আজাহার সাহেবের ২য় স্ত্রী মারা গেছেন, উনি এবং
অনিমা চৌধুরী এখন এক সাথেই থাকেন, ওনারা এখনো অপেক্ষা করেন সুজানার ফিরে আসার, কোন হদিস করা যায় নি মেয়েটা কোথায় উধাও হয়ে গেলো।
সুজানাকে ভারতে বেড়ানোর কথা বলে, বাড়ি থেকে নিয়ে এসে ছিলো রুমন। সুজানার একাকিত্ব জীবন থেকে মুক্তি পেতে পালিয়ে যাওয়া টাই শ্রেয় ভেবে ছিলো। বেনাপোল হয়ে, মুম্বাইয়ের এই অন্ধকার গলিতে বেচে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলো চিরো তরে। সুজানা আর ফিরতে পেরেছিলো কি না জানা নেই। তবে যে বাবা মায়ের জন্য সুজানা আজীবন অপেক্ষা করে ছিলো তার এখন প্রতি দিন অপেক্ষা করে সুজানার জন্য। অপেক্ষার কষ্ট সবারই বোঝা উচিৎ হয় তাই জীবন ওনাদের কে নিয়ে এই খেলা টা খেললো।
মুখ বন্ধঃ এই গল্পের সব চরিত্রই কাল্পনিক, তবে এখন আর একটা গল্প বলি কয়েক লাইনে যেটার সব চরিত্রই বাস্তব।
আসমা বেগমের আজান শুনে ঘুম ভাংলো। উনি ওযু করলেন। পাশের ঘরে মেয়েটা ঘুমোচ্ছে ওর নাম “সুরাইয়া” অনেক রাত পর্যন্ত পড়েছে মেয়েটা উনি একগ্লাশ দুধ গোলালেন, দুধ নিয়ে মেয়েকে ডেকে উঠালেন। মেয়েকে দুধ খাইয়ে বললেন, মা যাও নামাজ পড়। আমি দেখি তোমার বাবা কি করছেন। উনি সুরাইয়ার বাবাকে ডাকলেন। সুরাইয়ার বাবা নামাজ পড়তে যাবার আগে মেয়ের রুমি উকি দিলেন কিরে মা নামাজ হলো তোর? সুরাইয়া ঘড়থেকে বেড়িয়ে বাবার সামনে এসে দাড়ালো। মারে কলেজ কটায় আজকে?
-দশটায় বাবা।
আজকে আমি তোর কলেজের দিক দিয়ে যাবো,ভাবছি তোকে লিফট দেবো।
-ঠিক আছে বাবা।
এই গল্পটা আর বেশিক্ষন লেখার দরকার নেই। বোধ করি সবাই বুঝেছেন আমি কি বলতে চেয়েছি। আমি দুটো পরিবারের চিত্র আপনাদের সমানে তুলে ধরলাম, শেষের পরিবারটির মায়া, মমতা এবং আন্তরিকতা আর ধর্ম পালনের মাধ্যমে যে সুন্দর সকালটির সুচনা করছে তাতে বোঝাই যায় তাদের সারাটা দিন কেমন কাটবে? বা ইংরেজীতে বলা যায় ” মর্নিং সোজ দ্যা ডে।” অনাবিল এক আনন্দময় জীবন। অথচ এই সুখ ছেড়ে পাশ্চাত্য সো কল্ড আধুনিকতার দিকে, আমাদের সমাজ যে হারে ঝুকে যাচ্ছে তাতে মানুষের জীবনে যে কম্প্লেক্স তৈরি করছে, তার হতাশায় মানুষ আজ উদ্ভ্রান্ত। সন্তানের হাতে মা বাবা খুন হয়। মা বাবার হাতে সন্তান। যে সমাজ নিজের রক্তের সম্পর্কের মানুষ বা অতি আপন জনকে খুন করতে শেখায় সেই সমাজে আমারা একে অপরের কাছে কতখানি সেইভ?
আজ সেই আমি কলেজে পড়ি “দি লানসন।”
অবাক লাগে আমার, কেমন করে বড় হয়ে গেলাম! বুক ভারা নারীত্ব বা যৌবনা। মাসের ভেতর সাতদিন অসুস্হ থাকি। শরিরের ভেতর এক প্রকার শির-শিরে অনুভুতি, একে কি কামনা বলে? কি এক অজানা অনুভুতির চাপে, কাউকে কাছে পেতে মন কেমন করে! কারো হাতের মোহন স্পর্শের আকুতিতে কেপে যায়, জীবনের সূচনার দরজা। মনের ভেতরকার পাপবোধ, বাধা দেয়। এভাবে হয়না, তবুও গদবাধা জীবনের অফুরন্ত নিয়মের ভেতর চলতে-চলতে, আজকাল খুব ক্লান্ত লাগে। তাই সবকিছুর পরিবর্তন চাই, চাই নতুনত্ব।
এখোনো মাঝে মাঝে বাবা কে খুব মিস করি। বাবা হ্যা বাবাইতো, আমার হাত ধরে হাটি-হাটি পা-পা যে শিখিয়েছেন। সেই লোকটা যার বুকের উপর শুয়ে আমি রাজকন্যার গল্প শুনেছি, “স্নোহোয়াইট” বন্ধী হয়ে আছে এক দুর্গের উপর। আর এক রাক্ষস পাহারা দিচ্ছে, অনবরত। রাজ পুত্র আসবে, আর ঘুম থেক তুলে নিয়ে যাবে রাজকন্যকে। বাবা জানেনা তার ছোট্ট “সুজানা” আজ বড় হয়ে গেছে। তারো একটা রাজপুত্রের দরকার। বাবা কেন এভাবে একা ফেলে চলে গেলো আমাকে, সেটা আমি জানি। কিন্তু একবারও কি বাবার মনে পরে নি আমার কথা, এই ১৮ বসন্তে!
বাবা তুমি বলেছিলে মানুষ চেনা নাকি খুব কঠিন। কিন্তু সেই মানুষ আমাকে কে চিনিয়ে দেবে, বাবা? কলেজ ফ্রেন্ড “রুমন” আমাকে লিফ্ট দেয় হোন্ডায়। আইল্যান্ডের উপরে গিয়ে জোড়ে ব্রেক কষে, আমি বুঝি এসব। মাঝে মাঝেই বলে হোন্ডার দুই পাশে পা দিয়ে বসতে, কিন্তু আমি বসিনা। আমি তারপরো ওর সাথে মেলা-মেশা বন্ধ করে দেই না। কেউতো অন্তত কিছুটা সময় আমাকে দিচ্ছে। সব কিছুর জন্যই মানুষ বিনিময় চায়, ফ্রিতে কেউ আর কিছু দেয়না। বান্ধবীরা ঠাট্টা করে- কেনো আমি স্লিভলেস পরিনা, কেনো আটো সাটো জিন্স পরিনা। বাবার কি একবারো মনে হয়নি আমার মেয়েটা মানুষ চিনতে ভুল করতে পারে, আমার যাওয়া দরকার মেয়েটার কাছে অথবা বাবা কেনো ভাবেনা আমার “স্নোহোয়াইট” মেয়েটা আজকে এক প্রাসাদে বন্ধী। ওকে মুক্ত করতে হবে। বাবা কি জানে, আমি এখোনো ওনার হাত ধরে, এগোলি-ওগলি হাটতে চাই। আমার কেন জেনো বার-বার বাবাকে মাফ করে দিতে ইচ্ছে করে। বাবা নামের মানুষটা হয়তো নিরুপায় হয়েই চলে গিয়েছিলেন, আমাকে ছেড়ে।
অফিসের “পি, এ” কে বিয়ে করে, বাবা সংসারী হয়ে গেলো। বাবা কে তখনো খুব বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো,- “বাবা তুমি ঠিকই করেছ।” বলা হয়নি, সব কথা কি আর বলা যায়, এক জীবনে? কথাটা বাবা শুনতেও চায়নি কোন দিন। নবীন বরনের দিন আমার এক কলেজ ফ্রেন্ড আমার চেহারা দেখে বলেছিলো “অপুর্ব”। আমার সৌন্দর্য আমার মনের ভেতরে স্পর্শ করেনা। কিন্তু এটুকু খুব বুঝি, আমি বাবা-মা কারোর মতন হইনি। মাঝে মাঝে এই প্রশ্নটা আমার মাথার ভেতর ঘোর পাক খায়, তাহলে? আমি কি বাবার মেয়ে না!
“মা” হ্যা, চিরো মমতার এক অদ্ভুত রুপ “মা”। কিন্তু বন্ধুদের এমন কথায় আমি তাল মেলাতে পারিনা। আমার কেন জেনো মনে হয়, মা আমাকে কিছুই দেয়নি মমতা বা ভালোবাসা অথবা সময়, কারন সময় নামক অদ্ভুত এক জিনিষ মায়ের কিভাবে যেনো, কেটে যায়। যেটা আমার কাটতে চায়না, কিছুতেই। কয়েকটা বয়ফ্রেন্ডকে সময় দিতে গিয়ে মায়ের আমাকে সময় দেবার ইচ্ছা থাকেনা। নানার রেখে যাওয়া এই ধানমন্ডির বাড়িটাতে আমি আছি, পড়ে থাকার মতন। বাবার বলা স্নোহোয়াইটের দুর্গ টার মতন এই বাড়িটা আমাকে আগলে রাখে। আমি অপেক্ষা করি একদিন আসবে, যেদিন বাবা-মা আবার এখানে থাকবে। আমরা তিন জনে মিলে থাকবো এই বাড়িটায়। কি জানি সেই অপেক্ষা কোন দিন শেষ হবে কিনা?!
রুমন একটা ওষুধ দিতে চেয়েছিলো, আমাকে। লাল রংয়ের ট্যাবলেট। বলেছিলো ওটা খেলে সব দুঃখ চলে যাবে, এক নিমিষে। সব উধাও হয়ে যাবে রাগ, অভিমান, ক্ষোভ। মাঝে-মাঝে মনে হয় ধুৎ ছাই, আর পারিনা। এবার পালবোই, এই সঙ্খনীল কারাগার থেকে।
সিড়ি বেয়ে ছাদ থেকে নামি। আমার রুমের দিকে যাই, মায়ের রুমে আলো জ্বলছে। ওনার রুম থেকে খিল-খিলে এক প্রকারের নেশা জড়ানো হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। আমি ভাবতে চাইনা মায়ের রুমের লক করা দরজার ওপাসে কি ঘটছে? কেবল বলতে চাই, “মা” এবার থামো, আমি বড় হয়েছি। বাবা ও থাকতে পারলো না তোমার সাথে। এভাবে হয়না “মা”। মরে যাওয়ার চিন্তাটা আবার মাথা চাড়া দেয়, আমার। মৃত্যুকে খুব ভয় করে, কিভাবে মারা গেলে একটু আরামে মরা যায়, ভাবি। ছাদ দিয়ে লাফ দিতে ইচ্ছে করেনা। মাথা ফেটে ঘিলু বের হয়ে যায়, বিভৎস। খুব ভয় করে আমার, মরে যেতে। মা-বাবা কি এটা জানে? নাকি ওনারা চান আমি মরে যাই। তাহলে পথের কাটা দুর হয়।
“মিস অনিমা চৌধুরী” আমার “মা” ওনাকে সব সময় “মিস” ডাকতে হবে নাহলে খুব রাগ হয়, ওনার। “মা” সিগারেট খায়। শ্লিভ লেছ ব্লাউজ পরে, চুল বব কাটা, আমার চিরো আধুনিক মাকে, আমার বড় ভয় হয়। যে বয়সের ছেলে গুলোর, এখন আমার বয় ফ্রেন্ড হবার কথা। মা সে গুলোকে নিয়ে আসেন, ওনার শোবার ঘরে। উনি একটা এ্যাড ফার্ম চালান, ছেলে গুলো প্রায় সবি উঠতি মডেল।
এই গল্পটা এখানে থামিয়ে দিতে, ইচ্ছে করছে আমার। মা-বাবা নামের দুটো পবিত্র শব্দকে নেগেটিভ ক্যারেক্টারে লিখতে, হাত থেমে আসছে। বরং গল্প টাকে অন্য দিকে ঘুড়িয়ে দেয়া যাক। যদিও জীবন গল্পের মতন হয় না। জীবন চলে তার নিয়মে।
সুজনাকে পাওয়া যাচ্ছে না, ও নেই কোথাও নেই। তন্য তন্য করে খোজার পর মিস অনিমা চৌধুরীর মনে একটা খটকা লাগে। মেয়েকে ওর বাবা ধরে নিয়ে গেলো নাতো। নাহ ঐ লোক তো এই মেয়ের বাবাই না, তাহলে ও কেন করাতে যাবে এমন। তবুও লোকটা খুব আদর করত সুজানাকে। কিন্তু এই এত বছরে যে লোকটা একটা ফোন পর্যন্ত করেনি, সেই লোক এভাবে এই মেয়েকে নিয়ে যাবে এটা ভাবা যায়না। তাহলে কি হতে পারে? মেয়েটা কি কোন বিপদে পরেছে।
অনিমা চৌধুরী থানায় বসে আছেন। সামনের চেয়ারে বসা, থানার সেকেন্ড অফিসার জানতে চাইলেন - কবে থেকে পাচ্ছেন না?
গত কাল থেকে।
-মেয়ের ছবি এনেছেন?
অনিমা চৌধুরী মেয়ের একটা ছবি ওনার কাছে দিলেন।
- এই মেয়ে আপনার!
হ্যা, কোন ডাউট আছে?!
- না মানে, এর পোষাক আশাকের সাথে তো আপনার অবস্হার কোন মিলই নেই!
দেখুন আপনি ফ্যাশন ডিজাইনার নন। আপনি আমার মেয়েকে খুজে বের করুন।
- বাসা থেকে কোন দামি কিছু খোয়া গেছে?
এতো বড় বাসা আমি সব কিছুর খোজ রাখি নাকি?
- না মানে টাকা পয়সা, গহনা।
না?
- মেয়ে কি নেশা টেশা করে?
না ওসবের ধারে কাছে ঘেসে না।
- আপনি কাউকে সন্দেহ করেন?
মেয়ের বাবা, করে থাকতে পারে।
- কেনো আপনারা এক সাথেক থাকেন না?
না।
-ওনার কোন ঠিকানা বা ফোন নাম্বার থাকলে দিন।
আজাহার সাহেবের মন ভালো নেই, ওনার দ্বিতীয় স্ত্রীর বুকে ক্যান্সার হয়েছে। ডাক্তার বলেছে খুব বেশিদিন, বাচবেনা। তার মন খুব খারাপ লাগছে, এক প্রকারের ভোতা ভাব মনের ভেতর ভর করছে। এই ঘরে তার কোন ছেলে পুলে হয়নি, নানান টেষ্ট করানোর পর ডাক্তার বলল আপনার স্পার্ম নেই, আপনি কখনো বাবা হতে পারবেন না। তার জীবনটা এরকম হচ্ছে কেনো? প্রথম স্ত্রী অনিমাকে সে পাগলের মতন ভালো বাসতো, একটা মেয়ে আছে তার। মেয়েটার জন্য তার বুকের ভেতর হুহু করে, অনিমার সাথে ছাড়া ছাড়ির পরও তিনি চেয়েছিলেন মেয়েটার সাথে যোগা যোগ রাখতে। কিন্তু অনিমার টাকার বড় উকিলের জোড়, আর আদালতে ওর মায়া কান্না, মেয়েটা কে ছিনিয়ে নিলো আমার কাছে থেকে। কিন্তু যাবার সময় বলে গেল এই মেয়ে তোমার না। আমার আগের কোনো প্রেমিকের হবে হয়তো। এতেও উনি রাগ করেননি, মেয়েটা ওনাকেই বাবা বলে জানে, কতটা আদর করে ডাকতো “ড্যাড্ডু”।
অনিমার বাবার অফিসে চাকরি করত আজাহার সাহেব। অনিমার বাবার অনুরোধেই তার বখে যাওয়া মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে ছিলেন তিনি, তবুও কেনো জেনো ভালো বেসে ফেলেছিলো অনিমা কে।
ফোনটা বাজছে,
হ্যালো বলে ফোন ধরতেই, ও পাস থেকে শোনা গেলো,
আমি থানার সেকেন্ড অফিসার বলছি, আপনাকে একটু থানায় আসতে হবে।
-কেনো?
আপনার মেয়ে সুজানাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
-পাওয়া যাচ্ছে না মানে?
আপনি প্লিজ একটু থানায় আসুন
-জি।
এত গুলো বছর পর অনিমা চৌধুরীকে দেখে আজাহার সাহেবের মনের ভেতর কেমন জেনো করে। বুকের ভেতর এক প্রকারের টান-টান ভাব কাজ করে। অনিমা চৌধুরী আজাহার সাহেবের দিকে ফিরেও তাকালেন না, কেবল একটা হুমহ সুচক শব্দ করলেন।
আজাহার সাহেব আর অনিমা এক রুমে বসে আছেন, পুলিশ নানান জায়গায় খবর নিচ্ছে। অনিমার কেমন যেনো কান্না পাচ্ছে, তবু তিনি কাদতে পারছেন না। আজাহারের মতন একজনের সামনে কাদতে তার মনের ভেতর এক প্রকার দন্দ কাজ করে, এই লোকের সামনে নিজে কে ছোট বা দুর্বল দেখানোর কোন কারন নেই। এত দিন সে সুজানাকে নিয়ে ভাবেনি কিন্তু ও হারিয়ে যাওয়ার পর থেকেই মনের ভেতর এক ধরনের নেই-নেই অনুভুতি কাজ করছে। উনি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেন না ওনার চিরো ভয়ের কান্নাটা ডুকরে বেড়িয়ে আসে। ইচ্ছা করে চিৎকার করে কাদতে। অনিমা কে কাদতে দেখে আজাহার সাহেব কেমন যেন দুর্বল হয়ে যায়। ওনারা অপেক্ষা করতে থাকেন মেয়ের ফিরে আাসার জন্য, ওনাদের এই অপেক্ষা কোন দিন শেষ হবে কি না জানা নেই। তবে একটি রাত শেষ হয়ে যায় দুজনার এক কামরায়।
“দেব” বসে আছে মুব্বাইয়ের একটা নাইট ক্লাবে, দুরে একটা মেয়ে ডিজের তালে নাচছে।
নাচের তালে তার শরিরের ভেতর এক প্রাকের কামুক দুলুনি কাজ করছে। তার ঠোটে গাড় লিপিষ্টিক, চেহারা দামি মেকাপে ঢাকা, পরনে মিনি স্কার্ট আর লাল রংয়ের টপস। ধোয়ার আড়ালে, নেশার ঘোরে টলছে মেয়েটা। দেব মেয়েটাকে ইসারায় কাছে ডাকে, মেয়েটা নাচতে নাচতে ছেলেটার কাছে আসে, কিতনে ইনকাম হুয়া।
- জাদা নেহি। আভিতো পুরে রাত বাকি।
হ্যা ঠিকসে কাম কারো, জিতনে জালদি মেরা প্যায়সা। মিলেগা ইতনে জলদি তুমহারা আজাদী মিলেগা, সামঝা।
- আভি কিতনে রুপিয়া দেনা পারেগা।
তুমহারা বয় ফ্রেন্ডনে পুরে ২০ লাখ লিয়া থা। আভি বহোত বাকি হ্যা।
তুমহারা আসলি নাম কিসোকো ভি মাত কাহো।
নকলি নাম কে ভিড়মে হামার আসলি যো নাম সুজানা হ্যা। বো খো গায়াহ্যা বাবু।
শেষ কথাঃ আজাহার সাহেবের ২য় স্ত্রী মারা গেছেন, উনি এবং
অনিমা চৌধুরী এখন এক সাথেই থাকেন, ওনারা এখনো অপেক্ষা করেন সুজানার ফিরে আসার, কোন হদিস করা যায় নি মেয়েটা কোথায় উধাও হয়ে গেলো।
সুজানাকে ভারতে বেড়ানোর কথা বলে, বাড়ি থেকে নিয়ে এসে ছিলো রুমন। সুজানার একাকিত্ব জীবন থেকে মুক্তি পেতে পালিয়ে যাওয়া টাই শ্রেয় ভেবে ছিলো। বেনাপোল হয়ে, মুম্বাইয়ের এই অন্ধকার গলিতে বেচে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলো চিরো তরে। সুজানা আর ফিরতে পেরেছিলো কি না জানা নেই। তবে যে বাবা মায়ের জন্য সুজানা আজীবন অপেক্ষা করে ছিলো তার এখন প্রতি দিন অপেক্ষা করে সুজানার জন্য। অপেক্ষার কষ্ট সবারই বোঝা উচিৎ হয় তাই জীবন ওনাদের কে নিয়ে এই খেলা টা খেললো।
মুখ বন্ধঃ এই গল্পের সব চরিত্রই কাল্পনিক, তবে এখন আর একটা গল্প বলি কয়েক লাইনে যেটার সব চরিত্রই বাস্তব।
আসমা বেগমের আজান শুনে ঘুম ভাংলো। উনি ওযু করলেন। পাশের ঘরে মেয়েটা ঘুমোচ্ছে ওর নাম “সুরাইয়া” অনেক রাত পর্যন্ত পড়েছে মেয়েটা উনি একগ্লাশ দুধ গোলালেন, দুধ নিয়ে মেয়েকে ডেকে উঠালেন। মেয়েকে দুধ খাইয়ে বললেন, মা যাও নামাজ পড়। আমি দেখি তোমার বাবা কি করছেন। উনি সুরাইয়ার বাবাকে ডাকলেন। সুরাইয়ার বাবা নামাজ পড়তে যাবার আগে মেয়ের রুমি উকি দিলেন কিরে মা নামাজ হলো তোর? সুরাইয়া ঘড়থেকে বেড়িয়ে বাবার সামনে এসে দাড়ালো। মারে কলেজ কটায় আজকে?
-দশটায় বাবা।
আজকে আমি তোর কলেজের দিক দিয়ে যাবো,ভাবছি তোকে লিফট দেবো।
-ঠিক আছে বাবা।
এই গল্পটা আর বেশিক্ষন লেখার দরকার নেই। বোধ করি সবাই বুঝেছেন আমি কি বলতে চেয়েছি। আমি দুটো পরিবারের চিত্র আপনাদের সমানে তুলে ধরলাম, শেষের পরিবারটির মায়া, মমতা এবং আন্তরিকতা আর ধর্ম পালনের মাধ্যমে যে সুন্দর সকালটির সুচনা করছে তাতে বোঝাই যায় তাদের সারাটা দিন কেমন কাটবে? বা ইংরেজীতে বলা যায় ” মর্নিং সোজ দ্যা ডে।” অনাবিল এক আনন্দময় জীবন। অথচ এই সুখ ছেড়ে পাশ্চাত্য সো কল্ড আধুনিকতার দিকে, আমাদের সমাজ যে হারে ঝুকে যাচ্ছে তাতে মানুষের জীবনে যে কম্প্লেক্স তৈরি করছে, তার হতাশায় মানুষ আজ উদ্ভ্রান্ত। সন্তানের হাতে মা বাবা খুন হয়। মা বাবার হাতে সন্তান। যে সমাজ নিজের রক্তের সম্পর্কের মানুষ বা অতি আপন জনকে খুন করতে শেখায় সেই সমাজে আমারা একে অপরের কাছে কতখানি সেইভ?
No comments