মিছে রাগ করো না
রাগ আর অনুরাগের মধ্যে কোথাও কি একটা সম্পর্ক রয়েছে? নাকি দুটো নেহাতই
শব্দের পিঠে শব্দ গাঁথা? কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় একদা লিখেছিলেন, ‘ভালবাসা
পেলে সব লণ্ডভণ্ড করে চলে যাবো’।
ভালবাসার জন্য প্রতীক্ষাতেই কবির এই রাগ
পুষে রাখা, তা একবার পেয়ে গেলে রাগ ফুরিয়ে যাওয়ার কথাই বলেছিলেন তিনি।
জেন-ওয়াইও অনেকটা এভাবেই মনে মনে লালন করছে রাগ।
ভালবাসা না-পাওয়ার থেকে রাগ। অন্যজনের কাছ থেকে স্বীকৃতি না-পাওয়ার রাগ। কোনও কিছুর চাপে কোণঠাসা হতে হতে রাগ। সেই রাগ চট করে ঝেড়ে ফেলা যাচ্ছে না বলেই জেন-ওয়াইয়ের মধ্যে বাড়ছে অস্থিরতা। সেই কথাই বলছিল এক বেসরকারি কলেজের ছাত্রী ইচ্ছে মিত্র। ‘মাঝে মাঝেই বিচ্ছিরি রকমের রাগ হয় আমার নিজের ওপর। এই রাগটা মাঝেমধ্যেই মেঘে ঢাকা সূর্যর মতন ফুটে বেরিয়ে আসে। তখন ইচ্ছে করে ছুঁড়ে ফেলে দিতে সব কিছু, সব। বাড়ি, নীল সেলফোন, প্রিয় হাতের কাজের সরঞ্জাম, ছোটবেলার খেলনার রূপকথাভরা বাক্স, প্রেমিকের আঘাতভরা ভালবাসা, এমনকি বাবা মায়ের অকারণ স্নেহ- সবকিছু। বুকের মধ্যে কেবল বারে বারে গুমরে গুমরে ওঠে সকল চেপে থাকা কষ্ট, অভিযোগ, অভিমান। কিছুই যেন ঠিক হল না বলে মনে হয়। মনে হয়, কেউ আমায় বুঝতে পারছে না’, বেশ মুখ ভার করেই কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে গেল মেয়ে।
মনোবিদ অভিরুচি চট্টোপাধ্যায়ও মনে করেন, রাগের মধ্যে বেশির ভাগ সময়েই লুকিয়ে থাকে একটা ভালবাসা না-পাওয়ার জায়গা। এই প্রসঙ্গে আসার আগে তিনি খেই ধরিয়ে দিলেন, রাগ আসলে কী! ‘প্রত্যেক মানুষই জীবনের কোনও না কোনও সময় অন্যের ওপর রাগ করেছেন অথবা অন্যের রাগের শিকার হয়েছেন। রাগ কিন্তু রোগ নয়। নয় কোনও মানসিক সমস্যাও। বরং প্রকৃত সুস্থ মানুষের সম্পূ র্ণ স্বাভাবিক একটি আবেগ বা ইমোশন। সুস্থ মনের অত্যন্ত স্বাভাবিক উপাদান রাগ। কোনও কারণে সামান্য বিরক্তি থেকে শুরু করে প্রবল উত্তেজনা পর্যন্ত রাগ চাড়িয়ে যেতে পারে। আর এই সামান্য বিরক্তির পিছনেই দীর্ঘকালীন অথবা স্বল্পকালীন কারণ হিসেবে কাজ করে যায় ভালবাসা না-পাওয়া অথবা যথেষ্ট অ্যাটেনশন না-পাওয়ার সমস্যা। মুশকিলটা হল, বিশ্বায়ণের দৌড়ে এখন কেউই কি আর নিজেকে ছেড়ে অন্যের কথা ভাবে? ফলে সম্পর্কে ভালবাসা কমছে, কমছে সহমর্মিতা, তার থেকেই মেঘের মতো মনের আকাশে জমা হচ্ছে দারুণ রাগ। সব সময় সেটাকে চেপে রাখা যাচ্ছে না বলেই হঠাৎ হঠাৎ তা বেরিয়ে আসছে। অস্থির হয়ে পড়ছে জেন-ওয়াই’, জানাচ্ছেন মনোবিদ।
সদ্য কলেজ পাশ করে কর্পোরেট জগতে চাকরি করতে ঢোকা কিংশুকেরও যেমন কথায় কথায় রাগ হয়। সে কথা বলছিলেন ওর মা প্রতিভা সেন, ‘আত্মীয়স্বজন যদিও বলেন কিংশুক নাকি খুব নম্র শান্ত ছেলে; হঠাৎ হঠাৎ রাগের তোড় একমাত্র আমিই টের পাই। পছন্দের শার্টটা নিখুঁতভাবে ইস্ত্রি করতে চেয়েও সকাল থেকে বার বার তাল কাটছে। তাতেও রাগ! এক কথা বার বার মা কেন বলছে তাতেও রেগে ওঠে কিংশুক! অফিসের অ্যাসাইনমেন্ট ফুলফিল হয়নি সময় মতো, মাথা একেবারে আগুন! এ সবের সঙ্গেই যতটা সম্ভব মানিয়ে চলি আমরা। এখন ছেলে রেগে গেলে আর তর্কাতর্কি করি না। রাগটা কমলে তখন আবার কথা বলি’!
ইচ্ছে বা কিংশুকের মতো এই শহরে, অনেকেরই এমন রাগ আছে। অকারণে বা কারণে রেগে যাওয়ায় কেউ কেউ ক্ষতি করেন জিনিসপত্রের, কেউ বা নিজের। নিজের বা প্রিয় মানুষের ওপর রাগ যখন সীমা ছাড়িয়ে যায়, চাপ বাড়ে মনে, সাফার করে যার জন্য অনেক কিছু। কষ্ট পান চারপাশের মানুষরাও। ‘কথায় কথায় রাগ হলে থেরাপির মতো করে সেটাকে কমানোর চেষ্টা করা উচিৎ। রাগের ফলে বেশ কিছু শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন দেখা যায়, হৃৎপিণ্ডের গতি ও রক্তচাপ বেড়ে যায়। অবদমিত রাগ থেকে হতে পারে নানাবিধ মানসিক ও শারীরিক সমস্যা। বাড়তে পারে বিষণ্ণতা, উচ্চ রক্তচাপ, খিটখিটে মেজাজে বদলে যেতে পারে হাসিখুশি স্বভাব। মনে বাসা বাঁধতে পারে গভীর ডিপ্রেশন’, সতর্ক করে দিচ্ছেন মনোবিদ অভিরুচি। পাশাপাশি, তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন রাগ কমানোর কিছু সহজ উপায়।
রাগের লাগাম হিসেবে যুক্তির বিকল্প নেই। কারও ওপর বা কোনও ঘটনার ওপর রাগ করলে সবার প্রথমে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন ঘটনাটি কেন ঘটেছে। আপনার রাগ করার যথার্থ কারণ থাকলেও নানা যুক্তির প্রয়োগে আপনি সেই কারণটিকে একপাশে সরিয়ে রাখতে পারেন। রাগের কোনও বিষয়কে কেবল নিজের দিক থেকে না দেখে অপর পক্ষের দিক থেকেও দেখার চেষ্টা করুন। তাতে সহজে মাথা ঠান্ডা হয়ে যাবে। বেশি রাগের ঘটনা ঘটলে প্রয়োজনে ঘটনাস্থল থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে চলে যান। নিজেকে একটুক্ষণের জন্য একা করে ফেলুন। তাহলেই একসময়ে প্রিয় মানুষদের জন্য মন কাঁদবে, রাগও পড়ে আসবে। রাগের কারণ ঘটলে নিজেকে যতটা সম্ভব রিল্যাক্স করে ফেলুন। বড় করে শ্বাস নিন। মনে মনে নিজের প্রতি ‘ঠিক আছে’ ‘শান্ত হও’ জাতীয় কিছু বারবার উচ্চারণ করতে পারেন। ভাল কোনও সুন্দর দৃশ্য, আপনার প্রিয়জনের মুখ মনে করতে পারেন। রাগ যাতে চট করে না-হয়, তার জন্য মেডিটেশনের বিকল্প নেই। প্রত্যেক দিন আধ ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা মতো মেডিটেট করলেই মন-মেজাজ অনেকটা শান্ত থাকবে।
প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততার মধ্যে কিছু না কিছু সময় নিজেকে দিন। নিজেকে নিয়ে প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট ভাবুন। আর এর কোনওটাতেই যদি কাজ না-হয়? তাহলে বড় বিপদ! তখন ‘পলকের পরে থাকে বুক ভ’রে চিরজনমের বেদনা’! সাধে কি আর কবি বলেছেন, বঁধু, মিছে রাগ করো না’! অগত্যা রাগ নিয়ন্ত্রণ কৌশল আয়ত্ত করার জন্য মনোচিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী বা কাউন্সিলরের সাহায্য নেওয়া ছাড়া আর উপায় কী!
ভালবাসা না-পাওয়ার থেকে রাগ। অন্যজনের কাছ থেকে স্বীকৃতি না-পাওয়ার রাগ। কোনও কিছুর চাপে কোণঠাসা হতে হতে রাগ। সেই রাগ চট করে ঝেড়ে ফেলা যাচ্ছে না বলেই জেন-ওয়াইয়ের মধ্যে বাড়ছে অস্থিরতা। সেই কথাই বলছিল এক বেসরকারি কলেজের ছাত্রী ইচ্ছে মিত্র। ‘মাঝে মাঝেই বিচ্ছিরি রকমের রাগ হয় আমার নিজের ওপর। এই রাগটা মাঝেমধ্যেই মেঘে ঢাকা সূর্যর মতন ফুটে বেরিয়ে আসে। তখন ইচ্ছে করে ছুঁড়ে ফেলে দিতে সব কিছু, সব। বাড়ি, নীল সেলফোন, প্রিয় হাতের কাজের সরঞ্জাম, ছোটবেলার খেলনার রূপকথাভরা বাক্স, প্রেমিকের আঘাতভরা ভালবাসা, এমনকি বাবা মায়ের অকারণ স্নেহ- সবকিছু। বুকের মধ্যে কেবল বারে বারে গুমরে গুমরে ওঠে সকল চেপে থাকা কষ্ট, অভিযোগ, অভিমান। কিছুই যেন ঠিক হল না বলে মনে হয়। মনে হয়, কেউ আমায় বুঝতে পারছে না’, বেশ মুখ ভার করেই কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে গেল মেয়ে।
মনোবিদ অভিরুচি চট্টোপাধ্যায়ও মনে করেন, রাগের মধ্যে বেশির ভাগ সময়েই লুকিয়ে থাকে একটা ভালবাসা না-পাওয়ার জায়গা। এই প্রসঙ্গে আসার আগে তিনি খেই ধরিয়ে দিলেন, রাগ আসলে কী! ‘প্রত্যেক মানুষই জীবনের কোনও না কোনও সময় অন্যের ওপর রাগ করেছেন অথবা অন্যের রাগের শিকার হয়েছেন। রাগ কিন্তু রোগ নয়। নয় কোনও মানসিক সমস্যাও। বরং প্রকৃত সুস্থ মানুষের সম্পূ র্ণ স্বাভাবিক একটি আবেগ বা ইমোশন। সুস্থ মনের অত্যন্ত স্বাভাবিক উপাদান রাগ। কোনও কারণে সামান্য বিরক্তি থেকে শুরু করে প্রবল উত্তেজনা পর্যন্ত রাগ চাড়িয়ে যেতে পারে। আর এই সামান্য বিরক্তির পিছনেই দীর্ঘকালীন অথবা স্বল্পকালীন কারণ হিসেবে কাজ করে যায় ভালবাসা না-পাওয়া অথবা যথেষ্ট অ্যাটেনশন না-পাওয়ার সমস্যা। মুশকিলটা হল, বিশ্বায়ণের দৌড়ে এখন কেউই কি আর নিজেকে ছেড়ে অন্যের কথা ভাবে? ফলে সম্পর্কে ভালবাসা কমছে, কমছে সহমর্মিতা, তার থেকেই মেঘের মতো মনের আকাশে জমা হচ্ছে দারুণ রাগ। সব সময় সেটাকে চেপে রাখা যাচ্ছে না বলেই হঠাৎ হঠাৎ তা বেরিয়ে আসছে। অস্থির হয়ে পড়ছে জেন-ওয়াই’, জানাচ্ছেন মনোবিদ।
সদ্য কলেজ পাশ করে কর্পোরেট জগতে চাকরি করতে ঢোকা কিংশুকেরও যেমন কথায় কথায় রাগ হয়। সে কথা বলছিলেন ওর মা প্রতিভা সেন, ‘আত্মীয়স্বজন যদিও বলেন কিংশুক নাকি খুব নম্র শান্ত ছেলে; হঠাৎ হঠাৎ রাগের তোড় একমাত্র আমিই টের পাই। পছন্দের শার্টটা নিখুঁতভাবে ইস্ত্রি করতে চেয়েও সকাল থেকে বার বার তাল কাটছে। তাতেও রাগ! এক কথা বার বার মা কেন বলছে তাতেও রেগে ওঠে কিংশুক! অফিসের অ্যাসাইনমেন্ট ফুলফিল হয়নি সময় মতো, মাথা একেবারে আগুন! এ সবের সঙ্গেই যতটা সম্ভব মানিয়ে চলি আমরা। এখন ছেলে রেগে গেলে আর তর্কাতর্কি করি না। রাগটা কমলে তখন আবার কথা বলি’!
ইচ্ছে বা কিংশুকের মতো এই শহরে, অনেকেরই এমন রাগ আছে। অকারণে বা কারণে রেগে যাওয়ায় কেউ কেউ ক্ষতি করেন জিনিসপত্রের, কেউ বা নিজের। নিজের বা প্রিয় মানুষের ওপর রাগ যখন সীমা ছাড়িয়ে যায়, চাপ বাড়ে মনে, সাফার করে যার জন্য অনেক কিছু। কষ্ট পান চারপাশের মানুষরাও। ‘কথায় কথায় রাগ হলে থেরাপির মতো করে সেটাকে কমানোর চেষ্টা করা উচিৎ। রাগের ফলে বেশ কিছু শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন দেখা যায়, হৃৎপিণ্ডের গতি ও রক্তচাপ বেড়ে যায়। অবদমিত রাগ থেকে হতে পারে নানাবিধ মানসিক ও শারীরিক সমস্যা। বাড়তে পারে বিষণ্ণতা, উচ্চ রক্তচাপ, খিটখিটে মেজাজে বদলে যেতে পারে হাসিখুশি স্বভাব। মনে বাসা বাঁধতে পারে গভীর ডিপ্রেশন’, সতর্ক করে দিচ্ছেন মনোবিদ অভিরুচি। পাশাপাশি, তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন রাগ কমানোর কিছু সহজ উপায়।
রাগের লাগাম হিসেবে যুক্তির বিকল্প নেই। কারও ওপর বা কোনও ঘটনার ওপর রাগ করলে সবার প্রথমে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন ঘটনাটি কেন ঘটেছে। আপনার রাগ করার যথার্থ কারণ থাকলেও নানা যুক্তির প্রয়োগে আপনি সেই কারণটিকে একপাশে সরিয়ে রাখতে পারেন। রাগের কোনও বিষয়কে কেবল নিজের দিক থেকে না দেখে অপর পক্ষের দিক থেকেও দেখার চেষ্টা করুন। তাতে সহজে মাথা ঠান্ডা হয়ে যাবে। বেশি রাগের ঘটনা ঘটলে প্রয়োজনে ঘটনাস্থল থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে চলে যান। নিজেকে একটুক্ষণের জন্য একা করে ফেলুন। তাহলেই একসময়ে প্রিয় মানুষদের জন্য মন কাঁদবে, রাগও পড়ে আসবে। রাগের কারণ ঘটলে নিজেকে যতটা সম্ভব রিল্যাক্স করে ফেলুন। বড় করে শ্বাস নিন। মনে মনে নিজের প্রতি ‘ঠিক আছে’ ‘শান্ত হও’ জাতীয় কিছু বারবার উচ্চারণ করতে পারেন। ভাল কোনও সুন্দর দৃশ্য, আপনার প্রিয়জনের মুখ মনে করতে পারেন। রাগ যাতে চট করে না-হয়, তার জন্য মেডিটেশনের বিকল্প নেই। প্রত্যেক দিন আধ ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা মতো মেডিটেট করলেই মন-মেজাজ অনেকটা শান্ত থাকবে।
প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততার মধ্যে কিছু না কিছু সময় নিজেকে দিন। নিজেকে নিয়ে প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট ভাবুন। আর এর কোনওটাতেই যদি কাজ না-হয়? তাহলে বড় বিপদ! তখন ‘পলকের পরে থাকে বুক ভ’রে চিরজনমের বেদনা’! সাধে কি আর কবি বলেছেন, বঁধু, মিছে রাগ করো না’! অগত্যা রাগ নিয়ন্ত্রণ কৌশল আয়ত্ত করার জন্য মনোচিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী বা কাউন্সিলরের সাহায্য নেওয়া ছাড়া আর উপায় কী!
No comments