সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনীতি
বাংলাদেশে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এতে ২০১৩ অর্থবছরে জাতীয় প্রবৃদ্ধি শতকরা ৬
ভাগের নিচে চলে যেতে পারে। আরও কর আরোপের মাধ্যমে আগামী দিনে রাজস্ব মজবুত
করা হবে বাংলাদেশে।
রাজস্ব আদায়ে এ অর্থবছরে সরকারের
লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) এক বিবৃতিতে এ
কথা বলেছে। ২রা এপ্রিল এ সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইটে ওই বিবৃতি প্রকাশ করা
হয়। যৌথ ওই বিবৃতি দেন আইএমএফ-এর বাংলাদেশ মিশনের বিদায়ী প্রধান ডেভিড
কোয়েন ও নতুন প্রধান রড্রিগো কুবেরো। এতে বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশে
অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসাও করা হয়েছে। এতে বলা হয়, আইএমএফ-এর একটি মিশন
২০শে মার্চ থেকে ২রা এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা সফর করে। তিন বছর মেয়াদি
সমপ্রসারিত ঋণ সুবিধা (ইসিএফ) বিষয়ক একটি চুক্তি দ্বিতীয়বার পর্যালোচনার
জন্য ঢাকায় আসে ওই মিশন। তারা এ সময় অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর,
অর্থ সচিব, অন্য সিনিয়র কর্মকর্তা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
তারা ইসিএফ সমর্থিত সংস্কার কর্মকাণ্ডগুলো অব্যাহতভাবে সম্পন্ন করতে
বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানান। ২০১২ সালের ১১ই এপ্রিল বাংলাদেশের
জন্য ওই চুক্তির আওতায় প্রায় ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার অনুমোদন করে। বাংলাদেশ
সফর শেষে যৌথ বিবৃতি দেন আইএমএফের বাংলাদেশ মিশনের বিদায়ী প্রধান ডেভিড
কোয়েন ও নতুন প্রধান রড্রিগো কুবেরো। এতে তারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক
অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়ে প্রশংসা করেন।
তারা বলেন, নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি ও মুদ্রানীতির সহায়তায় বাংলাদেশের রপ্তানি
বাড়ছে। অভিবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স রয়েছে শক্ত অবস্থানে। রিজার্ভ বৃদ্ধি
অব্যাহত রয়েছে। কমে আসছে মুদ্রাস্ফীতির চাপ। এতে বলা হয়, প্রবৃদ্ধির
ক্ষেত্রে পারফরমেন্সে নিরাপত্তা ও ব্যাষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সুদৃঢ়
করতে কর্তৃপক্ষ বিচক্ষণ নীতি গ্রহণের বিষয়ে অঙ্গীকার করেছে। ওই বিবৃতিতে
আরও বলা হয়, আয়কর রাজস্ব বাড়িয়ে, সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করে,
সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে অবকাঠামোগত
সংস্কারের কথাও বলেছে বাংলাদেশ। এর পর দু’পক্ষ অর্থনৈতিক নীতি ও সংস্কার
বিষয়ে একমত হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ২০১৩ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি
শতকরা ৪ দশমিক ৫ ভাগ ধরে রাখার পথে রয়েছে। সরকারি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয়কর
খাতে রাজস্ব কমে গেছে। তবে খরচ রয়েছে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। জ্বালানি ও
বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেয়ার মাধ্যমে তা সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব হয়েছে। আরও কর
আরোপের মাধ্যমে আগামী দিনে রাজস্ব মজবুত করা হবে। ২০১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ
বাজেট ঘাটতি ওই শতকরা ৪ দশমিক ৩ ভাগই ধরে রাখবে। আর এটা করা হবে আয়কর আদায়
প্রচেষ্টা শক্তিশালী করে, অব্যাহতি পাওয়ার ক্ষেত্র বিবেচনা করার মাধ্যমে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মুদ্রাস্ফীতিকে চেকে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নজরদারি
অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বৈদেশিক অর্থ প্রবাহ ব্যবস্থাপনার জন্য
নতুন নতুন উপাদান যোগ করা হবে। সরকার যে ঋণের কারণে জর্জরিত তাতে সুবিধা
দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদক্ষেপ নেবে। আইএমএফ-এর সেফগার্ড অনুসরণ করতে
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বৈদিশেক অডিট সম্পন্ন হবে এ বছরের ডিসেম্বরের
মধ্যে। এরই মধ্যে সকার ব্যাংকিং কোম্পানিজ অ্যাক্ট সংশোধনের জন্য
পার্লামেন্টে তুলেছে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে
বলে মনে করা হয়। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে সমপ্রতি যে
আর্থিক অনিয়ম হয়েছে, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংকের বিষয়ে
পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি
বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। এখন আইএমএফ-এর ওই প্রতিনিধিদের পর্যালোচনা নিয়ে
ব্যবস্থাপনা ও নির্বাহী পরিচালকদের মধ্যে বৈঠক হবে। সেখানে তারা ইসিএফ
চুক্তির দ্বিতীয় পর্যালোচনায় সিদ্ধান্ত নেবে। আগামী মাসের শেষের দিকে
আইএমএফ-এর ওই পর্যালোচনা শেষ হওয়ার কথা। সেখানে অনুমোদিত হলে বাংলাদেশকে
আরও ১৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার দেয়া হবে। এতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪১ কোটি ২০
লাখ ডলার।
No comments