নাশকতা! নাশকতা!! নাশকতা!!!
১৮ দলের ডাকা হরতালে বড় ধরনের নাশকতা
হয়েছে কুমিল্লায়। এছাড়া, হরতাল চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, গাড়ি
ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দিনাজপুরে হরতালকারীদের
হামলায় এক পুলিশ কর্মকর্তা গুরুতর আহত হয়েছেন।
দিনাজপুরের
চিরিরবন্দরে সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের তাড়া খেয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ
পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জে হরতালকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ১১ জন
গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। কুমিল্লায় নাশকতার ঘটনায় চট্টগ্রামের
সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ ১৫ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর গত রাতে চালু হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে জানান, হরতাল শুরুর আগেই মঙ্গলবার ভোর রাতে ভয়াবহ নাশকতা চালিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে রেললাইন উপড়ে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখী আন্তঃনগর তূর্ণা-নিশিতা এক্সপ্রেস টেনের ইঞ্জিনসহ যাত্রীবাহী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনের চালকসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪৫ জন। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার শ্রীমন্তপুর (তারাকুয়া) নামক স্থানে এ ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। এতে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দিনভর লাইন মেরামত করে রাত পৌনে আটটায় চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। সরজমিন ঘুরে ও বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন থেকে আনুমানিক ৭ কিলোমিটার দক্ষিণে পদুয়ার বাজার রেলক্রসিংয়ের পর শ্রীমন্তপুর (তারাকুয়া) নামক স্থানে দুর্বৃত্তরা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল লাইনের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার ভোর রাতে বিভিন্ন স্থানে রেল লাইনের ফিসপ্লেট খুলে প্রায় এক শ’ ফুট রেল লাইন উপড়ে ফেলে। কুমিল্লা রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার হোসেন মজুমদার জানান, ঢাকা থেকে সোমবার রাত আনুমানিক পৌনে ১২টায় ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী তূর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি কুমিল্লা স্টেশনে যাত্রাবিরতি শেষে মঙ্গলবার ভোর ৪টা ২৫ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ট্রেনটি ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটে শ্রীমন্তপুর (তারাকুয়া) নামক স্থানে পৌঁছলে রেল লাইন উপড়ে ফেলার কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে রেলের ইঞ্জিনসহ এর পেছনে থাকা ৭টি বগি লাইন থেকে বিকট আওয়াজে দু’পাশের জমিতে ছিটকে পড়ে। সরজমিন পরিদর্শনকালে ওই ট্রেনের ইঞ্জিন নং-২৯২৬, যাত্রীবাহী বগি নং-৬৫০১, ৬৫১০, ৬৪০২, ৬৪০৫, ৬৬০৩, ৬৩০৬ বগিগুলোকে দু’পার্শ্বের ধানী জমি ও রেল লাইনের উপর বিধ্বস্ত অবস্থায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ ঘটনায় রেলের চালক তোফাজ্জল হক, অ্যাটেনডেন্ট মিলনসহ রেলের প্রায় ৫০ জন যাত্রী কমবেশি আহত হন। গুরুতর আহত চালক তোফাজ্জল হককে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য আহতদেরকে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ওই ট্রেনের পাওয়ার কারের চালক বশির আহমেদ (৬০), অ্যাটেনডেন্ট মো. রফিক (২২), যাত্রী জাহিদুর রহমান (২৮)সহ ঘটনাস্থলে অন্যরা জানান, ট্রেনটিতে ইঞ্জিন, পাওয়ার কার, বুফে কার ছাড়া মোট ১৭টি বগিতে প্রায় দেড় হাজার যাত্রী ছিলেন। দুর্ঘটনার বিকট আওয়াজে ঘুমন্ত যাত্রীরা জেগে উঠে প্রাণ বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছুটোছুটি শুরু করেন। ট্রেনটির ইঞ্জিনের পেছনে থাকা বিধ্বস্ত বগিগুলোর সবগুলোই ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। দুর্ঘটনার পর যাত্রীরা সকালেই তাদের মালামাল নিয়ে দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। এতে নারী-শিশুসহ শ’ শ’ যাত্রীকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সদর দক্ষিণ থানা পুলিশ, কুমিল্লা জেলা পুলিশ, রেল পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিসসহ রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী শ্রীমন্তপুর, উত্তর রামপুর, চানপুর, শ্রীবল্লবপুর, কিসমত, শাওড়াতলী, হোসেনপুরসহ আশপাশের গ্রাম ও জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার লোক একনজর দেখার জন্য ঘটনাস্থলে যায়। দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল আহসান, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, হরতালের নামে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে এ অরাজকতা ও নাশকতা ঘটানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দু’দিকে নোয়াখালী এক্সপ্রেস ও টু ডাউন মেইল আটকা পড়ে। এছাড়া, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, কর্ণফুলী, চট্টলাসহ ওই রুটে বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রা সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়।
দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী (এইএন) ইরফান হোসেন জানান, দুর্বৃত্তরা দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে রেল লাইনের ফিসপ্লেট খুলে প্রায় এক শ’ ফুট রেললাইন উপড়ে ফেলে। এতে প্রায় তিন শ’ ফুট রেল লাইন সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়েছে। এদিকে সকাল সাড়ে ৭টায় কুমিল্লা থেকে একটি ইঞ্জিনের মাধ্যমে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের অক্ষত বগিগুলোকে আলাদা করে কুমিল্লা রেল স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সোয়া ৮টায় আখাউড়া ও লাকসাম থেকে দু’টি রিলিফ ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকার্য শুরু করে। পরে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থেকে আরও একটি রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজে যোগ দেয়। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম তোফাজ্জল হোসেন জানান, ঘটনার তদন্তে রেলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (সিওপিএস) বেলাল উদ্দিনকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য কর্মকর্তারা হলেন- প্রধান প্রকৌশলী এ.কে.এম মাহবুবুল আলম, চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মো. আক্তারুজ্জামান হায়দার, চিফ সিগনাল ও টেলিকমিউনিকেশনাল ইঞ্জিনিয়ার চন্দন কান্তি দাস। কমিটিকে আগামী ৪ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। এ ঘটনায় লাকসাম জিআরপি থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় ওই ট্রেনের ইঞ্জিন, বগি ও লাইনসহ ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে নাশকতার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ শিবিরের ১৭ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি এলাকার চাঙ্গিনী গ্রামের মাস্টার মেসে (ছাত্রাবাস) গতকাল বিকালে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। এসময় পুলিশ বিপুল পরিমাণ জেহাদি বই উদ্ধার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে ফিয়াদুল ইসলাম (২০), সাইফুল ইসলাম (২২), আরিফুল ইসলাম (২০), রিপন (২০), ইব্রাহীম খলিল (২৩), ইমরান (১৯), মঞ্জুরুল হক (১৮), বিল্লাল হোসেন (২৩), আরিফ (২৩), ফরহাদ (২৩), আশিকুল ইসলাম (২২), কায়কোবাদ (২২), শাহাব উদ্দিন (২৩), শাহজালাল (২১)সহ ১৭ জন। কুমিল্লা সদর এ-সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম ও সদর দক্ষিণ থানার ওসি আইনুল হক জানান, ওই মেস থেকে প্রায় দেড় শ’ জেহাদি বইসহ জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক বইপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
নয়াপল্টনে ককটেল বিস্ফোরণ, গ্রেপ্তার ১
স্টাফ রিপোর্টার জানান, ১৮ দলের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে অনেকটাই নিরুত্তাপ ছিল নয়াপল্টন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে আল-আমিন নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে ও অবিস্ফোরিত একটি ককটেল উদ্ধার করে। পুলিশের কাছে সে নিজেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী বলে দাবি করেছে। তার বাড়ি পিরোজপুরে। এদিকে সার্বক্ষণিক তালাবন্ধ ছিল বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল গেট। তবে ফটকের বাইরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ছিলেন সতর্ক অবস্থায়। জলকামান, সাঁজোয়া যান ও প্রিজন ভ্যানও ছিল। এদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুরো সময় জুড়ে ছিলেন দলীয় কার্যালয়ে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে সঙ্গ দেয়ার পাশাপাশি দলের দপ্তরের কাজে নির্দেশনা ও নেতৃত্ব দিয়েছেন যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ। বিএনপি কার্যালয়ে জমেনি নেতাকর্মীদের ভিড়। নয়াপল্টনে মিছিলের চেষ্টাও করেনি বিরোধী দল। নয়াপল্টন ভিআইপি রোড দিয়ে যান চলাচল ছিল খুবই কম। পুলিশও সময় কাটিয়েছে অলসভাবে। সকালে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের হাত এখন রক্তে রঞ্জিত। সারা দেশের বাতাসে লাশের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ গণহত্যার প্রতিবাদ না করে রজনীগন্ধা হাতে সরকারের জন্য অপেক্ষা করতে পারে না। তিনি বলেন, সরকারের এজেন্টরাই আগের ধারাবাহিকতায় এটিএন নিউজের গাড়িসহ অন্যান্য গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে।
দিনাজপুরে একজনের মৃত্যু
স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর থেকে জানান, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার হাজীর মোড়ে জামায়াত-পুলিশের সংঘর্ষে পালিয়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আজিম উদ্দীন (৫৬) নামের ওই ব্যক্তি পেশায় সাইকেল মিস্ত্রি। হাজীর মোড়ে তার দোকান রয়েছে। সংঘর্ষের সময় পালাতে গুলি ও টিয়ার শেলের শব্দে ভয়ে কিছু দূর গিয়ে ফসলের ক্ষেতে তিনি পড়ে যান। তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। মৃত আজিম উদ্দীদের ছেলে সাইফুল ইসলামও এ কথা স্বীকার করেছেন। আজিম উদ্দীনের বাড়ি চিরিরবন্দরের নান্দারাইল গ্রামে। তিনি মৃত সলিমুদ্দিনের ছেলে। এদিকে এই সংঘর্ষের ঘটনায় মোফাজ্জল ও মুশফিকুর নামে ২ জামায়াত কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের এক সাব-ইন্সপেক্টর আবদুস সবুরসহ আহত হয়েছে কমপক্ষে ৫ জন। একটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দিয়েছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে বিজিবি মোতায়েন করে স্থানীয় প্রশাসন। গুলিবিদ্ধ ও আহতদের দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ শটগানের কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করেছে। গোয়েন্দা শাখার এক সাব-ইন্সপেক্টরসহ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জেনেছি। পরিস্থিতি এখন শান্ত। তবে তিনি গুলিবিদ্ধের কথা অস্বীকার করেছেন।
যশোরে হরতাল চলাকালে সংঘর্ষ, বোমাবাজি
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে জানান, যশোরে হরতাল সমর্থক ও হরতালবিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে ৫-৭টি হাতবোমা। এতে দু’পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বিএনপি নেতা ও যশোর পৌর কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম শাকিলসহ ৪ জনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া সংঘর্ষ চলাকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হরতালের সমর্থনে শহরে মিছিল বের করে বিএনপি। মিছিলটি দড়াটানা এলাকায় হরতালবিরোধীদের মুখোমুখি হলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। দড়াটানা থেকে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। এ সময় বেশ কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে আহত হন বিএনপি নেতা ও পৌর কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম শাকিলসহ অন্যরা। আহতদের মধ্যে কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম সাকিল, পথচারী সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের জিয়াউল হক (২৬) ও ভ্যানচালক শেখহাটি গ্রামের হাসান (৩৬)-কে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আশরাফুল কবির সুমন দাড়াটানা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আহতরা আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আবদুস সালাম।
পরে হরতালের পক্ষে ও বিপক্ষে দু’টি মিছিল ফের মুখোমুখি হলে আবারো উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা জানান, বিএনপি ও ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মিছিল থেকে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। সংঘর্ষে হাসপাতাল মোড়ে ৩টি এবং দড়াটানা ট্রাফিক আইল্যান্ড এলাকায় আরও কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু অভিযোগ করেন, বুধবার বিরোধীদলীয় নেত্রী যশোর আসছেন। তার কর্মসূচি বানচাল করতেই আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বোমা হামলা চালায়।
সিলেটে বিজিবির সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
সিলেট অফিস জানায়, হরতালের সকালে সিলেট নগরীর পাঠানটুলা ও শাহী ঈদগাহ এলাকায় শিবিরকর্মীদের সঙ্গে বিজিবি সদস্যদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিজিবি সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছোড়া শুরু করলে শিবিরকর্মীরা চলে যায়। সকালে শিবিরের দুটি দল সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পাঠানটুলা ও শাহী ঈদগাহ এলাকায় ব্যারিকেড দেয়। এ সময় তারা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। শাহী ঈদগাহ এলাকায় বিজিবির তিনটি গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে শিবিরকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিজিবি ফাঁকা গুলি ছুড়ে। একই সময় সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ছাত্রদল ও বিএনপি মিছিল করে। সকালে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি দিলদার হোসেন সেলিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এডভোকেট শামসুজ্জামান, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আজমল বখত সাদেকসহ সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করা হয়। এ সময় পুলিশ বাধা দিলেও শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করেছেন বিএনপি ও ছাত্রদল কর্মীরা।
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে জানান, হরতাল শুরুর আগেই মঙ্গলবার ভোর রাতে ভয়াবহ নাশকতা চালিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে রেললাইন উপড়ে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখী আন্তঃনগর তূর্ণা-নিশিতা এক্সপ্রেস টেনের ইঞ্জিনসহ যাত্রীবাহী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনের চালকসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪৫ জন। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার শ্রীমন্তপুর (তারাকুয়া) নামক স্থানে এ ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। এতে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দিনভর লাইন মেরামত করে রাত পৌনে আটটায় চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। সরজমিন ঘুরে ও বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন থেকে আনুমানিক ৭ কিলোমিটার দক্ষিণে পদুয়ার বাজার রেলক্রসিংয়ের পর শ্রীমন্তপুর (তারাকুয়া) নামক স্থানে দুর্বৃত্তরা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল লাইনের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার ভোর রাতে বিভিন্ন স্থানে রেল লাইনের ফিসপ্লেট খুলে প্রায় এক শ’ ফুট রেল লাইন উপড়ে ফেলে। কুমিল্লা রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার হোসেন মজুমদার জানান, ঢাকা থেকে সোমবার রাত আনুমানিক পৌনে ১২টায় ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী তূর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি কুমিল্লা স্টেশনে যাত্রাবিরতি শেষে মঙ্গলবার ভোর ৪টা ২৫ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ট্রেনটি ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটে শ্রীমন্তপুর (তারাকুয়া) নামক স্থানে পৌঁছলে রেল লাইন উপড়ে ফেলার কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে রেলের ইঞ্জিনসহ এর পেছনে থাকা ৭টি বগি লাইন থেকে বিকট আওয়াজে দু’পাশের জমিতে ছিটকে পড়ে। সরজমিন পরিদর্শনকালে ওই ট্রেনের ইঞ্জিন নং-২৯২৬, যাত্রীবাহী বগি নং-৬৫০১, ৬৫১০, ৬৪০২, ৬৪০৫, ৬৬০৩, ৬৩০৬ বগিগুলোকে দু’পার্শ্বের ধানী জমি ও রেল লাইনের উপর বিধ্বস্ত অবস্থায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ ঘটনায় রেলের চালক তোফাজ্জল হক, অ্যাটেনডেন্ট মিলনসহ রেলের প্রায় ৫০ জন যাত্রী কমবেশি আহত হন। গুরুতর আহত চালক তোফাজ্জল হককে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য আহতদেরকে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ওই ট্রেনের পাওয়ার কারের চালক বশির আহমেদ (৬০), অ্যাটেনডেন্ট মো. রফিক (২২), যাত্রী জাহিদুর রহমান (২৮)সহ ঘটনাস্থলে অন্যরা জানান, ট্রেনটিতে ইঞ্জিন, পাওয়ার কার, বুফে কার ছাড়া মোট ১৭টি বগিতে প্রায় দেড় হাজার যাত্রী ছিলেন। দুর্ঘটনার বিকট আওয়াজে ঘুমন্ত যাত্রীরা জেগে উঠে প্রাণ বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছুটোছুটি শুরু করেন। ট্রেনটির ইঞ্জিনের পেছনে থাকা বিধ্বস্ত বগিগুলোর সবগুলোই ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। দুর্ঘটনার পর যাত্রীরা সকালেই তাদের মালামাল নিয়ে দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। এতে নারী-শিশুসহ শ’ শ’ যাত্রীকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সদর দক্ষিণ থানা পুলিশ, কুমিল্লা জেলা পুলিশ, রেল পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিসসহ রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী শ্রীমন্তপুর, উত্তর রামপুর, চানপুর, শ্রীবল্লবপুর, কিসমত, শাওড়াতলী, হোসেনপুরসহ আশপাশের গ্রাম ও জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার লোক একনজর দেখার জন্য ঘটনাস্থলে যায়। দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল আহসান, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, হরতালের নামে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে এ অরাজকতা ও নাশকতা ঘটানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দু’দিকে নোয়াখালী এক্সপ্রেস ও টু ডাউন মেইল আটকা পড়ে। এছাড়া, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, কর্ণফুলী, চট্টলাসহ ওই রুটে বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রা সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়।
দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী (এইএন) ইরফান হোসেন জানান, দুর্বৃত্তরা দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে রেল লাইনের ফিসপ্লেট খুলে প্রায় এক শ’ ফুট রেললাইন উপড়ে ফেলে। এতে প্রায় তিন শ’ ফুট রেল লাইন সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়েছে। এদিকে সকাল সাড়ে ৭টায় কুমিল্লা থেকে একটি ইঞ্জিনের মাধ্যমে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের অক্ষত বগিগুলোকে আলাদা করে কুমিল্লা রেল স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সোয়া ৮টায় আখাউড়া ও লাকসাম থেকে দু’টি রিলিফ ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকার্য শুরু করে। পরে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থেকে আরও একটি রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজে যোগ দেয়। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম তোফাজ্জল হোসেন জানান, ঘটনার তদন্তে রেলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (সিওপিএস) বেলাল উদ্দিনকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য কর্মকর্তারা হলেন- প্রধান প্রকৌশলী এ.কে.এম মাহবুবুল আলম, চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মো. আক্তারুজ্জামান হায়দার, চিফ সিগনাল ও টেলিকমিউনিকেশনাল ইঞ্জিনিয়ার চন্দন কান্তি দাস। কমিটিকে আগামী ৪ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। এ ঘটনায় লাকসাম জিআরপি থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় ওই ট্রেনের ইঞ্জিন, বগি ও লাইনসহ ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে নাশকতার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ শিবিরের ১৭ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি এলাকার চাঙ্গিনী গ্রামের মাস্টার মেসে (ছাত্রাবাস) গতকাল বিকালে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। এসময় পুলিশ বিপুল পরিমাণ জেহাদি বই উদ্ধার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে ফিয়াদুল ইসলাম (২০), সাইফুল ইসলাম (২২), আরিফুল ইসলাম (২০), রিপন (২০), ইব্রাহীম খলিল (২৩), ইমরান (১৯), মঞ্জুরুল হক (১৮), বিল্লাল হোসেন (২৩), আরিফ (২৩), ফরহাদ (২৩), আশিকুল ইসলাম (২২), কায়কোবাদ (২২), শাহাব উদ্দিন (২৩), শাহজালাল (২১)সহ ১৭ জন। কুমিল্লা সদর এ-সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম ও সদর দক্ষিণ থানার ওসি আইনুল হক জানান, ওই মেস থেকে প্রায় দেড় শ’ জেহাদি বইসহ জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক বইপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
নয়াপল্টনে ককটেল বিস্ফোরণ, গ্রেপ্তার ১
স্টাফ রিপোর্টার জানান, ১৮ দলের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে অনেকটাই নিরুত্তাপ ছিল নয়াপল্টন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে আল-আমিন নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে ও অবিস্ফোরিত একটি ককটেল উদ্ধার করে। পুলিশের কাছে সে নিজেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী বলে দাবি করেছে। তার বাড়ি পিরোজপুরে। এদিকে সার্বক্ষণিক তালাবন্ধ ছিল বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল গেট। তবে ফটকের বাইরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ছিলেন সতর্ক অবস্থায়। জলকামান, সাঁজোয়া যান ও প্রিজন ভ্যানও ছিল। এদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুরো সময় জুড়ে ছিলেন দলীয় কার্যালয়ে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে সঙ্গ দেয়ার পাশাপাশি দলের দপ্তরের কাজে নির্দেশনা ও নেতৃত্ব দিয়েছেন যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ। বিএনপি কার্যালয়ে জমেনি নেতাকর্মীদের ভিড়। নয়াপল্টনে মিছিলের চেষ্টাও করেনি বিরোধী দল। নয়াপল্টন ভিআইপি রোড দিয়ে যান চলাচল ছিল খুবই কম। পুলিশও সময় কাটিয়েছে অলসভাবে। সকালে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের হাত এখন রক্তে রঞ্জিত। সারা দেশের বাতাসে লাশের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ গণহত্যার প্রতিবাদ না করে রজনীগন্ধা হাতে সরকারের জন্য অপেক্ষা করতে পারে না। তিনি বলেন, সরকারের এজেন্টরাই আগের ধারাবাহিকতায় এটিএন নিউজের গাড়িসহ অন্যান্য গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে।
দিনাজপুরে একজনের মৃত্যু
স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর থেকে জানান, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার হাজীর মোড়ে জামায়াত-পুলিশের সংঘর্ষে পালিয়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আজিম উদ্দীন (৫৬) নামের ওই ব্যক্তি পেশায় সাইকেল মিস্ত্রি। হাজীর মোড়ে তার দোকান রয়েছে। সংঘর্ষের সময় পালাতে গুলি ও টিয়ার শেলের শব্দে ভয়ে কিছু দূর গিয়ে ফসলের ক্ষেতে তিনি পড়ে যান। তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। মৃত আজিম উদ্দীদের ছেলে সাইফুল ইসলামও এ কথা স্বীকার করেছেন। আজিম উদ্দীনের বাড়ি চিরিরবন্দরের নান্দারাইল গ্রামে। তিনি মৃত সলিমুদ্দিনের ছেলে। এদিকে এই সংঘর্ষের ঘটনায় মোফাজ্জল ও মুশফিকুর নামে ২ জামায়াত কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের এক সাব-ইন্সপেক্টর আবদুস সবুরসহ আহত হয়েছে কমপক্ষে ৫ জন। একটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দিয়েছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে বিজিবি মোতায়েন করে স্থানীয় প্রশাসন। গুলিবিদ্ধ ও আহতদের দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ শটগানের কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করেছে। গোয়েন্দা শাখার এক সাব-ইন্সপেক্টরসহ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জেনেছি। পরিস্থিতি এখন শান্ত। তবে তিনি গুলিবিদ্ধের কথা অস্বীকার করেছেন।
যশোরে হরতাল চলাকালে সংঘর্ষ, বোমাবাজি
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে জানান, যশোরে হরতাল সমর্থক ও হরতালবিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে ৫-৭টি হাতবোমা। এতে দু’পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বিএনপি নেতা ও যশোর পৌর কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম শাকিলসহ ৪ জনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া সংঘর্ষ চলাকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হরতালের সমর্থনে শহরে মিছিল বের করে বিএনপি। মিছিলটি দড়াটানা এলাকায় হরতালবিরোধীদের মুখোমুখি হলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। দড়াটানা থেকে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। এ সময় বেশ কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে আহত হন বিএনপি নেতা ও পৌর কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম শাকিলসহ অন্যরা। আহতদের মধ্যে কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম সাকিল, পথচারী সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের জিয়াউল হক (২৬) ও ভ্যানচালক শেখহাটি গ্রামের হাসান (৩৬)-কে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আশরাফুল কবির সুমন দাড়াটানা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আহতরা আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আবদুস সালাম।
পরে হরতালের পক্ষে ও বিপক্ষে দু’টি মিছিল ফের মুখোমুখি হলে আবারো উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা জানান, বিএনপি ও ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মিছিল থেকে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। সংঘর্ষে হাসপাতাল মোড়ে ৩টি এবং দড়াটানা ট্রাফিক আইল্যান্ড এলাকায় আরও কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু অভিযোগ করেন, বুধবার বিরোধীদলীয় নেত্রী যশোর আসছেন। তার কর্মসূচি বানচাল করতেই আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বোমা হামলা চালায়।
সিলেটে বিজিবির সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
সিলেট অফিস জানায়, হরতালের সকালে সিলেট নগরীর পাঠানটুলা ও শাহী ঈদগাহ এলাকায় শিবিরকর্মীদের সঙ্গে বিজিবি সদস্যদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিজিবি সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছোড়া শুরু করলে শিবিরকর্মীরা চলে যায়। সকালে শিবিরের দুটি দল সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পাঠানটুলা ও শাহী ঈদগাহ এলাকায় ব্যারিকেড দেয়। এ সময় তারা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। শাহী ঈদগাহ এলাকায় বিজিবির তিনটি গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে শিবিরকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিজিবি ফাঁকা গুলি ছুড়ে। একই সময় সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ছাত্রদল ও বিএনপি মিছিল করে। সকালে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি দিলদার হোসেন সেলিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এডভোকেট শামসুজ্জামান, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আজমল বখত সাদেকসহ সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করা হয়। এ সময় পুলিশ বাধা দিলেও শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করেছেন বিএনপি ও ছাত্রদল কর্মীরা।
No comments