বিশেষ’ নিশিকন্যার নিঃশব্দ কান্না... by সাজেদা সুইটি
রাতের আঁধার ভেদ করে কানের দুলের পাথরগুলো চিকমিক করছে। মধ্যরাতেও চেহারায় তাদের প্রসাধনের গাঢ় প্রলেপ।
অপেক্ষায় বসে থাকা, কেউ আসবে, সঙ্গে নিয়ে যাবে। তবে এই ‘কেউ’ রূপকথার
রাজপুত্র ডালিমকুমার নয়, বরং লালসায় আসক্ত নিতান্তই সাধারণ কেউ।
বুধবার
মধ্যরাতে রাজধানীর এক নীরব রাস্তার (সঙ্গত কারণেই এলাকার নাম প্রকাশ করা
হলো না) পাশে দেখা মেলে দুই ‘বিশেষ’ নিশিকন্যার, সমাজে যারা ‘হিজড়া’ বলেই
বেশি পরিচিত।
একজনের পরনে শাড়ি, অন্যজনের সালোয়ার-কামিজ-ওড়না। গভীর রাতের বিষন্ন পরিবেশে আবিষ্টের মতো বাংলানিউজের কাছে তুলে ধরেন জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা।
শাড়ি পরিহিতা শ্যামলী (ছদ্মনাম) বলেন, “তখন বয়স আমার কতোইবা হবে- ১৭, নইলে ১৮। প্রথম শাড়ি পরতে শুরু করি। হিজড়া হইলেও আমি মন মানসিকতায় মেয়ে। যাই হোক, পেটের দায়ে গেলাম ব্যাটা মাইনসের কাছে। ঠকাইয়া দিলো, কাজ শেষে ধমক দিয়া বিদায় করে দিলো।”
“কিন্তু পরে আর সেই সমস্যা হইতো না” বলেন শ্যামলী। সমাধানও বলে দেন, “এখন কাজের আগেই টাকা হাতে লইয়া ফেলি।”
বলেন শ্যামলী, “সারাদিন নানা দোকানে দোকানে ঘুইরা কালেকশন (চাঁদা) করি ক’জন মিইল্যা। জিনিসপত্রের দাম বাড়সে, তাই রেটও বাড়াইসি।”
“প্রথমে নিতাম দুই টাকা, পরে পাঁচ টাকা, এখন ১০ টাকা লই। আর রাইতে করি এই বুরা কাম। কেউ ৫০, কেউ ১শ’ টাকা দেয়। উপায় তো নাই, বাসা ভাড়া, খাওয়া-চলা- বহু টাকা লাইগা যায়” -বলে চলেন শ্যামলী।
অবশ্য কিছুদিন যাবত অষ্টম শ্রেণী অব্দি পড়া শ্যামলী একটি এনজিওতে যোগ দিয়েছেন বলে জানালেন। ব্যাংকে একটি হিসাবও খুলেছেন তিনি। বেতনের টাকার একটি অংশ ভবিষ্যতের জন্য রাখার ইচ্ছা। তার আশা, ভবিষ্যতে আর এই পেশায় তাকে থাকতে হবে না।
কথার মাঝখানে অপর কন্যা বাবলীর (ছদ্মনাম) ডাক পড়ে। লুঙ্গি পরনে স্থুলকায় একজন ইশারায় ডেকে নিয়ে যায় তাকে। সেদিকে কিছুক্ষণ নিরবে চেয়ে থেকে শ্যামলী বলেন, “সাধারণ মাইয়াদের যে রেট দেয়, আমগোরে সেইটা দেয় না। উল্টা খারাপ ব্যবহার করে। একজন ডাইকা নিয়া কয়েকজন গজায়া যায়।”
কখনো কখনো পুলিশের কাছ থেকেও এমন আচরণ পান বলে অভিযোগ তার।
তবে শ্যামলীর জীবনে নতুন আশাও জেগেছে। একজন তাকে ভালোবেসেছে, এই পেশা থেকে তাকে সরে যেতে বলেছে। লাজুক ভঙ্গিতে প্রিয় মানুষটির শাসনের বিবরণ দেন শ্যামলী। বলেন, “কেউ শরীলে হাত দিসে শুনলে আমারে কাইট্টা ফালাইবো। খুব মনের টান আমার জন্য।”
“শিক্ষিত মানুষ, পুরা নয়মাস লাগসে তার মন পাইতে। এখন আমার জন্যও তার মায়া বসছে” -বলেন শ্যামলী।
জন্মদাত্রী মায়ের জন্য তার মন কাঁদে। রাতের যতোটা সময় কাজ থাকে না। তখন ভেতরটা কেঁদে ওঠে শ্যামলীর। মায়ের ঘ্রাণ পেতে মনটা আকুল হয়ে ওঠে। কিন্তু প্রকাশ্যে যখন তখন মায়ের দেখা পাওয়ার সুযোগ নেই তার।
জানালেন, পরিবারের লোকজন তার পরিচয়ে লজ্জিত হয়। দূরে সরে থাকতে বলে। মাকে দেখতে যান বলে, মায়ের কপালেও জোটে গালমন্দ।
তাই অনেকদিন পরপর গাজীপুরে দেখতে যান মাকে। কিছু টাকা তার হাতে গুঁজে চোখ মুছতে মুছতেই ফেরেন ঢাকায়। শ্যামলীর সেই কান্না আর যায় না, ভেতরে কোথাও নিঃশব্দে চলতে থাকে।
একজনের পরনে শাড়ি, অন্যজনের সালোয়ার-কামিজ-ওড়না। গভীর রাতের বিষন্ন পরিবেশে আবিষ্টের মতো বাংলানিউজের কাছে তুলে ধরেন জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা।
শাড়ি পরিহিতা শ্যামলী (ছদ্মনাম) বলেন, “তখন বয়স আমার কতোইবা হবে- ১৭, নইলে ১৮। প্রথম শাড়ি পরতে শুরু করি। হিজড়া হইলেও আমি মন মানসিকতায় মেয়ে। যাই হোক, পেটের দায়ে গেলাম ব্যাটা মাইনসের কাছে। ঠকাইয়া দিলো, কাজ শেষে ধমক দিয়া বিদায় করে দিলো।”
“কিন্তু পরে আর সেই সমস্যা হইতো না” বলেন শ্যামলী। সমাধানও বলে দেন, “এখন কাজের আগেই টাকা হাতে লইয়া ফেলি।”
বলেন শ্যামলী, “সারাদিন নানা দোকানে দোকানে ঘুইরা কালেকশন (চাঁদা) করি ক’জন মিইল্যা। জিনিসপত্রের দাম বাড়সে, তাই রেটও বাড়াইসি।”
“প্রথমে নিতাম দুই টাকা, পরে পাঁচ টাকা, এখন ১০ টাকা লই। আর রাইতে করি এই বুরা কাম। কেউ ৫০, কেউ ১শ’ টাকা দেয়। উপায় তো নাই, বাসা ভাড়া, খাওয়া-চলা- বহু টাকা লাইগা যায়” -বলে চলেন শ্যামলী।
অবশ্য কিছুদিন যাবত অষ্টম শ্রেণী অব্দি পড়া শ্যামলী একটি এনজিওতে যোগ দিয়েছেন বলে জানালেন। ব্যাংকে একটি হিসাবও খুলেছেন তিনি। বেতনের টাকার একটি অংশ ভবিষ্যতের জন্য রাখার ইচ্ছা। তার আশা, ভবিষ্যতে আর এই পেশায় তাকে থাকতে হবে না।
কথার মাঝখানে অপর কন্যা বাবলীর (ছদ্মনাম) ডাক পড়ে। লুঙ্গি পরনে স্থুলকায় একজন ইশারায় ডেকে নিয়ে যায় তাকে। সেদিকে কিছুক্ষণ নিরবে চেয়ে থেকে শ্যামলী বলেন, “সাধারণ মাইয়াদের যে রেট দেয়, আমগোরে সেইটা দেয় না। উল্টা খারাপ ব্যবহার করে। একজন ডাইকা নিয়া কয়েকজন গজায়া যায়।”
কখনো কখনো পুলিশের কাছ থেকেও এমন আচরণ পান বলে অভিযোগ তার।
তবে শ্যামলীর জীবনে নতুন আশাও জেগেছে। একজন তাকে ভালোবেসেছে, এই পেশা থেকে তাকে সরে যেতে বলেছে। লাজুক ভঙ্গিতে প্রিয় মানুষটির শাসনের বিবরণ দেন শ্যামলী। বলেন, “কেউ শরীলে হাত দিসে শুনলে আমারে কাইট্টা ফালাইবো। খুব মনের টান আমার জন্য।”
“শিক্ষিত মানুষ, পুরা নয়মাস লাগসে তার মন পাইতে। এখন আমার জন্যও তার মায়া বসছে” -বলেন শ্যামলী।
জন্মদাত্রী মায়ের জন্য তার মন কাঁদে। রাতের যতোটা সময় কাজ থাকে না। তখন ভেতরটা কেঁদে ওঠে শ্যামলীর। মায়ের ঘ্রাণ পেতে মনটা আকুল হয়ে ওঠে। কিন্তু প্রকাশ্যে যখন তখন মায়ের দেখা পাওয়ার সুযোগ নেই তার।
জানালেন, পরিবারের লোকজন তার পরিচয়ে লজ্জিত হয়। দূরে সরে থাকতে বলে। মাকে দেখতে যান বলে, মায়ের কপালেও জোটে গালমন্দ।
তাই অনেকদিন পরপর গাজীপুরে দেখতে যান মাকে। কিছু টাকা তার হাতে গুঁজে চোখ মুছতে মুছতেই ফেরেন ঢাকায়। শ্যামলীর সেই কান্না আর যায় না, ভেতরে কোথাও নিঃশব্দে চলতে থাকে।
No comments