নববর্ষ শুরুর গল্প
কেবল পহেলা বৈশাখই নয়। নানা দেশে নানা
ভাষায় নববর্ষ আছে। সব দিন একই নয়। অঞ্চল ও ভাষা ভেদে কোথাওবা ধর্ম ভেদে
ভিন্ন ভিন্ন দিনে রয়েছে নববর্ষের আলাদা আলাদা অনুষ্ঠানমালা।
বঙ্গাব্দ,
খ্রিস্টাব্দ, হিজরি, মাঘীসন, যুধিষ্ঠির অব্দ, গুপ্তাব্দ, নওরোজ,
চৈতন্যাব্দ, বুদ্ধাব্দ, এলাহীসন, হর্ষাব্দ, হিবরু এগুলো একেক ভাষা-ধর্ম ও
অঞ্চলের পঞ্জিকার নাম। প্রত্যেকটিরই রয়েছে প্রথম দিন। তবে এর মধ্যে কয়েকটি
ছাড়া অধিকাংশের শুরুর কথা রয়েছে অজানা।
প্রায় চার হাজার বছর আগে নববর্ষ উদযাপনের প্রচলন শুরু হয় প্রাচীন ব্যাবিলনে। প্রাচীন ব্যাবিলনে নতুন বছর শুরু হতো নতুন চাঁদ দেখা সাপেক্ষে। সেটা ছিল বসন্তকালের প্রথম চাঁদ। বসন্তকালে নতুন ফসল এবং ফুল ফোটার অনুষঙ্গ তাদের কাছে ছিল মুখ্য। এগারো দিন ধরে চলত নববর্ষ উৎসব। রোমানরা তাদের বর্ষ গণনা শুরু করত মার্চ মাসের শেষ থেকে। তবে বিভিন্ন রোমান সম্রাটদের শাসনামলে তা পরিবর্তিত হতো। রোমান সিনেটররা খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩ সালে ঘোষণা করে জানুয়ারির এক তারিখই হবে বছরের পয়লা দিন। কিন্তু তারপরও খ্রিস্টপূর্ব ’৪৬ সাল পর্যন্ত বর্ষপঞ্জি পরিবর্তিত হতে থাকে। তারপর সম্রাট জুলিয়াস সিজার এক তারিখকেই আবার পুণঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এ কারণে একে ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’ও বলা হয়। পরে ১৫৮২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করেন এবং নতুন একটি বর্ষপঞ্জি ঘোষণা করেন। একেই বলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার বা গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি। এই সৌর ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্তমানে ইংরেজি মাস বা বছর গণনা করা হয়। ফ্রান্সে ১লা জানুয়ারিকে নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণনা শুরু হয় ১৫৬৪ সালে। এর আগে সেখানে নববর্ষ হতো ১লা এপ্রিল। মক্কা থেকে ৬২২ খ্রীষ্টাব্দের ২৪শে সেপ্টেম্বর মুহম্মদ (স.) মদীনায় হিজরত করেন। পরে খলিফা হজরত উমরের (রা) এই ঘটনাকে শুরু হিসাব করে হিজরী সাল প্রবর্তন করেন। এই সাল অনুসারে মহররম মাসের ১ তারিখ হিজরী নববর্ষ গণনা করা হয়।
কথিত আছে, সম্রাট আকবরের রাজত্বকাল থেকে মূলত বার্ষিক কর, ভূমিকর, কৃষিকর, জলকর ইত্যাদি আদায়ের প্রয়োজনে বাংলা সালের প্রবর্তন করা হয়। কিন্তু অংকের হিসাবে ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন রাজ্যের শাসকদের সময় থেকেই বাংলা সালের গণনা শুরু হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, গৌড়ীয় বঙ্গের রাজা শশাঙ্ক থানেশ্বর জয় করে কর্ণসুবর্ণের (মুর্শিদাবাদ রাজধানী) সিংহাসনে আরোহণ করেন ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে। এ কারণেই রাজা শশাঙ্কের সিংহাসন আরোহণের বছর থেকেই বাংলা সালের উদ্ভব হয় বলেই কেউ কেউ মত দিয়েছেন। রাজা শশাঙ্ক সিংহাসনে আরোহণের পর পরই সৌর সাল অনুযায়ী একটি নতুন সাল চালু করেন যাকে আজ আমরা বাংলা সাল বলে অভিহিত করি। রাজস্ব আদায়সংক্রান্ত সুবিধার জন্য সম্রাট আকবরের সময় বঙ্গাব্দ বা বাংলা সনের ব্যাপক ব্যাবহার শুরু হয়। পঞ্জিকাও তৈরি হয়। এছাড়া আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখযোগ্য-৯৬৩ হিজরি সালে যখন সম্রাট আকবর সিংহাসনে আরোহণ করেন। তখন তিনি ফতেউল্লাহ সিরাজীকে সিংহাসন আরোহণের ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য বাংলা সাল প্রবর্তণের নির্দেশ দেন। তাই ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে হিজরি সাল ৯৬৩-এর সঙ্গে পরবর্তী সৌরবছর সংখ্যা যোগ করে বাংলা সাল বঙ্গাব্দ চালু করা হয়। তাই অনেক ঐতিহাসিকই মনে করেন, সম্রাট আকবরই প্রকৃত বাংলা সালের প্রবর্তক। শুরুতে বাংলা নববর্ষের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ। বিভিন্ন সময়ে বঙ্গাব্দের দিন ও তারিখ নির্ধারণে জটিলতা পরিলক্ষিত হয়। এসব জটিলতা নিরসনে প্রখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বঙ্গাব্দের বেশ কিছু সংস্কারসাধন করেন। যেমন গণনার সুবিধার্থে বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত দিনের সংখ্যা প্রতিমাসে ৩১ করা হয় এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ৩০ দিন গণনার বিধান করা হয়। ১৯৮৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সংস্কার কাজের স্বীকৃতি প্রদান করেন।
প্রায় চার হাজার বছর আগে নববর্ষ উদযাপনের প্রচলন শুরু হয় প্রাচীন ব্যাবিলনে। প্রাচীন ব্যাবিলনে নতুন বছর শুরু হতো নতুন চাঁদ দেখা সাপেক্ষে। সেটা ছিল বসন্তকালের প্রথম চাঁদ। বসন্তকালে নতুন ফসল এবং ফুল ফোটার অনুষঙ্গ তাদের কাছে ছিল মুখ্য। এগারো দিন ধরে চলত নববর্ষ উৎসব। রোমানরা তাদের বর্ষ গণনা শুরু করত মার্চ মাসের শেষ থেকে। তবে বিভিন্ন রোমান সম্রাটদের শাসনামলে তা পরিবর্তিত হতো। রোমান সিনেটররা খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩ সালে ঘোষণা করে জানুয়ারির এক তারিখই হবে বছরের পয়লা দিন। কিন্তু তারপরও খ্রিস্টপূর্ব ’৪৬ সাল পর্যন্ত বর্ষপঞ্জি পরিবর্তিত হতে থাকে। তারপর সম্রাট জুলিয়াস সিজার এক তারিখকেই আবার পুণঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এ কারণে একে ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’ও বলা হয়। পরে ১৫৮২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করেন এবং নতুন একটি বর্ষপঞ্জি ঘোষণা করেন। একেই বলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার বা গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি। এই সৌর ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্তমানে ইংরেজি মাস বা বছর গণনা করা হয়। ফ্রান্সে ১লা জানুয়ারিকে নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণনা শুরু হয় ১৫৬৪ সালে। এর আগে সেখানে নববর্ষ হতো ১লা এপ্রিল। মক্কা থেকে ৬২২ খ্রীষ্টাব্দের ২৪শে সেপ্টেম্বর মুহম্মদ (স.) মদীনায় হিজরত করেন। পরে খলিফা হজরত উমরের (রা) এই ঘটনাকে শুরু হিসাব করে হিজরী সাল প্রবর্তন করেন। এই সাল অনুসারে মহররম মাসের ১ তারিখ হিজরী নববর্ষ গণনা করা হয়।
কথিত আছে, সম্রাট আকবরের রাজত্বকাল থেকে মূলত বার্ষিক কর, ভূমিকর, কৃষিকর, জলকর ইত্যাদি আদায়ের প্রয়োজনে বাংলা সালের প্রবর্তন করা হয়। কিন্তু অংকের হিসাবে ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন রাজ্যের শাসকদের সময় থেকেই বাংলা সালের গণনা শুরু হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, গৌড়ীয় বঙ্গের রাজা শশাঙ্ক থানেশ্বর জয় করে কর্ণসুবর্ণের (মুর্শিদাবাদ রাজধানী) সিংহাসনে আরোহণ করেন ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে। এ কারণেই রাজা শশাঙ্কের সিংহাসন আরোহণের বছর থেকেই বাংলা সালের উদ্ভব হয় বলেই কেউ কেউ মত দিয়েছেন। রাজা শশাঙ্ক সিংহাসনে আরোহণের পর পরই সৌর সাল অনুযায়ী একটি নতুন সাল চালু করেন যাকে আজ আমরা বাংলা সাল বলে অভিহিত করি। রাজস্ব আদায়সংক্রান্ত সুবিধার জন্য সম্রাট আকবরের সময় বঙ্গাব্দ বা বাংলা সনের ব্যাপক ব্যাবহার শুরু হয়। পঞ্জিকাও তৈরি হয়। এছাড়া আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখযোগ্য-৯৬৩ হিজরি সালে যখন সম্রাট আকবর সিংহাসনে আরোহণ করেন। তখন তিনি ফতেউল্লাহ সিরাজীকে সিংহাসন আরোহণের ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য বাংলা সাল প্রবর্তণের নির্দেশ দেন। তাই ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে হিজরি সাল ৯৬৩-এর সঙ্গে পরবর্তী সৌরবছর সংখ্যা যোগ করে বাংলা সাল বঙ্গাব্দ চালু করা হয়। তাই অনেক ঐতিহাসিকই মনে করেন, সম্রাট আকবরই প্রকৃত বাংলা সালের প্রবর্তক। শুরুতে বাংলা নববর্ষের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ। বিভিন্ন সময়ে বঙ্গাব্দের দিন ও তারিখ নির্ধারণে জটিলতা পরিলক্ষিত হয়। এসব জটিলতা নিরসনে প্রখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বঙ্গাব্দের বেশ কিছু সংস্কারসাধন করেন। যেমন গণনার সুবিধার্থে বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত দিনের সংখ্যা প্রতিমাসে ৩১ করা হয় এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ৩০ দিন গণনার বিধান করা হয়। ১৯৮৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সংস্কার কাজের স্বীকৃতি প্রদান করেন।
No comments