বৈশাখে ৩ শয়তানের প্রতি ঘৃণা! by যতীন সরকার
নতুন বছরের শুরুতে সবাই কেবল শুভেচ্ছাই
প্রকাশ করে। আমি কিন্তু শুভেচ্ছার চেয়ে বেশি করে বলি ঘৃণার কথা। ঘৃণা,
ঘৃণা, ঘৃণা! রুদ্র, প্রচণ্ড, প্রকট, প্রচুর, পবিত্র ঘৃণা!
হ্যাঁ,
বর্ষ শুরুতে অন্যের মতো আমিও শুভেচ্ছা জানাই বটে। তবে
পাত্র-অপাত্র-নির্বিশেষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাতে রাজি নই। বন্ধুর জন্য আমি
শুভেচ্ছার ডালি উজাড় করে দিই। কিন্তু শত্রুর জন্য শুভেচ্ছা নয়, তাকে কেবলই
ঘৃণা, তার মুখে ঘৃণার থুথু ছিটিয়ে দিতে পারলেই পরম তৃপ্তি পাই। এমনকি, এ
ক্ষেত্রে আমি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথেরও একটি বক্তব্যের বিরুদ্ধে অবস্থান না
নিয়ে পারি না। নববর্ষ বন্দনাবিষয়ক একটি কবিতায় কবিগুরু লিখেছিলেন- ‘বন্ধু
হও, শত্রু হও, যেখানে যে-কেহ রও/ক্ষমা করো আজিকার মতো,/পুরাতন বরষের সাথে
পুরাতন অপরাধ যত।’
এতে মহান কবির মহত্ত্ব ও ক্ষমাশীলতার প্রকাশ ঘটেছিল বটে, কিন্তু আমি সবিনয়ে এর বিরুদ্ধাচরণ করি। কবির সঙ্গে তো একালের শত্রুদের পরিচয় ছিল না। একান্ত ক্রান্তদর্শী হয়েও তিনি জানতে পারেননি যে এককালে এই বাংলাদেশে রাজাকার আলবদরের মতো কতকগুলো দেশদ্রোহী মানবদ্রোহী ও নরকের কীটসদৃশ মানবসন্তান দেশজুড়ে কী তাণ্ডব চালিয়ে যাবে। কবিগুরুর উপদেশ অনুসারে নববর্ষের দিনেও এদের যদি আমরা ক্ষমা করে দিই, তবে সে-ক্ষমাকে তারা আমাদের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ বলেই ধরে নেবে এবং শত্রুতা সাধনে আরো প্রচণ্ড হিংস্র হয়ে উঠবে। তাই এদের ক্ষমা করা মানে একটি ক্ষমাহীন অন্যায় আচরণ করা। কখনো যাতে এ রকম আচরণ আমরা না করি সে উপদেশ তো কবিগুরুই আমাদের দিয়ে গেছেন। ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে’-এ-ও তো তাঁরই অনুজ্ঞা। তিনিই তো আমাদের হয়ে প্রার্থনা জানিয়েছেন-
ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা
হে রুদ্র নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা
তোমার আদেশে। যেন রসনায় মম
সত্যবাক্য ঝলি উঠে খরখড়গসম
তোমার ইঙ্গিতে। যেন রাখি তব মান
তোমার বিচারাসনে লয়ে নিজ স্থান।
কবিগুরুর এ-ধরনের অনুজ্ঞা ও প্রার্থনার মর্মবাণীটি সমস্ত অন্তর দিয়ে অনুভব করা, এবং তাঁর শিক্ষার আলোকে হৃদয়কে আলোকিত করে তোলাই হবে নববর্ষে আমাদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। মানতেই হবে যে, সেই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আমরা অবহেলা করেছি। আমরা ভালোবাসার পাত্রাপাত্র বিবেচনা করিনি, যাকে ভালোবাসা উচিত নয় তাকেও ভালোবেসেছি, ঘৃণার পাত্রকে ঘৃণাভরে দূরে ঠেলে দেওয়ার বদলে ভালোবেসে বুকে তুলে নিয়েছি। যথাবিহিত নিষ্ঠুরতার চর্চা না করে ক্লীবতার কোলে গা ঢেলে দিয়েছি। এ-রকম করেছি বলেই স্বাধীনতার শত্রুরা স্বাধীন দেশে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছে, সংগ্রামের বিজয়ের ফলকে অনায়াসে লুট করে নিয়েছে। স্বাধীনতা-সংগ্রামেরকালে যারা আমাদের নারীদের সম্ভ্রম নষ্ট করেছে, স্বাধীনতা-উত্তরকালে তাদেরই চেলাচামুণ্ডারা প্রচণ্ড শক্তিধর হয়ে উঠেছে, তারাই এখন ধর্মের দোহাই পেড়ে চরম অধর্মাচরণ করে যাচ্ছে, নারী নির্যাতন ও নারীত্বের অবমাননায় মেতেছে, পবিত্র ধর্মকে বেচাকেনার পণ্যে পরিণত করেছে, ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, মানবধর্মের সাধক শিল্পী কবি বুদ্ধিজীবী মনীষীদের ধর্মদ্রোহী আখ্যা দেওয়ার স্পর্ধা দেখাচ্ছে। বাঙালির বর্ষবরণ উৎসবের প্রতি ওদের রোষ ও বিদ্রূপ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আবহমান বাংলা ও বাঙালির সুস্থ সংস্কৃতির প্রবাহকে ওরা রুদ্ধ করে দিতে চেয়েছে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে বোমা মেরেছে, সংস্কৃতিসেবীদের হত্যা করেছে। নববর্ষ উপলক্ষেও কেউ যদি ওদের ক্ষমা করতে বলে, তাকেও প্রচণ্ড ঘৃণায় জর্জরিত করে তুলতে হবে, তার প্রতিও নিষ্ঠুর হয়ে উঠতে হবে। প্রতিটি নববর্ষের দিনেই অন্যায়কারীর প্রতি ঘৃণাকে সুতীব্র করে তোলার জন্য কবিগুরুর কথাই সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিই-
মুহূর্তে তুলিয়া শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে;
যার ভয়ে ভীত তুমি সে-অন্যায় ভীরু তোমা-চেয়ে,
যখনি জাগিবে তুমি তখনি সে পালাইবে ধেয়ে।
যখনি দাঁড়াবে তুমি সম্মুখে তাহার তখনি সে
পথকুক্কুরের মতো সংকোচে সত্রাসে যাবে মিশে।
কবিগুরু তাঁর জীবনের শেষ নববর্ষের ভাষণে সুদৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন, ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।’ সেই ভাষণেই তিনি তাঁর ‘আশা’র কথা জানিয়ে বলেছিলেন,-
‘মহাপ্রলয়ের পরে বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশে ইতিহাসের একটি নির্মল আত্মপ্রকাশ হয়তো আরম্ভ হবে এই পূর্বাচলের সূর্যোদয়ের দিগন্ত থেকে। আর একদিন অপরাজিত মানুষ নিজের জয়যাত্রার অভিযানে সকল বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হবে তার মহৎ মর্যাদা ফিরে পাবার পথে।’
মহৎ কবির এই সুমহান আশা বাস্তবায়িত করার দায়িত্ব তো আমাদেরই গ্রহণ করতে হবে। সুষ্ঠুভাবে সেই দায়িত্বটি পালনের জন্যও শত্রুদের বিরুদ্ধে ঘৃণার অস্ত্রকে শানিত করে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
এ প্রসঙ্গেই মনে পড়ছে লিবিয়ার এক সময়কার রাষ্ট্রনায়ক কর্নেল গাদ্দাফির কথা। স্বৈরাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে গাদ্দাফির পতন ঘটেছে। সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে ভুলতে পারি না খ্রিস্টীয় নববর্ষ উপলক্ষে ১৯৮৩ সালে প্রদত্ত তার বাণীটির কথা। সেই বাণীতে একান্ত চাঁচাছোলা ভাষায় তিনি বলে দিয়েছিলেন, ‘শয়তানরাই এখন বিশ্বের ধনী দেশগুলোর নেতৃত্ব করছে।’ সাম্রাজ্যবাদী এই শয়তানদের শয়তানিতে আমাদের বাংলাদেশের মানুষেরও কম ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। এই শয়তানরাই তো পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতা করে, আলবদর-রাজাকারদের শক্তি জুগিয়ে, আমাদের স্বাধীনতাকে তাদের সপ্তম নৌবহর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে ডুবিয়ে দিতে চেয়েছিল। এই শয়তানরাই তো এখন এককেন্দ্রিক বিশ্বের প্রভু হয়ে উঠেছে। নববর্ষে এই শয়তানদের বিরুদ্ধেও অবশ্যই ঘৃণার অস্ত্র ছুঁড়ে দিতে হবে। এ ব্যাপারে বেশ কয়েক বছর আগেই আমাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন প্রয়াত লোককবি শাহ আবদুল করিম। তিনটি শয়তানকে তিনি চিহ্নিত করেছিলেন এভাবে-
বড় শয়তান সাম্রাজ্যবাদ নতুন নতুন ফন্দি আঁটে
মধ্যম শয়তান পুঁজিবাদ বসে বসে মজা লোটে
সামন্তবাদ জালিম বটে দয়া নাই তাহার মনে
তিন শয়তানের লীলাভূমি শ্যামল মাটি সোনার বাংলার
গরিবের বুকের রক্তে রঙিন হলো বারে বার
সোনার বাংলা করলো ছারখার সাম্রাজ্যবাদ শয়তানে
স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে মজা মারলো শোষকে
এখন সবাই বুঝতে পারে চাবি ঘুরছে কোন পাকে
মধু হয় না বল্লার চাকে বাউল আবদুল করিম জানে।
এই তিন শোষক শয়তানের প্রতি তীব্র তীক্ষ্ণ প্রচণ্ড ঘৃণার প্রকাশ ঘটিয়ে আমাদের নববর্ষকে সার্থক করে তুলতে হবে।
লেখক: যতীন সরকার। শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক
এতে মহান কবির মহত্ত্ব ও ক্ষমাশীলতার প্রকাশ ঘটেছিল বটে, কিন্তু আমি সবিনয়ে এর বিরুদ্ধাচরণ করি। কবির সঙ্গে তো একালের শত্রুদের পরিচয় ছিল না। একান্ত ক্রান্তদর্শী হয়েও তিনি জানতে পারেননি যে এককালে এই বাংলাদেশে রাজাকার আলবদরের মতো কতকগুলো দেশদ্রোহী মানবদ্রোহী ও নরকের কীটসদৃশ মানবসন্তান দেশজুড়ে কী তাণ্ডব চালিয়ে যাবে। কবিগুরুর উপদেশ অনুসারে নববর্ষের দিনেও এদের যদি আমরা ক্ষমা করে দিই, তবে সে-ক্ষমাকে তারা আমাদের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ বলেই ধরে নেবে এবং শত্রুতা সাধনে আরো প্রচণ্ড হিংস্র হয়ে উঠবে। তাই এদের ক্ষমা করা মানে একটি ক্ষমাহীন অন্যায় আচরণ করা। কখনো যাতে এ রকম আচরণ আমরা না করি সে উপদেশ তো কবিগুরুই আমাদের দিয়ে গেছেন। ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে’-এ-ও তো তাঁরই অনুজ্ঞা। তিনিই তো আমাদের হয়ে প্রার্থনা জানিয়েছেন-
ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা
হে রুদ্র নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা
তোমার আদেশে। যেন রসনায় মম
সত্যবাক্য ঝলি উঠে খরখড়গসম
তোমার ইঙ্গিতে। যেন রাখি তব মান
তোমার বিচারাসনে লয়ে নিজ স্থান।
কবিগুরুর এ-ধরনের অনুজ্ঞা ও প্রার্থনার মর্মবাণীটি সমস্ত অন্তর দিয়ে অনুভব করা, এবং তাঁর শিক্ষার আলোকে হৃদয়কে আলোকিত করে তোলাই হবে নববর্ষে আমাদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। মানতেই হবে যে, সেই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আমরা অবহেলা করেছি। আমরা ভালোবাসার পাত্রাপাত্র বিবেচনা করিনি, যাকে ভালোবাসা উচিত নয় তাকেও ভালোবেসেছি, ঘৃণার পাত্রকে ঘৃণাভরে দূরে ঠেলে দেওয়ার বদলে ভালোবেসে বুকে তুলে নিয়েছি। যথাবিহিত নিষ্ঠুরতার চর্চা না করে ক্লীবতার কোলে গা ঢেলে দিয়েছি। এ-রকম করেছি বলেই স্বাধীনতার শত্রুরা স্বাধীন দেশে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছে, সংগ্রামের বিজয়ের ফলকে অনায়াসে লুট করে নিয়েছে। স্বাধীনতা-সংগ্রামেরকালে যারা আমাদের নারীদের সম্ভ্রম নষ্ট করেছে, স্বাধীনতা-উত্তরকালে তাদেরই চেলাচামুণ্ডারা প্রচণ্ড শক্তিধর হয়ে উঠেছে, তারাই এখন ধর্মের দোহাই পেড়ে চরম অধর্মাচরণ করে যাচ্ছে, নারী নির্যাতন ও নারীত্বের অবমাননায় মেতেছে, পবিত্র ধর্মকে বেচাকেনার পণ্যে পরিণত করেছে, ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, মানবধর্মের সাধক শিল্পী কবি বুদ্ধিজীবী মনীষীদের ধর্মদ্রোহী আখ্যা দেওয়ার স্পর্ধা দেখাচ্ছে। বাঙালির বর্ষবরণ উৎসবের প্রতি ওদের রোষ ও বিদ্রূপ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আবহমান বাংলা ও বাঙালির সুস্থ সংস্কৃতির প্রবাহকে ওরা রুদ্ধ করে দিতে চেয়েছে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে বোমা মেরেছে, সংস্কৃতিসেবীদের হত্যা করেছে। নববর্ষ উপলক্ষেও কেউ যদি ওদের ক্ষমা করতে বলে, তাকেও প্রচণ্ড ঘৃণায় জর্জরিত করে তুলতে হবে, তার প্রতিও নিষ্ঠুর হয়ে উঠতে হবে। প্রতিটি নববর্ষের দিনেই অন্যায়কারীর প্রতি ঘৃণাকে সুতীব্র করে তোলার জন্য কবিগুরুর কথাই সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিই-
মুহূর্তে তুলিয়া শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে;
যার ভয়ে ভীত তুমি সে-অন্যায় ভীরু তোমা-চেয়ে,
যখনি জাগিবে তুমি তখনি সে পালাইবে ধেয়ে।
যখনি দাঁড়াবে তুমি সম্মুখে তাহার তখনি সে
পথকুক্কুরের মতো সংকোচে সত্রাসে যাবে মিশে।
কবিগুরু তাঁর জীবনের শেষ নববর্ষের ভাষণে সুদৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন, ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।’ সেই ভাষণেই তিনি তাঁর ‘আশা’র কথা জানিয়ে বলেছিলেন,-
‘মহাপ্রলয়ের পরে বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশে ইতিহাসের একটি নির্মল আত্মপ্রকাশ হয়তো আরম্ভ হবে এই পূর্বাচলের সূর্যোদয়ের দিগন্ত থেকে। আর একদিন অপরাজিত মানুষ নিজের জয়যাত্রার অভিযানে সকল বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হবে তার মহৎ মর্যাদা ফিরে পাবার পথে।’
মহৎ কবির এই সুমহান আশা বাস্তবায়িত করার দায়িত্ব তো আমাদেরই গ্রহণ করতে হবে। সুষ্ঠুভাবে সেই দায়িত্বটি পালনের জন্যও শত্রুদের বিরুদ্ধে ঘৃণার অস্ত্রকে শানিত করে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
এ প্রসঙ্গেই মনে পড়ছে লিবিয়ার এক সময়কার রাষ্ট্রনায়ক কর্নেল গাদ্দাফির কথা। স্বৈরাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে গাদ্দাফির পতন ঘটেছে। সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে ভুলতে পারি না খ্রিস্টীয় নববর্ষ উপলক্ষে ১৯৮৩ সালে প্রদত্ত তার বাণীটির কথা। সেই বাণীতে একান্ত চাঁচাছোলা ভাষায় তিনি বলে দিয়েছিলেন, ‘শয়তানরাই এখন বিশ্বের ধনী দেশগুলোর নেতৃত্ব করছে।’ সাম্রাজ্যবাদী এই শয়তানদের শয়তানিতে আমাদের বাংলাদেশের মানুষেরও কম ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। এই শয়তানরাই তো পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতা করে, আলবদর-রাজাকারদের শক্তি জুগিয়ে, আমাদের স্বাধীনতাকে তাদের সপ্তম নৌবহর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে ডুবিয়ে দিতে চেয়েছিল। এই শয়তানরাই তো এখন এককেন্দ্রিক বিশ্বের প্রভু হয়ে উঠেছে। নববর্ষে এই শয়তানদের বিরুদ্ধেও অবশ্যই ঘৃণার অস্ত্র ছুঁড়ে দিতে হবে। এ ব্যাপারে বেশ কয়েক বছর আগেই আমাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন প্রয়াত লোককবি শাহ আবদুল করিম। তিনটি শয়তানকে তিনি চিহ্নিত করেছিলেন এভাবে-
বড় শয়তান সাম্রাজ্যবাদ নতুন নতুন ফন্দি আঁটে
মধ্যম শয়তান পুঁজিবাদ বসে বসে মজা লোটে
সামন্তবাদ জালিম বটে দয়া নাই তাহার মনে
তিন শয়তানের লীলাভূমি শ্যামল মাটি সোনার বাংলার
গরিবের বুকের রক্তে রঙিন হলো বারে বার
সোনার বাংলা করলো ছারখার সাম্রাজ্যবাদ শয়তানে
স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে মজা মারলো শোষকে
এখন সবাই বুঝতে পারে চাবি ঘুরছে কোন পাকে
মধু হয় না বল্লার চাকে বাউল আবদুল করিম জানে।
এই তিন শোষক শয়তানের প্রতি তীব্র তীক্ষ্ণ প্রচণ্ড ঘৃণার প্রকাশ ঘটিয়ে আমাদের নববর্ষকে সার্থক করে তুলতে হবে।
লেখক: যতীন সরকার। শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক
No comments