হোম অব ক্রিকেটে ‘চাঁদের কলঙ্ক’
বিশ্বকাপকে উপলক্ষ করে একটাও নতুন স্টেডিয়াম না পাওয়ার অতৃপ্তি আছে। আবার নতুন সাজে সেজে ওঠা তিনটি স্টেডিয়ামের আকর্ষণীয় চেহারা এক ধরনের তৃপ্তিও দেয়। ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামকে বলতে পারেন বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় পাওয়া। ভেতর-বাইরের চাকচিক্য, অত্যাধুনিক নিরাপত্তা-ব্যবস্থা ও সুযোগ-সুবিধা বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ভেন্যুর স্বীকৃতি দিয়েছে এই স্টেডিয়ামকে।
কিন্তু এত সাজ-সজ্জা, এত আধুনিকায়ন—সবই যেন বিশ্বকাপকে ঘিরেই ছিল! বিশ্বকাপ শেষে ‘হোম অব ক্রিকেট’ ফিরে যাচ্ছে পুরোনো চেহারায় এবং এর মূল কারণ, স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের ভেতরের দোকানপাট। বিশ্বকাপের জন্য তিন মাসের মতো সব দোকান বন্ধ থাকলেও বিশ্বকাপ শেষে আবারও চালু হয়ে গেছে মহাসমারোহে। দোকানের সংখ্যা ৮৪, সবই আসবাবের। দোকানের বাইরেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সেসব। বার্নিশের কাজ-টাজ ওখানেই হয়। সব মিলে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ চলাকালীন ক্রিকেটীয় আবহটা এখন একেবারেই উধাও।
সবচেয়ে বেশি সমস্যা করছে একাডেমি ভবনের পাশের ১০-১১টি দোকান। এসব দোকানের জন্য চাইলেও মূল ফটকের ভেতরের এলাকাটিকে পুরোপুরি নিরাপদ রাখা যাচ্ছে না। বহিরাগতদের আসা-যাওয়ায় কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সন্ধ্যার পর একাডেমি ভবনের আশপাশেই নেশাখোরদের আড্ডাও বসে বলে অভিযোগ। চুরি-টুরিও হচ্ছে। গ্যালারির টয়লেটে লাগানো বাতি, পানির কল নাই হয়ে যাচ্ছে।
বিসিবির উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নিজাম উদ্দিন চৌধুরী এসব স্বীকার করে বলেছেন, ‘আমরা স্টেডিয়াম এলাকার নিরাপত্তা বাড়িয়েছি। নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আনসার বাহিনীকে। স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের ভেতর স্থায়ী আনসার ক্যাম্প বসানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ স্টেডিয়াম ও বিসিবি অফিসের নিরাপত্তা রক্ষায় আনসার বাহিনীর সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা। যদিও ক্রিকেট বোর্ডেরই এক কর্মচারীর অভিযোগ, ‘তারা আর কী চুরি ঠেকাবে? বাইরের মানুষের সঙ্গে তো তাদেরও খাতির জমে গেছে!’
দোকান থাকায় শুধু স্টেডিয়ামের পরিবেশই নষ্ট হচ্ছে না, ‘হোম অব ক্রিকেট’ পাচ্ছে না পূর্ণাঙ্গ চেহারা। মূল নকশা অনুযায়ী গ্যালারির নিচে ক্রিকেট জাদুঘর, ক্রিকেটার্স ক্যাফে, সুভ্যেনির শপ, গ্রন্থাগার, আর্কাইভ, সেলুন ইত্যাদি হওয়ার কথা থাকলেও সেসবের জায়গা দখল করে আছে দোকান। ‘হোম অব ক্রিকেটের’ অনুমোদিত নকশা মেনে সংস্কারের মাধ্যমে মিরপুর স্টেডিয়ামে যেসব পরিবর্তন আনার কথা, তার সবই এর মধ্যে হয়ে গেলেও হয়নি শুধু দোকান স্থানান্তরের কাজটি।
দোকান উচ্ছেদ বা স্থানান্তরের ক্ষমতা বিসিবির নেইও। ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর বিসিবিকে পরবর্তী ১৫ বছরের জন্য স্টেডিয়াম ইজারা দিলেও দোকান মালিকদের কাছে পজেশন বিক্রি করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। তিন বছর পরপর চুক্তি নবায়ন করে দোকানগুলো থেকে প্রতি মাসে ভাড়াও তুলছে এনএসসি। বিসিবি একাধিকবার চিঠি দিয়ে দোকান উচ্ছেদ ও স্থানান্তরের ব্যাপারে এনএসসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সর্বশেষ গত এপ্রিলের শেষ দিকে বিসিবির প্রধান নির্বাহী এনএসসির সচিব বরাবর পাঠানো চিঠিতে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, বিশ্বকাপে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম অন্যতম সেরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যুর স্বীকৃতি পেয়েছে। স্টেডিয়ামের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তার স্বার্থে যেন দোকানগুলো স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু এনএসসি আগের মতোই নিরুত্তর। উল্টো বিশ্বকাপের আগে প্লাজা গেটের বাইরে নির্মিত নতুন ১৬টি দোকানের পজেশন নতুন করে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অথচ কথা ছিল প্রেসবক্স এবং একাডেমি ভবনের পাশের দোকানগুলো স্থানান্তরিত হয়ে এখানে আসবে! একইভাবে করপোরেট বক্সের নিচের এবং ইনডোরের পাশের দোকানগুলো স্থানান্তরিত হয়ে যাওয়ার কথা স্টেডিয়ামের বাইরে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে। কিন্তু সেখানে এখনো নতুন দোকান নির্মিতই হয়নি। পরিস্থিতি দেখে দোকান উচ্ছেদের দাবিতে বিসিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্রিকেটারদের নিয়ে মানববন্ধনের মতো প্রতীকে প্রতিবাদে যাওয়ার কথাও ভাবছেন বলে জানা গেছে।
বিসিবির বর্তমান সহসভাপতি আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ২০০৬ সালে এনএসসির কাছ থেকে স্টেডিয়াম ইজারা নেওয়ার সময়ও বিসিবির উপদেষ্টা ছিলেন। ওই সময় বিসিবি-এনএসসি আলোচনায় দোকান স্থানান্তরের ব্যাপারে মতৈক্য হয়েছিল বলে তাঁর দাবি, ‘একটা আন্তর্জাতিক ভেন্যুর ভেতর দোকান থাকা যে সমস্যা, সেটা তখনো আলোচনা হয়েছিল এবং এনএসসি তাতে দ্বিমত পোষণ করেনি।’ তখনই কেন দোকান উচ্ছেদ করা যায়নি, সে ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, যাঁদের কাছে এনএসসি পজেশন বিক্রি করেছিল, তাঁরা এখন আর মালিক নন। বহু হাত ঘুরে মালিকানা বদলে গেছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাই উচ্ছেদ না করে দোকান স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়।’
সিদ্ধান্তটা যখন আজও বাস্তবায়ন হয়নি, তখন প্রশ্ন জাগে, ‘হোম অব ক্রিকেটে’ কি তাহলে ‘চাঁদের কলঙ্ক’ হয়েই থেকে যাবে এসব দোকান?
কিন্তু এত সাজ-সজ্জা, এত আধুনিকায়ন—সবই যেন বিশ্বকাপকে ঘিরেই ছিল! বিশ্বকাপ শেষে ‘হোম অব ক্রিকেট’ ফিরে যাচ্ছে পুরোনো চেহারায় এবং এর মূল কারণ, স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের ভেতরের দোকানপাট। বিশ্বকাপের জন্য তিন মাসের মতো সব দোকান বন্ধ থাকলেও বিশ্বকাপ শেষে আবারও চালু হয়ে গেছে মহাসমারোহে। দোকানের সংখ্যা ৮৪, সবই আসবাবের। দোকানের বাইরেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সেসব। বার্নিশের কাজ-টাজ ওখানেই হয়। সব মিলে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ চলাকালীন ক্রিকেটীয় আবহটা এখন একেবারেই উধাও।
সবচেয়ে বেশি সমস্যা করছে একাডেমি ভবনের পাশের ১০-১১টি দোকান। এসব দোকানের জন্য চাইলেও মূল ফটকের ভেতরের এলাকাটিকে পুরোপুরি নিরাপদ রাখা যাচ্ছে না। বহিরাগতদের আসা-যাওয়ায় কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সন্ধ্যার পর একাডেমি ভবনের আশপাশেই নেশাখোরদের আড্ডাও বসে বলে অভিযোগ। চুরি-টুরিও হচ্ছে। গ্যালারির টয়লেটে লাগানো বাতি, পানির কল নাই হয়ে যাচ্ছে।
বিসিবির উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নিজাম উদ্দিন চৌধুরী এসব স্বীকার করে বলেছেন, ‘আমরা স্টেডিয়াম এলাকার নিরাপত্তা বাড়িয়েছি। নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আনসার বাহিনীকে। স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের ভেতর স্থায়ী আনসার ক্যাম্প বসানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ স্টেডিয়াম ও বিসিবি অফিসের নিরাপত্তা রক্ষায় আনসার বাহিনীর সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা। যদিও ক্রিকেট বোর্ডেরই এক কর্মচারীর অভিযোগ, ‘তারা আর কী চুরি ঠেকাবে? বাইরের মানুষের সঙ্গে তো তাদেরও খাতির জমে গেছে!’
দোকান থাকায় শুধু স্টেডিয়ামের পরিবেশই নষ্ট হচ্ছে না, ‘হোম অব ক্রিকেট’ পাচ্ছে না পূর্ণাঙ্গ চেহারা। মূল নকশা অনুযায়ী গ্যালারির নিচে ক্রিকেট জাদুঘর, ক্রিকেটার্স ক্যাফে, সুভ্যেনির শপ, গ্রন্থাগার, আর্কাইভ, সেলুন ইত্যাদি হওয়ার কথা থাকলেও সেসবের জায়গা দখল করে আছে দোকান। ‘হোম অব ক্রিকেটের’ অনুমোদিত নকশা মেনে সংস্কারের মাধ্যমে মিরপুর স্টেডিয়ামে যেসব পরিবর্তন আনার কথা, তার সবই এর মধ্যে হয়ে গেলেও হয়নি শুধু দোকান স্থানান্তরের কাজটি।
দোকান উচ্ছেদ বা স্থানান্তরের ক্ষমতা বিসিবির নেইও। ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর বিসিবিকে পরবর্তী ১৫ বছরের জন্য স্টেডিয়াম ইজারা দিলেও দোকান মালিকদের কাছে পজেশন বিক্রি করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। তিন বছর পরপর চুক্তি নবায়ন করে দোকানগুলো থেকে প্রতি মাসে ভাড়াও তুলছে এনএসসি। বিসিবি একাধিকবার চিঠি দিয়ে দোকান উচ্ছেদ ও স্থানান্তরের ব্যাপারে এনএসসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সর্বশেষ গত এপ্রিলের শেষ দিকে বিসিবির প্রধান নির্বাহী এনএসসির সচিব বরাবর পাঠানো চিঠিতে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, বিশ্বকাপে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম অন্যতম সেরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যুর স্বীকৃতি পেয়েছে। স্টেডিয়ামের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তার স্বার্থে যেন দোকানগুলো স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু এনএসসি আগের মতোই নিরুত্তর। উল্টো বিশ্বকাপের আগে প্লাজা গেটের বাইরে নির্মিত নতুন ১৬টি দোকানের পজেশন নতুন করে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অথচ কথা ছিল প্রেসবক্স এবং একাডেমি ভবনের পাশের দোকানগুলো স্থানান্তরিত হয়ে এখানে আসবে! একইভাবে করপোরেট বক্সের নিচের এবং ইনডোরের পাশের দোকানগুলো স্থানান্তরিত হয়ে যাওয়ার কথা স্টেডিয়ামের বাইরে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে। কিন্তু সেখানে এখনো নতুন দোকান নির্মিতই হয়নি। পরিস্থিতি দেখে দোকান উচ্ছেদের দাবিতে বিসিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্রিকেটারদের নিয়ে মানববন্ধনের মতো প্রতীকে প্রতিবাদে যাওয়ার কথাও ভাবছেন বলে জানা গেছে।
বিসিবির বর্তমান সহসভাপতি আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ২০০৬ সালে এনএসসির কাছ থেকে স্টেডিয়াম ইজারা নেওয়ার সময়ও বিসিবির উপদেষ্টা ছিলেন। ওই সময় বিসিবি-এনএসসি আলোচনায় দোকান স্থানান্তরের ব্যাপারে মতৈক্য হয়েছিল বলে তাঁর দাবি, ‘একটা আন্তর্জাতিক ভেন্যুর ভেতর দোকান থাকা যে সমস্যা, সেটা তখনো আলোচনা হয়েছিল এবং এনএসসি তাতে দ্বিমত পোষণ করেনি।’ তখনই কেন দোকান উচ্ছেদ করা যায়নি, সে ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, যাঁদের কাছে এনএসসি পজেশন বিক্রি করেছিল, তাঁরা এখন আর মালিক নন। বহু হাত ঘুরে মালিকানা বদলে গেছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাই উচ্ছেদ না করে দোকান স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়।’
সিদ্ধান্তটা যখন আজও বাস্তবায়ন হয়নি, তখন প্রশ্ন জাগে, ‘হোম অব ক্রিকেটে’ কি তাহলে ‘চাঁদের কলঙ্ক’ হয়েই থেকে যাবে এসব দোকান?
No comments