যখন নাজমুলও রোমাঞ্চিত
গত বছর ফেব্রুয়ারির ঘটনা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে থেকে বাদ পড়ায় রাগ করে হোটেল ছেড়ে চলে গেলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বিকল্প হিসেবে রাতারাতি সিলেট থেকে উড়িয়ে আনা হলো নাজমুল হোসেনকে। মজার ব্যাপার, আকস্মিক এই যাত্রার জন্য নাজমুল নাকি তৈরিই ছিলেন!
দলে থাকুন আর না থাকুন, তৈরি থাকার কাজটা খুব ভালোভাবেই করেন নাজমুল। সিরিজের মাঝপথে বিকল্প পেসার হিসেবে যদি কারও ডাক পড়ে তো সেটা তিনিই হওয়ার কথা!
২০০৪-এর সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। সেই থেকে বাংলাদেশ ওয়ানডে খেলেছে ১৫০টি। নাজমুল দলে ছিলেন মাত্র ৩৪টিতে। সঙ্গে সবেধন নীলমণি একটি মাত্র টেস্ট। এমন না যে দীর্ঘমেয়াদি কোনো চোটে পড়েছেন বা ভুগেছেন ফর্মহীনতায়। অথচ দলে আসা-যাওয়া করতে করতে নাজমুল হয়ে গেছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ (সময়ের বিবেচনায়) অনিয়মিত খেলোয়াড়। বিশ্বকাপ দলের বাকি দুই পেসারের দিকে তাকিয়েই দেখুন না। ২০০৯-এর জানুয়ারিতে অভিষিক্ত রুবেল হোসেন খেলে ফেলেছেন ২১টি ওয়ানডে আর ৮টি টেস্ট। শফিউল ইসলাম তো অভিষেকের এক বছরের মধ্যেই ওয়ানডে খেলে ফেলেছেন ২৩টি, সঙ্গে ৫টি টেস্ট।
জাতীয় দলে যাওয়া-আসার ঘটনা এত বেশি ঘটেছে যে, নাজমুল নিজেও সংখ্যাটা ঠিক মনে করতে পারেন না। বারবার এই যাওয়া-আসা নিয়ে খেদ আছে তাঁর মনে, ‘এই জিনিসটা আর ভালোই লাগে না। এ রকম যাওয়া-আসার ভেতর থাকলে আত্মবিশ্বাসেও সমস্যা হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করেছি অনেক দিন হয়ে গেছে। সে তুলনায় ম্যাচ খেলেছি অনেক কম।’ কারও দিকে অভিযোগের আঙুল না তুলে ভাগ্যকেই দায়ী করেন নাজমুল, ‘আমি কাউকে দোষ দিই না। ভাগ্যটাই এমন...নিউজিল্যান্ডের সঙ্গেই দেখেন না। তিনটা ম্যাচ খেলতে পারিনি হাত ফেটে যাওয়ায়।’
ইনজুরির চেয়েও দলের বাইরে বেশি থেকেছেন দল গঠনের যোগ-বিয়োগে না আসায়। এটাকেও বলছেন ভাগ্যের দোষ, ‘অনেক সময় ভালো বল করেও টিম কম্বিনেশনের জন্য বাদ পড়ে গেছি। একবার যেমন অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে খুব ভালো বোলিং করলাম। কিন্তু দেশে এসে পরের হোম সিরিজে আমি ড্রপ! কারণ টিম কম্বিনেশনে আসিনি। বেশির ভাগ সময়ই ভাগ্য আমার সহায় হয় না।’ তবে সাত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পরও যখন দলে ভূমিকা বলতে কারও অনুপস্থিতিতে ‘প্রক্সি’ দেওয়া—কখনো কখনো ভীষণই হতাশ হয়ে পড়েন নাজমুল।
কিন্তু ভাগ্যের কাছে যে কিছু দায়বদ্ধতাও আছে! উল্টো করে যদি দেখেন, এতটা অনিয়মিত হয়েও এখনো যে ঘুরেফিরেই বাংলাদেশ দলে নামটা আসে, পারফরম্যান্সের সঙ্গে ভাগ্যের ইশারাও নিশ্চয়ই আছে। সেটা ভেবেই সব সময় প্রস্তুত রাখেন নিজেকে। কিন্তু এভাবে কি ক্রিকেট খেলা যায়! নাজমুলের আফসোস সেখানেই, ‘এভাবে ভালো খেলা কঠিন। অনেকটা লটারির মতো। নেগেটিভ কিংবা পজিটিভ। কপাল ভালো হলে ভালো খেলে ফেলব, নয়তো খারাপ। আবার এমনও হতে পারে ভালো-খারাপ যা-ই খেলি, পরের ম্যাচেই আমি বাদ।’
দলে থাকা অবস্থায়ও প্রায়ই অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় নাজমুলকে। ম্যাচ খেলবেন, সেটাও অনেক সময় জেনেছেন ম্যাচের দিন সকালে, ‘বিশ্বাস করেন, অনেক ম্যাচে আমি নিজেও জানতাম না খেলব! খেলার দিন সকালে ওয়ার্মআপ পর্যন্তও জানতাম না আমি আছি। হয়তো বলা হয়েছে, হয় আমি খেলব না হয় আরেকজন।’
অনিশ্চয়তা ছিল বিশ্বকাপের দলে থাকা নিয়েও। নাজমুল কখনোই আশা করেননি দলে তিনজন পেসার থাকলেও তাঁর জায়গা হবে। মাশরাফির ইনজুরিই হয়তো সুযোগটা করে দিয়েছে, তবে নাজমুলের নিজের সমীকরণ অনুযায়ী চার পেসার নিলেই কেবল তাঁর ১৫ জনের দলে থাকার কথা। তবে এই সমীকরণ নিয়ে তাঁর প্রবল আপত্তি, ‘আমার তো পারফরম্যান্স খারাপ না! যেভাবেই দলে আসি মূল বোলার হিসেবেই খেলি এবং প্রায়ই পুরো ১০ ওভার বল করি। সুযোগ পেলেই টুকটাক কিছু না-কিছু করি দলের জন্য। অনেক সময় শুনি মাশরাফি ভাই না খেললে আমাকে খেলাবে। আমাকে নিয়ে সব সময় এ রকমই পরিকল্পনা থাকে...।’
অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে থাকতে থাকতে দলে থাকা-টাকা নিয়ে কিছুটা যেন আবেগহীন হয়ে পড়েছেন নাজমুল, ‘দলে থাকা নিয়ে অনেকেই ভাবে। আমার কিন্তু এ রকম কোনো টেনশন নেই। দলে থাকতে হবে, আমাকে নিতে হবে এ রকম কিছু ভাবি না। তবে আমি তৈরি থাকি। বুঝতে পারি দলে না থাকলেও আমাকে যেকোনো সময় ডাকা হতে পারে। বিশ্বকাপের স্কোয়াডে না থাকলেও আমি তৈরিই থাকতাম।’
না, এবার সেই অনিশ্চয়তা নেই। বিশ্বকাপের দলে নাজমুল আছেন সবচেয়ে অভিজ্ঞ পেসার হিসেবেই। এই থাকাটাকে তিনি বলছেন স্বপ্নপূরণ, ‘প্রথম বিশ্বকাপ খেলব—আমার জন্য স্বপ্নপূরণের মতো ব্যাপার। গত বিশ্বকাপে স্ট্যান্ডবাই ছিলাম। এবার দলে আছি। অনেক এক্সাইটেড।’
‘এক্সাইটেড’ মানে রোমাঞ্চিত! হয়তো বিশ্বকাপ বলেই। নইলে দলে আসা-যাওয়াটা তো রুটিন একটা ব্যাপারই হয়ে গেছে নাজমুলের জন্য।
দলে থাকুন আর না থাকুন, তৈরি থাকার কাজটা খুব ভালোভাবেই করেন নাজমুল। সিরিজের মাঝপথে বিকল্প পেসার হিসেবে যদি কারও ডাক পড়ে তো সেটা তিনিই হওয়ার কথা!
২০০৪-এর সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। সেই থেকে বাংলাদেশ ওয়ানডে খেলেছে ১৫০টি। নাজমুল দলে ছিলেন মাত্র ৩৪টিতে। সঙ্গে সবেধন নীলমণি একটি মাত্র টেস্ট। এমন না যে দীর্ঘমেয়াদি কোনো চোটে পড়েছেন বা ভুগেছেন ফর্মহীনতায়। অথচ দলে আসা-যাওয়া করতে করতে নাজমুল হয়ে গেছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ (সময়ের বিবেচনায়) অনিয়মিত খেলোয়াড়। বিশ্বকাপ দলের বাকি দুই পেসারের দিকে তাকিয়েই দেখুন না। ২০০৯-এর জানুয়ারিতে অভিষিক্ত রুবেল হোসেন খেলে ফেলেছেন ২১টি ওয়ানডে আর ৮টি টেস্ট। শফিউল ইসলাম তো অভিষেকের এক বছরের মধ্যেই ওয়ানডে খেলে ফেলেছেন ২৩টি, সঙ্গে ৫টি টেস্ট।
জাতীয় দলে যাওয়া-আসার ঘটনা এত বেশি ঘটেছে যে, নাজমুল নিজেও সংখ্যাটা ঠিক মনে করতে পারেন না। বারবার এই যাওয়া-আসা নিয়ে খেদ আছে তাঁর মনে, ‘এই জিনিসটা আর ভালোই লাগে না। এ রকম যাওয়া-আসার ভেতর থাকলে আত্মবিশ্বাসেও সমস্যা হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করেছি অনেক দিন হয়ে গেছে। সে তুলনায় ম্যাচ খেলেছি অনেক কম।’ কারও দিকে অভিযোগের আঙুল না তুলে ভাগ্যকেই দায়ী করেন নাজমুল, ‘আমি কাউকে দোষ দিই না। ভাগ্যটাই এমন...নিউজিল্যান্ডের সঙ্গেই দেখেন না। তিনটা ম্যাচ খেলতে পারিনি হাত ফেটে যাওয়ায়।’
ইনজুরির চেয়েও দলের বাইরে বেশি থেকেছেন দল গঠনের যোগ-বিয়োগে না আসায়। এটাকেও বলছেন ভাগ্যের দোষ, ‘অনেক সময় ভালো বল করেও টিম কম্বিনেশনের জন্য বাদ পড়ে গেছি। একবার যেমন অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে খুব ভালো বোলিং করলাম। কিন্তু দেশে এসে পরের হোম সিরিজে আমি ড্রপ! কারণ টিম কম্বিনেশনে আসিনি। বেশির ভাগ সময়ই ভাগ্য আমার সহায় হয় না।’ তবে সাত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পরও যখন দলে ভূমিকা বলতে কারও অনুপস্থিতিতে ‘প্রক্সি’ দেওয়া—কখনো কখনো ভীষণই হতাশ হয়ে পড়েন নাজমুল।
কিন্তু ভাগ্যের কাছে যে কিছু দায়বদ্ধতাও আছে! উল্টো করে যদি দেখেন, এতটা অনিয়মিত হয়েও এখনো যে ঘুরেফিরেই বাংলাদেশ দলে নামটা আসে, পারফরম্যান্সের সঙ্গে ভাগ্যের ইশারাও নিশ্চয়ই আছে। সেটা ভেবেই সব সময় প্রস্তুত রাখেন নিজেকে। কিন্তু এভাবে কি ক্রিকেট খেলা যায়! নাজমুলের আফসোস সেখানেই, ‘এভাবে ভালো খেলা কঠিন। অনেকটা লটারির মতো। নেগেটিভ কিংবা পজিটিভ। কপাল ভালো হলে ভালো খেলে ফেলব, নয়তো খারাপ। আবার এমনও হতে পারে ভালো-খারাপ যা-ই খেলি, পরের ম্যাচেই আমি বাদ।’
দলে থাকা অবস্থায়ও প্রায়ই অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় নাজমুলকে। ম্যাচ খেলবেন, সেটাও অনেক সময় জেনেছেন ম্যাচের দিন সকালে, ‘বিশ্বাস করেন, অনেক ম্যাচে আমি নিজেও জানতাম না খেলব! খেলার দিন সকালে ওয়ার্মআপ পর্যন্তও জানতাম না আমি আছি। হয়তো বলা হয়েছে, হয় আমি খেলব না হয় আরেকজন।’
অনিশ্চয়তা ছিল বিশ্বকাপের দলে থাকা নিয়েও। নাজমুল কখনোই আশা করেননি দলে তিনজন পেসার থাকলেও তাঁর জায়গা হবে। মাশরাফির ইনজুরিই হয়তো সুযোগটা করে দিয়েছে, তবে নাজমুলের নিজের সমীকরণ অনুযায়ী চার পেসার নিলেই কেবল তাঁর ১৫ জনের দলে থাকার কথা। তবে এই সমীকরণ নিয়ে তাঁর প্রবল আপত্তি, ‘আমার তো পারফরম্যান্স খারাপ না! যেভাবেই দলে আসি মূল বোলার হিসেবেই খেলি এবং প্রায়ই পুরো ১০ ওভার বল করি। সুযোগ পেলেই টুকটাক কিছু না-কিছু করি দলের জন্য। অনেক সময় শুনি মাশরাফি ভাই না খেললে আমাকে খেলাবে। আমাকে নিয়ে সব সময় এ রকমই পরিকল্পনা থাকে...।’
অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে থাকতে থাকতে দলে থাকা-টাকা নিয়ে কিছুটা যেন আবেগহীন হয়ে পড়েছেন নাজমুল, ‘দলে থাকা নিয়ে অনেকেই ভাবে। আমার কিন্তু এ রকম কোনো টেনশন নেই। দলে থাকতে হবে, আমাকে নিতে হবে এ রকম কিছু ভাবি না। তবে আমি তৈরি থাকি। বুঝতে পারি দলে না থাকলেও আমাকে যেকোনো সময় ডাকা হতে পারে। বিশ্বকাপের স্কোয়াডে না থাকলেও আমি তৈরিই থাকতাম।’
না, এবার সেই অনিশ্চয়তা নেই। বিশ্বকাপের দলে নাজমুল আছেন সবচেয়ে অভিজ্ঞ পেসার হিসেবেই। এই থাকাটাকে তিনি বলছেন স্বপ্নপূরণ, ‘প্রথম বিশ্বকাপ খেলব—আমার জন্য স্বপ্নপূরণের মতো ব্যাপার। গত বিশ্বকাপে স্ট্যান্ডবাই ছিলাম। এবার দলে আছি। অনেক এক্সাইটেড।’
‘এক্সাইটেড’ মানে রোমাঞ্চিত! হয়তো বিশ্বকাপ বলেই। নইলে দলে আসা-যাওয়াটা তো রুটিন একটা ব্যাপারই হয়ে গেছে নাজমুলের জন্য।
No comments