বর্ষসেরা সাকিব ও ‘ক্রিকেটের বাইবেল’
গত দুদিন বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দ কী ছিল? কোনো জরিপ-টরিপ ছাড়া সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। তবে অনুমান করতে তো আর বাধা নেই। সেই অনুমান বলছে, ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ শব্দযুগল ওপরের দিকেই থাকার কথা। গত পরশু প্রায় সব কটি টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কাল সংবাদপত্রগুলোতেও ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ নিয়ে বিস্তর টানাহেঁচড়া হলো। এরই জের হিসেবে মানুষের মুখে মুখেও উচ্চারিত হলো ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ কথাটা।
উপলক্ষ সাকিব আল হাসানের সর্বশেষ স্বীকৃতি। সাকিব নাকি ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ নামে পরিচিত উইজডেনের বর্ষসেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন। হা ঈশ্বর! ঈশ্বরের কাছেও মৃতজনে প্রাণ দেওয়ার আবদারটা অবাস্তব হয়ে যায়, তবে ‘অন্ধজনে দেহ আলো’ প্রার্থনাটা করতেই হচ্ছে। সবাই মিলে ভুল করলে, বিশেষ করে সেটি যদি হয় সংবাদমাধ্যম, তা হলে তো মানুষ সেই ভুলকেই সত্যি বলে ধরে নেবে।
জন উইজডেন বহুদিন আগেই গত হয়েছেন। তবে বাংলাদেশে তাঁর সৃষ্ট ‘ক্রিকেটের বাইবেল’-এর এই অপব্যাখ্যায় কবরেও তাঁর অস্বস্তিতে এপাশ-ওপাশ করার কথা! সাকিবকে বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটারের স্বীকৃতি দিয়েছে ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত উইজডেন ক্রিকেটার সাময়িকী। যেটিকে ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ বলা হচ্ছে শুনলে এর সম্পাদক জন স্টার্নও বিষম লজ্জা পাবেন।
উইজডেন ক্রিকেটে সবচেয়ে বিখ্যাত নামগুলোর একটি এবং এই নামটাই বাংলাদেশে এমন বিভ্রান্তির কারণ। শুধু উইজডেন বললে বোঝায় উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাক—যেটি ১৮৬৪ সাল থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে আসছে। হলুদ মলাটের ছোট্ট আকৃতির ঢাউস একটি বই (গত কয়েক বছর ধরে অবশ্য অল্পসংখ্যক বড় আকারেও বের করা হচ্ছে), বছরে যা একটিই বের হয়—‘ক্রিকেটের বাইবেল’ নামে পরিচিতি এটিরই। ওই হলুদ রঙের কারণে যেটিকে ‘দ্য লিটল ইয়েলো বুক’ও বলে অনেকে।
আর উইজডেন ক্রিকেটার একটি মাসিক ক্রিকেট সাময়িকী, যা প্রকাশিত হচ্ছে ২০০৩ সাল থেকে। ভিন্ন নামে সাময়িকীটি আগেও ছিল। আসলে ছিল দুটি। সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক স্যার পেলহাম ওয়ার্নার ১৯২১ সালে বের করেছিলেন দ্য ক্রিকেটার, ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত এটির সম্পাদকও ছিলেন তিনি। ১৯৭৯ সালে দ্য ক্রিকেটার-এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বাজারে আসে উইজডেন ক্রিকেট মান্থলি। বিখ্যাত ক্রিকেট ইতিহাসবিদ ও লেখক ডেভিড ফ্রিথ এটির প্রতিষ্ঠাতা, অনেক বছরের সম্পাদকও। ক্রিকেট সাময়িকীর বাজার খারাপ দেখে ২০০৩ সালে দুটি এক হয়ে উইজডেন ক্রিকেটার নাম নেয়। উইজডেন ক্রিকেট মান্থলি উইজডেন নামটির স্বত্বাধিকারী জন উইজডেন অ্যান্ড কোংয়ের কাছ থেকে নামটি ব্যবহারের লাইসেন্স নিয়েছিল। পরে একসময় সাময়িকীটির মালিকানার কিছু অংশও কিনে নিয়েছিল উইজডেন কোম্পানি। ২০০৮ সালে উইজডেন ক্রিকেটার-এর পুরো স্বত্বই কিনে নেয় ইংল্যান্ডের স্কাই টিভি। এই সাময়িকীই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের প্রতিনিধিদের ভোটের ভিত্তিতে সাকিবকে বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটারের স্বীকৃতি দিয়েছে। ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাক নয়। এই দুটির মালিকানাও আলাদা। নানা হাত ঘুরে অ্যালম্যানাক এখন বেরোয় এ অ্যান্ড সি ব্ল্যাক পাবলিশিং থেকে।
ইন্টারনেট-যুগের আগে ক্রিকেটের রেকর্ড-পরিসংখ্যানের জন্য সবাই উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাক-এর মুখে চেয়ে থাকত। যেকোনো তথ্যের ব্যাপারে অসম্ভব খুঁতখুঁতে বলে অ্যালম্যানাকে ভুল বলতে গেলে থাকেই না। ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ স্বীকৃতিটা হয়তো এ কারণেই পাওয়া। রেকর্ড-পরিসংখ্যানের বাইরেও ক্রিকেট বিশ্বের বাত্সরিক চিত্র ধরা থাকে এই অ্যালম্যানাকে। থাকে স্কোরকার্ডসহ প্রতিটি টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজের পর্যালোচনা। ইংল্যান্ডের বাজারই আসল লক্ষ্য বলে ইংলিশ ক্রিকেট মৌসুমের আদ্যোপান্ত থাকে, স্কুল ক্রিকেট ও মাইনর কাউন্টিও বাদ যায় না। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক বেশি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত হয়েছে এতে। বিশ্বের সেরা ক্রিকেট লেখকদের ভিন্নধর্মী লেখা হয়ে উঠেছে এটির বড় আকর্ষণ। উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাকের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এটি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংলগ্ন নয়। ক্রিকেট প্রশাসনের ব্যাপারে অপ্রিয় স্বাধীন মতামত সোচ্চারে জানাতেও তাই এটির সমস্যা হয় না। এ কারণেই উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাকের অন্যতম আকর্ষণীয় অংশ ‘নোটস বাই দ্য এডিটর’, যেটিতে থাকে বিশ্ব ক্রিকেট ও ক্রিকেট প্রশাসন সম্পর্কে সম্পাদকের চাঁছাছোলা মন্তব্য।
সাকিব জিতেছেন ‘বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার’-এর স্বীকৃতি। অথচ ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ এ ধরনের কোনো স্বীকৃতিই দেয় না। উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাক নির্বাচন করে বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটার। ১৮৮৯ সাল থেকে চলে আসা ‘ফাইভ ক্রিকেটার্স অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচনে অনেক বছর শুধু ইংলিশ মৌসুমে সফল ও প্রভাববিস্তারী খেলোয়াড়দেরই বিবেচনায় নেওয়া হতো। এখন অবশ্য এই নিয়মের ব্যতিক্রমও হয়। তবে একটা ব্যাপার অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে। উইজডেনের বর্ষসেরা পাঁচ নির্বাচন এখনো সম্পাদকের একক এখতিয়ার। দুই দফায় ১২টি উইজডেন অ্যালম্যানাকের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা ম্যাথু এঙ্গেল একবার মজা করে লিখেছিলেন, ‘বছরের পাঁচজন ক্রিকেটার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করা হয়, তবে ভোটারের সংখ্যা এক।’ বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, কেউ একাধিকবার এই স্বীকৃতি পান না।
বর্ষসেরার স্বীকৃতিটাকে একটা বৈশ্বিক রূপ দেওয়ার জন্য ২০০৪ সাল থেকে ‘লিডিং ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করতে শুরু করেছে অ্যালম্যানাক। বিভিন্ন দেশে অ্যালম্যানাকের প্রতিনিধিদের মতামত নেওয়া হলেও সেটি কোনো ভোটাভুটি নয়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা নেন সম্পাদক নিজেই। ২০০৮ সাল থেকে এই কাজটা করে আসছেন শিল্ড বেরি। সানডে টেলিগ্রাফ-এর ক্রিকেট প্রতিনিধিই উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাকের বর্তমান সম্পাদক।
কাল এক বন্ধু ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ নিয়ে সৃষ্ট এই বিভ্রান্তির ব্যাখ্যা শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তাহলে সাকিব কী জিতল?’ উত্তর হলো—উইজডেন ক্রিকেটার সাময়িকীর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের ভোটে বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটারের স্বীকৃতি। ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাকের সঙ্গে যার কোনো সম্পর্ক নেই।
সাকিব আল হাসানের অর্জন নিয়ে প্রশ্ন তোলা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। বিশ্বের এক নম্বর ক্রিকেট সাময়িকীর প্রতিনিধিদের ভোটে বিশ্বের বড় বড় সব ক্রিকেটারকে পেছনে ফেলে বর্ষসেরা টেস্ট খেলোয়াড়ের স্বীকৃতিও অনেক বড় ব্যাপার। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে গর্বিত করার মতোই। অভিনন্দন সাকিব! তবে আপনি যেন কথায় কথায় ভুলেও কাউকে ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছেন বলে না ফেলেন!
উপলক্ষ সাকিব আল হাসানের সর্বশেষ স্বীকৃতি। সাকিব নাকি ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ নামে পরিচিত উইজডেনের বর্ষসেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন। হা ঈশ্বর! ঈশ্বরের কাছেও মৃতজনে প্রাণ দেওয়ার আবদারটা অবাস্তব হয়ে যায়, তবে ‘অন্ধজনে দেহ আলো’ প্রার্থনাটা করতেই হচ্ছে। সবাই মিলে ভুল করলে, বিশেষ করে সেটি যদি হয় সংবাদমাধ্যম, তা হলে তো মানুষ সেই ভুলকেই সত্যি বলে ধরে নেবে।
জন উইজডেন বহুদিন আগেই গত হয়েছেন। তবে বাংলাদেশে তাঁর সৃষ্ট ‘ক্রিকেটের বাইবেল’-এর এই অপব্যাখ্যায় কবরেও তাঁর অস্বস্তিতে এপাশ-ওপাশ করার কথা! সাকিবকে বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটারের স্বীকৃতি দিয়েছে ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত উইজডেন ক্রিকেটার সাময়িকী। যেটিকে ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ বলা হচ্ছে শুনলে এর সম্পাদক জন স্টার্নও বিষম লজ্জা পাবেন।
উইজডেন ক্রিকেটে সবচেয়ে বিখ্যাত নামগুলোর একটি এবং এই নামটাই বাংলাদেশে এমন বিভ্রান্তির কারণ। শুধু উইজডেন বললে বোঝায় উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাক—যেটি ১৮৬৪ সাল থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে আসছে। হলুদ মলাটের ছোট্ট আকৃতির ঢাউস একটি বই (গত কয়েক বছর ধরে অবশ্য অল্পসংখ্যক বড় আকারেও বের করা হচ্ছে), বছরে যা একটিই বের হয়—‘ক্রিকেটের বাইবেল’ নামে পরিচিতি এটিরই। ওই হলুদ রঙের কারণে যেটিকে ‘দ্য লিটল ইয়েলো বুক’ও বলে অনেকে।
আর উইজডেন ক্রিকেটার একটি মাসিক ক্রিকেট সাময়িকী, যা প্রকাশিত হচ্ছে ২০০৩ সাল থেকে। ভিন্ন নামে সাময়িকীটি আগেও ছিল। আসলে ছিল দুটি। সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক স্যার পেলহাম ওয়ার্নার ১৯২১ সালে বের করেছিলেন দ্য ক্রিকেটার, ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত এটির সম্পাদকও ছিলেন তিনি। ১৯৭৯ সালে দ্য ক্রিকেটার-এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বাজারে আসে উইজডেন ক্রিকেট মান্থলি। বিখ্যাত ক্রিকেট ইতিহাসবিদ ও লেখক ডেভিড ফ্রিথ এটির প্রতিষ্ঠাতা, অনেক বছরের সম্পাদকও। ক্রিকেট সাময়িকীর বাজার খারাপ দেখে ২০০৩ সালে দুটি এক হয়ে উইজডেন ক্রিকেটার নাম নেয়। উইজডেন ক্রিকেট মান্থলি উইজডেন নামটির স্বত্বাধিকারী জন উইজডেন অ্যান্ড কোংয়ের কাছ থেকে নামটি ব্যবহারের লাইসেন্স নিয়েছিল। পরে একসময় সাময়িকীটির মালিকানার কিছু অংশও কিনে নিয়েছিল উইজডেন কোম্পানি। ২০০৮ সালে উইজডেন ক্রিকেটার-এর পুরো স্বত্বই কিনে নেয় ইংল্যান্ডের স্কাই টিভি। এই সাময়িকীই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের প্রতিনিধিদের ভোটের ভিত্তিতে সাকিবকে বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটারের স্বীকৃতি দিয়েছে। ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাক নয়। এই দুটির মালিকানাও আলাদা। নানা হাত ঘুরে অ্যালম্যানাক এখন বেরোয় এ অ্যান্ড সি ব্ল্যাক পাবলিশিং থেকে।
ইন্টারনেট-যুগের আগে ক্রিকেটের রেকর্ড-পরিসংখ্যানের জন্য সবাই উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাক-এর মুখে চেয়ে থাকত। যেকোনো তথ্যের ব্যাপারে অসম্ভব খুঁতখুঁতে বলে অ্যালম্যানাকে ভুল বলতে গেলে থাকেই না। ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ স্বীকৃতিটা হয়তো এ কারণেই পাওয়া। রেকর্ড-পরিসংখ্যানের বাইরেও ক্রিকেট বিশ্বের বাত্সরিক চিত্র ধরা থাকে এই অ্যালম্যানাকে। থাকে স্কোরকার্ডসহ প্রতিটি টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজের পর্যালোচনা। ইংল্যান্ডের বাজারই আসল লক্ষ্য বলে ইংলিশ ক্রিকেট মৌসুমের আদ্যোপান্ত থাকে, স্কুল ক্রিকেট ও মাইনর কাউন্টিও বাদ যায় না। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক বেশি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত হয়েছে এতে। বিশ্বের সেরা ক্রিকেট লেখকদের ভিন্নধর্মী লেখা হয়ে উঠেছে এটির বড় আকর্ষণ। উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাকের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এটি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংলগ্ন নয়। ক্রিকেট প্রশাসনের ব্যাপারে অপ্রিয় স্বাধীন মতামত সোচ্চারে জানাতেও তাই এটির সমস্যা হয় না। এ কারণেই উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাকের অন্যতম আকর্ষণীয় অংশ ‘নোটস বাই দ্য এডিটর’, যেটিতে থাকে বিশ্ব ক্রিকেট ও ক্রিকেট প্রশাসন সম্পর্কে সম্পাদকের চাঁছাছোলা মন্তব্য।
সাকিব জিতেছেন ‘বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার’-এর স্বীকৃতি। অথচ ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ এ ধরনের কোনো স্বীকৃতিই দেয় না। উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাক নির্বাচন করে বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটার। ১৮৮৯ সাল থেকে চলে আসা ‘ফাইভ ক্রিকেটার্স অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচনে অনেক বছর শুধু ইংলিশ মৌসুমে সফল ও প্রভাববিস্তারী খেলোয়াড়দেরই বিবেচনায় নেওয়া হতো। এখন অবশ্য এই নিয়মের ব্যতিক্রমও হয়। তবে একটা ব্যাপার অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে। উইজডেনের বর্ষসেরা পাঁচ নির্বাচন এখনো সম্পাদকের একক এখতিয়ার। দুই দফায় ১২টি উইজডেন অ্যালম্যানাকের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা ম্যাথু এঙ্গেল একবার মজা করে লিখেছিলেন, ‘বছরের পাঁচজন ক্রিকেটার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করা হয়, তবে ভোটারের সংখ্যা এক।’ বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, কেউ একাধিকবার এই স্বীকৃতি পান না।
বর্ষসেরার স্বীকৃতিটাকে একটা বৈশ্বিক রূপ দেওয়ার জন্য ২০০৪ সাল থেকে ‘লিডিং ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করতে শুরু করেছে অ্যালম্যানাক। বিভিন্ন দেশে অ্যালম্যানাকের প্রতিনিধিদের মতামত নেওয়া হলেও সেটি কোনো ভোটাভুটি নয়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা নেন সম্পাদক নিজেই। ২০০৮ সাল থেকে এই কাজটা করে আসছেন শিল্ড বেরি। সানডে টেলিগ্রাফ-এর ক্রিকেট প্রতিনিধিই উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাকের বর্তমান সম্পাদক।
কাল এক বন্ধু ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ নিয়ে সৃষ্ট এই বিভ্রান্তির ব্যাখ্যা শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তাহলে সাকিব কী জিতল?’ উত্তর হলো—উইজডেন ক্রিকেটার সাময়িকীর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের ভোটে বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটারের স্বীকৃতি। ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাকের সঙ্গে যার কোনো সম্পর্ক নেই।
সাকিব আল হাসানের অর্জন নিয়ে প্রশ্ন তোলা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। বিশ্বের এক নম্বর ক্রিকেট সাময়িকীর প্রতিনিধিদের ভোটে বিশ্বের বড় বড় সব ক্রিকেটারকে পেছনে ফেলে বর্ষসেরা টেস্ট খেলোয়াড়ের স্বীকৃতিও অনেক বড় ব্যাপার। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে গর্বিত করার মতোই। অভিনন্দন সাকিব! তবে আপনি যেন কথায় কথায় ভুলেও কাউকে ‘ক্রিকেটের বাইবেল’ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছেন বলে না ফেলেন!
No comments