ফ্রন্টের পরিধি বাড়ানোর ইঙ্গিত আস্থা সংকটে নেতারা by কাফি কামাল
ফ্রন্টের
পরিধি বাড়ানোর মাধ্যমে নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে যাওয়ার ইঙ্গিত
দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তারই
অংশ হিসেবে প্রথমেই তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন ফ্রন্টের অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ
নিরসনের। আগামীকাল ফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের একটি বৈঠক ডেকেছেন তিনি। সেখানে
সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নিজেদের কৌশল পর্যালোচনা এবং আগামীদিনের
করণীয় নিয়ে আলোচনা করবেন। বৈঠকে গৃহিত কৌশলের ভিত্তিতে ফ্রন্টের পরিধি
বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। ঐক্যফ্রন্টের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এমন তথ্য
জানিয়েছেন। তবে দেশের রাজনৈতিক মহলসহ নিজ দলের নেতাকর্মীদের কাছে প্রশ্ন
তৈরি হয়েছে তাদের অভ্যন্তরীণ ঐক্য, কৌশল ও কর্মপন্থা নিয়ে। আস্থার সংকটে
পড়েছেন নেতারা। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের প্রতি সাধারণ মানুষের
স্বাভাবিক ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করা সম্ভব- এমন ভাবনা
থেকেই নির্বাচনের আগে গড়ে তোলা হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
রাজনীতিতে নানামুখী দ্বন্দ্ব-সন্দেহের মধ্যদিয়ে ঐক্যফ্রন্ট পথচলা শুরু করেছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে বিএনপি ও ২০ দলের আপত্তিকারী নেতারাও মেনে নিয়েছিল বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে। কিন্তু যে প্রত্যাশা নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গড়ে তোলা হয়েছিল, তার ন্যূনতম অর্জন প্লাটফর্মটির মাধ্যমে আসেনি। একাদশ জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা ও পরবর্তী স্থানীয় সরকার নির্বাচন ইস্যুতে প্রশ্ন উঠেছে ফ্রন্টের কৌশল ও কর্মপন্থা নিয়ে। একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনুষ্ঠিত গণশুনানীতেও এই প্রশ্ন তুলেছিলেন ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থীরা। বিশেষ করে দীর্ঘদিনেও খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ তৈরি করতে না পারা এবং রাজনীতির নিস্তরঙ্গ পরিস্থিতির কারণে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অসন্তোষ ও হতাশা। নির্বাচনের পর কয়েকটি কর্মসূচি দিলেও তা পালন হয়েছে খুবই সংক্ষিপ্ত পরিসরে। সারাদেশে সংঘটিত নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৩০শে এপ্রিল শাহবাগে ‘গণজমায়েত’ কর্মসূচি পালনের ঘোষনা দিয়েছিল। কিন্তু ২৯শে এপ্রিল সন্ধ্যায় পূর্বঘোষিত ‘শাহবাগে গণজমায়েত’ কর্মসূচি অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হয়। তারপর থেকেই নীরব জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। দীর্ঘদিনেও ২০দলের শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে পারেনি ঐক্যফ্রন্ট। উল্টো ভাঙন ধরেছে ২০দলে। ফ্রন্টের শরিকদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে অসন্তোষ। এমন পরিস্থিতিতে, ফ্রন্টের পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের ইঙ্গিত রয়ে যাচ্ছে প্রশ্নের মোড়কে।
দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। বৃহস্পতিবার বেইলি রোডে নিজের বাসায় আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট মোটেও ভাঙনের পথে না। ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য অটুট আছে। নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করাই পরিকল্পনা। আগামী ১২ই জুন আমরা সবাই মিলে বসছি। আমরা কৌশল ঠিক করে মাঠে নেমে ঐক্যকে আরও সুসংহত করব।’ সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন জোরদার করার কথা জানিয়ে ড. কামাল বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য জনগণের ঐক্য গড়ে তোলা। সমমনা দলগুলো সঙ্গে নেয়ার কাজটা অব্যাহত আছে। তা আরও জোরদার করা হবে। আমরা বিশ্বাস করি, এই ধরনের একটা স্বৈরতান্ত্রিক অবস্থা থেকে মুক্ত হতে হলে জনগণের ঐক্য প্রয়োজন এবং সচেতন রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য অপরিহার্য। জোটের পরিধি আরও বাড়িয়ে এই বছরই আন্দোলন জোরদার করা হবে।’
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, কি বলছে বাস্তবতা? বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট বিদ্যমান থাকার পরও আলাদা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন প্রশ্নে আপত্তি ছিল অনেকের। জোটের মধ্যে গুরুত্বহীন করে তোলার অভিযোগ করেছিল ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিকদল। কিন্তু বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে তখন এ নিয়ে বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঐক্য ধরে রেখেছিল তারা। নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের পর ফের সংসদে যোগ দেয়ায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলে যেমন ভাঙন ধরে, তেমনি অসন্তোষ তৈরি হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। দুই দশকের সম্পর্ক ভেঙে জোট ছাড়ে ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থের দল বিজেপি। শপথগ্রহণ প্রশ্নে ২০দল ও ফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা না করায় তারা ক্ষুব্ধ বিএনপির ওপর। কেবল তাই নয়, এই সিদ্ধান্তের মধ্যদিয়ে ফ্রন্টের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী সাত এমপির শপথ গ্রহণের ব্যাখ্যা চেয়ে জোট ছাড়ার এক মাসের আলটিমেটাম দেয় ফ্রন্টের শরিক দল কৃষক-শ্রমিক-জনতালীগ। অসন্তোষ প্রকাশ করে মাহমুদুর রহমান মান্নার দল নাগরিক ঐক্যের নেতারা। সবচেয়ে বড় কথা দলের শীর্ষ নেতারা বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট গড়লেও তার প্রতি আস্থা তৈরি হয়নি বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের। জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে আরও প্রকট হয়েছে সে আস্থার সংকট। সবচেয়ে বড় কথা সবখানে বিরাজ করছে সমন্বয়হীনতা।
জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে সাত এমপির শপথ গ্রহণের ব্যাখ্যা চেয়ে ৯ই মে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন কৃষক-শ্রমিক-জনতালীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। সে আলটিমেটামের ডেটলাইন ছিল গতকাল ৮ই জুন। ডেটলাইন শেষে দুইদিন সময় নিয়েছেন কাদের সিদ্দিকী। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা জনগণের আশা-আকাঙক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত জন এমপির শপথ নেয়ার সঠিক ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিলাম। এরই মধ্যে ড. কামাল হোসেন আমাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আগামী ১০ই জুন আ স ম আবদুর রবের বাসায় ফ্রন্টের সবাইকে তিনি ডেকেছেন। ওই বৈঠক থেকে কী ব্যাখ্যা আসে- সেটা আমরা দেখব। তারপর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবো।’
জাতীয় স্বার্থে ড. কামাল হোসেনকে নেতৃত্বের আসনে বসিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে বিএনপি। কিন্তু নির্বাচনের পরপরই প্রশ্ন উঠেছে তিনি এই বৃহত্তর বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিতে কতটুকু প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে পেরেছেন। নির্বাচনের পর বিএনপির নেতারা নানা আলোচনা সভায় এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে তারা কথা বলেছেন রয়েসয়ে। ফ্রন্টের শরিক দল কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী তার আলটিমেটাম ঘোষণার দিন বলেছিলেন, ‘৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়নি। বিশেষ করে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার পর কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই ফ্রন্টের সাত জন বিজয়ী প্রার্থী শপথ নিয়েছেন। ঐক্যফ্রন্ট পরিচালনায় কেন এই দুর্বলতা? সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত কেন নেয়া যাচ্ছে না?’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনে সরকারের কৌশলের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট কুলিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো বর্জনের সিদ্ধান্তটি ছিল অপরিনামদর্শী। মূলত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যৌথসিদ্ধান্তের কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপি। ফ্রন্টের নির্বাচিত এমপিরা সংসদে যাবেন না সিদ্ধান্ত নেয়ার ভেতর দিয়েই স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তটি এসেছিল। সে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কারণে শত শত নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। কিন্তু গণফোরামের দুই এমপির শপথের মধ্যদিয়ে তৈরি হওয়া পথে বিএনপির এমপিরা শপথ নেয়ায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তটি হয়ে পড়ে অর্থহীন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যখন পরিধি বাড়ানোর চিন্তা করছে তখন নতুন চিন্তা করছে ২০দল। জোটের কয়েকজন নেতা বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ২০ দলের শরিকদের সম্পর্ক মজবুত হয়নি। তারা এখনও জোটের রাজনীতি করছেন বিএনপির কারণে। ২০ দলের দুইজন দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, জোটের আগামী বৈঠকে বিএনপির প্রতি ২০ দলকে সক্রিয় করতে রাজী আছে কিনা- এমন একটি প্রশ্ন তারা তুলবেন। তারা জানান, জোটের শরিক দলগুলো বিএনপিকে ছেড়ে যেতে চায় না কিন্তু ফ্রন্টের ব্যাপারে তাদের পর্যবেক্ষণ রয়েছে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বর্তমান সরকারের কাছে দাবি আদায়ে কোন ধরনের আন্দোলনে যেতে পারবে কিংবা অন্য কোন কৌশল কার্যকর করতে পারবেন সেটা তারা কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। ফলে নতুন করে কোন রাজনৈতিক দল ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ফ্রন্টের ওপর আস্থা রেখে যোগ দিতে আগ্রহী হবেও তার মনে করছেন না।
রাজনীতিতে নানামুখী দ্বন্দ্ব-সন্দেহের মধ্যদিয়ে ঐক্যফ্রন্ট পথচলা শুরু করেছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে বিএনপি ও ২০ দলের আপত্তিকারী নেতারাও মেনে নিয়েছিল বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে। কিন্তু যে প্রত্যাশা নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গড়ে তোলা হয়েছিল, তার ন্যূনতম অর্জন প্লাটফর্মটির মাধ্যমে আসেনি। একাদশ জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা ও পরবর্তী স্থানীয় সরকার নির্বাচন ইস্যুতে প্রশ্ন উঠেছে ফ্রন্টের কৌশল ও কর্মপন্থা নিয়ে। একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনুষ্ঠিত গণশুনানীতেও এই প্রশ্ন তুলেছিলেন ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থীরা। বিশেষ করে দীর্ঘদিনেও খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ তৈরি করতে না পারা এবং রাজনীতির নিস্তরঙ্গ পরিস্থিতির কারণে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অসন্তোষ ও হতাশা। নির্বাচনের পর কয়েকটি কর্মসূচি দিলেও তা পালন হয়েছে খুবই সংক্ষিপ্ত পরিসরে। সারাদেশে সংঘটিত নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৩০শে এপ্রিল শাহবাগে ‘গণজমায়েত’ কর্মসূচি পালনের ঘোষনা দিয়েছিল। কিন্তু ২৯শে এপ্রিল সন্ধ্যায় পূর্বঘোষিত ‘শাহবাগে গণজমায়েত’ কর্মসূচি অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হয়। তারপর থেকেই নীরব জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। দীর্ঘদিনেও ২০দলের শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে পারেনি ঐক্যফ্রন্ট। উল্টো ভাঙন ধরেছে ২০দলে। ফ্রন্টের শরিকদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে অসন্তোষ। এমন পরিস্থিতিতে, ফ্রন্টের পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের ইঙ্গিত রয়ে যাচ্ছে প্রশ্নের মোড়কে।
দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। বৃহস্পতিবার বেইলি রোডে নিজের বাসায় আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট মোটেও ভাঙনের পথে না। ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য অটুট আছে। নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করাই পরিকল্পনা। আগামী ১২ই জুন আমরা সবাই মিলে বসছি। আমরা কৌশল ঠিক করে মাঠে নেমে ঐক্যকে আরও সুসংহত করব।’ সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন জোরদার করার কথা জানিয়ে ড. কামাল বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য জনগণের ঐক্য গড়ে তোলা। সমমনা দলগুলো সঙ্গে নেয়ার কাজটা অব্যাহত আছে। তা আরও জোরদার করা হবে। আমরা বিশ্বাস করি, এই ধরনের একটা স্বৈরতান্ত্রিক অবস্থা থেকে মুক্ত হতে হলে জনগণের ঐক্য প্রয়োজন এবং সচেতন রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য অপরিহার্য। জোটের পরিধি আরও বাড়িয়ে এই বছরই আন্দোলন জোরদার করা হবে।’
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, কি বলছে বাস্তবতা? বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট বিদ্যমান থাকার পরও আলাদা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন প্রশ্নে আপত্তি ছিল অনেকের। জোটের মধ্যে গুরুত্বহীন করে তোলার অভিযোগ করেছিল ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিকদল। কিন্তু বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে তখন এ নিয়ে বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঐক্য ধরে রেখেছিল তারা। নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের পর ফের সংসদে যোগ দেয়ায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলে যেমন ভাঙন ধরে, তেমনি অসন্তোষ তৈরি হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। দুই দশকের সম্পর্ক ভেঙে জোট ছাড়ে ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থের দল বিজেপি। শপথগ্রহণ প্রশ্নে ২০দল ও ফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা না করায় তারা ক্ষুব্ধ বিএনপির ওপর। কেবল তাই নয়, এই সিদ্ধান্তের মধ্যদিয়ে ফ্রন্টের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী সাত এমপির শপথ গ্রহণের ব্যাখ্যা চেয়ে জোট ছাড়ার এক মাসের আলটিমেটাম দেয় ফ্রন্টের শরিক দল কৃষক-শ্রমিক-জনতালীগ। অসন্তোষ প্রকাশ করে মাহমুদুর রহমান মান্নার দল নাগরিক ঐক্যের নেতারা। সবচেয়ে বড় কথা দলের শীর্ষ নেতারা বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট গড়লেও তার প্রতি আস্থা তৈরি হয়নি বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের। জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে আরও প্রকট হয়েছে সে আস্থার সংকট। সবচেয়ে বড় কথা সবখানে বিরাজ করছে সমন্বয়হীনতা।
জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে সাত এমপির শপথ গ্রহণের ব্যাখ্যা চেয়ে ৯ই মে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন কৃষক-শ্রমিক-জনতালীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। সে আলটিমেটামের ডেটলাইন ছিল গতকাল ৮ই জুন। ডেটলাইন শেষে দুইদিন সময় নিয়েছেন কাদের সিদ্দিকী। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা জনগণের আশা-আকাঙক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত জন এমপির শপথ নেয়ার সঠিক ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিলাম। এরই মধ্যে ড. কামাল হোসেন আমাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আগামী ১০ই জুন আ স ম আবদুর রবের বাসায় ফ্রন্টের সবাইকে তিনি ডেকেছেন। ওই বৈঠক থেকে কী ব্যাখ্যা আসে- সেটা আমরা দেখব। তারপর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবো।’
জাতীয় স্বার্থে ড. কামাল হোসেনকে নেতৃত্বের আসনে বসিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে বিএনপি। কিন্তু নির্বাচনের পরপরই প্রশ্ন উঠেছে তিনি এই বৃহত্তর বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিতে কতটুকু প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে পেরেছেন। নির্বাচনের পর বিএনপির নেতারা নানা আলোচনা সভায় এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে তারা কথা বলেছেন রয়েসয়ে। ফ্রন্টের শরিক দল কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী তার আলটিমেটাম ঘোষণার দিন বলেছিলেন, ‘৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়নি। বিশেষ করে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার পর কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই ফ্রন্টের সাত জন বিজয়ী প্রার্থী শপথ নিয়েছেন। ঐক্যফ্রন্ট পরিচালনায় কেন এই দুর্বলতা? সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত কেন নেয়া যাচ্ছে না?’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনে সরকারের কৌশলের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট কুলিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো বর্জনের সিদ্ধান্তটি ছিল অপরিনামদর্শী। মূলত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যৌথসিদ্ধান্তের কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপি। ফ্রন্টের নির্বাচিত এমপিরা সংসদে যাবেন না সিদ্ধান্ত নেয়ার ভেতর দিয়েই স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তটি এসেছিল। সে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কারণে শত শত নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। কিন্তু গণফোরামের দুই এমপির শপথের মধ্যদিয়ে তৈরি হওয়া পথে বিএনপির এমপিরা শপথ নেয়ায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তটি হয়ে পড়ে অর্থহীন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যখন পরিধি বাড়ানোর চিন্তা করছে তখন নতুন চিন্তা করছে ২০দল। জোটের কয়েকজন নেতা বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ২০ দলের শরিকদের সম্পর্ক মজবুত হয়নি। তারা এখনও জোটের রাজনীতি করছেন বিএনপির কারণে। ২০ দলের দুইজন দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, জোটের আগামী বৈঠকে বিএনপির প্রতি ২০ দলকে সক্রিয় করতে রাজী আছে কিনা- এমন একটি প্রশ্ন তারা তুলবেন। তারা জানান, জোটের শরিক দলগুলো বিএনপিকে ছেড়ে যেতে চায় না কিন্তু ফ্রন্টের ব্যাপারে তাদের পর্যবেক্ষণ রয়েছে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বর্তমান সরকারের কাছে দাবি আদায়ে কোন ধরনের আন্দোলনে যেতে পারবে কিংবা অন্য কোন কৌশল কার্যকর করতে পারবেন সেটা তারা কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। ফলে নতুন করে কোন রাজনৈতিক দল ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ফ্রন্টের ওপর আস্থা রেখে যোগ দিতে আগ্রহী হবেও তার মনে করছেন না।
No comments