নিরাশ হবেন না -ড. কামাল হোসেন
দলের
সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ায় মোকাব্বির খানকে নিজ
চেম্বার থেকে ‘গেট আউট’ বলে বের করে দিয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন। বলেছিলেন
চিরদিনের জন্য আমার দরজা তোমার জন্য বন্ধ। তবে সেই মোকাব্বির খানই
গণফোরামের বিশেষ জাতীয় কাউন্সিলে যোগ দিয়েছেন। একই সঙ্গে মঞ্চে ড. কামাল
হোসেনের পাশেই বসে পুরো কাউন্সিল শেষ করেন। গতকাল সকালে দীর্ঘ ৮ বছর পর
রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে দলটির বিশেষ কাউন্সিল বসে। পুনর্গঠনের মাধ্যমে
দলকে তৃণমূল পর্যন্ত চাঙ্গা করা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন করে
আয়োজনের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলা ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে
সরকারসহ জনগণের সামনে একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বক্তব্য তুলে ধরা- এই তিনটি
প্রধান লক্ষ্য নিয়ে আয়োজন করা হয় এই বিশেষ কাউন্সিল।
তবে কাউন্সিলে মোকাব্বির খানের যোগ দেয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে নেতাদের মধ্যে। দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে শুরু থেকেই যোগ দেননি কাউন্সিলে। অন্যদিকে কাউন্সিলে ড. কামাল হোসেনের পাশে মোকাব্বির খানকে বসা দেখে বের হয়ে গেছেন দলের প্রশিক্ষণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক।
দল ছাড়ারও ঘোষণা দেন তিনি। এছাড়া, জেলা থেকে আসা নেতারাও তাদের বক্তব্যে মোকাব্বির খান কেন এবং কার অনুমতি নিয়ে কাউন্সিলে যোগ দিয়েছেন তার উত্তর চান ড. কামাল হোসেনের কাছে।
ক্ষমতার উৎস হল জনগণ, আর কেউ না: ড. কামাল
কাউন্সিলের শুরুতে সভাপতি ড. কামাল হোসেন শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আমরা আজকে বলি যে, স্বৈরশাসনের চিত্র দেখা যাচ্ছে। কিন্তু নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা দেখেছি শাসকগোষ্ঠী অনেক সময় স্বৈরতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হয়। স্বৈরাচার হয়ে যায়। কিন্তু এদেশে মানুষ কখনো স্বৈরতন্ত্রকে মেনে নেয়নি এবং নেবে না। এদেশের মালিক আপনারা। ক্ষমতার উৎস হল জনগণ, আর কেউ না। সুতরাং আপনাদের দেখতে হবে, যারা ক্ষমতায় তারা কি দেশের স্বার্থে না কি নিজের স্বার্থে কাজ করছেন। না কি অন্য কিছু করছেন। উল্টো কিছু করলে সংগঠিত হয়ে তাদের থামাতে হবে। কারণ জনগণ গণতন্ত্রের পাহারাদার। আর এই নাগরিকরা যদি দায়িত্ব পালন না করে তাহলে গণতন্ত্র স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হতে পারে। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার প্রশংসা করে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি জনগণের হয়ে যে রায়টা দিলেন, আমি মনে করি সেটা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আর তিনি ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখে গেলেন।
পুলিশের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে গণফোরাম সভাপতি বলেন, পুলিশ তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে দেশে গণতন্ত্র ও সংবিধানের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, পুলিশ কিন্তু দেশের মালিক না, দেশের সেবক। সংবিধান মেনে তারা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। আপনারা সতর্ক থাকবেন পুলিশ যেনো তার ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কোনো অন্যায়-অত্যাচার করতে না পারে। ড. কামাল বলেন, জনগণকে অবাধ ও নিরপেক্ষ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে হবে। অর্থের বিনিময়ে ভোট বিক্রি করা অন্যায়। জনগণকে এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
মোকাব্বিরের যোগদানে আমরা লজ্জিত, জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী: মন্টু
ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যের পর সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টুর ঘোষণাপত্র পাঠ করার কথা ছিল। ঘোষণাপত্রের কপি কাউন্সিলর ও সাংবাদিকদের কাছেও সরবরাহ করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি না আসায় দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ ঘোষণা দেন সাধারণ সম্পাদক অসুস্থ। তিনি চিকিৎসাধীন থাকায় আসতে পারেননি। পরে তার পক্ষে কাউন্সিলের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন দলের অপর এক প্রেসিডিয়াম সদস্য।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু মানবজমিনকে বলেন, আমি জানি ও শুনেছি মোকাব্বির খান কাউন্সিলে যোগ দিয়েছেন। হাউজে অনেকে বিরোধিতা ও প্রতিবাদ করেছেন। এটা সভাপতি বলতে পারবেন কেন মোকাব্বির খান কাউন্সিলে গেলেন, কীভাবে গেলেন। তাকেই জিজ্ঞাসা করুন। তিনি বলেন, কাউন্সিলে মোকাব্বির খানের উপস্থিতি অগ্রহণযোগ্য ও অনৈতিক কাজ হয়েছে। এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা হয়ে গেছে। আমি এ রকম সম্মেলনে যাব না। এবিষয়ে আমি লজ্জিত। জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
দলের কয়েকজন নেতা মানবজমিনকে বলেন, মোকাব্বির খান কাউন্সিলে আসবেন জেনে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে যোগ দেননি সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু।
আমি এই দলে থাকবো না: পথিক
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে সপথ গ্রহণ করা মোকাব্বির খানকে কাউন্সিল মঞ্চে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন গণফোরামের প্রশিক্ষণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক। কাউন্সিলের শুরুতে ড. কামাল হোসেনের শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষ হওয়ার পর পথিক সাংবাদিকদের বলেন, মোকাব্বির খানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি নিজ থেকেই এসেছেন। তবে মোকাব্বির খান ড. কামালের নির্দেশেই সংসদে শপথ নিয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোকাব্বির খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও এখনো নেয়া হয়নি। আর মোকাব্বির দলের সিদ্ধান্তে সংসদে শপথ নেননি। তাকে ড. কামালই পাঠিয়েছেন। পথিক আরো বলেন, ড. কামাল অফিসে আসলে মোকাব্বিরকে বের করে দেন। আবার বাসায় গেলে সংসদে যাওয়ার কথা বলেন। এটা দ্বৈত আচরণ। একজন নেতা এমন দ্বৈত আচরণ করতে পারেন না। এমন দল করা যায় না। আমি এই দলে থাকবো না।
মোকাব্বির কেন আসল জবাব চান জেলা নেতারা
কাউন্সিলে দলের সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য শেষ হলে সীমিত আকারে সুযোগ দেয়া হয় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত জেলা সভাপতিদের। এসময় গণফোরামের বরিশাল জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট হিরণ কুমার দাস মিঠু বলেন, মোকাব্বির খান দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিয়েছেন কিনা এটার বিষয়ে পরিষ্কার বক্তব্য চাই। দলের সিদ্ধান্ত হলে এক হিসাব। আর যদি দলের সিদ্ধান্ত না মেনে শপথ গ্রহণ করে থাকেন তাহলে এমন সংসদ সদস্য দরকার নেই।
চট্টগ্রাম থেকে আসা গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা জানে আলম বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার বিচারে হয়তো আমরা রাজনীতিতে এখনো সফল না। সফল না হলেও এরশাদের মতো রাজনৈতিক নেতা ও জাতীয় পার্টির মতো দল আমরা হতে পারিনা। জাতীয় পার্টি নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করে। আপনারা যারা ফেসবুকিং করেন তারা এখন একটু ফেসবুকটা খুলে দেখেন। মোকাব্বির খান ড. কামাল হোসেন স্যারের পাশে বসে থাকায় সমানে গালাগালি করছে সারাদেশের মানুষ।
কয়েকজন নেতা বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু মোকাব্বির খানও একই কাজ করেছে। অথচ তার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো কেন নেয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোকাব্বির খানকে শোকোজ করবে। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু এর পরও তিনি কিভাবে একই মঞ্চে কাউন্সিলে যোগ দেন? এসময় নেতারা দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের কাছে মোকাব্বির খানের বিষয়ে স্পষ্ঠ বক্তব্য চান। কিন্তু কাউন্সিলের শেষে বিকেলে সভাপতির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন এসব প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
গত ২রা এপ্রিল সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খান সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন। এ সময় দলীয় নেতারা দাবি করেন, দলের প্যাড চুরি করে তিনি সংসদে শপথ নিয়েছেন। শপথ নেয়ার দুইদিন পর দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ‘ধমক’ শুনে বেরিয়ে আসেন। এ সময় ড. কামাল মোকাব্বিরকে বলেন, আপনি এখান থেকে বেরিয়ে যান, গেট আউট, গেট আউট। আমার অফিস ও চেম্বার আপনার জন্য চিরতরে বন্ধ। কিন্তু শুক্রবার গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চে গণফোরামের বিশেষ জাতীয় কাউন্সিলে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন মঞ্চেই ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খান। মঞ্চে প্রথম সারিতে সভাপতি কামাল হোসেনের আসনের তিন চেয়ার পরেই মোকাব্বির খান বসেন। তার ডান পাশে ছিলেন রেজা কিবরিয়া, আর বাম পাশে অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ।
বেলা পৌনে ১১টায় কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিল শুরু হয় দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে। কাউন্সিলের শুরুতেই শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দায় আফ্রিক। দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদের পরিচালনায় দলের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মফিজুল ইসলাম খান কামাল, এসএম আলতাফ হোসেন, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, রেজা কিবরিয়া, মেজর জেনারেল (অব.) আ ম সা আমিন, সিরাজুল হক, আওম শফিকউল্লাহ, শফিকুর রহমান খান, ফরিদা ইয়াছমীন, এসএম খালেকুজ্জামান, শান্তিপদ ঘোষ, মোশতাক হোসেন উদ্বোধনী অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে কামাল হোসেন পরের বছর গণফোরাম গঠন করেন। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে দলের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়।
তবে কাউন্সিলে মোকাব্বির খানের যোগ দেয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে নেতাদের মধ্যে। দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে শুরু থেকেই যোগ দেননি কাউন্সিলে। অন্যদিকে কাউন্সিলে ড. কামাল হোসেনের পাশে মোকাব্বির খানকে বসা দেখে বের হয়ে গেছেন দলের প্রশিক্ষণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক।
দল ছাড়ারও ঘোষণা দেন তিনি। এছাড়া, জেলা থেকে আসা নেতারাও তাদের বক্তব্যে মোকাব্বির খান কেন এবং কার অনুমতি নিয়ে কাউন্সিলে যোগ দিয়েছেন তার উত্তর চান ড. কামাল হোসেনের কাছে।
ক্ষমতার উৎস হল জনগণ, আর কেউ না: ড. কামাল
কাউন্সিলের শুরুতে সভাপতি ড. কামাল হোসেন শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আমরা আজকে বলি যে, স্বৈরশাসনের চিত্র দেখা যাচ্ছে। কিন্তু নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা দেখেছি শাসকগোষ্ঠী অনেক সময় স্বৈরতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হয়। স্বৈরাচার হয়ে যায়। কিন্তু এদেশে মানুষ কখনো স্বৈরতন্ত্রকে মেনে নেয়নি এবং নেবে না। এদেশের মালিক আপনারা। ক্ষমতার উৎস হল জনগণ, আর কেউ না। সুতরাং আপনাদের দেখতে হবে, যারা ক্ষমতায় তারা কি দেশের স্বার্থে না কি নিজের স্বার্থে কাজ করছেন। না কি অন্য কিছু করছেন। উল্টো কিছু করলে সংগঠিত হয়ে তাদের থামাতে হবে। কারণ জনগণ গণতন্ত্রের পাহারাদার। আর এই নাগরিকরা যদি দায়িত্ব পালন না করে তাহলে গণতন্ত্র স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হতে পারে। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার প্রশংসা করে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি জনগণের হয়ে যে রায়টা দিলেন, আমি মনে করি সেটা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আর তিনি ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখে গেলেন।
পুলিশের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে গণফোরাম সভাপতি বলেন, পুলিশ তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে দেশে গণতন্ত্র ও সংবিধানের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, পুলিশ কিন্তু দেশের মালিক না, দেশের সেবক। সংবিধান মেনে তারা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। আপনারা সতর্ক থাকবেন পুলিশ যেনো তার ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কোনো অন্যায়-অত্যাচার করতে না পারে। ড. কামাল বলেন, জনগণকে অবাধ ও নিরপেক্ষ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে হবে। অর্থের বিনিময়ে ভোট বিক্রি করা অন্যায়। জনগণকে এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
মোকাব্বিরের যোগদানে আমরা লজ্জিত, জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী: মন্টু
ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যের পর সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টুর ঘোষণাপত্র পাঠ করার কথা ছিল। ঘোষণাপত্রের কপি কাউন্সিলর ও সাংবাদিকদের কাছেও সরবরাহ করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি না আসায় দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ ঘোষণা দেন সাধারণ সম্পাদক অসুস্থ। তিনি চিকিৎসাধীন থাকায় আসতে পারেননি। পরে তার পক্ষে কাউন্সিলের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন দলের অপর এক প্রেসিডিয়াম সদস্য।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু মানবজমিনকে বলেন, আমি জানি ও শুনেছি মোকাব্বির খান কাউন্সিলে যোগ দিয়েছেন। হাউজে অনেকে বিরোধিতা ও প্রতিবাদ করেছেন। এটা সভাপতি বলতে পারবেন কেন মোকাব্বির খান কাউন্সিলে গেলেন, কীভাবে গেলেন। তাকেই জিজ্ঞাসা করুন। তিনি বলেন, কাউন্সিলে মোকাব্বির খানের উপস্থিতি অগ্রহণযোগ্য ও অনৈতিক কাজ হয়েছে। এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা হয়ে গেছে। আমি এ রকম সম্মেলনে যাব না। এবিষয়ে আমি লজ্জিত। জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
দলের কয়েকজন নেতা মানবজমিনকে বলেন, মোকাব্বির খান কাউন্সিলে আসবেন জেনে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে যোগ দেননি সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু।
আমি এই দলে থাকবো না: পথিক
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে সপথ গ্রহণ করা মোকাব্বির খানকে কাউন্সিল মঞ্চে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন গণফোরামের প্রশিক্ষণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক। কাউন্সিলের শুরুতে ড. কামাল হোসেনের শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষ হওয়ার পর পথিক সাংবাদিকদের বলেন, মোকাব্বির খানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি নিজ থেকেই এসেছেন। তবে মোকাব্বির খান ড. কামালের নির্দেশেই সংসদে শপথ নিয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোকাব্বির খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও এখনো নেয়া হয়নি। আর মোকাব্বির দলের সিদ্ধান্তে সংসদে শপথ নেননি। তাকে ড. কামালই পাঠিয়েছেন। পথিক আরো বলেন, ড. কামাল অফিসে আসলে মোকাব্বিরকে বের করে দেন। আবার বাসায় গেলে সংসদে যাওয়ার কথা বলেন। এটা দ্বৈত আচরণ। একজন নেতা এমন দ্বৈত আচরণ করতে পারেন না। এমন দল করা যায় না। আমি এই দলে থাকবো না।
মোকাব্বির কেন আসল জবাব চান জেলা নেতারা
কাউন্সিলে দলের সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য শেষ হলে সীমিত আকারে সুযোগ দেয়া হয় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত জেলা সভাপতিদের। এসময় গণফোরামের বরিশাল জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট হিরণ কুমার দাস মিঠু বলেন, মোকাব্বির খান দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিয়েছেন কিনা এটার বিষয়ে পরিষ্কার বক্তব্য চাই। দলের সিদ্ধান্ত হলে এক হিসাব। আর যদি দলের সিদ্ধান্ত না মেনে শপথ গ্রহণ করে থাকেন তাহলে এমন সংসদ সদস্য দরকার নেই।
চট্টগ্রাম থেকে আসা গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা জানে আলম বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার বিচারে হয়তো আমরা রাজনীতিতে এখনো সফল না। সফল না হলেও এরশাদের মতো রাজনৈতিক নেতা ও জাতীয় পার্টির মতো দল আমরা হতে পারিনা। জাতীয় পার্টি নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করে। আপনারা যারা ফেসবুকিং করেন তারা এখন একটু ফেসবুকটা খুলে দেখেন। মোকাব্বির খান ড. কামাল হোসেন স্যারের পাশে বসে থাকায় সমানে গালাগালি করছে সারাদেশের মানুষ।
কয়েকজন নেতা বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু মোকাব্বির খানও একই কাজ করেছে। অথচ তার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো কেন নেয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোকাব্বির খানকে শোকোজ করবে। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু এর পরও তিনি কিভাবে একই মঞ্চে কাউন্সিলে যোগ দেন? এসময় নেতারা দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের কাছে মোকাব্বির খানের বিষয়ে স্পষ্ঠ বক্তব্য চান। কিন্তু কাউন্সিলের শেষে বিকেলে সভাপতির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন এসব প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
গত ২রা এপ্রিল সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খান সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন। এ সময় দলীয় নেতারা দাবি করেন, দলের প্যাড চুরি করে তিনি সংসদে শপথ নিয়েছেন। শপথ নেয়ার দুইদিন পর দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ‘ধমক’ শুনে বেরিয়ে আসেন। এ সময় ড. কামাল মোকাব্বিরকে বলেন, আপনি এখান থেকে বেরিয়ে যান, গেট আউট, গেট আউট। আমার অফিস ও চেম্বার আপনার জন্য চিরতরে বন্ধ। কিন্তু শুক্রবার গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চে গণফোরামের বিশেষ জাতীয় কাউন্সিলে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন মঞ্চেই ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খান। মঞ্চে প্রথম সারিতে সভাপতি কামাল হোসেনের আসনের তিন চেয়ার পরেই মোকাব্বির খান বসেন। তার ডান পাশে ছিলেন রেজা কিবরিয়া, আর বাম পাশে অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ।
বেলা পৌনে ১১টায় কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিল শুরু হয় দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে। কাউন্সিলের শুরুতেই শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দায় আফ্রিক। দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদের পরিচালনায় দলের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মফিজুল ইসলাম খান কামাল, এসএম আলতাফ হোসেন, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, রেজা কিবরিয়া, মেজর জেনারেল (অব.) আ ম সা আমিন, সিরাজুল হক, আওম শফিকউল্লাহ, শফিকুর রহমান খান, ফরিদা ইয়াছমীন, এসএম খালেকুজ্জামান, শান্তিপদ ঘোষ, মোশতাক হোসেন উদ্বোধনী অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে কামাল হোসেন পরের বছর গণফোরাম গঠন করেন। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে দলের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়।
No comments