সঞ্চয়পত্রের সুদের হারে পরিবর্তন হবে না -অর্থমন্ত্রী
আগামী
বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদ হারে কোনো পরিবর্তন আসবে না বলে জানিয়েছেন
অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামাল। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনইসির
সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। আলোচনায় দেশের
বেসরকারী সংস্থা-এনজিও প্রতিনিধি, ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও
সাংবাদিকবৃন্দ এবং ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরাম (ইআরএফ) এর কার্যনির্বাহী
কমিটির নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
এ সময় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)- এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের শুরুতেই অর্থমন্ত্রী তার স্বাগত বক্তব্যে দেশের ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের পরিস্থিতি তুলে ধরেন। বলেন, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের কারণে করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অর্থ পাচার রোধ ও কর হার বাড়বে না বলে আশ্বস্ত করেন। পরে উপস্থিত অতিথিদের আলোচনার জন্য ফ্লোর ওপেন করে দেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু পরিবেশের দিকে কোন মনযোগ দেয়া হচ্ছে না। ইচ্ছা মতো গাড়ি নামছে ঢাকায়। কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। হাটার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, যানজট কমাতে হলে বাড়তি কর আরোপ করে হলেও গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে হাঁটার ব্যবস্থা করতে হবে।
মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, হাজার-হাজার, মানুষ সঞ্চয়পত্র নিয়ে পেরেশানের মধ্যে আছে আগামীতে কী হবে? হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। এই টাকা দিয়ে কানাডা-নিউ ইয়র্কে বাড়ি হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে টাকা যাচ্ছে। তা ফেরত আনার কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য হলো- সিপিডি আমাদের দেশের অর্থনীতির চালচিত্র তুলে ধরে। কিন্তু তাদের কঠোর সমালোচনা করা হচ্ছে। সমালোচনা না করে তাদের চিহিৃত ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করলে দেশের উপকার হতো।
এর পর অর্থমন্ত্রী বলেন, সঞ্চয়পত্রের রেট ও রির্টানে আমরা হাত দেইনি, দিবোও না। তবে সঞ্চয়পত্রের সংস্কার নিয়ে কাজ চলছে। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্র যাদের জন্য করা হয়েছে শুধু তারাই এখানে বিনিয়োগ করতে পারবে। এক্ষেত্রে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
মন্ত্রী বলেন, অনেক অবৈধ টাকায় সঞ্চয়পত্র কেনা হচ্ছে। ফলে যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হওয়ার কথা তার চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অর্থাৎ যাদের সঞ্চয়পত্র থাকা দরকার শুধু তাদেরই থাকবে, তারাই কিনবে। তাদের কোনো সুযোগ-সুবিধা কমবে না বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নইম নিজাম বলেন, অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জের সব থেকে বড় জায়গা হচ্ছে ব্যাংক খাত। ব্যাংকে কোন প্রকার দায়বদ্ধতা নেই। কিছু মানুষ ঋণের নামে লোপাট করছে। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে অর্থনীতিতে সংকট আারো বাড়বে। এছাড়া শেয়ার বাজার নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে।
পুঁজিবাজারে ৫ লাখ কোটি টাকা দিলেও শেষ হয়ে যাবে: দেশের পুঁজিবাজারে সিংহ-ছাগলের খেলা চলছে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমার ভয় হয়, পুঁজিবাজারকে ৫০ হাজার কোটি টাকা কিংবা ৫ লাখ কোটি টাকা দিলেও এই মুহুর্তে তা শেষ হয়ে যাবে। কারণ এখানে সমস্যা কোথায় আছে আমরা জানি। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পারছি না। এছাড়া ব্যাংকিং খাতে একটি করুণ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আইন করা হচ্ছে, আমার উপর আস্থা রাখুন, ঠিক হয়ে যাবে।
দেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার ওতপ্রোতভাবে জড়িত জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁ?জিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকের পর আমি বললাম-বর্তমান বাজার যে খারাপ হচ্ছে এর পেছনে কেউ আছে। অসাধু উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এমন কি অন্যায় বলেছি? পরের দিন ১০০ পয়েন্ট পড়ে গেল। যদি পুঁ?জিবাজার খারাপ অবস্থা বলতাম তাহলে কি হতো।
সম্পাদকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, এটা আপনারা ভালভাবে জানেন কারা করে। যারা করে তারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই করছে, চিহিৃত করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থমন্ত্রী ব?লেন, ওরা ভালভাবেই জানে সামনে বাজেট। পুঁজিবাজার বিষয়ে কিছু না কিছু বাজেটে প্রণোদনা থাকবে। এজন্য এখন শেয়ারের দাম বাড়ার কথা কমার কথা না। এখন কেন কমাচ্ছে, কারণ দাম কমলে যেন তারা শেয়ারটা কিনতে পারে।
বাজারে দুটি পার্টি রয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, মোহামেডান ও আবহনীর খেলা নয়, এ দু?টি পক্ষের মধ্যে এক?টি পক্ষ সিংহ অপরটি ছাগলের বাচ্ছা। এই দুই গ্রুপের মাঝে অনেক তফাৎ। নিজে থেকে ঠিক না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া বাজার কোনভাবেই ঠিক করা সম্ভব না।
তিনি বলেন, পঁজিবাজারে শত শত কম্পোনেন্ট। ওরা সারা দেশে লোক রেখে দেয়। তারা তাদের নিয়োগ কৃত লোকদের বলে দেয় কিনো কিনো। পরে দাম উঠে গেলে বিক্রি করে দেয়। আর খুজে পাওয়া যায় না। বিষয়টা হলো- অনেকে না বুঝে শেয়ার বাজারে আসে। তারাই ধরা খায়। না বুঝে ও স্বল্প সময়ের জন্য বাজারে না আশার অনুরোধ করেন তিনি।
বি?নিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজার নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। দেশের অর্থনী?তির সঙ্গে তাল?মিলিয়ে পুঁ?জিবাজারের উন্নয়ন করা হবে। আমরা বারবার এ বাজারকে নিয়ে নাজুক অবস্থায় পড়তে চাই না। মানুষের গালাগালি শুনতে চাই না। এ জন্য আমরা সব ধররের ব্যবস্থা নিবো।
ব্যাংকিং ব্যবস্থা খুব ভালো নেই জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামাল বলেন, এ খাতের উন্নয়নে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি হচ্ছে। অনেকেই খেলাপি ঋণের বিপরীতে কোন উদ্যোগ নিতে পারছে না। মামলা করতে পারছে না। এ সব বিষয়ে উদ্যোগ নিবে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি।
তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণে সুদের হার বেশি। এত বেশি সুদ দিয়ে কখনই ব্যবসা করা যাবে না। সুদের ওপর নতুন করে সুদ আরোপ করা হচ্ছে। আগামীতে সুদের হার কমিয়ে নিয়ে আসা হবে। যাতে ঋণ খেলাপি না হয়। এছাড়া বাজেটে পুজিবাজারের জন্য প্রণোদনা থাকবে।
মন্ত্রী বলেন, আমার উপর বিশ্বাস রাখুন। অসততা আমাকে স্পর্শ করেনি, করবেও না। আমি অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। সাধারন মানুষের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক থেকে কেউ ঋণ গ্রহণ করে সেখান থেকে বেরিয়ে আসাটা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যবসা করলে লাভ বা লোকসান হতে পারে। যারা লোকসান দেয় তাদের জন্য কিছু করার ব্যবস্থা থাকে না। ঋণ খেলাপি হওয়ার পরও সব ব্যবসায়ীদের জেলে পাঠালে তো হবে না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে।
অর্থ পাচার নিয়ে মন্ত্রী বলেন, যথাযথ আইন না থাকার কারণে দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আইন নিয়ে আসবো। এজন্য যেসব পণ্য বিদেশ থেকে আসবে সেগুলো শতভাগ স্ক্যানিং হয়ে আসবে। আবার যেসব পণ্য রপ্তানি হবে সেগুলোও শতভাগ স্ক্যানিং করা হবে। তাছাড়া র্যান্ডম শ্যাম্পলিং এর মাধ্যমে পরিদর্শন করার ব্যবস্থা করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, যারা আয়কর দেয় তারা শুধু কর দেবে, আর যারা কর দেয় না তারা দেয়ই না। দেশের ৪ কোটি মানুষ কর দেয়ার যোগ্য হলেও কর দেয়া মাত্র ২৯ লাখ। এজন্য ভ্যালু এ্যাডেড ট্যাক্স নির্ধারণ করা হবে।
দেশের উন্নয়নে বৈষম্য বাড়তেই পারে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির উন্নয়ন হলে অনেক সময় মিসম্যাচ হয়। ফলে বৈষম্য বেড়ে যায়। তবে আর যেন বৈষম্য না বাড়ে, সে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চেীধুরী বলেন, ট্যাক্সের আওতা বাড়াতে হলে ইনসেনটিভের ব্যবস্থা থাকতে হবে। বাংলাদেশে এ ধরনের কোন ব্যবস্থা নেই। ব্যাংকিং খাতে আস্থা ও শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে হবে। বাজেটে এ নিয়ে পদক্ষেপ থাকা উচিত। বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশের অর্থ বাইরে চলে যাচ্ছে। এটাকে নিয়ন্ত্রয় করতে হবে।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বাজেট শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়। এটা একটা ফাউন্ডেশন। দেশের চিত্র। অথচ আমরা একটা ছকের মধ্যে আটকে আছি। বাজেটকে নতুন করে সাজাতে হবে। স্থানীয় সরকারকে ছাগলের ২নং বাচ্চার সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, এটাকে শক্তিশালী করতে হবে। এমডিজি ভালো করেছি। এসডিজিও ভালো করতে হবে। এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে বলে জানান তিনি।
এ সময় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)- এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের শুরুতেই অর্থমন্ত্রী তার স্বাগত বক্তব্যে দেশের ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের পরিস্থিতি তুলে ধরেন। বলেন, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের কারণে করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অর্থ পাচার রোধ ও কর হার বাড়বে না বলে আশ্বস্ত করেন। পরে উপস্থিত অতিথিদের আলোচনার জন্য ফ্লোর ওপেন করে দেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু পরিবেশের দিকে কোন মনযোগ দেয়া হচ্ছে না। ইচ্ছা মতো গাড়ি নামছে ঢাকায়। কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। হাটার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, যানজট কমাতে হলে বাড়তি কর আরোপ করে হলেও গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে হাঁটার ব্যবস্থা করতে হবে।
মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, হাজার-হাজার, মানুষ সঞ্চয়পত্র নিয়ে পেরেশানের মধ্যে আছে আগামীতে কী হবে? হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। এই টাকা দিয়ে কানাডা-নিউ ইয়র্কে বাড়ি হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে টাকা যাচ্ছে। তা ফেরত আনার কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য হলো- সিপিডি আমাদের দেশের অর্থনীতির চালচিত্র তুলে ধরে। কিন্তু তাদের কঠোর সমালোচনা করা হচ্ছে। সমালোচনা না করে তাদের চিহিৃত ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করলে দেশের উপকার হতো।
এর পর অর্থমন্ত্রী বলেন, সঞ্চয়পত্রের রেট ও রির্টানে আমরা হাত দেইনি, দিবোও না। তবে সঞ্চয়পত্রের সংস্কার নিয়ে কাজ চলছে। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্র যাদের জন্য করা হয়েছে শুধু তারাই এখানে বিনিয়োগ করতে পারবে। এক্ষেত্রে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
মন্ত্রী বলেন, অনেক অবৈধ টাকায় সঞ্চয়পত্র কেনা হচ্ছে। ফলে যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হওয়ার কথা তার চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অর্থাৎ যাদের সঞ্চয়পত্র থাকা দরকার শুধু তাদেরই থাকবে, তারাই কিনবে। তাদের কোনো সুযোগ-সুবিধা কমবে না বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নইম নিজাম বলেন, অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জের সব থেকে বড় জায়গা হচ্ছে ব্যাংক খাত। ব্যাংকে কোন প্রকার দায়বদ্ধতা নেই। কিছু মানুষ ঋণের নামে লোপাট করছে। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে অর্থনীতিতে সংকট আারো বাড়বে। এছাড়া শেয়ার বাজার নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে।
পুঁজিবাজারে ৫ লাখ কোটি টাকা দিলেও শেষ হয়ে যাবে: দেশের পুঁজিবাজারে সিংহ-ছাগলের খেলা চলছে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমার ভয় হয়, পুঁজিবাজারকে ৫০ হাজার কোটি টাকা কিংবা ৫ লাখ কোটি টাকা দিলেও এই মুহুর্তে তা শেষ হয়ে যাবে। কারণ এখানে সমস্যা কোথায় আছে আমরা জানি। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পারছি না। এছাড়া ব্যাংকিং খাতে একটি করুণ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আইন করা হচ্ছে, আমার উপর আস্থা রাখুন, ঠিক হয়ে যাবে।
দেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার ওতপ্রোতভাবে জড়িত জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁ?জিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকের পর আমি বললাম-বর্তমান বাজার যে খারাপ হচ্ছে এর পেছনে কেউ আছে। অসাধু উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এমন কি অন্যায় বলেছি? পরের দিন ১০০ পয়েন্ট পড়ে গেল। যদি পুঁ?জিবাজার খারাপ অবস্থা বলতাম তাহলে কি হতো।
সম্পাদকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, এটা আপনারা ভালভাবে জানেন কারা করে। যারা করে তারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই করছে, চিহিৃত করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থমন্ত্রী ব?লেন, ওরা ভালভাবেই জানে সামনে বাজেট। পুঁজিবাজার বিষয়ে কিছু না কিছু বাজেটে প্রণোদনা থাকবে। এজন্য এখন শেয়ারের দাম বাড়ার কথা কমার কথা না। এখন কেন কমাচ্ছে, কারণ দাম কমলে যেন তারা শেয়ারটা কিনতে পারে।
বাজারে দুটি পার্টি রয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, মোহামেডান ও আবহনীর খেলা নয়, এ দু?টি পক্ষের মধ্যে এক?টি পক্ষ সিংহ অপরটি ছাগলের বাচ্ছা। এই দুই গ্রুপের মাঝে অনেক তফাৎ। নিজে থেকে ঠিক না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া বাজার কোনভাবেই ঠিক করা সম্ভব না।
তিনি বলেন, পঁজিবাজারে শত শত কম্পোনেন্ট। ওরা সারা দেশে লোক রেখে দেয়। তারা তাদের নিয়োগ কৃত লোকদের বলে দেয় কিনো কিনো। পরে দাম উঠে গেলে বিক্রি করে দেয়। আর খুজে পাওয়া যায় না। বিষয়টা হলো- অনেকে না বুঝে শেয়ার বাজারে আসে। তারাই ধরা খায়। না বুঝে ও স্বল্প সময়ের জন্য বাজারে না আশার অনুরোধ করেন তিনি।
বি?নিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজার নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। দেশের অর্থনী?তির সঙ্গে তাল?মিলিয়ে পুঁ?জিবাজারের উন্নয়ন করা হবে। আমরা বারবার এ বাজারকে নিয়ে নাজুক অবস্থায় পড়তে চাই না। মানুষের গালাগালি শুনতে চাই না। এ জন্য আমরা সব ধররের ব্যবস্থা নিবো।
ব্যাংকিং ব্যবস্থা খুব ভালো নেই জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামাল বলেন, এ খাতের উন্নয়নে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি হচ্ছে। অনেকেই খেলাপি ঋণের বিপরীতে কোন উদ্যোগ নিতে পারছে না। মামলা করতে পারছে না। এ সব বিষয়ে উদ্যোগ নিবে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি।
তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণে সুদের হার বেশি। এত বেশি সুদ দিয়ে কখনই ব্যবসা করা যাবে না। সুদের ওপর নতুন করে সুদ আরোপ করা হচ্ছে। আগামীতে সুদের হার কমিয়ে নিয়ে আসা হবে। যাতে ঋণ খেলাপি না হয়। এছাড়া বাজেটে পুজিবাজারের জন্য প্রণোদনা থাকবে।
মন্ত্রী বলেন, আমার উপর বিশ্বাস রাখুন। অসততা আমাকে স্পর্শ করেনি, করবেও না। আমি অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। সাধারন মানুষের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক থেকে কেউ ঋণ গ্রহণ করে সেখান থেকে বেরিয়ে আসাটা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যবসা করলে লাভ বা লোকসান হতে পারে। যারা লোকসান দেয় তাদের জন্য কিছু করার ব্যবস্থা থাকে না। ঋণ খেলাপি হওয়ার পরও সব ব্যবসায়ীদের জেলে পাঠালে তো হবে না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে।
অর্থ পাচার নিয়ে মন্ত্রী বলেন, যথাযথ আইন না থাকার কারণে দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আইন নিয়ে আসবো। এজন্য যেসব পণ্য বিদেশ থেকে আসবে সেগুলো শতভাগ স্ক্যানিং হয়ে আসবে। আবার যেসব পণ্য রপ্তানি হবে সেগুলোও শতভাগ স্ক্যানিং করা হবে। তাছাড়া র্যান্ডম শ্যাম্পলিং এর মাধ্যমে পরিদর্শন করার ব্যবস্থা করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, যারা আয়কর দেয় তারা শুধু কর দেবে, আর যারা কর দেয় না তারা দেয়ই না। দেশের ৪ কোটি মানুষ কর দেয়ার যোগ্য হলেও কর দেয়া মাত্র ২৯ লাখ। এজন্য ভ্যালু এ্যাডেড ট্যাক্স নির্ধারণ করা হবে।
দেশের উন্নয়নে বৈষম্য বাড়তেই পারে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির উন্নয়ন হলে অনেক সময় মিসম্যাচ হয়। ফলে বৈষম্য বেড়ে যায়। তবে আর যেন বৈষম্য না বাড়ে, সে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চেীধুরী বলেন, ট্যাক্সের আওতা বাড়াতে হলে ইনসেনটিভের ব্যবস্থা থাকতে হবে। বাংলাদেশে এ ধরনের কোন ব্যবস্থা নেই। ব্যাংকিং খাতে আস্থা ও শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে হবে। বাজেটে এ নিয়ে পদক্ষেপ থাকা উচিত। বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশের অর্থ বাইরে চলে যাচ্ছে। এটাকে নিয়ন্ত্রয় করতে হবে।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বাজেট শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়। এটা একটা ফাউন্ডেশন। দেশের চিত্র। অথচ আমরা একটা ছকের মধ্যে আটকে আছি। বাজেটকে নতুন করে সাজাতে হবে। স্থানীয় সরকারকে ছাগলের ২নং বাচ্চার সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, এটাকে শক্তিশালী করতে হবে। এমডিজি ভালো করেছি। এসডিজিও ভালো করতে হবে। এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে বলে জানান তিনি।
No comments