মাদক পাচার ও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী: অবজার্ভার রিসার্স ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষণ by শ্রীপর্না ব্যানার্জী
বাংলাদেশে
২০১৮ সালে মাদক ব্যবসা, বিশেষ করে ইয়াবার বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালানো
হয়। এ সময়ে রেকর্ড পরিমাণ অর্থাৎ ৫ কোটি ৩০ লাখ মেথামফেটামিন ট্যাবলেট
(ইয়াবা) জব্দ করা হয়। প্রায় ৩০০ সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়।
এর মধ্যে ৪০ জন টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশের। গ্রেপ্তার করা হয়েছে
প্রায় ২৫০০০ মানুষকে। এর মধ্যে কিছু রয়েছে রোহিঙ্গা। বার্তা সংস্থা
রয়টার্সের রিপোর্ট অনুসারে, মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আইনকানুন বিহীন
এলাকার কারখানা থেকে মাদক আনে এমন পাচারকারীদের জন্য বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে
একটি বড় বাজার। কেন এবং কিভাবে রাষ্ট্রহীন এসব মানুষ এমন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে
তা খতিয়ে দেখা উচিত।
বাংলাদেশে বর্তমানে অতিমাত্রায় গাদাগাদি করে আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে কমপক্ষে ৯ লাখ রোহিঙ্গা। এমনিতেই গাদাগাদি করে সেখানে অবস্থান করছে তারা, তার ওপর আছে নানা রকম বিধিনিষেধ। এসব ক্যাম্পে বসবাসের পরিবেশ নাজুক। বৈধ উপায়ে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে বিধিনিষেধ। এর ফলে অবৈধ উপায় অবলম্বনের পথ তৈরি হয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য।
দেশে যুদ্ধবিধ্বস্ত গ্রামগুলো ফেলে নারী, পুরুষ ও শিশুরা সীমান্ত অতিক্রম করে এপাড়ে এসেছেন। এ সময় তারা স্বামী বা স্ত্রী, পিতামাতা অথবা সন্তানদের ছাড়াই এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। কারণ, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংস দমনপীড়নের এসব মানুষকে হারিয়েছেন তারা। কেউ কেউ কিছু অর্থ ও কাপড় নিয়ে আসতে পেরেছেন। কিন্তু গ্রামে আগুন দেয়ায় অন্য বেশির ভাগ মানুষই ওরকম কিছু নিয়ে আসতে পারেন নি। এমন ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অধীনে তারা আশ্রয় পেয়েছেন অতিমাত্রায় ঘনবসতিপূর্ণ আশ্রয় শিবিরে। এসব আশ্রয় শিবিরের বাইরের এলাকায় কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে তাদের ওপর রয়েছে বিধিনিষেধ। মানবিক সংগঠনগুলোর কাছ থেকে যা ত্রাণ তারা পান তা দয়ামাত্র। আশ্রয়শিবিরের ভিতরে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশন (ইউএনএইচসিআর) যেসব কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, শুধু সেখানে কাজ করার অনুমতি আছে তাদের। এসব কাজের বিনিময়ে তারা যে অর্থ উপার্জন করেন, তার পরিমাণ এতটাই সামান্য যে, তা দিয়ে নিজেদের এবং পরিবারকে চালাতে হিমশিম খেতে হয়। খাদ্য সরবরাহ এখন সীমিত। তাই বাড়তি অর্থ হাতে এলে তা দিয়ে তারা ভাল খাদ্য ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারেন।
যদিও আশ্রয়শিবিরে শিক্ষামূলক কর্মসুচি চালু আছে, তবু জেআরপি রিপোর্ট ২০১৯ অনুযায়ী, শতকরা ৯৭ ভাগ যুবক ও কিশোরের মানসম্মত শিক্ষা অথবা শেখার সুযোগের অভাব রয়েছে।
ইয়াবা চালানের আকার কত বড় বা ছোট তার ওপর ভিত্তি করে তাদেরকে অর্থ দেয়া হয়। ঢাকা ও অন্য শহর এলাকায় ৫০০০ ইয়াবা ট্যাবলেট পৌঁছে দিয়ে তারা আয় করে ১০ হাজার টাকা। ফলে এটা তাদের কাছে একটি অতিমাত্রায় লোভনীয় কাজ। এভাবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোহিঙ্গা মাদকের খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ইয়াবা পৌঁছে দিতে এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন।
এসব খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জড়িত যেসব বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা তারা সহজেই মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে চালান নিয়ে আসতে পারেন দুই দেশের মধ্যে প্রবহমান নাফ নদী অতিক্রম করে।
২০১৭-১৮ সালে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বেশ কিছু রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এবং তা নিশ্চিত করে যে, বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে ইয়াবার চাহিদা। এতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন অনেক মানুষ। তার মধ্যে রয়েছেন গৃহবধূ থেকে শুরু করে কলেজ ছাত্র, পেশাজীবিরা পর্যন্ত। এক্ষেত্রে এই আশ্রয়শিবির সহজ শিকারে পরিণত হয়েছে।
বিশাল চৌহদ্দির বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল (মিয়ানমার, লাওস ও থাইল্যান্ড)-এ উৎপাদিত মাদকের একটি ট্রানজিট দেশ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাদেশ। কক্সবাজারের টেকনাফ শহর এসব মাদক স্থানান্তরের জন্য এক কুখ্যাত প্রবেশপথ হিসেবে ব্যাপকভাবে লাইমলাইটে উঠে এসেছে। এখান থেকে বর্তমানে রাজধানীতে মাদক সরবরাহ দেয়ার কাছে নিযুক্ত ১৫টি সিন্ডিকেট। এই গেটওয়ের একেবারে প্রাণকেন্দ্রের খুব কাছাকাছি বসবাস রোহিঙ্গাদের।
মিডিয়ায় প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী, পাচারকারীরা এই আশ্রয়শিবিরের অনেক গভীরে সফর করে। অথবা ঘন বনের ভিতরে সাক্ষাত করে। অথবা পাশের কোনো রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সাক্ষাত করে। তাদের কাছ থেকে এসব পাচারকারী তাদের প্যাকেজ গ্রহণ করে থাকে। তারপর তা গণপরিবহনের করে বাংলাদেশের বড় বড় শহরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। নিরাপত্তা তল্লাশিকে অতিক্রম করে তা সরাসরি চলে যায়।
এ কাজে বাহক হিসেবে পাচারকারীরা রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদেরকেই বেশি পছন্দ করে। কারণ, এরা কম সন্দেহের তালিকায় থাকে। এভাবেই সন্দেহের বাইরে থাকা নারীরা মাদক ও তার সন্তান সহ নিরাপত্তা চৌকি অতিক্রম করে যায়। এসব মাদক অনেক সময় জুতার ভিতর, অন্তর্বাস, বেল্ট, পায়ুপথে আবার পেটের সঙ্গে বেঁধে পরিবহন করা হয়।
এভাবেই পাচারকারীরা বর্তমানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়শিবিরকে বড় বাজার হিসেবে ব্যবহার করছে এবং আশ্রয়শিবিরকে ইয়াবা ‘গুদামঘর’ হিসেবে ব্যবহার করছে। শুধু যে মাদক আসছে এমন নয়। এর সঙ্গে ঘটছে আরো অনেক অপরাধ।
যদিও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এ পরিস্থিতির গভীরতা সম্পর্কে জানে, মাঝে মাঝে তারা বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে অসহায় হয়ে পড়ে। অব্যাহতভাবে চলমান এ অপরাধ নিয়ে বহু বিতর্ক আছে। ১৯৯০ সালের মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের ফাঁকফোকড় হতে পারে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার বড় কারণগুলোর একটি। আগের আইনে ইয়াবাকে মাদক হিসেবে ধরা হয় নি। এই মাদকটি সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। আগে মাদকের ডিলাররা সহজেই জামিন পেতেন। তাদেরকে দীর্ঘ সময় আটকে রাখা হতো না। ফলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সরকার আগের আইনকে আরো কঠোর করে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন করে। এই আইনটি কাঙ্খিত সফলতা আনবে কিনা তা দেখার বিষয়।
গত মাসে টেকনাফ শহরে আত্মসমর্পণ কর্মসূচি পালিত হয়। সেখানে ১০২ জন মাদকের মাফিয়া ও খুচরা বিক্রেতা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এটা একটি বড় সাফল্য হলেও, এখনও অনেকে পালিয়ে আছে এবং এ জন্য রোহিঙ্গাদেরকে এই ব্যবসার দিকে সরাসরি ঠেলে দিচ্ছে। এ বিষয়টি হিসাবে নিতে হবে। গরিব এসব রোহিঙ্গা পরিণতি এবং ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্পর্কে কতটা অবহিত তা অনিশ্চিত।
মানবাধিকারের প্রেক্ষাপটে, রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি দেয়া নিয়ে কথা বলেছে জাতিসংঘের বেশ কিছু রিপোর্ট। এসব গ্রুপের সঙ্গে কাজ করছে যেসব আন্তর্জাতিক ত্রাণ বিষয়ক কর্মসূচি তারা রোহিঙ্গাদের মৌলিক জীবনধারণ উন্নত করার দিকে ফোকাস দিয়েছে। তারা আশা করছে, এই মৌলিক চাহিদার উন্নতি করা হলে আশ্রয়শিবিরে অপরাধ কমতে সাহায্য করবে। তহবিল হয়তো ভুলভাবে পরিচালনা করা হয়, না হয় তার অপব্যবহার হয়। সরকারসমূহ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন বিষয়ে যে হুঁশহাঁস প্রচেষ্টা দেখাচ্ছে তাতে নিরাপত্তা সমানভাবে খর্ব হচ্ছে। তাই জাতীয় বা আঞ্চলিক পর্যায়ে সমন্বিত সমাধানের বিষয়টিতে রয়েছে শুধুই গড়িমসি। যাতে দেখা যায় এই ইস্যু সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণে ঘাতটি রয়েছে। এটা অনুধাবন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই এক্ষেত্রে ব্যাপকহারে মনোযোগ সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে এইসব রাষ্ট্রহীন মানুষগুলোকে পুনর্বাসনের আনুষ্ঠানিক নীতি বেরিয়ে আসবে এবং তা থেকে বাস্তব সমাধান বেরিয়ে আসা প্রয়োজন।
(অনলাইন ইউরেশিয়া ভিউ থেকে অনুবাদ)
বাংলাদেশে বর্তমানে অতিমাত্রায় গাদাগাদি করে আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে কমপক্ষে ৯ লাখ রোহিঙ্গা। এমনিতেই গাদাগাদি করে সেখানে অবস্থান করছে তারা, তার ওপর আছে নানা রকম বিধিনিষেধ। এসব ক্যাম্পে বসবাসের পরিবেশ নাজুক। বৈধ উপায়ে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে বিধিনিষেধ। এর ফলে অবৈধ উপায় অবলম্বনের পথ তৈরি হয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য।
দেশে যুদ্ধবিধ্বস্ত গ্রামগুলো ফেলে নারী, পুরুষ ও শিশুরা সীমান্ত অতিক্রম করে এপাড়ে এসেছেন। এ সময় তারা স্বামী বা স্ত্রী, পিতামাতা অথবা সন্তানদের ছাড়াই এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। কারণ, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংস দমনপীড়নের এসব মানুষকে হারিয়েছেন তারা। কেউ কেউ কিছু অর্থ ও কাপড় নিয়ে আসতে পেরেছেন। কিন্তু গ্রামে আগুন দেয়ায় অন্য বেশির ভাগ মানুষই ওরকম কিছু নিয়ে আসতে পারেন নি। এমন ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অধীনে তারা আশ্রয় পেয়েছেন অতিমাত্রায় ঘনবসতিপূর্ণ আশ্রয় শিবিরে। এসব আশ্রয় শিবিরের বাইরের এলাকায় কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে তাদের ওপর রয়েছে বিধিনিষেধ। মানবিক সংগঠনগুলোর কাছ থেকে যা ত্রাণ তারা পান তা দয়ামাত্র। আশ্রয়শিবিরের ভিতরে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশন (ইউএনএইচসিআর) যেসব কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, শুধু সেখানে কাজ করার অনুমতি আছে তাদের। এসব কাজের বিনিময়ে তারা যে অর্থ উপার্জন করেন, তার পরিমাণ এতটাই সামান্য যে, তা দিয়ে নিজেদের এবং পরিবারকে চালাতে হিমশিম খেতে হয়। খাদ্য সরবরাহ এখন সীমিত। তাই বাড়তি অর্থ হাতে এলে তা দিয়ে তারা ভাল খাদ্য ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারেন।
যদিও আশ্রয়শিবিরে শিক্ষামূলক কর্মসুচি চালু আছে, তবু জেআরপি রিপোর্ট ২০১৯ অনুযায়ী, শতকরা ৯৭ ভাগ যুবক ও কিশোরের মানসম্মত শিক্ষা অথবা শেখার সুযোগের অভাব রয়েছে।
ইয়াবা চালানের আকার কত বড় বা ছোট তার ওপর ভিত্তি করে তাদেরকে অর্থ দেয়া হয়। ঢাকা ও অন্য শহর এলাকায় ৫০০০ ইয়াবা ট্যাবলেট পৌঁছে দিয়ে তারা আয় করে ১০ হাজার টাকা। ফলে এটা তাদের কাছে একটি অতিমাত্রায় লোভনীয় কাজ। এভাবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোহিঙ্গা মাদকের খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ইয়াবা পৌঁছে দিতে এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন।
এসব খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জড়িত যেসব বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা তারা সহজেই মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে চালান নিয়ে আসতে পারেন দুই দেশের মধ্যে প্রবহমান নাফ নদী অতিক্রম করে।
২০১৭-১৮ সালে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বেশ কিছু রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এবং তা নিশ্চিত করে যে, বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে ইয়াবার চাহিদা। এতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন অনেক মানুষ। তার মধ্যে রয়েছেন গৃহবধূ থেকে শুরু করে কলেজ ছাত্র, পেশাজীবিরা পর্যন্ত। এক্ষেত্রে এই আশ্রয়শিবির সহজ শিকারে পরিণত হয়েছে।
বিশাল চৌহদ্দির বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল (মিয়ানমার, লাওস ও থাইল্যান্ড)-এ উৎপাদিত মাদকের একটি ট্রানজিট দেশ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাদেশ। কক্সবাজারের টেকনাফ শহর এসব মাদক স্থানান্তরের জন্য এক কুখ্যাত প্রবেশপথ হিসেবে ব্যাপকভাবে লাইমলাইটে উঠে এসেছে। এখান থেকে বর্তমানে রাজধানীতে মাদক সরবরাহ দেয়ার কাছে নিযুক্ত ১৫টি সিন্ডিকেট। এই গেটওয়ের একেবারে প্রাণকেন্দ্রের খুব কাছাকাছি বসবাস রোহিঙ্গাদের।
মিডিয়ায় প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী, পাচারকারীরা এই আশ্রয়শিবিরের অনেক গভীরে সফর করে। অথবা ঘন বনের ভিতরে সাক্ষাত করে। অথবা পাশের কোনো রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সাক্ষাত করে। তাদের কাছ থেকে এসব পাচারকারী তাদের প্যাকেজ গ্রহণ করে থাকে। তারপর তা গণপরিবহনের করে বাংলাদেশের বড় বড় শহরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। নিরাপত্তা তল্লাশিকে অতিক্রম করে তা সরাসরি চলে যায়।
এ কাজে বাহক হিসেবে পাচারকারীরা রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদেরকেই বেশি পছন্দ করে। কারণ, এরা কম সন্দেহের তালিকায় থাকে। এভাবেই সন্দেহের বাইরে থাকা নারীরা মাদক ও তার সন্তান সহ নিরাপত্তা চৌকি অতিক্রম করে যায়। এসব মাদক অনেক সময় জুতার ভিতর, অন্তর্বাস, বেল্ট, পায়ুপথে আবার পেটের সঙ্গে বেঁধে পরিবহন করা হয়।
এভাবেই পাচারকারীরা বর্তমানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়শিবিরকে বড় বাজার হিসেবে ব্যবহার করছে এবং আশ্রয়শিবিরকে ইয়াবা ‘গুদামঘর’ হিসেবে ব্যবহার করছে। শুধু যে মাদক আসছে এমন নয়। এর সঙ্গে ঘটছে আরো অনেক অপরাধ।
যদিও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এ পরিস্থিতির গভীরতা সম্পর্কে জানে, মাঝে মাঝে তারা বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে অসহায় হয়ে পড়ে। অব্যাহতভাবে চলমান এ অপরাধ নিয়ে বহু বিতর্ক আছে। ১৯৯০ সালের মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের ফাঁকফোকড় হতে পারে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার বড় কারণগুলোর একটি। আগের আইনে ইয়াবাকে মাদক হিসেবে ধরা হয় নি। এই মাদকটি সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। আগে মাদকের ডিলাররা সহজেই জামিন পেতেন। তাদেরকে দীর্ঘ সময় আটকে রাখা হতো না। ফলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সরকার আগের আইনকে আরো কঠোর করে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন করে। এই আইনটি কাঙ্খিত সফলতা আনবে কিনা তা দেখার বিষয়।
গত মাসে টেকনাফ শহরে আত্মসমর্পণ কর্মসূচি পালিত হয়। সেখানে ১০২ জন মাদকের মাফিয়া ও খুচরা বিক্রেতা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এটা একটি বড় সাফল্য হলেও, এখনও অনেকে পালিয়ে আছে এবং এ জন্য রোহিঙ্গাদেরকে এই ব্যবসার দিকে সরাসরি ঠেলে দিচ্ছে। এ বিষয়টি হিসাবে নিতে হবে। গরিব এসব রোহিঙ্গা পরিণতি এবং ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্পর্কে কতটা অবহিত তা অনিশ্চিত।
মানবাধিকারের প্রেক্ষাপটে, রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি দেয়া নিয়ে কথা বলেছে জাতিসংঘের বেশ কিছু রিপোর্ট। এসব গ্রুপের সঙ্গে কাজ করছে যেসব আন্তর্জাতিক ত্রাণ বিষয়ক কর্মসূচি তারা রোহিঙ্গাদের মৌলিক জীবনধারণ উন্নত করার দিকে ফোকাস দিয়েছে। তারা আশা করছে, এই মৌলিক চাহিদার উন্নতি করা হলে আশ্রয়শিবিরে অপরাধ কমতে সাহায্য করবে। তহবিল হয়তো ভুলভাবে পরিচালনা করা হয়, না হয় তার অপব্যবহার হয়। সরকারসমূহ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন বিষয়ে যে হুঁশহাঁস প্রচেষ্টা দেখাচ্ছে তাতে নিরাপত্তা সমানভাবে খর্ব হচ্ছে। তাই জাতীয় বা আঞ্চলিক পর্যায়ে সমন্বিত সমাধানের বিষয়টিতে রয়েছে শুধুই গড়িমসি। যাতে দেখা যায় এই ইস্যু সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণে ঘাতটি রয়েছে। এটা অনুধাবন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই এক্ষেত্রে ব্যাপকহারে মনোযোগ সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে এইসব রাষ্ট্রহীন মানুষগুলোকে পুনর্বাসনের আনুষ্ঠানিক নীতি বেরিয়ে আসবে এবং তা থেকে বাস্তব সমাধান বেরিয়ে আসা প্রয়োজন।
(অনলাইন ইউরেশিয়া ভিউ থেকে অনুবাদ)
No comments