মুক্তি কিসে, স্বৈরশাসনে নাকি গণতন্ত্রের পুনঃউদ্ভাবনে?
বিবিসি
একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যার শিরোনাম হোয়াই উই নিড টু রিইনভেন্ট
ডেমোক্রেসি? কেন দীর্ঘমেয়াদে গণতন্ত্রের পুনঃউদ্ভাবন প্রয়োজন? গত ১৯শে
মার্চ ২০১৯ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি লিখেছেন অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত রোমান
কুরজানিয়ারিক। তিনি স্বনামধন্য পাবলিক ফিলোসফার। বৃটিশ দৈনিক অবজারভারের
মতে, মি. রোমান ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় জনপ্রিয় দার্শনিকদের অন্যতম।
রাজনৈতিক সমাজবিদ্যায় অক্সফোর্ড থেকে পিএইচডি করেছেন। দুই কিস্তিতে এর
তরজমাভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো। প্রথম পর্ব পড়ুন আজ।
যখন রাজনীতিবিদরা আগামী নির্বাচন কিংবা সর্বশেষ টুইটের বেশি কিছু দেখতে ব্যর্থ হন, তখন তারা আসলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকারের প্রতি তাদের উদাসীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। এই নিবন্ধটি বিবিসির একটি বিশেষ সিরিজের অংশ হিসেবে প্রকাশ করা হয়। বিবিসি একটি নতুন সিরিজ চালু করেছে।
যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানবতা কে গভীরভাবে দেখা এবং বিশ্লেষণ করা।
সমাজতত্ত্ববিদ এলিস বোল্ডিং একদা বলেছিলেন, যদি মানসিকতা এমনটাই গড়ে ওঠে, যেসব সময় কেবল শুধু বর্তমান নিয়ে পড়ে থাকো, তাহলে ভবিষ্যৎ কি হবে, তা কল্পনা করার যে শক্তি তা শেষ হয়ে যাবে। আর সেটাই হচ্ছে বিবিসির চালু করা নতুন সিরিজ ডিপ সিভিলাইজেশন বা ‘গভীর সভ্যতা’ সিরিজের একটি অংশ।
কেন নির্বাচন, কেন বিতর্ক
দার্শনিক রোমান লিখেছেন, ১৭৩৯ সালে স্কটিশ দার্শনিক ডেভিড হিউম ‘অরিজিন অফ সিভিল গভারনমেন্ট’-এ বেসামরিক সরকারের উৎপত্তি বিষয়ে লিখতে গিয়ে তিনি বলেছেন, মানুষ রাতারাতি বদলে যেতে সমর্থ নয়। সেটা তারা নিজেরা পারে না। অন্যকেও তারা বদলাতে পারে না। এটা আত্মার সংকীর্ণতা। আর সেটা আছে বলেই মানুষ কে দেখা যায়, তারা বর্তমানকে নিয়ে এমনই মাথা গুজে পড়ে থাকে যে, তার শেষ তলানি পর্যন্ত সে বর্তমান ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না।
মানুষ সম্পর্কে এই যে ধ্যানধারণা এটা স্কটিশ দার্শনিককে এই মর্মে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিল যে, সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন রাজনৈতিক প্রতিনিধিগণ এবং সংসদীয় বিতর্ক, মানুষ এসবের সঙ্গে যত বেশি নিজেকে যুক্ত করবে, সে ঘন ঘন নির্বাচন করবে, সে সংসদে ঘনঘন বিতর্ক করবে, কেন করবে, তার কারণ এই বিতর্ক করে ওই যে তার আত্মার সংকীর্ণতা, তার যে স্বার্থপরতার একটা দিক রয়েছে, তার মনের গভীরে যেটা, সেটা বিসর্জন দিতে পারবে। সেটা সে কমাতে পারবে। যদি সেরকম একটি ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যায়। এর ফলে তার সহনশীলতা বাড়বে। তার ধৈর্য বাড়বে এবং এর ফলে যেটা দাঁড়াবে সমাজবদ্ধ যে মানুষ, তখন তার সামাজিক যে দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ এবং কল্যাণ সেসব কারণগুলোর প্রতি একটা মূল্যায়ন করা তার পক্ষে সহজ হবে। একটা ভালো ভূমিকা রাখা সহজ হবে।
এই মন্তব্য করার পর রোমান লিখেছেন, এই যে দৃষ্টিভঙ্গি সেটা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেখলে মনে হয়, এটা একটা কল্পনাবিলাস ছাড়া কিছুই নয়। কারণ ইতিমধ্যে এটা খুব স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, আমাদের রাজনৈতিক যে ব্যবস্থা সবাই মিলে গড়ে তুলেছি, তা স্বল্পমেয়াদি একটা উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তার লক্ষ্য কিন্তু রোগব্যাধি যা সমাজে রয়েছে, রাষ্ট্রব্যবস্থায় রয়েছে, সেটা প্রতিকার করে নেয়ার দিকে মনোযোগ তাদের কম। আর সে কারণেই বহু রাজনীতিবিদ, আসলে আগামী নির্বাচনের পরে কি হবে, তার থেকে বেশি সে কিছুই দেখতে পায় না। আর সে কারণেই তাদেরকে দেখা যায় সর্বশেষ জনমত জরিপ কিংবা টুইটে কি বলা হয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় মানুষ কি বলেছে, সেটা নিয়েই তারা নাচানাচি করে। আর সরকারগুলো ঐতিহ্যগতভাবে কোনো একটা সমস্যা তৈরি হলো, অমনি তারা উঠে পড়ে লাগে, ওটা দ্রুত কি করে নিরাময় করে ফেলা যায়। কেউ যদি কোনো অপরাধ করে অমনি তারা গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়। আর গ্রেপ্তার পূর্ণ হবার পরেই তারা মানুষকে ধারণা দিতে চায়, তারা সমাজে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, সেটা প্রতিকার করে ফেলেছে। আসলে সেটা মোটেই তা নয়। এই কাজ করার মধ্য দিয়ে তারা আসলে সমাজ এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভেতরে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা টিকিয়ে রাখে। তারা ধারণা দেয়, প্রতিকারের দিকে যেতে সেটা কোনো একটা বিহিত এনে দেবে। কিন্তু তা দেবে না, দেয় না।
রাজনীতির মায়োপিয়া
২৪/৭ নিউজ মিডিয়া (নিউ ইয়র্কভিত্তিক ডিজিটাল মার্কেটিং কোম্পানি, যার কাজ হচ্ছে ১২টি দেশে থাকা তাদের অফিসের মাধ্যমে খবর সরবরাহ করা) সর্বশেষ ব্রেক্সিট সমঝোতা কিংবা মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো উত্তপ্ত মন্তব্যকে পোস্ট করে দিচ্ছে। আর এসবই হচ্ছে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির মায়োপিয়া বা অদূরদর্শিতা। সুতরাং এখানে একটি এন্টিডোট রয়েছে। আর সেই এন্টিডোট ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থকে স্থায়ীভাবে দৃষ্টিসীমার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। আর তাই তিনি লিখেছেন, আসুন আমরা সমস্যার ধরন নিয়ে আলোচনা শুরু করি। আজকের দিনে চারপাশের ঘনটাবলী আমাদের গ্রাস করছে। বলা হচ্ছে, সেটার জন্য সামাজিক মিডিয়া, অন্যান্য ডিজিটাল প্রযুক্তি দায়ী। এই প্রযুক্তিগুলি রাজনৈতিক জীবনের গতিধারা কি হবে, সেটা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে নির্দিষ্ট করা হচ্ছে তা শুধু এখানে সীমিতভাবে দেখলে চলবে না।
এর শেকড় আরো বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। একটি বড় সমস্যার নাম হচ্ছে নির্বাচনী চক্র। এই নির্বাচনী চক্র অন্তর্গতভাবে ত্রুটিপূর্ণ এমন একটি ডিজাইন, যা নিরন্তর একটা সাময়িক রাজনৈতিক ঝড়কে সামনে এনে বড় করে দেখায়। সরকারগুলো জনগণকে এটা দেখাতে নির্বাচনকে বড় করে সামনে আনে। তারপর কিছু চটকদার প্রতিশ্রুতি দিতে থাকে। যেমন তারা পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে, সেটা ঠেকানো, পেনশন সংস্কার কিংবা শৈশবের শুরুতেই শিক্ষায় কিভাবে আরো বিনিয়োগ বাড়ানো যায় এই বিষয়গুলোর দিকে তারা যায় না। তারা সর্বদা চটকদার বক্তব্য দিয়ে ভোটারদের মন জয় করতে আগ্রহী হয়ে থাকে। তারা বরং ভোটারদেরকে এটা দেখায় যে, আমরা নির্বাচনে জিতলে তোমাদের ট্যাক্স কমিয়ে দিব।
উনিশ শ সত্তরের দশকে এরকম একটি মায়োপিক নীতিনির্ধারণী বিষয় বৃটেনের রাজনীতিতে জায়গা করে নিয়েছিল। আর তার নামকরণ করা হয়েছিল পলিটিক্যাল বিজনেস সাইকেল। আরেকটা বড় বিষয় হচ্ছে ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। তারা স্পেশাল ইন্টারেস্ট গ্রুপ। তাদের মধ্যে সব থেকে এগিয়ে আছে কর্পোরেশন। তারা রাজনৈতিক পদ্ধতিকে ব্যবহার করে। তাদের স্বল্পমেয়াদি যে উদ্দেশ্য সাধন করা দরকার, সেটা তারা বাগিয়ে নেয়। আর সেটা নিতে গিয়ে অবশিষ্ট সমাজের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের প্রতি তার কি প্রভাব পড়ছে, সেটা তারা বিবেচনায় নেয় না। নির্বাচনী প্রচারণায় অর্থ জোগানো কিংবা বিগ বাজেট লবিং প্রচলিত রাজনীতিকে যে হ্যাক করছে, সেটা একটা বৈশ্বিক ফেনোমেনায় পরিণত হয়েছে। আর সেটা দীর্ঘমেয়াদি নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলোকে এজেন্ডা থেকে একেবারেই দূরে রাখছে। এরপরে আমরা তৃতীয় যে দিকটির দিকে নজর দিতে পারি, সেটা হলো বর্তমানের রাজনীতি ভবিষ্যৎ লুটে নিচ্ছে। তারা সব লুটেপুটে খেয়ে ফেলছে, ভবিষ্যতের মানুষের কি স্বার্থ এবং সেটা যে পদ্ধতিগতভাবে হরণ করা হচ্ছে, সেদিকে কারো নজরই নেই।
মি. রোমান সকৌতুকে বলেছেন, ভাবটা যেন আগামীকালের নাগরিক, তাদের অধিকার হলো কোনো অধিকার না থাকা।
যখন রাজনীতিবিদরা আগামী নির্বাচন কিংবা সর্বশেষ টুইটের বেশি কিছু দেখতে ব্যর্থ হন, তখন তারা আসলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকারের প্রতি তাদের উদাসীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। এই নিবন্ধটি বিবিসির একটি বিশেষ সিরিজের অংশ হিসেবে প্রকাশ করা হয়। বিবিসি একটি নতুন সিরিজ চালু করেছে।
যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানবতা কে গভীরভাবে দেখা এবং বিশ্লেষণ করা।
সমাজতত্ত্ববিদ এলিস বোল্ডিং একদা বলেছিলেন, যদি মানসিকতা এমনটাই গড়ে ওঠে, যেসব সময় কেবল শুধু বর্তমান নিয়ে পড়ে থাকো, তাহলে ভবিষ্যৎ কি হবে, তা কল্পনা করার যে শক্তি তা শেষ হয়ে যাবে। আর সেটাই হচ্ছে বিবিসির চালু করা নতুন সিরিজ ডিপ সিভিলাইজেশন বা ‘গভীর সভ্যতা’ সিরিজের একটি অংশ।
কেন নির্বাচন, কেন বিতর্ক
দার্শনিক রোমান লিখেছেন, ১৭৩৯ সালে স্কটিশ দার্শনিক ডেভিড হিউম ‘অরিজিন অফ সিভিল গভারনমেন্ট’-এ বেসামরিক সরকারের উৎপত্তি বিষয়ে লিখতে গিয়ে তিনি বলেছেন, মানুষ রাতারাতি বদলে যেতে সমর্থ নয়। সেটা তারা নিজেরা পারে না। অন্যকেও তারা বদলাতে পারে না। এটা আত্মার সংকীর্ণতা। আর সেটা আছে বলেই মানুষ কে দেখা যায়, তারা বর্তমানকে নিয়ে এমনই মাথা গুজে পড়ে থাকে যে, তার শেষ তলানি পর্যন্ত সে বর্তমান ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না।
মানুষ সম্পর্কে এই যে ধ্যানধারণা এটা স্কটিশ দার্শনিককে এই মর্মে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিল যে, সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন রাজনৈতিক প্রতিনিধিগণ এবং সংসদীয় বিতর্ক, মানুষ এসবের সঙ্গে যত বেশি নিজেকে যুক্ত করবে, সে ঘন ঘন নির্বাচন করবে, সে সংসদে ঘনঘন বিতর্ক করবে, কেন করবে, তার কারণ এই বিতর্ক করে ওই যে তার আত্মার সংকীর্ণতা, তার যে স্বার্থপরতার একটা দিক রয়েছে, তার মনের গভীরে যেটা, সেটা বিসর্জন দিতে পারবে। সেটা সে কমাতে পারবে। যদি সেরকম একটি ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যায়। এর ফলে তার সহনশীলতা বাড়বে। তার ধৈর্য বাড়বে এবং এর ফলে যেটা দাঁড়াবে সমাজবদ্ধ যে মানুষ, তখন তার সামাজিক যে দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ এবং কল্যাণ সেসব কারণগুলোর প্রতি একটা মূল্যায়ন করা তার পক্ষে সহজ হবে। একটা ভালো ভূমিকা রাখা সহজ হবে।
এই মন্তব্য করার পর রোমান লিখেছেন, এই যে দৃষ্টিভঙ্গি সেটা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেখলে মনে হয়, এটা একটা কল্পনাবিলাস ছাড়া কিছুই নয়। কারণ ইতিমধ্যে এটা খুব স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, আমাদের রাজনৈতিক যে ব্যবস্থা সবাই মিলে গড়ে তুলেছি, তা স্বল্পমেয়াদি একটা উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তার লক্ষ্য কিন্তু রোগব্যাধি যা সমাজে রয়েছে, রাষ্ট্রব্যবস্থায় রয়েছে, সেটা প্রতিকার করে নেয়ার দিকে মনোযোগ তাদের কম। আর সে কারণেই বহু রাজনীতিবিদ, আসলে আগামী নির্বাচনের পরে কি হবে, তার থেকে বেশি সে কিছুই দেখতে পায় না। আর সে কারণেই তাদেরকে দেখা যায় সর্বশেষ জনমত জরিপ কিংবা টুইটে কি বলা হয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় মানুষ কি বলেছে, সেটা নিয়েই তারা নাচানাচি করে। আর সরকারগুলো ঐতিহ্যগতভাবে কোনো একটা সমস্যা তৈরি হলো, অমনি তারা উঠে পড়ে লাগে, ওটা দ্রুত কি করে নিরাময় করে ফেলা যায়। কেউ যদি কোনো অপরাধ করে অমনি তারা গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়। আর গ্রেপ্তার পূর্ণ হবার পরেই তারা মানুষকে ধারণা দিতে চায়, তারা সমাজে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, সেটা প্রতিকার করে ফেলেছে। আসলে সেটা মোটেই তা নয়। এই কাজ করার মধ্য দিয়ে তারা আসলে সমাজ এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভেতরে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা টিকিয়ে রাখে। তারা ধারণা দেয়, প্রতিকারের দিকে যেতে সেটা কোনো একটা বিহিত এনে দেবে। কিন্তু তা দেবে না, দেয় না।
রাজনীতির মায়োপিয়া
২৪/৭ নিউজ মিডিয়া (নিউ ইয়র্কভিত্তিক ডিজিটাল মার্কেটিং কোম্পানি, যার কাজ হচ্ছে ১২টি দেশে থাকা তাদের অফিসের মাধ্যমে খবর সরবরাহ করা) সর্বশেষ ব্রেক্সিট সমঝোতা কিংবা মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো উত্তপ্ত মন্তব্যকে পোস্ট করে দিচ্ছে। আর এসবই হচ্ছে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির মায়োপিয়া বা অদূরদর্শিতা। সুতরাং এখানে একটি এন্টিডোট রয়েছে। আর সেই এন্টিডোট ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থকে স্থায়ীভাবে দৃষ্টিসীমার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। আর তাই তিনি লিখেছেন, আসুন আমরা সমস্যার ধরন নিয়ে আলোচনা শুরু করি। আজকের দিনে চারপাশের ঘনটাবলী আমাদের গ্রাস করছে। বলা হচ্ছে, সেটার জন্য সামাজিক মিডিয়া, অন্যান্য ডিজিটাল প্রযুক্তি দায়ী। এই প্রযুক্তিগুলি রাজনৈতিক জীবনের গতিধারা কি হবে, সেটা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে নির্দিষ্ট করা হচ্ছে তা শুধু এখানে সীমিতভাবে দেখলে চলবে না।
এর শেকড় আরো বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। একটি বড় সমস্যার নাম হচ্ছে নির্বাচনী চক্র। এই নির্বাচনী চক্র অন্তর্গতভাবে ত্রুটিপূর্ণ এমন একটি ডিজাইন, যা নিরন্তর একটা সাময়িক রাজনৈতিক ঝড়কে সামনে এনে বড় করে দেখায়। সরকারগুলো জনগণকে এটা দেখাতে নির্বাচনকে বড় করে সামনে আনে। তারপর কিছু চটকদার প্রতিশ্রুতি দিতে থাকে। যেমন তারা পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে, সেটা ঠেকানো, পেনশন সংস্কার কিংবা শৈশবের শুরুতেই শিক্ষায় কিভাবে আরো বিনিয়োগ বাড়ানো যায় এই বিষয়গুলোর দিকে তারা যায় না। তারা সর্বদা চটকদার বক্তব্য দিয়ে ভোটারদের মন জয় করতে আগ্রহী হয়ে থাকে। তারা বরং ভোটারদেরকে এটা দেখায় যে, আমরা নির্বাচনে জিতলে তোমাদের ট্যাক্স কমিয়ে দিব।
উনিশ শ সত্তরের দশকে এরকম একটি মায়োপিক নীতিনির্ধারণী বিষয় বৃটেনের রাজনীতিতে জায়গা করে নিয়েছিল। আর তার নামকরণ করা হয়েছিল পলিটিক্যাল বিজনেস সাইকেল। আরেকটা বড় বিষয় হচ্ছে ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। তারা স্পেশাল ইন্টারেস্ট গ্রুপ। তাদের মধ্যে সব থেকে এগিয়ে আছে কর্পোরেশন। তারা রাজনৈতিক পদ্ধতিকে ব্যবহার করে। তাদের স্বল্পমেয়াদি যে উদ্দেশ্য সাধন করা দরকার, সেটা তারা বাগিয়ে নেয়। আর সেটা নিতে গিয়ে অবশিষ্ট সমাজের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের প্রতি তার কি প্রভাব পড়ছে, সেটা তারা বিবেচনায় নেয় না। নির্বাচনী প্রচারণায় অর্থ জোগানো কিংবা বিগ বাজেট লবিং প্রচলিত রাজনীতিকে যে হ্যাক করছে, সেটা একটা বৈশ্বিক ফেনোমেনায় পরিণত হয়েছে। আর সেটা দীর্ঘমেয়াদি নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলোকে এজেন্ডা থেকে একেবারেই দূরে রাখছে। এরপরে আমরা তৃতীয় যে দিকটির দিকে নজর দিতে পারি, সেটা হলো বর্তমানের রাজনীতি ভবিষ্যৎ লুটে নিচ্ছে। তারা সব লুটেপুটে খেয়ে ফেলছে, ভবিষ্যতের মানুষের কি স্বার্থ এবং সেটা যে পদ্ধতিগতভাবে হরণ করা হচ্ছে, সেদিকে কারো নজরই নেই।
মি. রোমান সকৌতুকে বলেছেন, ভাবটা যেন আগামীকালের নাগরিক, তাদের অধিকার হলো কোনো অধিকার না থাকা।
No comments