হিমালয়ে বাড়ছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ: বাংলাদেশে তীব্র পানি সংকটের আশঙ্কা
পরিবর্তিত
জলবায়ু পরিস্থিতিতে হিমালয় অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে
তীব্র পানি সংকটের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে
পর্যটন ও তীর্থযাত্রাকে হিমালয়ের নগরায়ণ বৃদ্ধির নেপথ্য কারণ বলা হয়েছে। ওই
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ বেড়ে যাওয়ায় ঝরনা ও নদীনির্ভর
পানি ব্যবস্থাপনার প্রতি নির্ভরতাও বেড়েছে। প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা
হয়েছে, বরফ ও হিমবাহ-নির্ভর পানির এই দুই উৎস জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে
চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহে সক্ষম নয়। সে কারণে ভূগর্ভস্থ উৎসের ওপর
নির্ভরতা বাড়ছে, যা তীব্র পানি সংকটের কারণ হতে পারে। ওই প্রতিবেদনে সতর্ক
করা হয়েছে, পরিবেশগতভাবে স্পর্শকাতর অঞ্চল হিমালয়ের এই দ্রুততর অপরিকল্পিত
নগরায়ণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে কোটি কোটি মানুষ গভীর পানি সংকটে পড়বে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, হিমালয়কেন্দ্রিক যে ৮টি দেশের ওপর ওই সংকটের প্রভাব
পড়বে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। সংকট নিরসনে পার্বত্য এলাকায় নগরায়ণের বিষয়ে
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সুপারিশ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনটিতে।
পুরো হিমালয় অঞ্চল ছড়িয়ে আছে ৪২ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে, যা আটটি দেশের মধ্যে পড়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো হলো: আফগানিস্তান, ভুটান, চীন, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান। পর্বত অঞ্চলে সংস্থান হয় প্রায় ২৪ কোটি মানুষের জীবিকা। অঞ্চলটিতে রয়েছে ১০টি বড় নদীর উৎপত্তিস্থল এবং বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃত ৩৬টি প্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ স্থান। ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেভেলপমেন্ট’ তাদের এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি জানিয়েছে, হিমালয় পর্বত অঞ্চল প্রায় ২০০ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকায় ভূমিকা রাখে। এই অঞ্চল থেকে পাওয়া পানি ব্যবহৃত হয় খাদ্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে। নিশ্চিত হয় বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য।
‘আরবানাইজেশন অ্যান্ড ওয়াটার ইনসিকিউরিটি ইন দ্য হিন্দু কুশ হিমালয়া: ইনসাইটস ফ্রম বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, নেপাল অ্যান্ড পাকিস্তান’ শিরোনামে ‘ওয়াটার পলিসি’ সাময়িকীর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, অপরিকল্পিত নগরায়ণ বেড়ে যাওয়ায় ওই অঞ্চলে মারাত্মকভাবে বেড়েছে জনসংখ্যা। যে কারণে সেখানকার পানির উৎসগুলোর অতিব্যবহার ঘটছে, যা বাসিন্দাদের ক্রমেই ঠেলে দিচ্ছে এক হতাশাজনক পরিস্থিতির দিকে। গবেষক শ্রেয়সী সিং (নেপাল), এসএম তানভীর হাসান (বাংলাদেশ), মাসুমা হাসান (পাকিস্তান) ও নেহা ভারতীর (ভারত) তাদের যৌথ গবেষণায় বলেছেন, ভঙ্গুর ভূ-প্রকৃতির পার্বত্য অঞ্চলে এলোমেলোভাবে গড়ে ওঠায় নগর কেন্দ্রগুলো পানির সংকট ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।’ হিমালয় পর্বত অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পার্বত্য নগর কেন্দ্রগুলো ‘তাদের পৌর এলাকায় অবস্থিত পানির উৎসগুলো থেকে চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।’ প্রতিবেদনটিতে সংকট প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, পর্বতে অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ভূগর্ভে থাকা পানির ওপর নির্ভরতা ক্রমাগত বাড়ছে। ইতোমধ্যে সেখানে দূরবর্তী উৎসগুলো থেকে পানি সংগ্রহের বাস্তবতা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, নিকটবর্তী পানির উৎসগুলো বাড়তে থাকা চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পানি সরবরাহ করতে পারছে না। তবে অবকাঠামো ও বিদ্যুতের দামের কারণে পর্বতে পানি পরিবহনের বাস্তবতা সবসময় একইরকম থাকবে না। তখন ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা বাড়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কোনও সুযোগ থাকবে না।
বাংলাদেশের বান্দরবান, ভারতের জম্মু ও কাশ্মির, সিমলা, হরিদুয়ার, হৃষিকেশ, দার্জিলিং ও দেশটির উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যগুলো, নেপালের বেশিরভাগ অঞ্চল এবং পাকিস্তানের হিমালয় পর্বত অঞ্চল হিমালয়কেন্দ্রিক বড় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর অন্যতম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঝরনা কিংবা গভীর বা অগভীর কুয়া থেকে পানি সংগ্রহ করাটাই এখন পর্যন্ত পানির চাহিদা পূরণের উপায় হিসেবে গণ্য হচ্ছে। যদি যথাযথ পরিমাণে ও যথাযথভাবে পরিকল্পিত পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা তৈরি করা না যায় তাহলে ভূগর্ভের পানির ওপর এই অত্যধিক নির্ভরতা ভবিষ্যতে আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করবে। পার্বত্য অঞ্চলের ভূগর্ভের পানি ধরে রাখে মাটির যে স্তরটি তা গঠনগতভাবে অত্যন্ত ভঙ্গুর প্রকৃতির। গত বছর সিমলায় প্রকট পানির সংকট দেখা দিয়েছিল। প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এ সংকটের কারণ ছিল বৃষ্টিপাত ও তুষারপাতের স্বল্পতা।
ওই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশের গবেষক তানভীর হাসান। তিনি পরিবেশ-প্রতিবেশ সংক্রান্ত ওয়েবসাইট মোঙ্গাবে-ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘কেবল জলবায়ু পরিবর্তন হিমালয় অঞ্চলের পানি সংকটের কারণ নয়, অনিয়ন্ত্রিত এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণও এর জন্য দায়ী। এর কারণে পার্বত্য অঞ্চলে পানির সংকটের পাশাপাশি দূষণ ও মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।’ সংকট সমাধানে একটি দীর্ঘমেয়াদি ও সুপরিকল্পিত কৌশল প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছেন তিনি। সতর্ক করেছেন, ‘তা না হলে পুরো অঞ্চলটি এবং এখানে বসবাস করা কোটি কোটি মানুষ চরম সংকটে পড়বে।’
নগরায়ণ সংজ্ঞায়নের পদ্ধতিগত দুর্বলতাকে সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে ওই গবেষণায়। বলা হয়েছে, ‘সমতল ও পর্বতে একই ধরনের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে কোন নগরের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, পর্বতের ওপর অবস্থিত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থান এই সংজ্ঞায় নগর হিসেবে বিবেচিত হয় না। অথচ, পানি নিরাপত্তার দিক থেকে দেখলে সমতলের চেয়ে পার্বত্য অঞ্চলের সক্ষমতা কম।’ এতে বলা হয়েছে, পর্বতে জেলা সদর ও বাজারকেন্দ্রিক শহরের মতো ছোট ছোট বসতি সাধারণ নগর কেন্দ্রগুলোর মতোই। কিন্তু তারা আনুষ্ঠানিকভাবে নগর কেন্দ্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত নয়। তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্ধারিত নগরায়ণের সংজ্ঞায় পড়ে না। এজন্যই ভঙ্গুরতা, পানির সীমিত সরবরাহ ও দূরত্ব বিবেচনায় রেখে সেখানকার নগর কেন্দ্রগুলোর জন্য নতুন সংজ্ঞা দরকার।
ওই প্রতিবেদনে পার্বত্য অঞ্চলের বাস্তুসংস্থান ও বনাঞ্চলে ঘেরা উপরের দিককার পানি সরবরাহকারী অঞ্চলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পার্বত্য নগর কেন্দ্রগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে সতর্ক করা হয়েছে, ‘দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনা ও সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতা ব্যতিরেকে হিন্দু কুশ হিমালয়ান (এইচকেএইচ) অঞ্চল গভীরভাবে পানির সংকটের মুখোমুখি হবে, যার প্রভাব প্রকট হয়ে দেখা দেবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে।’
নেপালকে এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে হাজির করে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্বতে অবস্থিত কোন স্থানগুলোকে নগর কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হবে সে বিষয়ে পর্বতের বৈশিষ্ট্য সাপেক্ষে নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশি গবেষক তানভীর হাসানও মোঙ্গাবে-ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘উন্নত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য আগে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে পর্বতের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নগর কেন্দ্রের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা প্রয়োজন, যা নেপাল করেছে।’
পুরো হিমালয় অঞ্চল ছড়িয়ে আছে ৪২ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে, যা আটটি দেশের মধ্যে পড়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো হলো: আফগানিস্তান, ভুটান, চীন, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান। পর্বত অঞ্চলে সংস্থান হয় প্রায় ২৪ কোটি মানুষের জীবিকা। অঞ্চলটিতে রয়েছে ১০টি বড় নদীর উৎপত্তিস্থল এবং বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃত ৩৬টি প্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ স্থান। ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেভেলপমেন্ট’ তাদের এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি জানিয়েছে, হিমালয় পর্বত অঞ্চল প্রায় ২০০ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকায় ভূমিকা রাখে। এই অঞ্চল থেকে পাওয়া পানি ব্যবহৃত হয় খাদ্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে। নিশ্চিত হয় বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য।
‘আরবানাইজেশন অ্যান্ড ওয়াটার ইনসিকিউরিটি ইন দ্য হিন্দু কুশ হিমালয়া: ইনসাইটস ফ্রম বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, নেপাল অ্যান্ড পাকিস্তান’ শিরোনামে ‘ওয়াটার পলিসি’ সাময়িকীর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, অপরিকল্পিত নগরায়ণ বেড়ে যাওয়ায় ওই অঞ্চলে মারাত্মকভাবে বেড়েছে জনসংখ্যা। যে কারণে সেখানকার পানির উৎসগুলোর অতিব্যবহার ঘটছে, যা বাসিন্দাদের ক্রমেই ঠেলে দিচ্ছে এক হতাশাজনক পরিস্থিতির দিকে। গবেষক শ্রেয়সী সিং (নেপাল), এসএম তানভীর হাসান (বাংলাদেশ), মাসুমা হাসান (পাকিস্তান) ও নেহা ভারতীর (ভারত) তাদের যৌথ গবেষণায় বলেছেন, ভঙ্গুর ভূ-প্রকৃতির পার্বত্য অঞ্চলে এলোমেলোভাবে গড়ে ওঠায় নগর কেন্দ্রগুলো পানির সংকট ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।’ হিমালয় পর্বত অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পার্বত্য নগর কেন্দ্রগুলো ‘তাদের পৌর এলাকায় অবস্থিত পানির উৎসগুলো থেকে চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।’ প্রতিবেদনটিতে সংকট প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, পর্বতে অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ভূগর্ভে থাকা পানির ওপর নির্ভরতা ক্রমাগত বাড়ছে। ইতোমধ্যে সেখানে দূরবর্তী উৎসগুলো থেকে পানি সংগ্রহের বাস্তবতা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, নিকটবর্তী পানির উৎসগুলো বাড়তে থাকা চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পানি সরবরাহ করতে পারছে না। তবে অবকাঠামো ও বিদ্যুতের দামের কারণে পর্বতে পানি পরিবহনের বাস্তবতা সবসময় একইরকম থাকবে না। তখন ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা বাড়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কোনও সুযোগ থাকবে না।
বাংলাদেশের বান্দরবান, ভারতের জম্মু ও কাশ্মির, সিমলা, হরিদুয়ার, হৃষিকেশ, দার্জিলিং ও দেশটির উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যগুলো, নেপালের বেশিরভাগ অঞ্চল এবং পাকিস্তানের হিমালয় পর্বত অঞ্চল হিমালয়কেন্দ্রিক বড় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর অন্যতম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঝরনা কিংবা গভীর বা অগভীর কুয়া থেকে পানি সংগ্রহ করাটাই এখন পর্যন্ত পানির চাহিদা পূরণের উপায় হিসেবে গণ্য হচ্ছে। যদি যথাযথ পরিমাণে ও যথাযথভাবে পরিকল্পিত পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা তৈরি করা না যায় তাহলে ভূগর্ভের পানির ওপর এই অত্যধিক নির্ভরতা ভবিষ্যতে আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করবে। পার্বত্য অঞ্চলের ভূগর্ভের পানি ধরে রাখে মাটির যে স্তরটি তা গঠনগতভাবে অত্যন্ত ভঙ্গুর প্রকৃতির। গত বছর সিমলায় প্রকট পানির সংকট দেখা দিয়েছিল। প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এ সংকটের কারণ ছিল বৃষ্টিপাত ও তুষারপাতের স্বল্পতা।
ওই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশের গবেষক তানভীর হাসান। তিনি পরিবেশ-প্রতিবেশ সংক্রান্ত ওয়েবসাইট মোঙ্গাবে-ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘কেবল জলবায়ু পরিবর্তন হিমালয় অঞ্চলের পানি সংকটের কারণ নয়, অনিয়ন্ত্রিত এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণও এর জন্য দায়ী। এর কারণে পার্বত্য অঞ্চলে পানির সংকটের পাশাপাশি দূষণ ও মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।’ সংকট সমাধানে একটি দীর্ঘমেয়াদি ও সুপরিকল্পিত কৌশল প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছেন তিনি। সতর্ক করেছেন, ‘তা না হলে পুরো অঞ্চলটি এবং এখানে বসবাস করা কোটি কোটি মানুষ চরম সংকটে পড়বে।’
নগরায়ণ সংজ্ঞায়নের পদ্ধতিগত দুর্বলতাকে সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে ওই গবেষণায়। বলা হয়েছে, ‘সমতল ও পর্বতে একই ধরনের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে কোন নগরের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, পর্বতের ওপর অবস্থিত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থান এই সংজ্ঞায় নগর হিসেবে বিবেচিত হয় না। অথচ, পানি নিরাপত্তার দিক থেকে দেখলে সমতলের চেয়ে পার্বত্য অঞ্চলের সক্ষমতা কম।’ এতে বলা হয়েছে, পর্বতে জেলা সদর ও বাজারকেন্দ্রিক শহরের মতো ছোট ছোট বসতি সাধারণ নগর কেন্দ্রগুলোর মতোই। কিন্তু তারা আনুষ্ঠানিকভাবে নগর কেন্দ্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত নয়। তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্ধারিত নগরায়ণের সংজ্ঞায় পড়ে না। এজন্যই ভঙ্গুরতা, পানির সীমিত সরবরাহ ও দূরত্ব বিবেচনায় রেখে সেখানকার নগর কেন্দ্রগুলোর জন্য নতুন সংজ্ঞা দরকার।
ওই প্রতিবেদনে পার্বত্য অঞ্চলের বাস্তুসংস্থান ও বনাঞ্চলে ঘেরা উপরের দিককার পানি সরবরাহকারী অঞ্চলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পার্বত্য নগর কেন্দ্রগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে সতর্ক করা হয়েছে, ‘দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনা ও সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতা ব্যতিরেকে হিন্দু কুশ হিমালয়ান (এইচকেএইচ) অঞ্চল গভীরভাবে পানির সংকটের মুখোমুখি হবে, যার প্রভাব প্রকট হয়ে দেখা দেবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে।’
নেপালকে এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে হাজির করে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্বতে অবস্থিত কোন স্থানগুলোকে নগর কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হবে সে বিষয়ে পর্বতের বৈশিষ্ট্য সাপেক্ষে নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশি গবেষক তানভীর হাসানও মোঙ্গাবে-ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘উন্নত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য আগে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে পর্বতের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নগর কেন্দ্রের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা প্রয়োজন, যা নেপাল করেছে।’
No comments