লেডি বাইকারদের ছুটে চলা by মরিয়ম চম্পা
ঢাকার
রাজপথে ছুটে চলছে হরদম। মাথায় হেলমেট। হাত শক্ত করে ধরা বাইকের হাতল।
পেছনে যাত্রী। গলায় ওড়না পেঁচানো। তারা নারী বাইকার। অবলীলায় ছুটে চলছেন
রাজধানীর এ মাথা থেকে ও মাথা। সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছুটে চলা এসব নারী
বাইকাররা নিজেদের নারী ভাবতে নারাজ।
তারা মানুষ হিসাবেই নিজেকে ভাবেন। তাইতো নারী বাইকার রাবেয়া বশরী বলেন, সমাজ বদলেছে। বদলেছে সভ্যতা। আধুনিক সমাজের সঙ্গে পিছিয়ে পড়া মানে চাপা পড়ে যাওয়া। সময়ের আগে চলতে হবে এমনটাই বিশ্বাস করেন তিনি। বাইক রাইডার অ্যাপস ‘ও বোন’-এর সঙ্গে যুক্ত রাবেয়া।
রাইড শেয়ারিং অ্যাপে যুক্ত হয়েছে নারীদের জন্য রাইড শেয়ারিং সেবা ‘ও বোন’। ‘ও ভাই সলিউশনস লিমিটেড’-এর রাইড শেয়ারিংয়ের একটি প্ল্যাটফর্ম ‘ও বোন’। এই সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ নারী। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জনের বেশি নারী বাইকার এই সেবার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন রাজধানীতে। গত বছরের ২৮শে এপ্রিল থেকে নারীদের জন্য এই বিশেষ সেবা চালু হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত যেকোনো নারী ও ভাই অ্যাপের ‘ও বোন’ অপশনের মাধ্যমে খুঁজে নিতে পারবেন তার রাইডারকে।
‘ও বোন’-এর রাইডাররা খণ্ডকালীন ও পূর্ণকালীন দুভাবেই কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি রাইডারদের আলাদা করে বাইক, হেলমেট, রেইনকোট সরবরাহ করছে। রাইড শেয়ারিংয়ে আগ্রহী হলে ‘ও ভাই সলিউশন লিমিটেড’-এর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
রাইডার রাবেয়া বশরী বলেন, গত নয় মাস ধরে ‘ও বোনের’ সঙ্গে আছি। এটি চালু হয়েছে প্রায় ১ বছর। বলতে গেলে ‘ও বোন’-এর সবচেয়ে সিনিয়র রাইডার আমি। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় থেকে বাইক চালাতেন। গত ৪ বছর ধরে বাইক চালান রাবেয়া। তিনি বলেন, এটি যেহেতু শুধুমাত্র নারীদের জন্য সার্ভিস তাই পরবর্তীতে এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে ‘ও বোন’ এ যোগ দেই। শুরুর দিকে বিষয়টি অনেকেই নেতিবাচকভাবে নিতেন। বলতেন, মেয়ে মানুষ।
এতো রিস্ক নিয়ে মোটরসাইকেল চালানো ঠিক নয়। তার ওপর আবার আরেকটি মেয়েকে সার্ভিস দেয়া। অনেক বখাটে ছেলে টিজ করে বলতো, ‘আপা মোটরসাইকেলের চাকা ঘুরছে’। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতাম। রাস্তায় বাস ড্রাইভার কিংবা ছেলে বাইকারের উদ্দেশ্য খারাপ মনে হলে হয় তাদের সাইট দেই নয়তো আগে চালিয়ে যাই। তবে এখন যতো দিন যাচ্ছে ততো আমরা উন্নতি করছি। আর সব কিছুই সম্ভব হচ্ছে কোম্পানির ইতিবাচক সমর্থন পেয়ে। এখন নতুন নতুন অনেক নারী বাইকার আমাদের সঙ্গে কাজে যোগ দিচ্ছে। অনেকেই খুব সন্তুষ্ট। আমাদের অনেক নারী যাত্রী বলেন ‘ও বোন’ সেবা আরো আগে কেন এলো না। অনেকেই আবার আবদারের সুরে বলেন, এটা আপনারা কোনো ভাবেই বন্ধ করবেন না। যতো পারা যায় সেবাটা দ্রুত ছড়িয়ে দেবেন। ঢাকা শহরের সব জায়গায় যেন আমরা ‘ও বোন’ কে পাই।
তিনি বলেন, অফিস আমাকে ক্লাস করার সময় দিচ্ছে। অফিস থেকে বাইক দিয়েছে। এমনকি মেনটেনেন্স খরচও দিচ্ছে। তখনকার হ্যাঁ বলার কারণে আজকে আমার এই সাকসেসফুল জার্নি সম্ভব হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে গড়ে ১০ ঘণ্টা করে সার্ভিস দিতে হয় আমাদের। কিন্তু প্রায় সময় আমরা নিজেদের দায়বদ্ধতা এবং ভালো লাগা থেকে বাড়তি সেবা দিয়ে থাকি। প্রথম দিকে পরিবারের লোকজন এ বিষয়ে সমর্থন না করলেও এখন তারা বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখে। বন্ধুরা অনুপ্রাণিত করে। অনেক মেয়েই আমাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়। যে সকল মেয়েরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায় ‘ও বোন’ হচ্ছে তাদের জন্য একটি টেকশই প্ল্যাটফর্ম। মেয়েদের বলবো আপনারা যারা কাজ করতে চান তারা এখানে এসে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন।
মরিয়ম আক্তার সুইটি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সম্পন্ন করেছি। স্বামী একজন প্রকৌশলী। ছোট্ট একটি ছেলে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বন্ধুদের বাইক দিয়ে বাইক চালানো শিখি। পরবর্তীতে নিজের পকেট মানি জমিয়ে পরিবারের সাহায্য ছাড়াই একটি বাইক কিনি। এরপর একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হই। সংগঠনের এক আপুর পরামর্শে ‘ও বোন’-এ যোগ দেই। গত ৮ মাস ধরে ‘ও বোন’-এর সঙ্গে আছি। সংগঠনের আপু যখন ‘ও বোন’ রাইড শেয়ারিংয়ের কথা বলেন তখন আমি ভাবি এও কি সম্ভব। আমি নিজে বাইক চালাই ভালো কথা। আরেকটি মেয়েকে তার গন্তব্যে নিয়ে যাবো কীভাবে সম্ভব এটা। বিষয়টি আমাকে বোঝাতে অনেক কষ্ট হয়েছে তার। ঢাকা শহরে সময় সাশ্রয় এবং পাবলিক বাসের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করলে ‘ও বোন’ হচ্ছে নিরাপদ বাহন। সে হিসেবে বলা যায় ‘ও বোন’ হচ্ছে মেয়েদের জন্য একটি আশীর্বাদ। ‘ও বোন’ এ যোগ দেয়ার আগে আমি ছিলাম ডিপেন্ডেন্ট। আর এখন আমি ইন্ডিপেন্ডেন্ট। বাইকের বিষয়ে প্রথম দিকে পরিবারের সমর্থন ছিল না।
আমার নিজের বাবাই বলতেন মেয়ে মানুষ, দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কোথায় না কোথায় পড়ে থাকবে। এখন এটা শুনতে আমার ভালো লাগে যখন বাবা নিজেই বলে মা চল আমাকে একটু নামিয়ে দিয়ে আয়। সকাল হলেই ছেলে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। বলে ‘মা ওঠো। আজ তোমার কয়টি রাইড হয়েছে। ওঠো বাইক নিয়ে যাবে না।’ আগে আমি পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিতাম। আর এখন আমি গিফট করি। এ জন্য ‘ও বোন’কে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। স্বামী-সন্তান এবং সংসার সব সামলে আমি এই চাকরি করছি। অফিসের কলিগরা সবাই সাপোর্ট করে। স্বামী পরামর্শ দেয় আরো কীভাবে ভালো করা যায়। কাজের সময় ছেলেকে মায়ের কাছে রেখে যাই।
রাইডের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, আমাদের নারী যাত্রীরা খুবই হেল্পফুল। যখন একজন যাত্রী নিয়ে বাইক চালাই তখন আমার সতর্কতার লেভেল আরো বেড়ে যায়। কারণ তখন আমার নিজের সঙ্গে সঙ্গে আরেক জনের দায়িত্ব থাকে আমার কাঁধে। আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা হয়নি। তিনি বলেন, আমার জানা মতে ‘ও বোন’ সেবা বিশ্বের আর কোথাও নেই। শুধুমাত্র আমাদের দেশেই আছে। বাইরের দেশ থেকে সাংবাদিকরা এসে আমাদের ওপর ডকুমেন্টারি বানিয়ে নিয়ে গেছে। তাদের দেশের মেয়েদের উৎসাহী এবং অনুপ্রাণিত করতে। অন্য দেশের মানুষ যদি তাদের দেশের মেয়েদের এ ধরনের কাজে উৎসাহী করতে আমাদের উদাহরণ ব্যবহার করে তাহলে আমরা বাংলাদেশের মেয়েরা কেন পিছিয়ে থাকবো।
মনিরা বলেন, গত বছরের ২৫ই জুলাই ‘ও বোন’-এ যোগ দেই। এই ৫ মাসে ‘ও বোন’-এ আমি নতুন একটি পরিবার খুঁজে পেয়েছি। আমার নিজের বোন যেমন আমার ভালোমন্দ খোঁজখবর রাখে। একইভাবে আমার ইউজার যাত্রীরাও আমার খোঁজখবর রাখে। আমার কখনো মনে হয় না তারা আমার ইউজার। নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে মিশতে আমি খুব মজা পাই। সে ক্ষেত্রে গ্রাহকরা যদি আরো ভালো হয় তাহলে ভালো লাগা আরো বেড়ে যায়। এসব কিছুর জন্য আমি ‘ও বোন’-এর কাছে খুবই কৃতজ্ঞ।
সুরাইয়া আক্তার বলেন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ছি। গত ১ মাস যাবত ‘ও বোন’ এর সঙ্গে আছি। আমাদের টিম লিডার রাবেয়া আপুই আমার চাকরি পেতে সাহায্য করেছিল। তখন আমার কিছুটা ক্রাইসিস যাচ্ছিল। আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেই আমার একটি চাকরি দরকার। তখন রাবেয়া আপু ‘ও বোন’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়। এবং পরবর্তীতে তিনি হাতে ধরে আমাকে বাইক চালানো শেখান। এখন আমি নিউ রাইডার হিসেবে কাজ করছি। ঢাকায় আমি একা থাকি। পরিবারের কাউকে আমার চাকরির বিষয়ে জানাইনি। কারণ তারা জানলে এ বিষয়ে কখনোই সমর্থন করবে না। তবে আশা করছি পরিবার যেদিন বুঝতে পারবে যে শুরু থেকে আমি কতোটা যুদ্ধ করে আসছি তখন নিশ্চয় সমর্থন করবে। মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, পরিবারের সমর্থন না থাকলেও নিজেকে প্রকাশ করাটা খুব জরুরি। নিজের স্বপ্নকে চাপা দেয়া আর নিজেকে মেরে ফেলা একই কথা।
‘ও ভাই’ সলিউশন্স লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার কাজী ওমার ফেরদৌস বলেন, ‘ও ভাই’ বিশ্বাস করে নারী স্বাধীনতায়। আর সেই বিশ্বাস থেকে নারীদের এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যেই ‘ও ভাই’ শুরু করেছে মেয়েদের জন্য সময়োপযোগী ও স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক সেবা ‘ও বোন’। এই সেবার মাধ্যমে উভয়ই (রাইডার এবং গ্রাহক) আধুনিক যুগের সঙ্গে সমানে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে। ‘ও বোন’ নিয়ে ‘ও ভাইয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো নারীদের সড়কপথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, চলাচলের স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।’
তারা মানুষ হিসাবেই নিজেকে ভাবেন। তাইতো নারী বাইকার রাবেয়া বশরী বলেন, সমাজ বদলেছে। বদলেছে সভ্যতা। আধুনিক সমাজের সঙ্গে পিছিয়ে পড়া মানে চাপা পড়ে যাওয়া। সময়ের আগে চলতে হবে এমনটাই বিশ্বাস করেন তিনি। বাইক রাইডার অ্যাপস ‘ও বোন’-এর সঙ্গে যুক্ত রাবেয়া।
রাইড শেয়ারিং অ্যাপে যুক্ত হয়েছে নারীদের জন্য রাইড শেয়ারিং সেবা ‘ও বোন’। ‘ও ভাই সলিউশনস লিমিটেড’-এর রাইড শেয়ারিংয়ের একটি প্ল্যাটফর্ম ‘ও বোন’। এই সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ নারী। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জনের বেশি নারী বাইকার এই সেবার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন রাজধানীতে। গত বছরের ২৮শে এপ্রিল থেকে নারীদের জন্য এই বিশেষ সেবা চালু হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত যেকোনো নারী ও ভাই অ্যাপের ‘ও বোন’ অপশনের মাধ্যমে খুঁজে নিতে পারবেন তার রাইডারকে।
‘ও বোন’-এর রাইডাররা খণ্ডকালীন ও পূর্ণকালীন দুভাবেই কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি রাইডারদের আলাদা করে বাইক, হেলমেট, রেইনকোট সরবরাহ করছে। রাইড শেয়ারিংয়ে আগ্রহী হলে ‘ও ভাই সলিউশন লিমিটেড’-এর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
রাইডার রাবেয়া বশরী বলেন, গত নয় মাস ধরে ‘ও বোনের’ সঙ্গে আছি। এটি চালু হয়েছে প্রায় ১ বছর। বলতে গেলে ‘ও বোন’-এর সবচেয়ে সিনিয়র রাইডার আমি। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় থেকে বাইক চালাতেন। গত ৪ বছর ধরে বাইক চালান রাবেয়া। তিনি বলেন, এটি যেহেতু শুধুমাত্র নারীদের জন্য সার্ভিস তাই পরবর্তীতে এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে ‘ও বোন’ এ যোগ দেই। শুরুর দিকে বিষয়টি অনেকেই নেতিবাচকভাবে নিতেন। বলতেন, মেয়ে মানুষ।
এতো রিস্ক নিয়ে মোটরসাইকেল চালানো ঠিক নয়। তার ওপর আবার আরেকটি মেয়েকে সার্ভিস দেয়া। অনেক বখাটে ছেলে টিজ করে বলতো, ‘আপা মোটরসাইকেলের চাকা ঘুরছে’। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতাম। রাস্তায় বাস ড্রাইভার কিংবা ছেলে বাইকারের উদ্দেশ্য খারাপ মনে হলে হয় তাদের সাইট দেই নয়তো আগে চালিয়ে যাই। তবে এখন যতো দিন যাচ্ছে ততো আমরা উন্নতি করছি। আর সব কিছুই সম্ভব হচ্ছে কোম্পানির ইতিবাচক সমর্থন পেয়ে। এখন নতুন নতুন অনেক নারী বাইকার আমাদের সঙ্গে কাজে যোগ দিচ্ছে। অনেকেই খুব সন্তুষ্ট। আমাদের অনেক নারী যাত্রী বলেন ‘ও বোন’ সেবা আরো আগে কেন এলো না। অনেকেই আবার আবদারের সুরে বলেন, এটা আপনারা কোনো ভাবেই বন্ধ করবেন না। যতো পারা যায় সেবাটা দ্রুত ছড়িয়ে দেবেন। ঢাকা শহরের সব জায়গায় যেন আমরা ‘ও বোন’ কে পাই।
তিনি বলেন, অফিস আমাকে ক্লাস করার সময় দিচ্ছে। অফিস থেকে বাইক দিয়েছে। এমনকি মেনটেনেন্স খরচও দিচ্ছে। তখনকার হ্যাঁ বলার কারণে আজকে আমার এই সাকসেসফুল জার্নি সম্ভব হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে গড়ে ১০ ঘণ্টা করে সার্ভিস দিতে হয় আমাদের। কিন্তু প্রায় সময় আমরা নিজেদের দায়বদ্ধতা এবং ভালো লাগা থেকে বাড়তি সেবা দিয়ে থাকি। প্রথম দিকে পরিবারের লোকজন এ বিষয়ে সমর্থন না করলেও এখন তারা বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখে। বন্ধুরা অনুপ্রাণিত করে। অনেক মেয়েই আমাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়। যে সকল মেয়েরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায় ‘ও বোন’ হচ্ছে তাদের জন্য একটি টেকশই প্ল্যাটফর্ম। মেয়েদের বলবো আপনারা যারা কাজ করতে চান তারা এখানে এসে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন।
মরিয়ম আক্তার সুইটি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সম্পন্ন করেছি। স্বামী একজন প্রকৌশলী। ছোট্ট একটি ছেলে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বন্ধুদের বাইক দিয়ে বাইক চালানো শিখি। পরবর্তীতে নিজের পকেট মানি জমিয়ে পরিবারের সাহায্য ছাড়াই একটি বাইক কিনি। এরপর একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হই। সংগঠনের এক আপুর পরামর্শে ‘ও বোন’-এ যোগ দেই। গত ৮ মাস ধরে ‘ও বোন’-এর সঙ্গে আছি। সংগঠনের আপু যখন ‘ও বোন’ রাইড শেয়ারিংয়ের কথা বলেন তখন আমি ভাবি এও কি সম্ভব। আমি নিজে বাইক চালাই ভালো কথা। আরেকটি মেয়েকে তার গন্তব্যে নিয়ে যাবো কীভাবে সম্ভব এটা। বিষয়টি আমাকে বোঝাতে অনেক কষ্ট হয়েছে তার। ঢাকা শহরে সময় সাশ্রয় এবং পাবলিক বাসের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করলে ‘ও বোন’ হচ্ছে নিরাপদ বাহন। সে হিসেবে বলা যায় ‘ও বোন’ হচ্ছে মেয়েদের জন্য একটি আশীর্বাদ। ‘ও বোন’ এ যোগ দেয়ার আগে আমি ছিলাম ডিপেন্ডেন্ট। আর এখন আমি ইন্ডিপেন্ডেন্ট। বাইকের বিষয়ে প্রথম দিকে পরিবারের সমর্থন ছিল না।
আমার নিজের বাবাই বলতেন মেয়ে মানুষ, দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কোথায় না কোথায় পড়ে থাকবে। এখন এটা শুনতে আমার ভালো লাগে যখন বাবা নিজেই বলে মা চল আমাকে একটু নামিয়ে দিয়ে আয়। সকাল হলেই ছেলে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। বলে ‘মা ওঠো। আজ তোমার কয়টি রাইড হয়েছে। ওঠো বাইক নিয়ে যাবে না।’ আগে আমি পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিতাম। আর এখন আমি গিফট করি। এ জন্য ‘ও বোন’কে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। স্বামী-সন্তান এবং সংসার সব সামলে আমি এই চাকরি করছি। অফিসের কলিগরা সবাই সাপোর্ট করে। স্বামী পরামর্শ দেয় আরো কীভাবে ভালো করা যায়। কাজের সময় ছেলেকে মায়ের কাছে রেখে যাই।
রাইডের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, আমাদের নারী যাত্রীরা খুবই হেল্পফুল। যখন একজন যাত্রী নিয়ে বাইক চালাই তখন আমার সতর্কতার লেভেল আরো বেড়ে যায়। কারণ তখন আমার নিজের সঙ্গে সঙ্গে আরেক জনের দায়িত্ব থাকে আমার কাঁধে। আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা হয়নি। তিনি বলেন, আমার জানা মতে ‘ও বোন’ সেবা বিশ্বের আর কোথাও নেই। শুধুমাত্র আমাদের দেশেই আছে। বাইরের দেশ থেকে সাংবাদিকরা এসে আমাদের ওপর ডকুমেন্টারি বানিয়ে নিয়ে গেছে। তাদের দেশের মেয়েদের উৎসাহী এবং অনুপ্রাণিত করতে। অন্য দেশের মানুষ যদি তাদের দেশের মেয়েদের এ ধরনের কাজে উৎসাহী করতে আমাদের উদাহরণ ব্যবহার করে তাহলে আমরা বাংলাদেশের মেয়েরা কেন পিছিয়ে থাকবো।
মনিরা বলেন, গত বছরের ২৫ই জুলাই ‘ও বোন’-এ যোগ দেই। এই ৫ মাসে ‘ও বোন’-এ আমি নতুন একটি পরিবার খুঁজে পেয়েছি। আমার নিজের বোন যেমন আমার ভালোমন্দ খোঁজখবর রাখে। একইভাবে আমার ইউজার যাত্রীরাও আমার খোঁজখবর রাখে। আমার কখনো মনে হয় না তারা আমার ইউজার। নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে মিশতে আমি খুব মজা পাই। সে ক্ষেত্রে গ্রাহকরা যদি আরো ভালো হয় তাহলে ভালো লাগা আরো বেড়ে যায়। এসব কিছুর জন্য আমি ‘ও বোন’-এর কাছে খুবই কৃতজ্ঞ।
সুরাইয়া আক্তার বলেন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ছি। গত ১ মাস যাবত ‘ও বোন’ এর সঙ্গে আছি। আমাদের টিম লিডার রাবেয়া আপুই আমার চাকরি পেতে সাহায্য করেছিল। তখন আমার কিছুটা ক্রাইসিস যাচ্ছিল। আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেই আমার একটি চাকরি দরকার। তখন রাবেয়া আপু ‘ও বোন’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়। এবং পরবর্তীতে তিনি হাতে ধরে আমাকে বাইক চালানো শেখান। এখন আমি নিউ রাইডার হিসেবে কাজ করছি। ঢাকায় আমি একা থাকি। পরিবারের কাউকে আমার চাকরির বিষয়ে জানাইনি। কারণ তারা জানলে এ বিষয়ে কখনোই সমর্থন করবে না। তবে আশা করছি পরিবার যেদিন বুঝতে পারবে যে শুরু থেকে আমি কতোটা যুদ্ধ করে আসছি তখন নিশ্চয় সমর্থন করবে। মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, পরিবারের সমর্থন না থাকলেও নিজেকে প্রকাশ করাটা খুব জরুরি। নিজের স্বপ্নকে চাপা দেয়া আর নিজেকে মেরে ফেলা একই কথা।
‘ও ভাই’ সলিউশন্স লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার কাজী ওমার ফেরদৌস বলেন, ‘ও ভাই’ বিশ্বাস করে নারী স্বাধীনতায়। আর সেই বিশ্বাস থেকে নারীদের এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যেই ‘ও ভাই’ শুরু করেছে মেয়েদের জন্য সময়োপযোগী ও স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক সেবা ‘ও বোন’। এই সেবার মাধ্যমে উভয়ই (রাইডার এবং গ্রাহক) আধুনিক যুগের সঙ্গে সমানে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে। ‘ও বোন’ নিয়ে ‘ও ভাইয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো নারীদের সড়কপথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, চলাচলের স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।’
No comments