কে জানতো এটাই ছিল রাজীবের শেষ বিদায় by মরিয়ম চম্পা
দিয়া
খানম মিম। সদা প্রাণোচ্ছল এক তরুণী। দিয়া ও রিয়া। যেন একই বৃত্তে দুটি
ফুল। ছোট সময় খেলার ছলে বড় বোন রিয়াকে বলতো বড় হয়ে আমি ব্যারিস্টার হবো।
দিয়ার বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়ে পড়লেখা শেষ করে সরকারি ব্যাংকের একজন ব্যাংকার
হবে। আর বাবাহারা এতিম রাজীবের স্বপ্ন ছিল গ্র্যাজুয়েশন শেষে সেনাবাহিনীতে
যোগ দিয়ে চিরদুখী মায়ের মুুখে একটু হাসি ফোটাবেন। কিন্তু গত রোববার দুপুরে
কালশী ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের
একটি বাস এই দুটি পরিবারের সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। শহীদ
রমিজউদ্দীন কলেজের গেটে কালো ব্যানারে শোকবাণী ঝুলছে তাদের দুই শিক্ষার্থীর
তিরোধানে। মেয়েকে হারিয়ে বাবা মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মা রুকশানা বেগম
বাকশূন্য। বাবা ক্ষণে ক্ষণে আহারে আমার মা, কোথায় গেল আমার মায়ের স্বপ্ন!
বলে আর্তনাদ করতে থাকেন। মা রুকশানা বলেন, আমি নিজ হাতে ধরে আমার মাকে
গাড়িতে তুলে দিয়ে এসেছি। দিয়া গাড়িতে ওঠার পরে আমাকে হাত নাড়িয়ে টাটা বলল।
চোখের সামনে দিয়ে গাড়িটা চলে যায়। কে জানতো যে ওটাই ছিল আমার দিয়ার শেষ
বিদায়ের টাটা। আমি জানলে তো দিয়াকে যেতে দিতাম না।
দিয়ার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তার মা বলেন, ও ছিল আমার ঘরের বাত্তি। সারাক্ষণ সবাইকে আনন্দ দিয়ে মাতিয়ে রাখাই ছিল ওর কাজ। বড় বোন রুবাইয়া খানম রিয়া ও তার বাবা ছিল দিয়ার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। দিয়া কলেজের প্রথম বর্ষে। রিয়া পড়ে দ্বিতীয় বর্ষে। দিয়া শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। রিয়া পড়ে মহাখালীর টিঅ্যান্ডটি কলেজে। রিয়া বড়, দিয়া বছর দেড়েকের ছোট। এক বিছানায় ঘুমায়। এক টেবিলে পড়তে বসে। শত বকাঝকা করলেও দিয়া কখনো মন খারাপ করে থাকতো না। আমার ঘরে অনেক প্রাচুর্য না থাকলেও শান্তির অভাব ছিল না। আমার তিন ছেলে মেয়ের তেমন কোনো চাওয়া পাওয়া ছিল না। ওরা একটা ভালো কলেজে পড়বে এটাই ছিল ওদের চাওয়া। দিয়ার বাবা মো. জাহাঙ্গীর আলম পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার মানুষ। প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি গাড়ির সঙ্গে, ২৭ বছর ধরে বাস চালান। এখন বাস চালান ঢাকা-রাজশাহী-চাঁপাই নবাবগঞ্জ রুটে। মহাখালীর দক্ষিণপাড়ার মসজিদ গলির ভেতরে তার বাসা।
দিয়ার বাবা বলেন, আমার জীবনে আমি কোনো দিন কাউকে মারিনি। হাসপাতাল, বাজার, স্কুলের সামনে সাবধানে গাড়ি চালাই। হর্ন বাজাই না। অথচ আমার মাকে সেই গাড়ি দিয়েই চাপা দিয়ে নির্মমভাবে মারা হলো। আমার তো বাড়ি গাড়ি করার স্বপ্ন ছিল না। দুই মেয়ে সরকারি চাকরি করবে, ছেলেটাকে মানুষ করবো। ওরা প্রতিষ্ঠিত হবে- এটাই ছিল আমার চাওয়া। আমি মোটর শ্রমিক ইউনিয়নে নির্বাচন করেছিলাম, নির্বাচিতও হয়েছিলাম। অ্যাক্সিডেন্ট তো হতেই পারে। কিন্তু এটা তো অ্যাক্সিডেন্ট না। এটা হলো ইচ্ছাকৃত খুন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছিলেন। তাকে বলেছি- আমি আর কিছু চাই না আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। পাশাপাশি আমার বড় মেয়েটাকে একটা সরকারি চাকরির কথা বলেছি। আমার ছোট ছেলে রিয়াজুল ইসলাম আরাফাত মন্ত্রীকে বলেছে, রজিমউদ্দীন কলেজের সামনে রাস্তা পারাপারের জন্য একটি ওভারব্রিজ তৈরি করে দিতে।
এদিকে নোয়াখালীর চৌমুহনী-হাতিয়ার সন্তান রাজীবের খালাতো ভাই মেহরাজ উদ্দিন বলেন, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবদুল করিম রাজীবকে তার নানার পাশে সমাহিত করা হয়েছে। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে রাজীব ছিল তৃতীয়। বাবা মো. নূর ইসলাম ছিলেন পেশায় দিনমজুর। প্রায় ১৫ বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর মা মহিমা খাতুন ৪ ছেলে মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই থাকতেন। পরবর্তীতে সবার সহযোগিতায় বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দেন। ছোট ছেলে আল-আমিনকে তার মামা ও বড় ছেলে রাজীবকে তার বড় খালাতো ভাই ঢাকায় এনে স্কুলে ভর্তি করে দেন। আল-আমীন আসকোনা আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। রাজীবকে তার খালাতো ভাই-ভাবী মোটেও তাদের ছোট ছেলে মিয়াদের থেকে আলাদা কিছু ভাবতেন না। মিয়াদও রাজীবকে পাপা বলে ডাকতেন। দুর্ঘটনার আগের দিন রাতে রাজীব তার খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে অনেক রাত করে খেলা দেখার পর মেহরাজ তাকে ঘুমাতে যেতে বলেন। এটাই ছিল রাজীবের সঙ্গে তার শেষ কথা। সকালে ভাবীর হাতে তৈরি নাস্তা খেয়ে কলেজে যায়। কে জানতো এটাই তার শেষ বিদায়।
দিয়ার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তার মা বলেন, ও ছিল আমার ঘরের বাত্তি। সারাক্ষণ সবাইকে আনন্দ দিয়ে মাতিয়ে রাখাই ছিল ওর কাজ। বড় বোন রুবাইয়া খানম রিয়া ও তার বাবা ছিল দিয়ার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। দিয়া কলেজের প্রথম বর্ষে। রিয়া পড়ে দ্বিতীয় বর্ষে। দিয়া শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। রিয়া পড়ে মহাখালীর টিঅ্যান্ডটি কলেজে। রিয়া বড়, দিয়া বছর দেড়েকের ছোট। এক বিছানায় ঘুমায়। এক টেবিলে পড়তে বসে। শত বকাঝকা করলেও দিয়া কখনো মন খারাপ করে থাকতো না। আমার ঘরে অনেক প্রাচুর্য না থাকলেও শান্তির অভাব ছিল না। আমার তিন ছেলে মেয়ের তেমন কোনো চাওয়া পাওয়া ছিল না। ওরা একটা ভালো কলেজে পড়বে এটাই ছিল ওদের চাওয়া। দিয়ার বাবা মো. জাহাঙ্গীর আলম পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার মানুষ। প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি গাড়ির সঙ্গে, ২৭ বছর ধরে বাস চালান। এখন বাস চালান ঢাকা-রাজশাহী-চাঁপাই নবাবগঞ্জ রুটে। মহাখালীর দক্ষিণপাড়ার মসজিদ গলির ভেতরে তার বাসা।
দিয়ার বাবা বলেন, আমার জীবনে আমি কোনো দিন কাউকে মারিনি। হাসপাতাল, বাজার, স্কুলের সামনে সাবধানে গাড়ি চালাই। হর্ন বাজাই না। অথচ আমার মাকে সেই গাড়ি দিয়েই চাপা দিয়ে নির্মমভাবে মারা হলো। আমার তো বাড়ি গাড়ি করার স্বপ্ন ছিল না। দুই মেয়ে সরকারি চাকরি করবে, ছেলেটাকে মানুষ করবো। ওরা প্রতিষ্ঠিত হবে- এটাই ছিল আমার চাওয়া। আমি মোটর শ্রমিক ইউনিয়নে নির্বাচন করেছিলাম, নির্বাচিতও হয়েছিলাম। অ্যাক্সিডেন্ট তো হতেই পারে। কিন্তু এটা তো অ্যাক্সিডেন্ট না। এটা হলো ইচ্ছাকৃত খুন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছিলেন। তাকে বলেছি- আমি আর কিছু চাই না আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। পাশাপাশি আমার বড় মেয়েটাকে একটা সরকারি চাকরির কথা বলেছি। আমার ছোট ছেলে রিয়াজুল ইসলাম আরাফাত মন্ত্রীকে বলেছে, রজিমউদ্দীন কলেজের সামনে রাস্তা পারাপারের জন্য একটি ওভারব্রিজ তৈরি করে দিতে।
এদিকে নোয়াখালীর চৌমুহনী-হাতিয়ার সন্তান রাজীবের খালাতো ভাই মেহরাজ উদ্দিন বলেন, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবদুল করিম রাজীবকে তার নানার পাশে সমাহিত করা হয়েছে। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে রাজীব ছিল তৃতীয়। বাবা মো. নূর ইসলাম ছিলেন পেশায় দিনমজুর। প্রায় ১৫ বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর মা মহিমা খাতুন ৪ ছেলে মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই থাকতেন। পরবর্তীতে সবার সহযোগিতায় বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দেন। ছোট ছেলে আল-আমিনকে তার মামা ও বড় ছেলে রাজীবকে তার বড় খালাতো ভাই ঢাকায় এনে স্কুলে ভর্তি করে দেন। আল-আমীন আসকোনা আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। রাজীবকে তার খালাতো ভাই-ভাবী মোটেও তাদের ছোট ছেলে মিয়াদের থেকে আলাদা কিছু ভাবতেন না। মিয়াদও রাজীবকে পাপা বলে ডাকতেন। দুর্ঘটনার আগের দিন রাতে রাজীব তার খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে অনেক রাত করে খেলা দেখার পর মেহরাজ তাকে ঘুমাতে যেতে বলেন। এটাই ছিল রাজীবের সঙ্গে তার শেষ কথা। সকালে ভাবীর হাতে তৈরি নাস্তা খেয়ে কলেজে যায়। কে জানতো এটাই তার শেষ বিদায়।
No comments