যেভাবে ভোট স্থগিত হয় দুই কেন্দ্রে: সব হিসাবই আরিফের পক্ষে by রোকনুজ্জামান পিয়াস
বিজয়ী
হতে কোনো হিসাবই আর বাধা নয় বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর। সোমবার
নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা তাকে বিজয়ী ঘোষণা না করলেও
সকল হিসাব-নিকাশই এখন তার পক্ষে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অবস্থা থেকে আরিফের
পিছিয়ে পড়ার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। বিজয়ের আনুষ্ঠানিকতা বাকি মাত্র। যে
দুটি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিতের কারণে চূড়ান্ত বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি,
সেখানেও রয়েছে আরিফের আধিপত্য। সূত্র বলছে, কেন্দ্র দুটির প্রায় ৪০ ভাগ
ভোট কাস্ট হওয়ার পর নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ওই সময়ও কেন্দ্রে ছিল ভোটারদের
দীর্ঘ লাইন। বিএনপি বলছে, এই ফলাফলের পেছনে সিলেটের মানুষের আওয়ামী লীগ
বিরোধী মনোভাব কাজ করেছে। একইসঙ্গে ভোট কেন্দ্রে এজেন্টদের দৃঢ় অবস্থান
অনেকটা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। তারা বলছে, ১৩৪ কেন্দ্রের মধ্যে ১৩টি
কেন্দ্রে তাদের এজেন্ট ছিল না। নির্বাচনের সার্বিক ফলাফল বিবেচনায় এনে
জামায়াতের ব্যাপারেও কেন্দ্রে একটি মেসেজ দিতে চায় দলটি। এদিকে নির্বাচনের
রিটার্নিং কর্মকর্তা আলীমুজ্জামান বলছেন, স্থগিত দুই কেন্দ্রের ব্যাপারে
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন। আগামী
সপ্তাহেই পুনঃনির্বাচন সম্পন্ন হতে পারে এমনটাও আভাস দেন রিটার্নিং
কর্মকর্তা। সব ঠিক থাকলে, আবারও নগরপিতার আসনে বসতে বেশি দিন অপেক্ষা করতে
হবে না আরিফুল হকের।
সিলেট সিটি করপোরেশনে ১৩৪টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন এবং নারী ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। ফল ঘোষিত হয়েছে ১৩২টি কেন্দ্রের। এতে দেখা গেছে, ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫৬ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। ৭ হাজার ৩৬৭টি ভোট বাতিল হয়েছে। বাকি দুই কেন্দ্র ২৪নং ওয়ার্ডের ১১৬নং কেন্দ্র বোরহান উদ্দিন (রহ.) মাদরাসা ও ২৭নং ওয়ার্ডের ১৩৪নং কেন্দ্রের হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট স্থগিত করা হয়। ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে জোরপূর্বক জালভোট দেয়ার অভিযোগে কেন্দ্র দুটির ভোট স্থগিত করা হয়। প্রাপ্ত ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ওই দুই কেন্দ্র ছাড়াই ভোট কাস্ট হয়েছে প্রায় ৬২ শতাংশ। গতবার অর্থাৎ ২০১৩ সালের নির্বাচনেও কাস্ট হওয়া ভোটের হার ছিল ৬২ শতাংশ।
১৩২ কেন্দ্রে আরিফুল হক চৌধুরীর ধানের শীষ পেয়েছে ৯০ হাজার ৪৯৩ ভোট। অন্যদিকে নৌকা প্রতীকে কামরান পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট। প্রধান এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটের ব্যবধান ৪ হাজার ৬২৬। ভোটের এই ব্যবধান এবং স্থগিত কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা এক জটিল সমীকরণ সৃষ্টি করেছে। জটিল এই সমীকরণে আরিফুল হক চৌধুরীকে হারিয়ে সিলেটের মেয়র হতে পারেন বদর উদ্দীন কামরানও। তবে সেটি একদিকে যেমন জটিল, তেমন অসম্ভবও বটে। ভোটের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, কামরানকে জয়ী হতে হলে স্থগিত দুটি কেন্দ্রের সব ভোটার ভোট দিতে হবে এবং ১৬১ ভোট বাদে সব ভোট পেতে হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে। দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধানের চেয়ে স্থগিত কেন্দ্রের ভোট সংখ্যা কম হলে সোমবারই চূড়ান্ত বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হতো আরিফুল হক চৌধুরীকে। কিন্তু সিলেটে দুই স্থগিত কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ৪৭৮৭টি। অর্থাৎ দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধানের চেয়ে ১৬১টি ভোট বেশি। এ কারণেই বিধি মোতাবেক আরিফুল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা যায়নি।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী গাজী সৈয়দ বোরহান উদ্দিন (রহ.) মাদরাসা কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ২২১ জন এবং হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৫৬৬ জন। এই দুই কেন্দ্রে আবারো ভোট দিতে হবে ভোটারদের। তাদের ভোটেই চূড়ান্ত হবেন নগরপিতা। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৩২ কেন্দ্রের মতো এই দুই কেন্দ্রে ৬২ শতাংশ ভোট কাস্ট হলে আরিফই হবেন চূড়ান্ত বিজয়ী। এমনকি এই ৬২ শতাংশের সব ভোট যদি কামরান পান তারপরও। অন্যদিকে শতভাগ ভোট কাস্ট হলে সেখানে মাত্র ৮১ ভোট পেলেই জয় নিশ্চিত ৪ হাজার ৬২৬ ভোটে এগিয়ে থাকা আরিফের। আর শতভাগ কাস্ট হওয়ার পর আরিফ যদি তার কম পায় তবে কামরানই পরবেন বিজয়ের মালা।
তবে ওই দুই কেন্দ্রের ভোটারদের সমর্থনের বাস্তবতায় সে সম্ভাবনা একেবারেই নেই। ওই এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১১৬নং কেন্দ্রে আরিফের আধিপত্য অনেক আগে থেকেই। সেখানে অন্য কোনো প্রার্থী এগিয়ে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। একই অবস্থা ১৩৪নং কেন্দ্রেও। এখানেও বরাবরই আরিফের সমর্থন বেশি। এ কারণেই ওই কেন্দ্রে আরিফের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ভোট ডাকাতি করতে যায়, এ অভিযোগ সেখানকার ভোটারদের।
নির্বাচনের দিনের ঘটনা বর্ণনা করে বোরহান উদ্দিন (রহ.) মাদরাসার ১১৬নং কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার ইমন চন্দ্র দাস মানবজমিনকে জানান, সকাল থেকেই তার কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ চলছিল। সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক বুথের বাইরে হট্টগোল সৃষ্টি করে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে না গেলেও বোঝানোর চেষ্টা করে। এ সময় তাদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে তারা বুথের মধ্যে গিয়ে জোরপূর্বক ব্যালট ছিনিয়ে নেয়। বুথের এজেন্টরা তাৎক্ষণিকভাবে জানালে কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে দুইটার দিকে কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ওই সময় কত ভোট কাস্ট হয়েছিল তিনি জানান, ৩৫-৪০ শতাংশ মতো ভোট কাস্ট হয়েছিল। এ ছাড়া ভোটারের লম্বা লাইন ছিল। এরা কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এজেন্টরা তাকে জানিয়েছেন নৌকার পক্ষে সিল মারছিল তারা।
স্থগিত অপর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সারোয়ার জাহান মাহমুদ মানবজমিনকে বলেন, ১২টার কিছু সময় আগে কেন্দ্রের ভেতর আগে থেকেই অবস্থান করা দুষ্কৃতকারীরা হঠাৎ বুথে প্রবেশ করে। তারা ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়। পরে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে পরামর্শ করে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। প্রিজাইডিং অফিসার বলেন, হট্টগোল হওয়ার পূর্বপর্যন্ত প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছিল।
বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর ব্যাপারে দলটির সিলেট মহানগর সহসভাপতি সালেহ আহমেদ খসরু বলেন, ভোট ডাকাতি সত্ত্বেও বিএনপির জয়ের পেছনে সিলেটের মানুষের আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করার কারণে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি। আপামর ভোটার নীরব ভোট বিপ্লব ঘটিয়েছে। তিনি এই জয়ের পেছনে এজেন্টদের ভূমিকাকে প্রাধান্য দেন। তিনি বলেন, অনেক কেন্দ্রে মারধর করে তাদের এজেন্ট বের করে দেয়। তারপর আবারও তারা বুথে গিয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বলেন, ভোট ডাকাতি না হলে, বিএনপির সঙ্গে কোনো প্রতিযোগিতায় আসতো না আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, এই নির্বাচন প্রমাণ করে, সিলেটের বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকরা দেশের অন্য যেকোনো জায়গার তুলনায় আলাদা। জামায়াতের ব্যাপারে তিনি বলেন, তারা নিজেদেরকে অনেক বেশি প্রভাব সৃষ্টিকারী মনে করেছিল। এই নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের জনসমর্থন দেখা গেছে। সিলেটের ভোটের মাঠের এই চিত্র জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে জামায়াতের সঙ্গে গড়ে ওঠা জোটে প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত নেবেন।
উল্লেখ্য, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি কামরানের সঙ্গে এটি ছিল আরিফুল হকের দ্বিতীয় ভোটযুদ্ধ। ২০১৩ সালে প্রথম লড়াইয়ে কামরানকে ৩৫ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন তিনি।
সিলেট সিটি করপোরেশনে ১৩৪টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন এবং নারী ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। ফল ঘোষিত হয়েছে ১৩২টি কেন্দ্রের। এতে দেখা গেছে, ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫৬ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। ৭ হাজার ৩৬৭টি ভোট বাতিল হয়েছে। বাকি দুই কেন্দ্র ২৪নং ওয়ার্ডের ১১৬নং কেন্দ্র বোরহান উদ্দিন (রহ.) মাদরাসা ও ২৭নং ওয়ার্ডের ১৩৪নং কেন্দ্রের হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট স্থগিত করা হয়। ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে জোরপূর্বক জালভোট দেয়ার অভিযোগে কেন্দ্র দুটির ভোট স্থগিত করা হয়। প্রাপ্ত ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ওই দুই কেন্দ্র ছাড়াই ভোট কাস্ট হয়েছে প্রায় ৬২ শতাংশ। গতবার অর্থাৎ ২০১৩ সালের নির্বাচনেও কাস্ট হওয়া ভোটের হার ছিল ৬২ শতাংশ।
১৩২ কেন্দ্রে আরিফুল হক চৌধুরীর ধানের শীষ পেয়েছে ৯০ হাজার ৪৯৩ ভোট। অন্যদিকে নৌকা প্রতীকে কামরান পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট। প্রধান এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটের ব্যবধান ৪ হাজার ৬২৬। ভোটের এই ব্যবধান এবং স্থগিত কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা এক জটিল সমীকরণ সৃষ্টি করেছে। জটিল এই সমীকরণে আরিফুল হক চৌধুরীকে হারিয়ে সিলেটের মেয়র হতে পারেন বদর উদ্দীন কামরানও। তবে সেটি একদিকে যেমন জটিল, তেমন অসম্ভবও বটে। ভোটের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, কামরানকে জয়ী হতে হলে স্থগিত দুটি কেন্দ্রের সব ভোটার ভোট দিতে হবে এবং ১৬১ ভোট বাদে সব ভোট পেতে হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে। দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধানের চেয়ে স্থগিত কেন্দ্রের ভোট সংখ্যা কম হলে সোমবারই চূড়ান্ত বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হতো আরিফুল হক চৌধুরীকে। কিন্তু সিলেটে দুই স্থগিত কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ৪৭৮৭টি। অর্থাৎ দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধানের চেয়ে ১৬১টি ভোট বেশি। এ কারণেই বিধি মোতাবেক আরিফুল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা যায়নি।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী গাজী সৈয়দ বোরহান উদ্দিন (রহ.) মাদরাসা কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ২২১ জন এবং হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৫৬৬ জন। এই দুই কেন্দ্রে আবারো ভোট দিতে হবে ভোটারদের। তাদের ভোটেই চূড়ান্ত হবেন নগরপিতা। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৩২ কেন্দ্রের মতো এই দুই কেন্দ্রে ৬২ শতাংশ ভোট কাস্ট হলে আরিফই হবেন চূড়ান্ত বিজয়ী। এমনকি এই ৬২ শতাংশের সব ভোট যদি কামরান পান তারপরও। অন্যদিকে শতভাগ ভোট কাস্ট হলে সেখানে মাত্র ৮১ ভোট পেলেই জয় নিশ্চিত ৪ হাজার ৬২৬ ভোটে এগিয়ে থাকা আরিফের। আর শতভাগ কাস্ট হওয়ার পর আরিফ যদি তার কম পায় তবে কামরানই পরবেন বিজয়ের মালা।
তবে ওই দুই কেন্দ্রের ভোটারদের সমর্থনের বাস্তবতায় সে সম্ভাবনা একেবারেই নেই। ওই এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১১৬নং কেন্দ্রে আরিফের আধিপত্য অনেক আগে থেকেই। সেখানে অন্য কোনো প্রার্থী এগিয়ে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। একই অবস্থা ১৩৪নং কেন্দ্রেও। এখানেও বরাবরই আরিফের সমর্থন বেশি। এ কারণেই ওই কেন্দ্রে আরিফের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ভোট ডাকাতি করতে যায়, এ অভিযোগ সেখানকার ভোটারদের।
নির্বাচনের দিনের ঘটনা বর্ণনা করে বোরহান উদ্দিন (রহ.) মাদরাসার ১১৬নং কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার ইমন চন্দ্র দাস মানবজমিনকে জানান, সকাল থেকেই তার কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ চলছিল। সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক বুথের বাইরে হট্টগোল সৃষ্টি করে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে না গেলেও বোঝানোর চেষ্টা করে। এ সময় তাদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে তারা বুথের মধ্যে গিয়ে জোরপূর্বক ব্যালট ছিনিয়ে নেয়। বুথের এজেন্টরা তাৎক্ষণিকভাবে জানালে কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে দুইটার দিকে কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ওই সময় কত ভোট কাস্ট হয়েছিল তিনি জানান, ৩৫-৪০ শতাংশ মতো ভোট কাস্ট হয়েছিল। এ ছাড়া ভোটারের লম্বা লাইন ছিল। এরা কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এজেন্টরা তাকে জানিয়েছেন নৌকার পক্ষে সিল মারছিল তারা।
স্থগিত অপর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সারোয়ার জাহান মাহমুদ মানবজমিনকে বলেন, ১২টার কিছু সময় আগে কেন্দ্রের ভেতর আগে থেকেই অবস্থান করা দুষ্কৃতকারীরা হঠাৎ বুথে প্রবেশ করে। তারা ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়। পরে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে পরামর্শ করে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। প্রিজাইডিং অফিসার বলেন, হট্টগোল হওয়ার পূর্বপর্যন্ত প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছিল।
বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর ব্যাপারে দলটির সিলেট মহানগর সহসভাপতি সালেহ আহমেদ খসরু বলেন, ভোট ডাকাতি সত্ত্বেও বিএনপির জয়ের পেছনে সিলেটের মানুষের আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করার কারণে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি। আপামর ভোটার নীরব ভোট বিপ্লব ঘটিয়েছে। তিনি এই জয়ের পেছনে এজেন্টদের ভূমিকাকে প্রাধান্য দেন। তিনি বলেন, অনেক কেন্দ্রে মারধর করে তাদের এজেন্ট বের করে দেয়। তারপর আবারও তারা বুথে গিয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বলেন, ভোট ডাকাতি না হলে, বিএনপির সঙ্গে কোনো প্রতিযোগিতায় আসতো না আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, এই নির্বাচন প্রমাণ করে, সিলেটের বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকরা দেশের অন্য যেকোনো জায়গার তুলনায় আলাদা। জামায়াতের ব্যাপারে তিনি বলেন, তারা নিজেদেরকে অনেক বেশি প্রভাব সৃষ্টিকারী মনে করেছিল। এই নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের জনসমর্থন দেখা গেছে। সিলেটের ভোটের মাঠের এই চিত্র জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে জামায়াতের সঙ্গে গড়ে ওঠা জোটে প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত নেবেন।
উল্লেখ্য, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি কামরানের সঙ্গে এটি ছিল আরিফুল হকের দ্বিতীয় ভোটযুদ্ধ। ২০১৩ সালে প্রথম লড়াইয়ে কামরানকে ৩৫ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন তিনি।
No comments