হিজড়া সেজে বেপরোয়া চাঁদাবাজি by শুভ্র দেব
ঈদকে
সামনে রেখে বেপরোয়া চাঁদাবজিতে মেতে উঠেছে হিজড়ারা। বাসা বাড়ি থেকে শুরু
করে রাস্তাঘাট, পার্ক, খেলার মাঠ, বাস, ট্রেন, লঞ্চ সর্বত্রই হিজড়াদের
উৎপাত। তাদের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে রীতিমত অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছেন মানুষ। নিয়মিত
চাঁদাবাজির পাশাপাশি শুরু হয়েছে ঈদকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি। চাঁদার হার করা
হয়েছে কয়েকগুণ বেশি। আগে যেখানে ১০/২০ টাকা দিয়ে পার পাওয়া যেত সেখানে এখন
৫০/১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। টাকা না দিলে অনেকটা হেনস্থা করা শুরু করে।
মান সম্মানের ভয়ে অনেকেই টাকা দিতে বাধ্য হন। তারপরও যারা টাকা দেন না
তাদের সঙ্গে করা হয় অসভ্য আচরণ। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে হিজড়ারা
এমন আচরণ করে চাঁদা তুলে। কিন্তু তারা শুধুমাত্র দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
এর চেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো আসল হিজড়াদের ভিড়ে নকল হিজড়াদের উৎপাত বেড়েছে
আশংকাজনকভাবে। আসল হিজড়াদের চেয়ে বেপরোয়া আচরণ করে নকল হিজড়ারা।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা। রাজধানীর বিজয়সরণী মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে আছে শতশত যানবাহন। সেখানে হঠাৎ করেই একদল হিজড়ার আগমন। দল বেঁধে একেক গাড়িতে যাচ্ছে আর টাকা নিয়ে আসছে। এভাবে অন্তত ২০/৩০টি যানবাহন থেকে তারা টাকা তুলে। বাগড়া বাঁধে এক প্রাইভেট কারে টাকা চাইতে গিয়ে। বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করতে গিয়ে ধরা খেয়ে যান ওই হিজড়ার দল। প্রাইভেট কারে বসা যাত্রীর কাছে হিজড়ারা বার বার টাকা চাইছিলেন। কিন্তু ওই যাত্রী টাকা না দিয়ে বলছিলেন। তোমরা নকল হিজড়া। তোমাদের দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তোমাদের কোন টাকা দেব না। এরকম কথা শুনে ওই হিজড়ারা কারের বিভিন্ন অংশে লাথি, ঘুষি দেয়া শুরু করে দেয়। ঠিক তখনই সিগন্যাল ছেড়ে দিলে প্রাইভেট কারের যাত্রী রেহাই পায়। কথা হয় হিজড়াদের ওই দলের সদস্য নবাবীর সঙ্গে। নবাবী বলে আমাদের গুরু সব বলতে পারে। আমরা কিছুই জানি না। আমাদেরকে শুধু বলা হয়েছে ঈদ সামনে। এখন সবার পকেটেই টাকা আছে। বেশি বেশি করে টাকা তুলবা।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খামার বাড়ি সিগন্যালে গিয়ে দেখা যায় একই দৃশ্য। সেখানেও টাকা তুলছে হিজড়ারা। মিরপুর-মোহাম্মদপুর থেকে আসা একাধিক বাসে উঠে যাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে হেনস্থা করছিল। একেক করে সব যাত্রীদের কাছ থেকে ঈদ বকশিশ নামে চাঁদা তুলছিল। তবে তাদের হেনস্থায় স্বাধীন বাসের মিথিলা নামের এক যাত্রী রীতিমত কান্নাকাটি শুরু করে দেন। কারণ মিথিলা হিজড়াদের টাকা না দিয়ে বাসে এভাবে চাঁদাবাজির ছবি তুলে ফেসবুকে দিতে চায়। এজন্য সে মোবাইল দিয়ে ছবি উঠানোর সময় টান দিয়ে মোবাইল নিয়ে যায় হিজড়ারা। পরে তুলি-শায়লা নামের দুই হিজড়া মিথিলার কোলে বসে পড়েন। ভয়ে কান্না শুরু করে মিথিলা। এসময় অন্য যাত্রীরা এগিয়ে এলে বিষয়টি মিটমাট হয়।
শুধু রাজধানী ঢাকার এই দুই স্পট নয়। পুরো রাজধানী জুড়েই চলছে হিজড়াদের এমন বেপরোয়া চাঁদাবাজি। এর বাইরে লঞ্চ, ট্রেন, দূর পাল্লার বাসসহ দেশের সর্বত্রই হিজড়ারা বেপরোয়া। আর পাড়া মহল্লার হিজড়ারা কোন অনুষ্ঠানের খবর ও কারো ঘরে সন্তান জন্ম নেয়ার খবর পেলে আর কোন কথাই নাই। দল বেঁধে গিয়ে বসে থাকে তারা। তাদের দাবিকৃত টাকা না দেয়া পর্যন্ত এক পা নড়বে না। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় কাজে ঘরের বাইরে যারা চলাফেরা করেন তাদের অভিজ্ঞতা অন্যরকম। ফার্মগেটে নিউ ভিশন বাসের যাত্রী আলি হোসেন বলেন, কাজের প্রয়োজনে প্রতিদিনই এই সড়ক দিয়ে চলতে হয়। কিন্তু প্রতিদিন আসা যাওয়ার সময় হিজড়াদের টাকা দিতে হয়। মাস শেষে হিসাব করলে অনেক টাকা হয়ে যায়। কখনও কখনও আবার মিরপুর থেকে মতিঝিল যাওয়ার পথে ২/৩টি স্পটে টাকা টাকা দিয়ে পার পেতে হয়। বাংলামোটরে সাফিয়া হোসেন নামের একযাত্রী বলেন, আমরা যারা ছোট বাবু নিয়ে রাস্তায় চলাফেরা করি তাদের জন্য হিজড়ারা অনেক আতঙ্ক। অনেক সময় কোল থেকে বাবুদের নিয়ে চলে যায়। তখন আর কিছু করার থাকে না। দৈনিক বাংলা মোড়ে রাহাত নামে এক যাত্রী বলেন, কিছু করার নাই। হিজড়ারা যে ধরনের আচরণ করে তার চেয়ে টাকা দিয়ে দূরে রাখাই ভালো। হেনস্থার শিকার হয়ে অনেকেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। গতকাল দুপুরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব তার ফেসবুকে লিখেছেন, অফিসের কাজে সহকর্মীকে নিয়ে বের হয়েছি। চলছে রমজান মাস। প্রচণ্ড রোদ-গরম। দুজনেই বেশ ক্লান্ত। কাজ শেষে ফেরার পালা। একটা রিকশায় উঠলাম। রিকশা চলতে শুরু করলো। মাঝপথে এসে পড়লাম এক বিড়ম্বনায়। তার নাম হিজড়া বিড়ম্বনা। জ্যামে বসে আছি। হঠাৎ আবির্ভাব হলো এক হিজড়ার। পোশাকে আভিজাত্য, মাথায় লাগানো চুলের বাহার, ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিকের প্রলেপ এবং মুখে ময়দা সদৃশ ম্যাকাপ। দেখে যে কেউ আতংকিত না হয়ে পারবে না। তো হঠাৎ হিজড়াটা এসে সহকর্মী সাইদকে অ্যাটাক করলো। বললো, ভাইয়া টাকা দাও। সাইদ ও আমি হাসতে শুরু করলাম। সাইদ বললো, আমার কাছে টাকা নেই, অন্যদিন দিব। হিজড়া: এই ভাইয়া দাওনা। সাইদ: চাকরি করি আগে তারপর। হিজড়া: তুমি চাকরি করো না নাহ। আমারে মিথ্যা বলছ। সাইদ: মিথ্যা বলতে যাব ক্যান। হিজড়া: যাই বলো টাকা দিতে হবে। না দিলে ...(প্রকাশ অযোগ্য) ধরে টানবো। সাইদ: নেই টাকা নেই। হিজড়া: এদিকে আসবা যাবা টাকা দিবা না এটা হতে পারে না। আমরা হিজড়ারা তোমাদের টাকায় চলি। দাও টাকা দাও। অল্প সময়ের মধ্যেই হিজড়া মহাশয় হিট পয়েন্টে চলে গেলো। বললো, টাকা না দিলে তোকে আজ যেতে দেব না। রিকশাওয়ালা মামা বললো, স্যার পাঁচ টাকা দেন। তা নাহলে বিপদে পড়বেন। ঘটনা তাই ঘটলো। সিগন্যাল ছেড়ে দেয়ার কারণে সব রিকশা চলতে শুরু করলো। কিন্তু আমাদের রিকশা সে আটকিয়ে রেখেছে। অবশেষে সাইদের হয়ে রিকশাওয়ালা টাকা দিলো। যা পরে ভাড়া সহ মিটিয়ে দিয়েছি। দেশের আনাচে কানাচে হিজড়ারা বড় ধরনের একটা আতংক। তারা সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলে টাকা আদায় করে। না দিলে, টাই ধরে টানে, দাড়ি ধরে টানে, শার্টে ময়লা লাগিয়ে দেয়, শরীরের কাপড় সরিয়ে ফেলে, অনেক সময় উলঙ্গ হয়ে যায়। খারাপ ভাষায় কথা বলাটা তাদের নিত্য নৈমিত্তিক কাজ। তাদের ভাষা এতটায় খারাপ যা বলতেও রুচিতে বাধে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, শুধুমাত্র রাজধানীতে হিজড়াদের ৬৫ জন গুরু রয়েছে। যাদের রয়েছে আলাদা আলাদা হিজড়া সদস্য। এলাকাভিত্তিক এই হিজড়ারা চাঁদাবাজি করে থাকে। চাঁদাবাজি করে অনেক গুরু কোটিপতি হয়ে গেছে। এরবাইরে রয়েছে এদের মধ্যে আরো ৪০জন গুরু। যারা স্বাভাবিক মানুষকে হিজড়া তৈরি করে রাস্তায় নামায়। দেখতে হুবহু আসল হিজড়া। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদেরকে হিজড়া তৈরি করা হয়েছে। তবে তৈরি করা এসব হিজড়াদের রেটও বেশি। তারা মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণও বেশি করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বেপরোয়া ও নকল হিজড়া তৈরির পেছনে কাজ করছেন, দয়াগঞ্জের মুচকি আনরি ও কেচকি আনরি। উত্তরার সারিকা, কচি, পিংকি, রাহেলা, নাজমা অঞ্জনা, কাকলি, আল্হাদি, সোনিয়া। মগবাজারে স্বপ্না, সজিব। মানিকনগরে আবুল, বাসাবোর অরুণা। শাখারিবাজারে কাল্লু, মেজবাহ, মায়া। লালবাগের কালা, হাকিম, রিয়া। রায়েরবাজারে সুমী, পিকুলি, মিরপুরে মাস্টার রনি, আনরি, শাহজাদি, রাখি। মোহাম্মদপুরে হামিদ। ফকিরাপুলে সুইটি। শাহজানপুরে জয়নাল। উত্তর বাড্ডার পলি। মেরুল বাড্ডার শামীমা। কুড়িলের পিংকি, রামপুরার রনি হাজি অন্যতম। এদের গ্রুপের অনেকেই দিনে হিজড়া, রাতে পতিতা ও ছিনতাই করে বেড়ায়। তাদের বেপরোয়া কাজে অনেক সময় আসল হিজড়ারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে।
সূত্র বলছে, রমজান মাস শুরু হলেই অন্যান্য সময়ের তুলনায় হিজড়ারা একটু বেপরোয়া হয়ে পড়ে। ইদানীং অনেক হিজড়ারা জড়িয়ে গেছে মাদক ব্যবসায়। মাদক ব্যবসা করে রাতারাতি কোটি টাকা মালিক হচ্ছে। এছাড়াও আরো অনেক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। অনেক সময় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যায়। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে খুনখারাবির মত ঘটনা ঘটছে অহরহ।
হিজড়াদের স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে কাজ করে বন্ধু সোস্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ফসিউল আহসান মানবজমিনকে বলেন, আমরা মূলত আসল হিজড়াদের স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে কাজ করি। যখন তারা আমাদের আওতাধীন থাকে তখন এ বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়। এর বাইরে আমার অনেক সময় নকল হিজড়াদের কথা শুনি। তারা রাস্তায়ঘাটে মানুষের সঙ্গে অনেক অশোভন আচরণ করে। যা মোটেও আমাদের জন্য কাম্য নয়। তিনি বলেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি দ্রুত লাভবান হওয়ার জন্য স্বাভাবিক মানুষকে হিজড়া সাজিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দেয়। কারণ তাদের ধারণা হিজড়াদের প্রতি মানুষের অন্যরকম এক মানসিকতা কাজ করে। টাকা চাইতে এলে টাকা দিয়ে যত তাড়াতাড়ি বিদায় করা যায় সেটাই ভাবে। এছাড়া হিজড়াদের ক্ষেত্রে আইনের অনেক ফাঁকফোকড় রয়েছে। তাই তারা অপরাধ করতে ভয় পায় না। ফসিউল বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই নকল হিজড়াদের রুখতে হবে এটা এনজিও সংস্থার কাজ নয়।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা। রাজধানীর বিজয়সরণী মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে আছে শতশত যানবাহন। সেখানে হঠাৎ করেই একদল হিজড়ার আগমন। দল বেঁধে একেক গাড়িতে যাচ্ছে আর টাকা নিয়ে আসছে। এভাবে অন্তত ২০/৩০টি যানবাহন থেকে তারা টাকা তুলে। বাগড়া বাঁধে এক প্রাইভেট কারে টাকা চাইতে গিয়ে। বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করতে গিয়ে ধরা খেয়ে যান ওই হিজড়ার দল। প্রাইভেট কারে বসা যাত্রীর কাছে হিজড়ারা বার বার টাকা চাইছিলেন। কিন্তু ওই যাত্রী টাকা না দিয়ে বলছিলেন। তোমরা নকল হিজড়া। তোমাদের দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তোমাদের কোন টাকা দেব না। এরকম কথা শুনে ওই হিজড়ারা কারের বিভিন্ন অংশে লাথি, ঘুষি দেয়া শুরু করে দেয়। ঠিক তখনই সিগন্যাল ছেড়ে দিলে প্রাইভেট কারের যাত্রী রেহাই পায়। কথা হয় হিজড়াদের ওই দলের সদস্য নবাবীর সঙ্গে। নবাবী বলে আমাদের গুরু সব বলতে পারে। আমরা কিছুই জানি না। আমাদেরকে শুধু বলা হয়েছে ঈদ সামনে। এখন সবার পকেটেই টাকা আছে। বেশি বেশি করে টাকা তুলবা।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খামার বাড়ি সিগন্যালে গিয়ে দেখা যায় একই দৃশ্য। সেখানেও টাকা তুলছে হিজড়ারা। মিরপুর-মোহাম্মদপুর থেকে আসা একাধিক বাসে উঠে যাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে হেনস্থা করছিল। একেক করে সব যাত্রীদের কাছ থেকে ঈদ বকশিশ নামে চাঁদা তুলছিল। তবে তাদের হেনস্থায় স্বাধীন বাসের মিথিলা নামের এক যাত্রী রীতিমত কান্নাকাটি শুরু করে দেন। কারণ মিথিলা হিজড়াদের টাকা না দিয়ে বাসে এভাবে চাঁদাবাজির ছবি তুলে ফেসবুকে দিতে চায়। এজন্য সে মোবাইল দিয়ে ছবি উঠানোর সময় টান দিয়ে মোবাইল নিয়ে যায় হিজড়ারা। পরে তুলি-শায়লা নামের দুই হিজড়া মিথিলার কোলে বসে পড়েন। ভয়ে কান্না শুরু করে মিথিলা। এসময় অন্য যাত্রীরা এগিয়ে এলে বিষয়টি মিটমাট হয়।
শুধু রাজধানী ঢাকার এই দুই স্পট নয়। পুরো রাজধানী জুড়েই চলছে হিজড়াদের এমন বেপরোয়া চাঁদাবাজি। এর বাইরে লঞ্চ, ট্রেন, দূর পাল্লার বাসসহ দেশের সর্বত্রই হিজড়ারা বেপরোয়া। আর পাড়া মহল্লার হিজড়ারা কোন অনুষ্ঠানের খবর ও কারো ঘরে সন্তান জন্ম নেয়ার খবর পেলে আর কোন কথাই নাই। দল বেঁধে গিয়ে বসে থাকে তারা। তাদের দাবিকৃত টাকা না দেয়া পর্যন্ত এক পা নড়বে না। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় কাজে ঘরের বাইরে যারা চলাফেরা করেন তাদের অভিজ্ঞতা অন্যরকম। ফার্মগেটে নিউ ভিশন বাসের যাত্রী আলি হোসেন বলেন, কাজের প্রয়োজনে প্রতিদিনই এই সড়ক দিয়ে চলতে হয়। কিন্তু প্রতিদিন আসা যাওয়ার সময় হিজড়াদের টাকা দিতে হয়। মাস শেষে হিসাব করলে অনেক টাকা হয়ে যায়। কখনও কখনও আবার মিরপুর থেকে মতিঝিল যাওয়ার পথে ২/৩টি স্পটে টাকা টাকা দিয়ে পার পেতে হয়। বাংলামোটরে সাফিয়া হোসেন নামের একযাত্রী বলেন, আমরা যারা ছোট বাবু নিয়ে রাস্তায় চলাফেরা করি তাদের জন্য হিজড়ারা অনেক আতঙ্ক। অনেক সময় কোল থেকে বাবুদের নিয়ে চলে যায়। তখন আর কিছু করার থাকে না। দৈনিক বাংলা মোড়ে রাহাত নামে এক যাত্রী বলেন, কিছু করার নাই। হিজড়ারা যে ধরনের আচরণ করে তার চেয়ে টাকা দিয়ে দূরে রাখাই ভালো। হেনস্থার শিকার হয়ে অনেকেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। গতকাল দুপুরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব তার ফেসবুকে লিখেছেন, অফিসের কাজে সহকর্মীকে নিয়ে বের হয়েছি। চলছে রমজান মাস। প্রচণ্ড রোদ-গরম। দুজনেই বেশ ক্লান্ত। কাজ শেষে ফেরার পালা। একটা রিকশায় উঠলাম। রিকশা চলতে শুরু করলো। মাঝপথে এসে পড়লাম এক বিড়ম্বনায়। তার নাম হিজড়া বিড়ম্বনা। জ্যামে বসে আছি। হঠাৎ আবির্ভাব হলো এক হিজড়ার। পোশাকে আভিজাত্য, মাথায় লাগানো চুলের বাহার, ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিকের প্রলেপ এবং মুখে ময়দা সদৃশ ম্যাকাপ। দেখে যে কেউ আতংকিত না হয়ে পারবে না। তো হঠাৎ হিজড়াটা এসে সহকর্মী সাইদকে অ্যাটাক করলো। বললো, ভাইয়া টাকা দাও। সাইদ ও আমি হাসতে শুরু করলাম। সাইদ বললো, আমার কাছে টাকা নেই, অন্যদিন দিব। হিজড়া: এই ভাইয়া দাওনা। সাইদ: চাকরি করি আগে তারপর। হিজড়া: তুমি চাকরি করো না নাহ। আমারে মিথ্যা বলছ। সাইদ: মিথ্যা বলতে যাব ক্যান। হিজড়া: যাই বলো টাকা দিতে হবে। না দিলে ...(প্রকাশ অযোগ্য) ধরে টানবো। সাইদ: নেই টাকা নেই। হিজড়া: এদিকে আসবা যাবা টাকা দিবা না এটা হতে পারে না। আমরা হিজড়ারা তোমাদের টাকায় চলি। দাও টাকা দাও। অল্প সময়ের মধ্যেই হিজড়া মহাশয় হিট পয়েন্টে চলে গেলো। বললো, টাকা না দিলে তোকে আজ যেতে দেব না। রিকশাওয়ালা মামা বললো, স্যার পাঁচ টাকা দেন। তা নাহলে বিপদে পড়বেন। ঘটনা তাই ঘটলো। সিগন্যাল ছেড়ে দেয়ার কারণে সব রিকশা চলতে শুরু করলো। কিন্তু আমাদের রিকশা সে আটকিয়ে রেখেছে। অবশেষে সাইদের হয়ে রিকশাওয়ালা টাকা দিলো। যা পরে ভাড়া সহ মিটিয়ে দিয়েছি। দেশের আনাচে কানাচে হিজড়ারা বড় ধরনের একটা আতংক। তারা সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলে টাকা আদায় করে। না দিলে, টাই ধরে টানে, দাড়ি ধরে টানে, শার্টে ময়লা লাগিয়ে দেয়, শরীরের কাপড় সরিয়ে ফেলে, অনেক সময় উলঙ্গ হয়ে যায়। খারাপ ভাষায় কথা বলাটা তাদের নিত্য নৈমিত্তিক কাজ। তাদের ভাষা এতটায় খারাপ যা বলতেও রুচিতে বাধে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, শুধুমাত্র রাজধানীতে হিজড়াদের ৬৫ জন গুরু রয়েছে। যাদের রয়েছে আলাদা আলাদা হিজড়া সদস্য। এলাকাভিত্তিক এই হিজড়ারা চাঁদাবাজি করে থাকে। চাঁদাবাজি করে অনেক গুরু কোটিপতি হয়ে গেছে। এরবাইরে রয়েছে এদের মধ্যে আরো ৪০জন গুরু। যারা স্বাভাবিক মানুষকে হিজড়া তৈরি করে রাস্তায় নামায়। দেখতে হুবহু আসল হিজড়া। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদেরকে হিজড়া তৈরি করা হয়েছে। তবে তৈরি করা এসব হিজড়াদের রেটও বেশি। তারা মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণও বেশি করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বেপরোয়া ও নকল হিজড়া তৈরির পেছনে কাজ করছেন, দয়াগঞ্জের মুচকি আনরি ও কেচকি আনরি। উত্তরার সারিকা, কচি, পিংকি, রাহেলা, নাজমা অঞ্জনা, কাকলি, আল্হাদি, সোনিয়া। মগবাজারে স্বপ্না, সজিব। মানিকনগরে আবুল, বাসাবোর অরুণা। শাখারিবাজারে কাল্লু, মেজবাহ, মায়া। লালবাগের কালা, হাকিম, রিয়া। রায়েরবাজারে সুমী, পিকুলি, মিরপুরে মাস্টার রনি, আনরি, শাহজাদি, রাখি। মোহাম্মদপুরে হামিদ। ফকিরাপুলে সুইটি। শাহজানপুরে জয়নাল। উত্তর বাড্ডার পলি। মেরুল বাড্ডার শামীমা। কুড়িলের পিংকি, রামপুরার রনি হাজি অন্যতম। এদের গ্রুপের অনেকেই দিনে হিজড়া, রাতে পতিতা ও ছিনতাই করে বেড়ায়। তাদের বেপরোয়া কাজে অনেক সময় আসল হিজড়ারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে।
সূত্র বলছে, রমজান মাস শুরু হলেই অন্যান্য সময়ের তুলনায় হিজড়ারা একটু বেপরোয়া হয়ে পড়ে। ইদানীং অনেক হিজড়ারা জড়িয়ে গেছে মাদক ব্যবসায়। মাদক ব্যবসা করে রাতারাতি কোটি টাকা মালিক হচ্ছে। এছাড়াও আরো অনেক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। অনেক সময় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যায়। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে খুনখারাবির মত ঘটনা ঘটছে অহরহ।
হিজড়াদের স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে কাজ করে বন্ধু সোস্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ফসিউল আহসান মানবজমিনকে বলেন, আমরা মূলত আসল হিজড়াদের স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে কাজ করি। যখন তারা আমাদের আওতাধীন থাকে তখন এ বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়। এর বাইরে আমার অনেক সময় নকল হিজড়াদের কথা শুনি। তারা রাস্তায়ঘাটে মানুষের সঙ্গে অনেক অশোভন আচরণ করে। যা মোটেও আমাদের জন্য কাম্য নয়। তিনি বলেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি দ্রুত লাভবান হওয়ার জন্য স্বাভাবিক মানুষকে হিজড়া সাজিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দেয়। কারণ তাদের ধারণা হিজড়াদের প্রতি মানুষের অন্যরকম এক মানসিকতা কাজ করে। টাকা চাইতে এলে টাকা দিয়ে যত তাড়াতাড়ি বিদায় করা যায় সেটাই ভাবে। এছাড়া হিজড়াদের ক্ষেত্রে আইনের অনেক ফাঁকফোকড় রয়েছে। তাই তারা অপরাধ করতে ভয় পায় না। ফসিউল বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই নকল হিজড়াদের রুখতে হবে এটা এনজিও সংস্থার কাজ নয়।
No comments