ঢাকায় এবার আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো হচ্ছে by দীন ইসলাম
মেট্রোরেলের
পর রাজধানীতে আন্ডারগ্রাউন্ড সাবওয়ে (আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো) নির্মাণ করতে
যাচ্ছে সরকার। সাবওয়েতে রেল ছাড়াও বাস সংযোগ থাকছে। সহসাই ঢাকা শহরে
সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। সমীক্ষা পরিচালনার
জন্য পরামর্শক নিয়োগের একটি প্রস্তাব আজ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে
অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদনের জন্য
উঠবে। গত ২৪শে মে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ। সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,
যানজট নিরসনে রাজধানীতে প্রথমবারের মতো মাটির নিচে তৈরি হবে দেশের সবচেয়ে
ব্যয়বহুল এই প্রকল্প। তবে প্রকল্প ব্যয় কত হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহেই সাবওয়ে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা
চিন্তা-ভাবনা করছেন। ২০২০ সালের এপ্রিলের মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে।
এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৪ কোটি ৫৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। প্রকল্প অনুমোদনের
আগেই সমীক্ষা চালানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। নির্ধারিত এক্সপ্রেশন অব
ইন্টারেস্ট দাখিলের সময়সীমার মধ্যে পাঁচটি বিদেশি কোম্পানি অংশ নেয়। এরপর
প্রস্তাব আহ্বান করা হলে তিনটি কোম্পানি অংশ নেয়। এর মধ্যে স্পেন ও জাপানের
জয়েন্ট ভেঞ্চারের একটি কোম্পানি সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয়েছে। তাদের
প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আজ মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রস্তাব উঠবে। সংশ্লিষ্ট
সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে চারটি রুটে সাবওয়ে নির্মাণ করা হবে।
উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে ট্রেন ও বাসে ঘণ্টায় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার
যাত্রী রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করতে পারবে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে
চাইলে সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, সাবওয়ে
নির্মাণ হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কেননা, পৃথিবীর সব বড় শহরেই সাবওয়ে
রয়েছে। এটি নির্মাণ হলে একটি অংশ ওপরে থাকবে আর অন্য অংশটি মাটির নিচে
থাকবে। ফলে যানজট কমে যাবে। সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সেতু কর্তৃপক্ষের
প্রধান প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে এ প্রকল্পের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা
পরিচালনা করা হবে। সমীক্ষা চলাকালীন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক
প্রতিবেদন, অগ্রগতি প্রতিবেদন, মধ্যবর্তী প্রতিবেদন, খসড়া চূড়ান্ত
প্রতিবেদন এবং সর্বশেষ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে। এরই মধ্যে সাবওয়ে নির্মাণের
জন্য প্রাথমিকভাবে চারটি রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। রুট-১:
টঙ্গী-বিমানবন্দর-কাকলী-মহাখালী-মগবাজার-পল্টন-শাপলা
চত্বর-সায়েদাবাদ-নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার। রুট-২:
আমিনবাজার-গাবতলী-আসাদগেট-নিউমার্কেট-টিএসসি-ইত্তেফাক ও সায়েদাবাদ পর্যন্ত
১৬ কিলোমিটার। রুট-৩:
গাবতলী-মিরপুর-১-মিরপুর-১০-কাকলী-গুলশান-২-নতুনবাজার-রামপুরা টিভি
ভবন-খিলক্ষেত-শাপলা চত্বর-জগন্নাথ হল ও কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত এবং রুট-৪:
রামপুরা টিভি ভবন-নিকেতন- তেজগাঁও- সোনারগাঁও-পান্থপথ-ধানমন্ডি-২৭,
রায়েরবাজার-জিগাতলা-আজিমপুর-লালবাগ ও সদরঘাট পর্যন্ত এটি নির্মাণের
চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। এদিকে সাবওয়ে নির্মাণের যুক্তি দেখিয়ে সেতু বিভাগ
বলছে, ঢাকা শহরে বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ। এখানে প্রতি
বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় ৭৯৫০ জন। মোট সড়কের দৈর্ঘ্য রয়েছে
১২৮৬ কিলোমিটার। সড়কের ঘনত্ব ৯ দশমিক ০১ শতাংশ। অথচ আদর্শমান হচ্ছে ২০-২৫
শতাংশ সড়কের ঘনত্ব। ফাঁকা জায়গা রয়েছে ৩ দশমিক ০৯ শতাংশ, কিন্তু থাকার
প্রয়োজন ১৫-২০ শতাংশ। সড়কের বর্তমান সক্ষমতা ৩ লাখ হলেও বিআরটিএ’র নিবন্ধিত
গাড়ি প্রায় ৯ লাখ। ঢাকা শহরে যানজটের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৫৫ হাজার কোটি
টাকার ক্ষতি হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সেতু বিভাগ ঢাকা শহরে
সাবওয়ে (আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো) নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যুক্তি দিয়ে
বলা হয়েছে, সড়কপথে যেখানে ১০০ বাসে ঘণ্টায় ১০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে
পারে, সেখানে একই পরিমাণ বাসে সাবওয়েতে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল
সম্ভব। মাটির নিচে সাবওয়ে নির্মাণ হলে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ মাটির নিচ
দিয়ে চলাচল করতে পারবে। ফলে ভূমির ওপর জনসংখ্যার চাপ কমবে এবং যানজট কমে
যাবে।
No comments