জোরপূর্বক গুম, সরকারের দাবির পক্ষে স্বচ্ছতা নেই বললেই চলে
জোরপূর্বক
গুমের ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের নীবরতায় তীব্র সমালোচনা করেছে মানবাধিকার
বিষয়ক গ্রুপগুলো। সরকার জোরপূর্বক গুমের ঘটনাগুলোতে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
এমনটা অভিযোগ করে অনলাইন দ্য ডিপ্লোম্যাটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা
হয়েছে, গত কয়েক বছরে জোরপূর্বক গুমের ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু
রাষ্ট্র তা বার বারই প্রত্যাখ্যান করছে। ডিপ্লোম্যাটে প্রকাশিত ওই
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭ থেকে ১৮ই মে পর্যন্ত জেনেভায় জাতিসংঘের ইউনিভার্সেল
পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর)-এ বাংলাদেশ সরকার এ অবস্থা নিয়ে একটি রিপোর্ট জমা
দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে সর্বশেষ এই রিপোর্টে জোরপূর্বক গুমের ঘটনা ক্ষমতাসীন
বাংলাদেশে সবচেয়ে পুরনো দল আওয়ামী লীগ অস্বীকার করেছে।
ইউপিআর ওয়ার্কিং গ্রুপের মে মাসের সেশনে ১৪টি দেশের অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জাতিসংঘ জোরপূর্বক গুমকে ‘হায়েনার মতো অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ১৭ কোটি মানুষের এই দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে অনেক ক্ষেত্রেই এমন গুমকে মদত দিয়ে আসার অভিযোগ আছে। কিন্তু ইউপিআরে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে বাংলাদেশ তাতে এ ইস্যুটি উল্লেখও করা হয় নি। বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের গঠনাগুলোকে পূর্ণাঙ্গভাবে এবং এর গভীরে গিয়ে তদন্ত করে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। ইউপিআরে সর্বশেষ যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে বাংলাদেশ তাতে জোরপূর্বক গুলের বিষয়ে সরকারের নীরবতার কড়া সমালোচনা করেছে এইচআরডব্লিউ। এ সংগঠনের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেছেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী জোপূর্বক গুম, হত্যাকা-, নির্যাতন ও খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তারের সঙ্গে জড়িত। এর বেশির ভাগই ঘটে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। তাই এমন সব গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে নজর দেয়া উচিত এবং এসব ঘটনাকে এড়িয়ে যাওয়ার রীতি বন্ধ করা উচিত। ঢাকাভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী ড. শাহদিন মালিক বলেছেন, জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ ‘ভয়াবহভাবে প্রত্যাখ্যানের’ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভয়াবহভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে মোটেও নজর দিচ্ছে না। এটা উদ্বেগজনক বা এলার্মিং। সুইডেনের জেনেভাতে ইউপিআরের তৃতীয় দফা বৈঠকে আগের রিভিউয়ের সময় যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল তার কতটুকু বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। ওই রিভিউয়ের সুপারিশ অনুসরণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল বাংলাদেশ। পাশাপাশি দেশে সম্প্রতিক মানবাধিকার বিষয়েও জোর দিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। ২০০৬ সালের জুনে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সহ জাতিসংঘের ১৯৩ টি সদস্য রাষ্ট্রের সবাইকে এরপর দুবার রিভিউ করা হয়েছে। একটি ছিল প্রথম দফায় এবং পরেরটি ছিল তৃতীয় দফায়। বাংলাদেশের জন্য প্রথম রিভিউটি হয়েছিল ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। দ্বিতীয় রিভিউটি হয়েছিল ২০১৩ সালের এপ্রিলে। দ্য ডিপ্লোম্যাট লিখেছে, ইউপিআরের তৃতীয় রিভিউতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল শুধু সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে। তবে তারা জোরপূর্বক গুম, গোপন ও খেয়ালখুশি মতো আটক, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যান। বাংলাদেশ ওই রিপোর্টকে বড় করে দেখাতে চেষ্টা করে যে, তারা কিভাবে অভিজাত বাহিনী র্যাবের ১৬ সদস্যকে শাস্তি দিয়েছে। একজন সিটি মেয়র ও তার ৬ সহযোগীকে হত্যার জন্য দায়ী করা হয় তাদেরকে। এই ঘটনাকে দেশে প্রেসের কাছে তুলে ধরা হয় এভাবে যে, আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোর অপরাধের বিষয়ে শূন্য সহনশীলতার নীতি অবলম্বন করেছে বাংলাদেশ। এর আগে দ্বিতীয় রিভিউতে বাংলাদেশ রিপোর্ট জমা দেয় ২০১৩ সালে। তাতে বলা হয়, বিদ্যমান আইনগত কাঠামোতে গুম বা জোরপূর্বক গুমের কোনো স্থান নেই। আইনগতভাবে যে শব্দটি প্রচলিত আছে দন্ডবিধিতে তা হলো কিডন্যাপ/এবডাকশন। এতে আরো বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে কিডন্যাপ বা এবডাকশনের মতো ঘটনার সঙ্গে র্যাব বা আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোর নাম ব্যবহারের একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ওই সময় পর্যন্ত র্যাব কমপক্ষে ৫০০ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে। এসব অপরাধী অপহরণের মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
দ্য ডিপ্লোম্যাট লিখেছে, মজার বিষয় হলো ইউপিআরের দ্বিতীয় রিভিউয়ের পর জোরপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের মতো ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে রিপোর্ট করা হয়েছে। ডকুমেন্ট আকারে ঘটনা সামনে আনা হয়েছে। ২০১৩ সালে দ্বিতীয় রিভিউয়ে এসব বিষয়ে যে রেফারেন্স উল্লেখ করা হয়েছিল তার চেয়ে ২০১৮ সালে অনেক কম রেফারেন্স তুলে ধরা হয়েছে জমা দেয়া রিপোর্টে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ের যেসব রিপোর্ট জমা দিয়েছে তার সঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের ও অন্যান্য অংশীদারদের দেয়া রিপোর্ট মিলিয়ে দেখবে ইউপিআর। এসব অংশীদারের মধ্যে রয়েছে জাতীয় মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিষ্ঠান, আঞ্চলিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের বিভিন্ন গ্রুপ। জোরপূর্বক গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের কথা ভীষণ জোর দিয়ে অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ সরকার। এমন বিষয়কে তারা চাপা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু ইউপিআরে অন্যরা যেসব রিপোর্ট জমা দিয়েছে তাতে এসব অপরাধের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এমন রিপোর্টের একটি তেরি করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার ভিসয়ক হাই কমিশনার। আরেকটি রিপোর্ট তৈরি করেছে জাতীয় পর্যায়ের ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রথম সারির ৫৬টি প্রতিষ্ঠান। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার বাংলাদেশের ওপর যে রিপোর্ট তৈরি করেছেন তাতে উচ্চ মাত্রায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, জোরপূর্বক গুম, রাষ্ট্রীয় নিয়ামক শক্তিগুলোর অতিমাত্রায় শক্তি প্রয়োগ, তদন্তে ঘাটতি ও অপরাধীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার ঘাতটি রয়েছে বলে বলা হয় এবং এ অবস্থায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, জোরপূর্বক গুমের ঘটনাকে কার্যত অপরাধ হিসেবে সমর্থন করে না বাংলাদেশের আভ্যন্তরণীন আইন। তাই বাংলাদেশ জোরপূর্বক গুমের ঘঠনাকে স্বীকার করে না। নিজেদের রিপোর্টে নির্যাতন, নির্যাতন মুলক আটরণ, টর্চার অ্যান্ড কাস্টডিয়াল ডেথ (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট বন্ধ করতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানায় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিটি। এতে সব অভিযোগ তদন্ত করতে একটি স্বাধীন মেকানিজম প্রতিষ্ঠা করার জন্য আহ্বান জানানো হয় বাংলাদেশের প্রতি। এতে অভিযুক্ত অপরাধীকে অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি করতে বলা হয। এরই মধ্যে ইউপিআরে অন্যান্য অংশীদাররা যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, জোরপূর্বক গুম ও খেয়ালখুশি মতো গ্রেপ্তার বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব অংশীদারদের রিপোর্ট ৮৪৫টি বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের কথা উল্লেখ করা হয়। ২০১৩ সালের মে থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪৮ জন নির্যাতনের ফলে মারা গেছেন। এতে আরো বলা হয়, ২০১৩ সালের মে থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন প্রায় ৩০০ মানুষ। এসব মানুষকে পরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এতে আরো উল্লেখ করা হয় যে, এসব গুমের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোর জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বহুক্ষেত্রে কিন্তু বহু অভিযোগ এবং বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগের পরও সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এরই প্রেক্ষিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ পয়েন্টআউট করেছে। ইউপিআর কমিটির কাছে সরকারের দেয়া রিপোর্ট ও অন্য দুটি রিপোর্ট দেখা যাচ্ছে সাংঘর্ষিক। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, দেশে মানবাধিকার নিয়ে যে উদ্বেগ রয়েছে এবং তার প্রেক্ষিতে যে চাপ রয়েছে তাতে সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। এর আগের ইউপিআরের রিভিউতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তারা নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে হলেও সব রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পূর্ণাঙ্গভাবে এবং পক্ষপাতিত্বহীনভাবে তদন্ত করবে এবং তার বিচার করবে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, কিন্তু তারপর থেকেই ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা, বিশেষ করে নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের ওপর সহিংসতার মতো নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করে আসছে বাংলাদেশ। সরকারের প্রতিনিধিরা বলেছেন, যারা এমন নিয়ম লঙ্ঘনকারী তাদের বিরুদ্ধে তারা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন। কিন্তু তাদের এমন দাবি প্রমাণের পক্ষে স্বচ্ছতা নেই বললেই চলে।
ইউপিআর ওয়ার্কিং গ্রুপের মে মাসের সেশনে ১৪টি দেশের অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জাতিসংঘ জোরপূর্বক গুমকে ‘হায়েনার মতো অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ১৭ কোটি মানুষের এই দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে অনেক ক্ষেত্রেই এমন গুমকে মদত দিয়ে আসার অভিযোগ আছে। কিন্তু ইউপিআরে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে বাংলাদেশ তাতে এ ইস্যুটি উল্লেখও করা হয় নি। বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের গঠনাগুলোকে পূর্ণাঙ্গভাবে এবং এর গভীরে গিয়ে তদন্ত করে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। ইউপিআরে সর্বশেষ যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে বাংলাদেশ তাতে জোরপূর্বক গুলের বিষয়ে সরকারের নীরবতার কড়া সমালোচনা করেছে এইচআরডব্লিউ। এ সংগঠনের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেছেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী জোপূর্বক গুম, হত্যাকা-, নির্যাতন ও খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তারের সঙ্গে জড়িত। এর বেশির ভাগই ঘটে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। তাই এমন সব গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে নজর দেয়া উচিত এবং এসব ঘটনাকে এড়িয়ে যাওয়ার রীতি বন্ধ করা উচিত। ঢাকাভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী ড. শাহদিন মালিক বলেছেন, জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ ‘ভয়াবহভাবে প্রত্যাখ্যানের’ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভয়াবহভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে মোটেও নজর দিচ্ছে না। এটা উদ্বেগজনক বা এলার্মিং। সুইডেনের জেনেভাতে ইউপিআরের তৃতীয় দফা বৈঠকে আগের রিভিউয়ের সময় যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল তার কতটুকু বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। ওই রিভিউয়ের সুপারিশ অনুসরণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল বাংলাদেশ। পাশাপাশি দেশে সম্প্রতিক মানবাধিকার বিষয়েও জোর দিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। ২০০৬ সালের জুনে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সহ জাতিসংঘের ১৯৩ টি সদস্য রাষ্ট্রের সবাইকে এরপর দুবার রিভিউ করা হয়েছে। একটি ছিল প্রথম দফায় এবং পরেরটি ছিল তৃতীয় দফায়। বাংলাদেশের জন্য প্রথম রিভিউটি হয়েছিল ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। দ্বিতীয় রিভিউটি হয়েছিল ২০১৩ সালের এপ্রিলে। দ্য ডিপ্লোম্যাট লিখেছে, ইউপিআরের তৃতীয় রিভিউতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল শুধু সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে। তবে তারা জোরপূর্বক গুম, গোপন ও খেয়ালখুশি মতো আটক, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যান। বাংলাদেশ ওই রিপোর্টকে বড় করে দেখাতে চেষ্টা করে যে, তারা কিভাবে অভিজাত বাহিনী র্যাবের ১৬ সদস্যকে শাস্তি দিয়েছে। একজন সিটি মেয়র ও তার ৬ সহযোগীকে হত্যার জন্য দায়ী করা হয় তাদেরকে। এই ঘটনাকে দেশে প্রেসের কাছে তুলে ধরা হয় এভাবে যে, আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোর অপরাধের বিষয়ে শূন্য সহনশীলতার নীতি অবলম্বন করেছে বাংলাদেশ। এর আগে দ্বিতীয় রিভিউতে বাংলাদেশ রিপোর্ট জমা দেয় ২০১৩ সালে। তাতে বলা হয়, বিদ্যমান আইনগত কাঠামোতে গুম বা জোরপূর্বক গুমের কোনো স্থান নেই। আইনগতভাবে যে শব্দটি প্রচলিত আছে দন্ডবিধিতে তা হলো কিডন্যাপ/এবডাকশন। এতে আরো বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে কিডন্যাপ বা এবডাকশনের মতো ঘটনার সঙ্গে র্যাব বা আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোর নাম ব্যবহারের একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ওই সময় পর্যন্ত র্যাব কমপক্ষে ৫০০ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে। এসব অপরাধী অপহরণের মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
দ্য ডিপ্লোম্যাট লিখেছে, মজার বিষয় হলো ইউপিআরের দ্বিতীয় রিভিউয়ের পর জোরপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের মতো ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে রিপোর্ট করা হয়েছে। ডকুমেন্ট আকারে ঘটনা সামনে আনা হয়েছে। ২০১৩ সালে দ্বিতীয় রিভিউয়ে এসব বিষয়ে যে রেফারেন্স উল্লেখ করা হয়েছিল তার চেয়ে ২০১৮ সালে অনেক কম রেফারেন্স তুলে ধরা হয়েছে জমা দেয়া রিপোর্টে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ের যেসব রিপোর্ট জমা দিয়েছে তার সঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের ও অন্যান্য অংশীদারদের দেয়া রিপোর্ট মিলিয়ে দেখবে ইউপিআর। এসব অংশীদারের মধ্যে রয়েছে জাতীয় মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিষ্ঠান, আঞ্চলিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের বিভিন্ন গ্রুপ। জোরপূর্বক গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের কথা ভীষণ জোর দিয়ে অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ সরকার। এমন বিষয়কে তারা চাপা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু ইউপিআরে অন্যরা যেসব রিপোর্ট জমা দিয়েছে তাতে এসব অপরাধের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এমন রিপোর্টের একটি তেরি করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার ভিসয়ক হাই কমিশনার। আরেকটি রিপোর্ট তৈরি করেছে জাতীয় পর্যায়ের ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রথম সারির ৫৬টি প্রতিষ্ঠান। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার বাংলাদেশের ওপর যে রিপোর্ট তৈরি করেছেন তাতে উচ্চ মাত্রায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, জোরপূর্বক গুম, রাষ্ট্রীয় নিয়ামক শক্তিগুলোর অতিমাত্রায় শক্তি প্রয়োগ, তদন্তে ঘাটতি ও অপরাধীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার ঘাতটি রয়েছে বলে বলা হয় এবং এ অবস্থায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, জোরপূর্বক গুমের ঘটনাকে কার্যত অপরাধ হিসেবে সমর্থন করে না বাংলাদেশের আভ্যন্তরণীন আইন। তাই বাংলাদেশ জোরপূর্বক গুমের ঘঠনাকে স্বীকার করে না। নিজেদের রিপোর্টে নির্যাতন, নির্যাতন মুলক আটরণ, টর্চার অ্যান্ড কাস্টডিয়াল ডেথ (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট বন্ধ করতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানায় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিটি। এতে সব অভিযোগ তদন্ত করতে একটি স্বাধীন মেকানিজম প্রতিষ্ঠা করার জন্য আহ্বান জানানো হয় বাংলাদেশের প্রতি। এতে অভিযুক্ত অপরাধীকে অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি করতে বলা হয। এরই মধ্যে ইউপিআরে অন্যান্য অংশীদাররা যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, জোরপূর্বক গুম ও খেয়ালখুশি মতো গ্রেপ্তার বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব অংশীদারদের রিপোর্ট ৮৪৫টি বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের কথা উল্লেখ করা হয়। ২০১৩ সালের মে থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪৮ জন নির্যাতনের ফলে মারা গেছেন। এতে আরো বলা হয়, ২০১৩ সালের মে থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন প্রায় ৩০০ মানুষ। এসব মানুষকে পরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এতে আরো উল্লেখ করা হয় যে, এসব গুমের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোর জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বহুক্ষেত্রে কিন্তু বহু অভিযোগ এবং বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগের পরও সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এরই প্রেক্ষিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ পয়েন্টআউট করেছে। ইউপিআর কমিটির কাছে সরকারের দেয়া রিপোর্ট ও অন্য দুটি রিপোর্ট দেখা যাচ্ছে সাংঘর্ষিক। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, দেশে মানবাধিকার নিয়ে যে উদ্বেগ রয়েছে এবং তার প্রেক্ষিতে যে চাপ রয়েছে তাতে সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। এর আগের ইউপিআরের রিভিউতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তারা নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে হলেও সব রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পূর্ণাঙ্গভাবে এবং পক্ষপাতিত্বহীনভাবে তদন্ত করবে এবং তার বিচার করবে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, কিন্তু তারপর থেকেই ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা, বিশেষ করে নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের ওপর সহিংসতার মতো নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করে আসছে বাংলাদেশ। সরকারের প্রতিনিধিরা বলেছেন, যারা এমন নিয়ম লঙ্ঘনকারী তাদের বিরুদ্ধে তারা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন। কিন্তু তাদের এমন দাবি প্রমাণের পক্ষে স্বচ্ছতা নেই বললেই চলে।
No comments