বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল
হাইতিতে
ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা অক্সফামের কর্মীদের যৌন কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশের
পর থলের বিড়াল বের হতে শুরু করেছে। চাদ ও দক্ষিণ সুদানেও একই ধরনের
কেলেঙ্কারিতে কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সামনে চলে এসেছে এসব
প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নের ব্যাপারে উদাসীনতার বিষয়টি। রয়টার্স নিজস্ব
জরিপের তথ্য প্রকাশ করে বলেছে, ১০টির মধ্যে ছয়টি আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা
নিজেদের প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নের ঘটনার ব্যাপারে তথ্য দিয়েছে। হলিউডের
প্রভাবশালী প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টিনের যৌন কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশের পর
গত নভেম্বরে রয়টার্স এসব সংস্থার কাছে কিছু তথ্য চায়। এর মধ্যে ছিল কয়টি
যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে ও কতজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন
জানায়, যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গত বছর সংস্থাটির ১৬ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা
হয়েছে। অক্সফামের দেওয়া হিসাবে সংখ্যাটি ছিল ২২। ওয়ার্ল্ড ভিশন ২০১৬ সালে
তাদের প্রতিষ্ঠানে ১০টি যৌন নিপীড়নের ঘটনার কথা জানায়। ৫০ হাজার কর্মী ও
স্বেচ্ছাসেবকের প্রতিষ্ঠান খ্রিষ্টান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি জানায়, তাদের
প্রতিষ্ঠানে এমন চারটি ঘটনা ঘটেছে। প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র হেনরি মাকিওয়া
বলেছেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা একদম বরদাশত করা হয় না।
চিকিৎসাসংক্রান্ত দাতব্য সংস্থা মিডসঁ সঁ ফ্রঁতিয়া জানিয়েছে, গত বছর ২০ জন
এবং এর আগের বছর ১০ জনকে চাকরি থেকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় অব্যাহতি দেওয়া হয়।
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলও তথ্য দিয়েছে। তবে সংস্থাটির পরিস্থিতি
সম্পর্কে প্রতিবেদনে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। রেডক্রস যৌন নিপীড়নের ব্যাপারে
তথ্য দেয়নি। তবে সংস্থাটির মুখপাত্র স্যাম স্মিথ বলেন, এমন তথ্যের জন্য
তাঁরা একটি ডেটাবেইস তৈরি করছেন। যৌন নিপীড়ন কোনো একক প্রতিষ্ঠানের সমস্যা
নয়। বরং এটি গোটা খাতের সমস্যা। এ থেকে উত্তরণে সবাইকে যৌথভাবে কাজ করতে
হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ও
দ্য ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটিও কোনো তথ্য দেয়নি। অক্সফামের ঘটনা দরিদ্র
দেশগুলোতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) কার্যক্রম নিয়ে নজরদারির ঘাটতি
সামনে আনল। হাইতির অর্থনীতিবিদ কেমিয়েচার্লমার্স বলেন, এনজিওগুলোর মাধ্যমে
দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় ত্রাণ সহায়তার কার্যক্রম চলে। কোনো দেশের উন্নয়নের
ক্ষেত্রে এটা তাদের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামকের ভূমিকায় নিয়ে যায়। আর তখনই
ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ আসে। হাইতিতে ২০১০ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর
ত্রাণ তৎপরতা চালানোর সময় যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন অক্সফামের
কয়েকজন কর্মী। হাইতির প্রেসিডেন্ট জভেনেল ময়েজে মানবিক সহায়তার নামে অসহায়
মানুষের কাছ থেকে অন্যায় সুবিধা নেওয়াকে চরম অসততা ও অবমাননাকর বলেছেন।
এদিকে অক্সফামের শুভেচ্ছা দূতের পদ থেকে গত মঙ্গলবার সরে দাঁড়িয়েছেন
ব্রিটিশ অভিনেত্রী মিনি ড্রাইভার। অক্সফামের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এ খবর
তাঁদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে, তবে মিনির সিদ্ধান্তকে সংস্থাটি সম্মান জানায়।
No comments