রোহিঙ্গাদের ওপর যেসব সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে মিয়ানমার সরকার
গত
বছর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকটি ক্যাম্পে সশস্ত্র হামলার ঘটনা
ঘটে। ওই ঘটনা তদন্তের অজুহাতে সেনাবাহিনী গত আগস্ট থেকে রাখাই রাজ্যের
রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নতুন করে সহিংসতা শুরু করে।
সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড এখনো অব্যাহত রয়েছে। মিয়ানমারের কর্মকর্তারা দাবি করেন, নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পে হামলার সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলমানরা জড়িত ছিল। যদিও ওই হামলার ঘটনায় মুসলমানদের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি। তারপরও রোহিঙ্গাদের ওপর শুরু হওয়া মানবতা বিরোধী অপরাধযজ্ঞে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি উগ্র বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিরাও অংশ নিয়েছে। মিয়ানমার সরকার রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে অভিবাসী বলে মনে করে এবং তাদের কোনো নাগরিক অধিকার নেই। সরকারের দাবি তারা বাংলাদেশসহ আশেপাশের আরো কয়েকটি দেশ থেকে মিয়ানমারে এসেছিল। মিয়ানমার সরকার মুসলমানদের ওপর যেসব ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে সেসব বিষয়ে আজকে আলোচনায় তুলে ধরছি।
রোহিঙ্গা মুসলমানরা সেদেশের নাগরিক হলেও সরকার তাদের পরিচয়পত্র দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। ফলে স্বাধীনভাবে তারা নিজ দেশেও চলাফেরা করতে পারছে না। এ ছাড়া, সরকার মুসলমানদেরকে পাসপোর্ট না দেয়ার কারণে তারা দেশের বাইরেও যেতে পারছে না। এমনকি রোহিঙ্গা মুসলমানরা এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যেতে চাইলেও সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয়।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমারের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অনুমতি নেই এবং তাদেরকে সরকারি চাকরি থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। এমনকি সরকারের অনুমতি ছাড়া মুসলমানরা বিয়েও করতে পারে না। বিয়ের অনুমতির জন্য সরকারকে আলাদাভাবে কর দিতে। বিয়ের পরও কোনো দম্পতি দু'টির বেশি সন্তান নিতে পারে না। মিয়ানমারের মুসলমানদেরকে বাধ্যতামূলক কাজে নিয়োগ দেয়া হয় এবং শিক্ষা ও চিকিৎসার কোনো সুযোগ নেই। আর যদি সুযোগ দেয়া হয় তাহলেও সেখানে ব্যাপক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
মিয়ানমারের মুসলমানদেরকে সব ক্ষেত্রে বঞ্চিত করা ছাড়াও সেনাবাহিনী তাদের ওপর যে গণহত্যা ও ধর্ষণ চালাচ্ছে তার সঙ্গে উগ্র বৌদ্ধরাও যোগ দিয়েছে এবং সেখানে মানবেতর অবস্থা বিরাজ করছে। মিয়ানমার সরকার এমন সময় মুসলমানদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে যখন অং সান সুচির নেতৃত্বে ন্যশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি বা এনএলডি দলটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিজয় লাভ করে এবং নতুন সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে মিয়ানমার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্বপালনকারী অং সান সুচি রোহিঙ্গা মুসলমানদের নানা অভিযোগ তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তিনি রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কোনো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন তো করেননি বরং রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা আরো বেড়েছে।
রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান সহিংসতা থেকে বোঝা যায়, সরকার ও সেনাবাহিনী সমন্বিতভাবে রাখাইন রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার জনসংখ্যায় কাঠামোয় পরিবর্তন আনার জন্য বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে তাদের চলে যেতে বাধ্য করছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী সহিংসতায় লিপ্ত। তারা মুসলমানদের হত্যার পাশাপাশি, তাদের ঘরবাড়ি ও ফসলে আগুন দেয়া এবং নারীদের ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত যাতে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়। আঙ্কারার আন্তর্জাতিক গবেষণা বিষয়ক সংস্থার বিশেষজ্ঞ সালেকুম কুলাক ওগলু বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকেই মিয়ানমার সরকার মুসলমানদেরকে সেদেশ থেকে বিতাড়িত করার নীতি নিয়েছিল যাতে মিয়ানমারকে মুসলিম শূন্য বৌদ্ধ দেশে পরিণত করা যায়। এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু সব ধর্মীয় সম্প্রদায়কে হয় বৌদ্ধদের নীতি আদর্শের সঙ্গে মিশে যেতে বাধ্য হবে অথবা দেশ ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে হবে। অন্যান্য ধর্মের প্রভাব ঠেকানোই ছিল মিয়ানমার সরকারের এ ধরণের নীতির প্রধান উদ্দেশ্য। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সহিংসতা এমন সময় অব্যাহত রয়েছে যখন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিশেষ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চলমান হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত এই জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে কেবল উদ্বেগ প্রকাশ করেই ক্ষান্ত রয়েছে।
২০১৬ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত হত্যা ও নির্যাতনের ভয়ে পলাতক আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছে আরো ছয় হাজার মুসলমান। হত্যা ও সহিংসতার মাত্রা এতটাই নৃশংস ছিল যে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এবং বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা একে জাতিগত শুদ্ধিঅভিযান এবং মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসাবে অভিহিত করেছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার এক বিবৃতিতে বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলমানরা সেনাবাহিনীর হাতে ভয়াবহ অপরাধযজ্ঞের স্বীকার হতে পারে। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য মিয়ানমার সরকারকে অভিযুক্ত করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার এটা সামান্য চিত্রমাত্র যা থেকে মিয়ানমার সরকারের মানবতা বিরোধী চরিত্রের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের ঢল নেমেছে বাংলাদেশে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে এতো বিশার সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। এ কারণে দেশটি আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে।
বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর আগমন, বাংলাদেশ সরকারের সীমাবদ্ধতা এবং আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকে আশানুরূপ সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে মানবাধিকার সংস্থাগুলো খাদ্য ও ওষুধের অভাবে শরণার্থী ক্যাম্পে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধিরা শরণার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে একটি সমাঝোতায় পৌঁছেছেন যদিও সেটা কাগজে কলমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সুচি এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে তাতে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে। অবশ্য মিয়ানমার সরকার আদৌ শরণার্থীদেরকে ফিরিয়ে নেবে কিনা তাতে ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ব্যাপক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার আপাতত এ ধরণের চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে। এ অবস্থায় সবার মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা যদি মিয়ানমারে ফিরেও যায় তাহলে সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা যে ফের তাদের ওপর সহিংসতা, জুলুম-নির্যাতন চালাবে না তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে? হিউম্যান রাইসট ওয়াচের মহাসচিব বিল ফারলিক বলেছেন, বিশ্ববাসীকে এটা বুঝতে হবে যে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ছাড়া অসহায় রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। তিন বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদেরকে ফিরে যাওয়া মুসলমানদের অধিকারের বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড এখনো অব্যাহত রয়েছে। মিয়ানমারের কর্মকর্তারা দাবি করেন, নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পে হামলার সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলমানরা জড়িত ছিল। যদিও ওই হামলার ঘটনায় মুসলমানদের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি। তারপরও রোহিঙ্গাদের ওপর শুরু হওয়া মানবতা বিরোধী অপরাধযজ্ঞে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি উগ্র বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিরাও অংশ নিয়েছে। মিয়ানমার সরকার রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে অভিবাসী বলে মনে করে এবং তাদের কোনো নাগরিক অধিকার নেই। সরকারের দাবি তারা বাংলাদেশসহ আশেপাশের আরো কয়েকটি দেশ থেকে মিয়ানমারে এসেছিল। মিয়ানমার সরকার মুসলমানদের ওপর যেসব ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে সেসব বিষয়ে আজকে আলোচনায় তুলে ধরছি।
রোহিঙ্গা মুসলমানরা সেদেশের নাগরিক হলেও সরকার তাদের পরিচয়পত্র দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। ফলে স্বাধীনভাবে তারা নিজ দেশেও চলাফেরা করতে পারছে না। এ ছাড়া, সরকার মুসলমানদেরকে পাসপোর্ট না দেয়ার কারণে তারা দেশের বাইরেও যেতে পারছে না। এমনকি রোহিঙ্গা মুসলমানরা এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যেতে চাইলেও সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয়।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমারের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অনুমতি নেই এবং তাদেরকে সরকারি চাকরি থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। এমনকি সরকারের অনুমতি ছাড়া মুসলমানরা বিয়েও করতে পারে না। বিয়ের অনুমতির জন্য সরকারকে আলাদাভাবে কর দিতে। বিয়ের পরও কোনো দম্পতি দু'টির বেশি সন্তান নিতে পারে না। মিয়ানমারের মুসলমানদেরকে বাধ্যতামূলক কাজে নিয়োগ দেয়া হয় এবং শিক্ষা ও চিকিৎসার কোনো সুযোগ নেই। আর যদি সুযোগ দেয়া হয় তাহলেও সেখানে ব্যাপক সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
মিয়ানমারের মুসলমানদেরকে সব ক্ষেত্রে বঞ্চিত করা ছাড়াও সেনাবাহিনী তাদের ওপর যে গণহত্যা ও ধর্ষণ চালাচ্ছে তার সঙ্গে উগ্র বৌদ্ধরাও যোগ দিয়েছে এবং সেখানে মানবেতর অবস্থা বিরাজ করছে। মিয়ানমার সরকার এমন সময় মুসলমানদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে যখন অং সান সুচির নেতৃত্বে ন্যশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি বা এনএলডি দলটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিজয় লাভ করে এবং নতুন সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে মিয়ানমার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্বপালনকারী অং সান সুচি রোহিঙ্গা মুসলমানদের নানা অভিযোগ তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তিনি রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কোনো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন তো করেননি বরং রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা আরো বেড়েছে।
রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান সহিংসতা থেকে বোঝা যায়, সরকার ও সেনাবাহিনী সমন্বিতভাবে রাখাইন রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার জনসংখ্যায় কাঠামোয় পরিবর্তন আনার জন্য বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে তাদের চলে যেতে বাধ্য করছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী সহিংসতায় লিপ্ত। তারা মুসলমানদের হত্যার পাশাপাশি, তাদের ঘরবাড়ি ও ফসলে আগুন দেয়া এবং নারীদের ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত যাতে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়। আঙ্কারার আন্তর্জাতিক গবেষণা বিষয়ক সংস্থার বিশেষজ্ঞ সালেকুম কুলাক ওগলু বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকেই মিয়ানমার সরকার মুসলমানদেরকে সেদেশ থেকে বিতাড়িত করার নীতি নিয়েছিল যাতে মিয়ানমারকে মুসলিম শূন্য বৌদ্ধ দেশে পরিণত করা যায়। এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু সব ধর্মীয় সম্প্রদায়কে হয় বৌদ্ধদের নীতি আদর্শের সঙ্গে মিশে যেতে বাধ্য হবে অথবা দেশ ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে হবে। অন্যান্য ধর্মের প্রভাব ঠেকানোই ছিল মিয়ানমার সরকারের এ ধরণের নীতির প্রধান উদ্দেশ্য। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সহিংসতা এমন সময় অব্যাহত রয়েছে যখন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিশেষ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চলমান হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত এই জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে কেবল উদ্বেগ প্রকাশ করেই ক্ষান্ত রয়েছে।
২০১৬ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত হত্যা ও নির্যাতনের ভয়ে পলাতক আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছে আরো ছয় হাজার মুসলমান। হত্যা ও সহিংসতার মাত্রা এতটাই নৃশংস ছিল যে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এবং বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা একে জাতিগত শুদ্ধিঅভিযান এবং মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসাবে অভিহিত করেছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার এক বিবৃতিতে বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলমানরা সেনাবাহিনীর হাতে ভয়াবহ অপরাধযজ্ঞের স্বীকার হতে পারে। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য মিয়ানমার সরকারকে অভিযুক্ত করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার এটা সামান্য চিত্রমাত্র যা থেকে মিয়ানমার সরকারের মানবতা বিরোধী চরিত্রের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের ঢল নেমেছে বাংলাদেশে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে এতো বিশার সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। এ কারণে দেশটি আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে।
বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর আগমন, বাংলাদেশ সরকারের সীমাবদ্ধতা এবং আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকে আশানুরূপ সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে মানবাধিকার সংস্থাগুলো খাদ্য ও ওষুধের অভাবে শরণার্থী ক্যাম্পে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধিরা শরণার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে একটি সমাঝোতায় পৌঁছেছেন যদিও সেটা কাগজে কলমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সুচি এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে তাতে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে। অবশ্য মিয়ানমার সরকার আদৌ শরণার্থীদেরকে ফিরিয়ে নেবে কিনা তাতে ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ব্যাপক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার আপাতত এ ধরণের চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে। এ অবস্থায় সবার মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা যদি মিয়ানমারে ফিরেও যায় তাহলে সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা যে ফের তাদের ওপর সহিংসতা, জুলুম-নির্যাতন চালাবে না তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে? হিউম্যান রাইসট ওয়াচের মহাসচিব বিল ফারলিক বলেছেন, বিশ্ববাসীকে এটা বুঝতে হবে যে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ছাড়া অসহায় রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। তিন বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদেরকে ফিরে যাওয়া মুসলমানদের অধিকারের বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
No comments