অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন
বৃহস্পতিবার
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০১৭-১৮ সালের
বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিশ্বের ১৫৯টি দেশের তথ্যের ওপর ভিত্তি
করে প্রণীত প্রতিবেদনটির বাংলাদেশ অংশে বলা হয়েছে- এখানে বিরোধী দলের
সমর্থকদের টার্গেট করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত গুমের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে
এবং কোনো কোনো নিখোঁজ ব্যক্তির লাশ পাওয়া গেলেও অনেকের হদিস মিলছে না।
মানবাধিকার সংস্থাটি আরও বলেছে, বাংলাদেশ সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার
বিরুদ্ধে এবং মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের হেনস্তা করার লক্ষ্যে
নিপীড়নমূলক আইন ব্যবহার করে যাচ্ছে। সাংবাদিক নির্যাতনেরও অভিযোগ করেছে
অ্যামনেস্টি। কারাগারে পুলিশি নির্যাতন বেড়ে চলেছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে,
আইনপ্রণেতাদের অনীহা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে ২০১৩ সালের নির্র্যাতন ও
বন্দিমৃত্যু প্রতিরোধ আইনের কোনো প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না। তবে অ্যামনেস্টি
ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে গত এক দশকে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির
কারণে দারিদ্র্যবিমোচনের অভূতপূর্ব সাফল্যের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে প্রতিবছর
বিশ্বের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরছে। এ সংস্থার আন্তর্জাতিক খ্যাতিও
রয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশে গত বছরের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে সংস্থাটি
যেসব কথা বলেছে, তা হেলাফেলার নয়।
বস্তুত দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি যে
ভালো নয়, তা জোর দিয়ে বলার প্রয়োজন পড়ে না। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল,
গুম-অপহরণ-খুন ইত্যাদি ঘটনা কেন ঘটছে এবং প্রকৃতপক্ষে কারা এসব ঘটাচ্ছে,
তার বিশ্বাসযোগ্য কোনো সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। তবে অপহরণের সঙ্গে
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠে থাকে প্রায়ই। এটা ঠিক,
গুম ও অপহরণের ঘটনাগুলোর প্রতিটি যে রাজনৈতিক কারণে ঘটছে তা নয়, নানা
ধরনের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থের কারণেও গুম-খুন হচ্ছে ধরে নেয়া যায়। আমরা
শুধু এটুকু বলতে চাই- গুম-খুনের এই ধারাবাহিকতার ইতি টানতে হবে এবং তা যে
কোনো উপায়ে। অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে নিপীড়নমূলক আইনের যে কথা বলা হয়েছে,
সেটাও উড়িয়ে দেয়া যাবে না। প্রস্তাবিত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়েও রয়েছে
নানা কথা। সাংবাদিক মহল ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত আইনের খসড়াটির
সমালোচনা করে এর সংশোধন দাবি করেছে। আমরা মনে করি, সংসদে পাস হওয়ার আগে
খসড়া আইনটির পুনর্বিবেচনা করা হবে। অ্যামনেস্টি দারিদ্র্যবিমোচনে বর্তমান
সরকারের সাফল্যের স্বীকৃতি দিয়েছে। এই সাফল্যের সঙ্গে যদি দেশে একটা নিরাপদ
ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে তা হবে বর্তমান সরকারের জন্য
এক বড় মাপের সাফল্য। জনগণের নিরাপত্তাকে হুমকির মধ্যে রেখে উন্নয়নের ওপর
জোর দেয়াটা কাজের কথা নয়। উন্নয়ন ও জননিরাপত্তা দুটোই থাকতে হবে দেশে।
জননিরাপত্তার প্রশ্নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা যে সবচেয়ে বড় শর্ত সেটাও
বুঝতে হবে।
No comments