ইনকিলাব জিন্দাবাদ by সোহরাব হাসান
যখন
বাংলাদেশে লেখক-কবি-সাংবাদিকেরা রাষ্ট্রীয় পদক, পুরস্কার ও সম্মান লাভের
জন্য উন্মুখ, তখন ভারতের তামিলনাড়ুর এক কবিকে দেখেছি রাষ্ট্রীয় পদক
প্রত্যাখ্যান করতে। জীবিত অবস্থায় তিনি রাজ্য সরকারের সম্মাননা ফিরিয়ে
দিয়েছেন। মৃত্যুর পর ভারতীয় সাহিত্যে সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার সাহিত্য
আকাদেমি সম্মাননা নিতেও অপারগতা জানিয়ে তাঁর স্বজনেরা বলেছেন, এই পুরস্কার
নেওয়া হবে কবির প্রতি অসম্মান। কবির নাম ইনকিলাব। এটি তাঁর ছদ্মনাম। পৈতৃক
নাম এস এইচ এস সহুল হামিদ। জন্ম ১৯৪৪ সালে, তামিলনাড়ুর রামানাথন জেলার
কিলাকারিতে।
কৈশোর থেকে এই কবি অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। তিনি
প্রথম কবিতা লেখেন মাত্র ১২ বছর বয়সে, দরগা থেকে মানসিকভাবে অসুস্থ এক
বালিকাকে বের করে দেওয়ার প্রতিবাদে। আজীবন তাঁর এই প্রতিবাদী ভূমিকা জাগরূক
ছিল। ইনকিলাব পড়াশোনা করেন ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে। পরবর্তী সময়ে তিনি
চেন্নাইয়ের নিউ কলেজে তামিল ভাষা পড়াতেন। কবি প্রথমে দ্রাবিড় জাতীয়তাবাদ
থেকে তামিল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যোগ দেন এবং পরে মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদে
দীক্ষা নেন। ইনকিলাব একবার লিখেছিলেন, ‘পুরস্কার আমাকে সম্মানিত করবে, যদি
আমি লাশের মতো বেঁচে থাকি।’ তিনি ছিলেন তাঁদের কবি, যাঁরা নিজেদের অধিকারের
কথা বলতে পারেন না, যাঁরা নির্যাতিত, বঞ্চিত ও পশ্চাৎপদ। ইনকিলাব ‘জনগণের
কবি’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। তিনি সব সময় সরকারি পুরস্কার-স্বীকৃতির
বিরোধিতা করতেন। তাঁর কথা ছিল, ‘আমি পুরস্কার পাওয়ার জন্য লিখি না। বরং তার
বিপরীত-অন্যায়ের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর জন্য লিখি।’ ১৯৬৮ সালে যখন
তামিলনাড়ুর কিলাবেনমনির গণহত্যার বিষয়ে দ্রাবিড় নেতারা নিশ্চুপ থাকলেন, তখন
এই কবি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ত্যাগ করে সাম্যবাদে ঝুঁকে পড়েন। ওই গণহত্যায়
৪৪ জন দলিত শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্য খুন হয়েছিলেন। এরপর ইনকিলাব যে
কবিতা লিখলেন, তা দলিতদের জাতীয় সংগীত হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছে। কবিতার প্রথম
পঙ্ক্তি ছিল, ‘মানুষ, আমরাও মানুষ’। শ্রীলঙ্কায় তামিল বিদ্রোহী এলটিটিইর
(লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম) ওপর থেকে তামিলনাড়ু সরকার সমর্থন
প্রত্যাহার করে নিলে ইনকিলাব প্রতিবাদ করেন। তামিলনাড়ুর রাজা রাজা চোলার
১০০০ তম জন্মজয়ন্তী পালনেরও বিরোধিতা করেন এই কবি। তিনি বিশ্বাস করতেন, এই
রাজা ছিলেন জনগণের শোষণকারী।
এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে সরকার তাঁর কবিতা
পাঠ্যবই থেকে বাদ দেয়। কিন্তু ইনকিলাব তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করেননি। তাঁর
পর্যবেক্ষণ ছিল, সরকারগুলোর চেহারা বদল হলেও একই ছদ্মবেশ থেকে যায়। সামাজিক
অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ইনকিলাবের কবিতা ছিল শাণিত তরবারি।
১৯৮০-এর দশকে কোলাপাত্তির ঝরা থেকে পানি খেতে গেলে চার দলিত শিশুকে হত্যা
করে উচ্চবর্ণের লোকজন। প্রতিবাদে ইনকিলাব লিখলেন: ‘কোলাপাত্তির পানি পুড়িয়ে
মারল শিশুকে/পানিও আগুনের মতো পোড়ায়/যাঁরা আইনের রক্ষক হয়ে আছেন, এসব কি
কখনো তাঁদের স্পর্শ করে?/এই আগুনে দগ্ধ মাংস ও হাড়ে সরকার ও আদালত তেলের
জোগান দেয়।’ ইনকিলাব বিশ্বাস করতেন, তাঁর কবিতা একদিন সমাজ পরিবর্তনে
ভূমিকা রাখবে। তামিল লেখক ও প্রগতিশীল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিকুমার
লিখেছেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আরও অনেকে কবিতা লিখেছেন, কিন্তু তাঁর
(ইনকিলাব) মতো আর কেউ কি কবিতাকে আগুনের টুকরোয় পরিণত করতে পেরেছেন?
ইনকিলাব তাঁর কবিতায় মানবতার জয়গান গেয়েছেন। নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে ও
জাতিগত বৈষম্যের বিপক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ছিলেন তামিল কবিতার
অন্যতম আধুনিক রূপকার। ইনকিলাব বলতেন, ‘যত দিন না পর্যন্ত জাতিভেদহীন সমাজ
প্রতিষ্ঠিত হবে, তত দিন আমার লেখনী চলবে।’ ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর এই
বিপ্লবী কবির মৃত্যু হয়। এরপর ভারতীয় সাহিত্য আকাদেমি তাঁকে সম্মাননা
দেওয়ার প্রস্তাব দিলে কবির মেয়ে ড. আমিনা পারভিন তা গ্রহণ করতে অপারগতা
জানান।
সাহিত্য আকাদেমির সাধারণ সম্পাদককে লেখা তাঁর চিঠির ভাষ্য ছিল নিম্নরূপ: স্যার/ম্যাডাম
ইনকিলাব ছিলেন কণ্ঠহীনের, নির্যাতিতের, সুবিধাবঞ্চিতের এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের কণ্ঠস্বর। তাঁর মতো একজন ব্যক্তিত্বের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ফলে তাঁর নাম আরও বৃহত্তর জাতীয় স্তরে পৌঁছাবে এ কথা সত্য। কিন্তু ইনকিলাব স্বীকৃতি ও পুরস্কার সম্পর্কে বলে গেছেন, ‘আমি পুরস্কার ও স্বীকৃতির আশা করে লিখি না। আমি লিখি তার বিপরীত-অন্যায়ের নিন্দা ও প্রতিবাদের জন্য। সরকার আমাকে তখনই দেবে, যখন আমার কলম তা দাবি করবে।’ আমিনা তাঁর চিঠিতে আরও লিখেছেন, ‘দেশে আজ সহিংসতা, শ্রেণিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা ও নিপীড়ন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যেসব ব্যক্তি ক্ষমতার সমালোচনা করেন এবং প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করান, দিনের আলোয় তাঁদের খুন করা হচ্ছে। এ অবস্থায় পুরস্কার নেওয়া হবে ইনকিলাবের লেখা এবং তিনি যে জীবনাদর্শ ধারণ করতেন তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।...আমরা মনে করি, ইনকিলাবের রচনাবলি আমজনতার কাছে পৌঁছেছে, সেটাই তাঁর প্রতি বৃহত্তম স্বীকৃতি। এ কারণে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমরা পুরস্কার গ্রহণ করছি না।
ইনকিলাব পরিবার ও ইনকিলাব ট্রাস্টের পক্ষ থেকে
আমিনা ইনকিলাব নিজেকে যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী বলে দাবি করতেন। তিনি তাঁর মরদেহ চেংগালু পাটু হাসপাতালে দান করে যান। ইনকিলাব সাম্যবাদী আদর্শে দীক্ষা নিলেও কমিউনিস্ট পার্টির সংকীর্ণ ও গোঁড়া ধ্যানধারণা কখনো গ্রহণ করেননি। ‘সদর দপ্তর’ উড়িয়ে দেওয়ার মতো তত্ত্বের কড়া সমালোচক ছিলেন এই কবি। তিনি বলতেন, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অর্থ এই নয় যে লেখকদের নিজস্ব চিন্তা বা দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে না। কবি হিসেবে অধিক খ্যাতি পেলেও ইনকিলাবের নাটকগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনেক কলেজে তাঁর নাটক পাঠ্য হয়েছে। ভারতে এ রকম দ্রোহী ও প্রতিবাদী লেখক-কবি আরও আছেন। ২০১৫ সালে হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে কলাম ধরার কারণে প্রগতিশীল চিন্তাবিদ এম এম কালবুর্গি হত্যার পরও সাহিত্য আকাদেমি কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বিভিন্ন ভাষার লেখক-কবিরা। তাঁদের মধ্যে আছেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক নয়নতারা সেহগল, অশোক বাজপেয়ি, মালয়ালম লেখক সারাহ্ জোসেফ, গুজরাটের গণেশ দেবী, দিল্লির আমন শেঠি, কর্ণাটকের কুম বীরভদ্রাপ্পা, পাঞ্জাবের গুরবচন সিং ভুল্লার, আজমের সিং আওলাখ, আত্মজিৎ সিং, ওয়ারিয়াম সাধু ও কাশ্মীরি লেখক গুলাম নবি খেয়াল প্রমুখ। কিন্তু রাষ্ট্রীয় অনাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লেখক-কবিদের তেমন প্রতিবাদী ভূমিকায় দেখা যায় না। বরং আমাদের প্রগতিশীল লেখক-কবিদের কেউ কেউ অতীতে স্বৈরাচারী শাসকের হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছেন, তাঁর কবিসভার সদস্য হতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করেছেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দু-একজনের নাম করা যায়। সত্তরের দশকে বদরুদ্দীন উমর বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। আশির দশকে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে শামসুর রাহমান দৈনিক বাংলার প্রধান সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী এরশাদের হাত থেকে একুশে পদক নেননি। আর প্রবীণ রাজনীতিক অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ স্বাধীনতা পুরস্কার নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। যিনি আজীবন বামপন্থী রাজনীতি করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন, তিনি সম্ভবত স্বাধীনতা পদক বা পুরস্কার পাওয়াকে বড় করে দেখেননি। এটি তাঁর চরিত্রের দার্ঢ্য দিক। কিন্তু বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ করে কেউ পদক প্রত্যাহার করেছেন এ রকম নজির নেই। আমরা চাই আমাদের সাহিত্যে ও সমাজে ইনকিলাবদের জন্ম হোক। দুঃসময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কেউ না কেউ সাহস করে বলুক, ‘পথিক,
তুমি পথ হারাইয়াছ।’
সোহরাব হাসান : প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি
sohrabhassan 55 @gmail. com
ইনকিলাব ছিলেন কণ্ঠহীনের, নির্যাতিতের, সুবিধাবঞ্চিতের এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের কণ্ঠস্বর। তাঁর মতো একজন ব্যক্তিত্বের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ফলে তাঁর নাম আরও বৃহত্তর জাতীয় স্তরে পৌঁছাবে এ কথা সত্য। কিন্তু ইনকিলাব স্বীকৃতি ও পুরস্কার সম্পর্কে বলে গেছেন, ‘আমি পুরস্কার ও স্বীকৃতির আশা করে লিখি না। আমি লিখি তার বিপরীত-অন্যায়ের নিন্দা ও প্রতিবাদের জন্য। সরকার আমাকে তখনই দেবে, যখন আমার কলম তা দাবি করবে।’ আমিনা তাঁর চিঠিতে আরও লিখেছেন, ‘দেশে আজ সহিংসতা, শ্রেণিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা ও নিপীড়ন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যেসব ব্যক্তি ক্ষমতার সমালোচনা করেন এবং প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করান, দিনের আলোয় তাঁদের খুন করা হচ্ছে। এ অবস্থায় পুরস্কার নেওয়া হবে ইনকিলাবের লেখা এবং তিনি যে জীবনাদর্শ ধারণ করতেন তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।...আমরা মনে করি, ইনকিলাবের রচনাবলি আমজনতার কাছে পৌঁছেছে, সেটাই তাঁর প্রতি বৃহত্তম স্বীকৃতি। এ কারণে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমরা পুরস্কার গ্রহণ করছি না।
ইনকিলাব পরিবার ও ইনকিলাব ট্রাস্টের পক্ষ থেকে
আমিনা ইনকিলাব নিজেকে যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী বলে দাবি করতেন। তিনি তাঁর মরদেহ চেংগালু পাটু হাসপাতালে দান করে যান। ইনকিলাব সাম্যবাদী আদর্শে দীক্ষা নিলেও কমিউনিস্ট পার্টির সংকীর্ণ ও গোঁড়া ধ্যানধারণা কখনো গ্রহণ করেননি। ‘সদর দপ্তর’ উড়িয়ে দেওয়ার মতো তত্ত্বের কড়া সমালোচক ছিলেন এই কবি। তিনি বলতেন, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অর্থ এই নয় যে লেখকদের নিজস্ব চিন্তা বা দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে না। কবি হিসেবে অধিক খ্যাতি পেলেও ইনকিলাবের নাটকগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনেক কলেজে তাঁর নাটক পাঠ্য হয়েছে। ভারতে এ রকম দ্রোহী ও প্রতিবাদী লেখক-কবি আরও আছেন। ২০১৫ সালে হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে কলাম ধরার কারণে প্রগতিশীল চিন্তাবিদ এম এম কালবুর্গি হত্যার পরও সাহিত্য আকাদেমি কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বিভিন্ন ভাষার লেখক-কবিরা। তাঁদের মধ্যে আছেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক নয়নতারা সেহগল, অশোক বাজপেয়ি, মালয়ালম লেখক সারাহ্ জোসেফ, গুজরাটের গণেশ দেবী, দিল্লির আমন শেঠি, কর্ণাটকের কুম বীরভদ্রাপ্পা, পাঞ্জাবের গুরবচন সিং ভুল্লার, আজমের সিং আওলাখ, আত্মজিৎ সিং, ওয়ারিয়াম সাধু ও কাশ্মীরি লেখক গুলাম নবি খেয়াল প্রমুখ। কিন্তু রাষ্ট্রীয় অনাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লেখক-কবিদের তেমন প্রতিবাদী ভূমিকায় দেখা যায় না। বরং আমাদের প্রগতিশীল লেখক-কবিদের কেউ কেউ অতীতে স্বৈরাচারী শাসকের হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছেন, তাঁর কবিসভার সদস্য হতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করেছেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দু-একজনের নাম করা যায়। সত্তরের দশকে বদরুদ্দীন উমর বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। আশির দশকে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে শামসুর রাহমান দৈনিক বাংলার প্রধান সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী এরশাদের হাত থেকে একুশে পদক নেননি। আর প্রবীণ রাজনীতিক অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ স্বাধীনতা পুরস্কার নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। যিনি আজীবন বামপন্থী রাজনীতি করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন, তিনি সম্ভবত স্বাধীনতা পদক বা পুরস্কার পাওয়াকে বড় করে দেখেননি। এটি তাঁর চরিত্রের দার্ঢ্য দিক। কিন্তু বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ করে কেউ পদক প্রত্যাহার করেছেন এ রকম নজির নেই। আমরা চাই আমাদের সাহিত্যে ও সমাজে ইনকিলাবদের জন্ম হোক। দুঃসময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কেউ না কেউ সাহস করে বলুক, ‘পথিক,
তুমি পথ হারাইয়াছ।’
সোহরাব হাসান : প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি
sohrabhassan 55 @gmail. com
No comments