‘পাগলিটা মা হলেন, বাবা হলেন না কেউ’
মাদারীপুরের
রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো মানসিক ভারসাম্য হারানো এক নারীর কোলে জন্ম
নেয়া নবজাতকের লালন-পালন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কেউ ওই নারীর পরিচয় জানে
না। ধাত্রী ছাড়াই এক বালুর মাঠে মঙ্গলবার কন্যা সন্তান প্রসব করেন সালমা
বেগম (৩৫) নামের ওই নারী। এ নিয়ে গত দুই দিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে বেশ
আলোচনা হচ্ছে। এদিকে বাবাহীন এই সন্তানের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। তার ভরন-পোষণের
দায়িত্ব কে নেবে এ নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বছরখানেক
ধরে শিবচর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় ময়লা ছেঁড়া কাপড়ে এলামেলো চুলে
ঘুরে বেড়ান সালমা বেগম। কখনও মানুষের কাছে হাত পাততেন না। কেউ কিছু দিলে তা
খান। আবারও না খেয়েও থাকেন অনেক সময়। ফুটপাত, স্কুলের বারান্দা বা গাছতলায়
ঘুমিয়েই রাত কাটান তিনি। শিশু-কিশোরসহ বয়স্ক সবার কাছেই তিনি ‘পাগলি’ বলেই
পরিচিত। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে স্থানীয় হাতিরবাগান এলাকার বালুর মাঠে এক
কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ‘পাগলি’। এসময় মাঠে স্থানীয় যুবক অমি, সাগরসহ কয়েক
বন্ধু আড্ডা দিচ্ছিলেন। শিশুর কান্নার শব্দ পেয়ে এগিয়ে যান তারা। মোবাইলের
আলোয় দেখতে পান এক ফুটফুটে নবজাতক। পাশে সেই নারী অসুস্থ অবস্থায় পড়ে
আছেন। তারা আশপাশের বাড়ির মহিলাদের ডেকে আনলে তারা বাচ্চাটিকে পরিষ্কার
পরিচ্ছন্ন করেন।
এরপর দু’জনকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে
যাওয়া হয়। বর্তমানে সেখানে নবজাতক সুস্থ আছে। খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের কর্তকর্তারা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ
নের্তৃবৃন্দ ও উৎসুক জনতা হাসপাতালে ছুটে যান। অনেকে মা-সন্তানকে
আর্থিকভাবে সহযোগিতাও করেন। শিশুটির নাম রাখা হয়েছে জান্নাতুল হাবিবা
হুমাইরা। নবজাতক ও মাকে বালুর মাঠ থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জাহিদ হাসান
অমি বৃহস্পতিবার ফেসবুকে লিখেন- “প্রিয় মামা অবশেষে তোমার নাম ঠিক করলাম
আমি ও লিটু। এই রাত ২টা ৩৫- এ। ভাবতে ভাবতে খুব সুন্দর একটি নাম তৈরি
করলাম। জান্নাতুল হাবিবা নূরে (হুমায়রা)।” ফেসবুকে মাধ্যমে অমি এবং তার
বন্ধু ইব্রাহীম ও সাগরের প্রশংসা করছেন অনেকেই। আবার অনেকেই মানসিক
প্রতিবন্ধী নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করা ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে
বিচারের মুখোমুখি করার দাবিও জানিয়েছেন। একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী নবজাতক ও
মায়ের ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘পাগলিটা মা হলেন, বাবা হলেন না কেউ’। এদিকে
স্থানীয়রা মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর কাছে শিশুটির নিরাপত্তা ও ভবিষ্যত নিয়ে
শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অবশ্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে শিশুটির ভবিষ্যত
নিশ্চিত করা ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দত্তক প্রদানের ব্যাপারে আশ্বাস
দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ।
No comments