এবার মার্কিন-চীন প্রযুক্তিযুদ্ধ
শুধু
ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপ নিয়ে নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের
মধ্যে প্রযুক্তিযুদ্ধও শুরু হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন গত আগস্টে চীনের
বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরির অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে। সম্প্রতি মার্কিন
কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, এ ব্যাপারে শিগগিরই নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হতে
পারে। মার্কিন বাণিজ্যসচিব উইলবার রস বলেছেন, উচ্চ প্রযুক্তি হবে চীনের
সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে ‘চ্যালেঞ্জের নতুন ক্ষেত্র’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি রয়টার্সের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, চীনের
ওপর বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদসংক্রান্ত বড় ধরনের জরিমানা আরোপ করা হতে পারে।
এমনকি তাঁর স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন বক্তৃতায়ও আইপি ঠিকানা চুরির প্রসঙ্গটি
এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল
স্টাডিসের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম রাইনস বলেছেন, ‘সব প্রশাসনের হাতেই
বিভিন্ন সুযোগ থাকে, চরম থেকে মাঝারি—যেকোনো পদক্ষেপই সে নিতে পারে।’ তিনি
বিল ক্লিনটনের প্রশাসনেও কাজ করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘পার্থক্য হচ্ছে, এই
প্রেসিডেন্ট চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতেই বেশি আগ্রহী।’ ব্যাপারটা হলো, মার্কিন
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর চীনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরি অনেক দিন ধরেই
দেশটির মাথাব্যথার কারণ। এর যেমন নিরাপত্তাজনিত কারণ আছে, তেমনি অর্থনৈতিক
কারণও আছে। আইপি চুরির মধ্যে আছে নকল পণ্য ও পাইরেটেড সফটওয়্যার বিক্রি। এই
বাবদ মার্কিন কোম্পানিগুলোর বছরে ২২ হাজার ৫০০ কোটি থেকে ৬০ হাজার কোটি
ডলার ক্ষতি হচ্ছে। মার্কিন বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরিবিষয়ক কমিশনের ২০১৭
সালের প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে। চীন যখন নিম্ন প্রযুক্তি থেকে উচ্চ
প্রযুক্তির যুগে অর্থনীতিকে নিয়ে যেতে চাইছে এবং অর্থনীতিকে পুনর্গঠিত করতে
চাইছে, তখন এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলো।
শিকাগো কাউন্সিল অন গ্লোবাল
অ্যাফেয়ার্সের ফেলো ফিল লেভি বলেছেন, ‘চীন এ ব্যাপারে ক্রমেই সচেতন হয়ে
উঠছে যে তার পক্ষে কম দামের পণ্য বানিয়ে আর টিকে থাকা সম্ভব হবে না।’ এই
ব্যক্তি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের বাণিজ্য উপদেষ্টা
ছিলেন। ২০১৫ সালে চীন রাষ্ট্রীয় শিল্প পরিকল্পনা ‘মেড ইন চায়না ২০২৫’-এ
প্রযুক্তি খাতে নেতৃত্ব দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে। তারা যেসব বিষয়ে
অগ্রাধিকার দিয়েছিল সেগুলো হচ্ছে ইলেকট্রিক গাড়ি উৎপাদন ও পঞ্চম প্রজন্মের
প্রথম মোবাইল নেটওয়ার্ক তৈরি করা। এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে তারা কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তার জগতে প্রভাব বিস্তার করতে চায়। একই সঙ্গে, তারা কম্পিউটার চিপ
তৈরির সক্ষমতাও বাড়াচ্ছে। এই লক্ষ্য অর্জনে চীনকে শিল্প ও প্রযুক্তিগত
জ্ঞান বাড়াতে হবে। আর সে কারণেই তারা অন্য দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ
আহরণের ব্যাপারে আগ্রহী। ২০১৫ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যখন
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে আশ্বস্ত করলেন যে চীন আর
করপোরেট গোপনীয় তথ্য চুরি করবে না, তখন এটি এত বড় সমস্যা ছিল না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনে ব্যবসা করার জন্য কোম্পানিগুলোকে এখন সেখানে
প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ব্যাপারটা হলো, চীনে যারা
ব্যবসা করতে চায়, তাদের স্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করতে হয়।
এই অংশীদারির কারণে চীনা কোম্পানিগুলো বিদেশি কোম্পানির এমন অনেক তথ্য পেয়ে
যাচ্ছে, যা গোপন রাখা হতো। এরপর ২০১৭ সালে চীন নতুন এক আইন করে আন্তদেশীয়
তথ্য স্থানান্তরের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে। এই আইনের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে তথ্য
সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়। ৮০ শতাংশ বিদেশি কোম্পানি বলেছে, তারা এ
ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তদন্ত নিয়ে ট্রাম্প কত দূর
যাবেন তা পরিষ্কার নয়।
No comments