জনদরদি সেজে মাদক ব্যবসায় ‘পঁচিশ’
তাঁর নাম মো. নাদিম হোসেন। কিন্তু এই নামে
তিনি তেমন পরিচিত নন। রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে ৩১ বছর বয়সী
এই যুবক পরিচিত ‘পঁচিশ’ নামে। ক্যাম্পের গরিব মানুষকে দান করে তাদের কাছে
জনদরদি সেজেছেন। কখনো কখনো নেতৃত্ব দেন ক্যাম্পের মাদকবিরোধী প্রচারণায়।
তবে এসবের আড়ালে তাঁর আসল পেশা মাদক ব্যবসা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর
কাছে পঁচিশ রাজধানীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে তালিকাভুক্ত। প্রতিদিন
তিনি লাখ লাখ টাকা আয় করেন মাদক ব্যবসা থেকে। তবে পুলিশ সহজে তাঁর নাগাল
পায় না। কখনো আত্মসমর্পণ করে মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন;
আবার কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে পুরোনো ব্যবসায় ফিরে যান। কেউ যদি তাঁর
ব্যবসায় বাধা দেন, তাহলে হত্যা করতেও পিছপা হন না তিনি। মোহাম্মদপুর জেনেভা
ক্যাম্পে পঁচিশের জন্ম। জন্মের পর মা-বাবা ছেলের নাম রাখেন মো. নাদিম
হোসেন। জেনেভা ক্যাম্পের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ছোটবেলায় নাদিমের
মা-বাবা মারা যান। তখন সংসারে ছিল আরও দুই ভাই ও দুই বোন। এদের মধ্যে এক
ভাই ও এক বোন প্রতিবন্ধী। অভাব-অনটনের কারণে ছোটবেলাতেই জেনেভা ক্যাম্প
এলাকার একটি হোটেলে কাজ করেন তিনি। তখন প্রতিদিন বেতন ছিল ২৫ টাকা। হোটেলে
কাজ করতে করতে গাঁজা বিক্রি শুরু করেন। সাদা কাগজে মোড়ানো এক পুঁটলি গাঁজা
বিক্রি করতেন ২৫ টাকায়। হোটেলের বেতন আর গাঁজার দাম একই হওয়ায় নাদিমকে
এলাকাবাসী ডাকতে শুরু করে ‘পঁচিশ’ নামে। একসময় নাদিম নিজেই ‘পঁচিশ’ নামে
পরিচয় দিতে শুরু করেন।
পঁচিশের প্রভাব বিস্তার
২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত চার বছর জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় পঁচিশকে গাঁজা বিক্রি করতে দেখেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা। ২০১০ সালের দিকে ওই কর্মকর্তা বদলি হয়ে যান। ২০১৬ সালে তিনি আবার বদলি হয়ে মোহাম্মদপুর এলাকার দায়িত্বে আসেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, ১০ বছর আগে জেনেভা ক্যাম্পে বিক্ষিপ্তভাবে মাদকের কেনাবেচা হতো। তখন এই ক্যাম্পে মাদক বিক্রেতারা সংগঠিত ছিল না। সহজেই অভিযান চালানো যেত। বদলি হয়ে আসার পর ২০১৬ সালের জুলাই মাসে জেনেভা ক্যাম্পে ৮০০ ইয়াবা বিক্রির অভিযোগে দুজনকে ধরেন তিনি। আসামি নিয়ে বের হওয়ার সময় ঘিরে ফেলা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৪ জনের দলটিকে। ক্যাম্পের অর্ধশত নারী-পুরুষ চারপাশ থেকে তাদের ঘিরে ফেলে। এ সময় এক যুবক বুক চাপড়াতে চাপড়াতে চিৎকার করে বলেন, ‘আমি পঁচিশ। আমি মাদক বেচি, ইয়াবা বেচি। পারলে আমারে ঠেকা।’ জেনেভা ক্যাম্পের এক বাসিন্দার কাছ থেকে জানা গেল, ক্যাম্প থেকে কাউকে ধরে নেওয়ার সময় দলবল নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বাধা দেন পঁচিশ। প্রয়োজনে হামলাও করে তাঁর বাহিনী। আদালতে চালান দেওয়ার পর জামিনে ছাড়িয়ে আনার কাজও তদারক করেন তিনি। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে তিন আসামিকে আটক করা হলে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যৌথ বাহিনীর ওপর পঁচিশের বাহিনী হামলা চালায়। এ সময় তিনি নিজে তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করেন যৌথ বাহিনীর ওপর। পুলিশ ছয়টি গুলি ছুড়লে তাঁর বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
দাপট পুরো ক্যাম্পে
জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় ৪০ হাজারের মতো আটকে পড়া পাকিস্তানি বসবাস করে। এদের মধ্যে দুই শতাধিক এখন মাদক ব্যবসা করেন। এ দলের প্রধান নেতা ইশতিয়াক। ইশতিয়াকের সেকেন্ড ইন কমান্ড হলেন পঁচিশ আর ম্যানেজার হলেন মোল্লা আরশাদ। তবে ইশতিয়াক বাইরে থেকে ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা করেন। এখন চাহিদা বেশি থাকায় ক্যাম্পে ইয়াবার রমরমা ব্যবসা। ইশতিয়াক কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান এনে জেনেভা ক্যাম্পে বিক্রি করেন। তবে এখানে হেরোইন, মদ, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ সব ধরনের মাদক পাওয়া যায়। উঠতি বয়স থেকে তরুণ-তরুণী—সবার কাছে এখন ইয়াবার চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। মাদকের চালান চারটি দলের মধ্যে ভাগ করেন পঁচিশ ও আরশাদ। দল চারটি নেতৃত্বে রয়েছেন পাচু সেলিম, সাথী, রাজিয়া ও শান্তি। প্রতিটি দলে ১০ থেকে ২০ জন সদস্য রয়েছেন। ক্যাম্পের বাইরে থেকে আবার পর্যবেক্ষণকারী দল রয়েছে। এসব দলে শিশু সদস্য বেশি। এমনকি থানা, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের সামনেও এদের নজরদারি থাকে। অভিযান চালানোর আগাম খবর দ্রুত ক্যাম্পে জানানোই এই দলের কাজ। এতে সুবিধা হলো, অভিযানের আগাম খবর জানতে পারলে অসংখ্য অলিগলি দিয়ে মাদক বিক্রেতারা সহজেই গা ঢাকা দিতে পারে। আর ধরা পড়লে ঘিরে ফেলা যায় অভিযানকারীদের।
পঁচিশের ওপর অনেকের ছায়া
রাজনৈতিক দল, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি—সবার ছত্রচ্ছায়ায় মাদকের ব্যবসা করে আসছেন পঁচিশ। তিনি ও তাঁর অংশীদার ইশতিয়াক দুজনেই অবাঙালি। তাঁদের দলের ৯০ শতাংশ সদস্যও অবাঙালি। স্ট্রান্ডেড পাকিস্তানিজ জেনারেল রিপ্যাট্রিয়েশন কমিটির (এসপিজিআরসি) এক শীর্ষ নেতা পঁচিশ ও ইশতিয়াককে মদদ দেন। মাদক বিক্রেতাদের কেউ আটক হলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ক্যাম্পে মিছিল করানো হয়। এর সঙ্গে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে জেনেভা ক্যাম্প থেকে লোক সরবরাহ করেন পঁচিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন স্তরের অনেক কর্মকর্তাকে সাপ্তাহিক নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেন পঁচিশ।
এত অভিযোগেও জেলে মাত্র ১২ দিন
পঁচিশের নামে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যাসহ ১২টির মতো মামলা রয়েছে। বাকিগুলো মাদকের মামলা। এর মধ্যে চারটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দায়ের করা। তাদের তিনটি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। সবশেষ মামলাটি হয় গত ৩ নভেম্বর। এদিন প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার হন পঁচিশ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, এপিবিএন ও এনএসআইয়ের ২০০ সদস্য অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, মদ, গাঁজাসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এর ১২ দিন পর ১৫ নভেম্বর নিম্ন আদালত থেকে চারটি মামলায় জামিন নিয়ে ছাড়া পান তিনি। ক্যাম্পে গিয়ে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত মাদক ব্যবসা করেন। এরপর থেকে তাঁকে অবশ্য ক্যাম্পে দেখা যাচ্ছে না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের অনেকে দোষ দেন যে মাদকের গডফাদারদের ধরা হয় না। পঁচিশ একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তিনি জামিন পেয়েছেন, এটা দুঃখজনক। আমি হতাশ।’ মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার কারণে পঁচিশকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলবে বলে তিনি জানান।
গ্রেপ্তার এড়াতে ফন্দি
গ্রেপ্তার এড়াতে নানা ফন্দি আঁটেন পঁচিশ। এর একটি আত্মসমর্পণের কৌশল। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দীন মীর প্রথম আলোকে বলেন, ছয় মাস আগে মোহাম্মদপুর থানায় পঁচিশ আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তখন বলেন, মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেবেন। ভালো হয়ে যাবেন। ঢাকা ছেড়ে চলে যাবেন। মামলা থাকায় তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও মাদক ব্যবসা শুরু করেন।
কখনো কখনো ‘জনদরদি’
জেনেভা ক্যাম্পের কয়েকজন বাসিন্দা জানালেন, পঁচিশ দুটি বিয়ে করেছেন। এক বউয়ের বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুরে। সেখানেও তিনি মাদক ব্যবসা চালান। সৈয়দপুর, বগুড়া ও ঢাকার আশুলিয়ায় তিনি বিপুল পরিমাণ জমির মালিক। ব্যক্তিগত গাড়ি আছে। আর সবই করেছেন মাদক ব্যবসার টাকায়। ক্যাম্পের অনেকের বিয়ের অনুষ্ঠানে অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন। ক্যাম্পের কাওয়ালি অনুষ্ঠানেও টাকা দেন। তাই তাঁকে ধরতে গেলে বা তিনি ডাক দিলে ক্যাম্পের বহু লোক তাঁর পক্ষে দাঁড়ায়। এভাবেই মাদক ব্যবসার নিরাপদ বলয় গড়েছেন পঁচিশ।
পঁচিশের প্রভাব বিস্তার
২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত চার বছর জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় পঁচিশকে গাঁজা বিক্রি করতে দেখেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা। ২০১০ সালের দিকে ওই কর্মকর্তা বদলি হয়ে যান। ২০১৬ সালে তিনি আবার বদলি হয়ে মোহাম্মদপুর এলাকার দায়িত্বে আসেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, ১০ বছর আগে জেনেভা ক্যাম্পে বিক্ষিপ্তভাবে মাদকের কেনাবেচা হতো। তখন এই ক্যাম্পে মাদক বিক্রেতারা সংগঠিত ছিল না। সহজেই অভিযান চালানো যেত। বদলি হয়ে আসার পর ২০১৬ সালের জুলাই মাসে জেনেভা ক্যাম্পে ৮০০ ইয়াবা বিক্রির অভিযোগে দুজনকে ধরেন তিনি। আসামি নিয়ে বের হওয়ার সময় ঘিরে ফেলা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৪ জনের দলটিকে। ক্যাম্পের অর্ধশত নারী-পুরুষ চারপাশ থেকে তাদের ঘিরে ফেলে। এ সময় এক যুবক বুক চাপড়াতে চাপড়াতে চিৎকার করে বলেন, ‘আমি পঁচিশ। আমি মাদক বেচি, ইয়াবা বেচি। পারলে আমারে ঠেকা।’ জেনেভা ক্যাম্পের এক বাসিন্দার কাছ থেকে জানা গেল, ক্যাম্প থেকে কাউকে ধরে নেওয়ার সময় দলবল নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বাধা দেন পঁচিশ। প্রয়োজনে হামলাও করে তাঁর বাহিনী। আদালতে চালান দেওয়ার পর জামিনে ছাড়িয়ে আনার কাজও তদারক করেন তিনি। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে তিন আসামিকে আটক করা হলে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যৌথ বাহিনীর ওপর পঁচিশের বাহিনী হামলা চালায়। এ সময় তিনি নিজে তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করেন যৌথ বাহিনীর ওপর। পুলিশ ছয়টি গুলি ছুড়লে তাঁর বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
দাপট পুরো ক্যাম্পে
জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় ৪০ হাজারের মতো আটকে পড়া পাকিস্তানি বসবাস করে। এদের মধ্যে দুই শতাধিক এখন মাদক ব্যবসা করেন। এ দলের প্রধান নেতা ইশতিয়াক। ইশতিয়াকের সেকেন্ড ইন কমান্ড হলেন পঁচিশ আর ম্যানেজার হলেন মোল্লা আরশাদ। তবে ইশতিয়াক বাইরে থেকে ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা করেন। এখন চাহিদা বেশি থাকায় ক্যাম্পে ইয়াবার রমরমা ব্যবসা। ইশতিয়াক কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান এনে জেনেভা ক্যাম্পে বিক্রি করেন। তবে এখানে হেরোইন, মদ, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ সব ধরনের মাদক পাওয়া যায়। উঠতি বয়স থেকে তরুণ-তরুণী—সবার কাছে এখন ইয়াবার চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। মাদকের চালান চারটি দলের মধ্যে ভাগ করেন পঁচিশ ও আরশাদ। দল চারটি নেতৃত্বে রয়েছেন পাচু সেলিম, সাথী, রাজিয়া ও শান্তি। প্রতিটি দলে ১০ থেকে ২০ জন সদস্য রয়েছেন। ক্যাম্পের বাইরে থেকে আবার পর্যবেক্ষণকারী দল রয়েছে। এসব দলে শিশু সদস্য বেশি। এমনকি থানা, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের সামনেও এদের নজরদারি থাকে। অভিযান চালানোর আগাম খবর দ্রুত ক্যাম্পে জানানোই এই দলের কাজ। এতে সুবিধা হলো, অভিযানের আগাম খবর জানতে পারলে অসংখ্য অলিগলি দিয়ে মাদক বিক্রেতারা সহজেই গা ঢাকা দিতে পারে। আর ধরা পড়লে ঘিরে ফেলা যায় অভিযানকারীদের।
পঁচিশের ওপর অনেকের ছায়া
রাজনৈতিক দল, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি—সবার ছত্রচ্ছায়ায় মাদকের ব্যবসা করে আসছেন পঁচিশ। তিনি ও তাঁর অংশীদার ইশতিয়াক দুজনেই অবাঙালি। তাঁদের দলের ৯০ শতাংশ সদস্যও অবাঙালি। স্ট্রান্ডেড পাকিস্তানিজ জেনারেল রিপ্যাট্রিয়েশন কমিটির (এসপিজিআরসি) এক শীর্ষ নেতা পঁচিশ ও ইশতিয়াককে মদদ দেন। মাদক বিক্রেতাদের কেউ আটক হলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ক্যাম্পে মিছিল করানো হয়। এর সঙ্গে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে জেনেভা ক্যাম্প থেকে লোক সরবরাহ করেন পঁচিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন স্তরের অনেক কর্মকর্তাকে সাপ্তাহিক নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেন পঁচিশ।
এত অভিযোগেও জেলে মাত্র ১২ দিন
পঁচিশের নামে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যাসহ ১২টির মতো মামলা রয়েছে। বাকিগুলো মাদকের মামলা। এর মধ্যে চারটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দায়ের করা। তাদের তিনটি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। সবশেষ মামলাটি হয় গত ৩ নভেম্বর। এদিন প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার হন পঁচিশ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, এপিবিএন ও এনএসআইয়ের ২০০ সদস্য অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, মদ, গাঁজাসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এর ১২ দিন পর ১৫ নভেম্বর নিম্ন আদালত থেকে চারটি মামলায় জামিন নিয়ে ছাড়া পান তিনি। ক্যাম্পে গিয়ে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত মাদক ব্যবসা করেন। এরপর থেকে তাঁকে অবশ্য ক্যাম্পে দেখা যাচ্ছে না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের অনেকে দোষ দেন যে মাদকের গডফাদারদের ধরা হয় না। পঁচিশ একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তিনি জামিন পেয়েছেন, এটা দুঃখজনক। আমি হতাশ।’ মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার কারণে পঁচিশকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলবে বলে তিনি জানান।
গ্রেপ্তার এড়াতে ফন্দি
গ্রেপ্তার এড়াতে নানা ফন্দি আঁটেন পঁচিশ। এর একটি আত্মসমর্পণের কৌশল। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দীন মীর প্রথম আলোকে বলেন, ছয় মাস আগে মোহাম্মদপুর থানায় পঁচিশ আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তখন বলেন, মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেবেন। ভালো হয়ে যাবেন। ঢাকা ছেড়ে চলে যাবেন। মামলা থাকায় তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও মাদক ব্যবসা শুরু করেন।
কখনো কখনো ‘জনদরদি’
জেনেভা ক্যাম্পের কয়েকজন বাসিন্দা জানালেন, পঁচিশ দুটি বিয়ে করেছেন। এক বউয়ের বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুরে। সেখানেও তিনি মাদক ব্যবসা চালান। সৈয়দপুর, বগুড়া ও ঢাকার আশুলিয়ায় তিনি বিপুল পরিমাণ জমির মালিক। ব্যক্তিগত গাড়ি আছে। আর সবই করেছেন মাদক ব্যবসার টাকায়। ক্যাম্পের অনেকের বিয়ের অনুষ্ঠানে অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন। ক্যাম্পের কাওয়ালি অনুষ্ঠানেও টাকা দেন। তাই তাঁকে ধরতে গেলে বা তিনি ডাক দিলে ক্যাম্পের বহু লোক তাঁর পক্ষে দাঁড়ায়। এভাবেই মাদক ব্যবসার নিরাপদ বলয় গড়েছেন পঁচিশ।
No comments