২০০২ সালে আনিসুল হক লিখেছিলেন- ঢাকা এতো নোংরা কেন?
ঢাকার
এক অর্ধের নগরপিতা হয়েছিলেন ২০১৫ সালে। এরপর নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
সদ্যপ্রয়াত মেয়র আনিসুল হক তার এসব উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনারও শিকার হন। উত্তর
সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব নেয়ার পর তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন সড়ক
দখলমুক্ত করতে গিয়ে চালকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। একপর্যায়ে সিটি কর্পোরেশন
সড়কটি দখলমুক্ত করতে সক্ষম হয়। সাতরাস্তা-কাওরান বাজার সংযোগ স্থাপন করা ওই
রাস্তাটি এখন প্রশস্ত দুই লেনের সড়ক।
আগের তুলনায় অনেক স্বচ্ছন্দে রাস্তাটি ব্যবহার করে জনসাধারণ। এছাড়া, গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনে হলুদ রংয়ের রিকশা এবং ‘ঢাকা চাকা’ নামের উন্নত বাস সেবা চালু করেন তিনি। মহাখালীর সঙ্গে সংযোগ সড়ক বাদে গুলশানের বাকি সড়কগুলোকে অন্যান্য গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় সমালোচিতও হয়েছেন। মহাখালী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে ইউলুপ যোগ করার উদ্যোগ নেন, যে কাজ এখনও চলছে। যানজট কমাতে এ উদ্যোগ। এছাড়া আরো কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলেন আনিসুল হক। লক্ষ্যের পুরোটা বাস্তবায়ন করতে পারলেন না। পাড়ি দিতে হলো না ফেরার দেশে। ঢাকা শহরকে পরিস্কার, পরিচ্ছন্ন করা, আরো বাসযোগ্য করে তোলার এই স্বপ্নটা আরো আগে থেকেই দেখতেন আনিসুল হক। মেয়র হওয়ার ১৩ বছর আগে ২০০২ সালে গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে প্রাক্তন ছাত্রদের পুনর্মিলনী উপলক্ষ্যে ছাপা হওয়া অংকুর নামের প্রকাশনায় তিনি একটি লেখা লিখেছিলেন। সেখানে তিনি তুলে ধরেছিলেন- ঢাকাকে নিয়ে তার স্বপ্ন। শহরকে আরো উন্নত ও বাসযোগ্য করে তুলতে নানা প্রস্তাব রেখেছিলেন নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশ্যে। লিখেছিলেন, ঢাকাকে নিয়ে ভাবতে হবে। কাজ করতে হবে। ঢাকার বেহাল দশা নিয়ে আকুতি স্পষ্ট ছিল তার লেখনীতে। পাঠকদের জন্য আনিসুল হকের ওই লেখাটি এখানে তুলে ধরা হলো। লেখাটির শিরোনাম ছিল: ‘ঢাকার কোন ভবিষ্যত নাই’।
আনিসুল হক লিখেছিলেন,
‘ঢাকা এত নোংরা কেন? পৃথিবীর যেকোন নরক, তা যেখানেই অবস্থিত হোক না কেন, ঢাকার চেয়ে সুন্দর, ঢাকার চেয়ে ভালো, ঢাকার চেয়ে পরিস্কার। আমাদের নীতিনির্ধারকেরা, কর্তারা, নেতারা, পৌরপিতারা, নিশ্চয় দেশের বাইরে যান। অন্তত একটু আনন্দ করতে, ফুর্তি করতে ব্যংককে যান নাই, তা হতেই পারে না। ওখানে কি কোন রাস্তায় কাদা দেখেছেন। কিংবা দেখেছেন ডাস্টবিন উপচে পড়ছে রাস্তার ধারে, ময়লা-আবর্জনা নিয়ে মোচ্ছব বসিয়েছে কাক ও কুকুর। ব্যাংককে বস্তি আছে, গরিবও আছে বিস্তর। আমাদের দেশের মতো থাইল্যান্ডও এশিয়ারই দেশ। কৃষিনির্ভর দেশ। কিন্তু ব্যাংককের রাস্তায় নোংরা ময়লা নেই মোটেও। পরিচ্ছন্নতা ধনীর ধন নয়, ওটা সভ্যের স্বভাব। সভ্যতা বলতে শুধু যন্ত্র সভ্যতা বলছি না, যারা যা সংস্কৃতি, তা ভূমি বা বনকেন্দ্রিক হরেও আমার কাছে তাকে উন্ন বলতে আমার অসুবিধা নাই। যেমন আমাদের সাঁওতাল বাড়িগুলো বাঙালি কৃষকের বাড়ির থেকে অনেক পরিস্কার। আর আমরা ঢাকাটাকে কী বানিয়ে রেখেছি? রাস্তা জুড়ে থিকথিক করছে কাদা। বাতাস জুড়ে সীসা, কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার তো আছেই। আর আছে ধূলা। এতো ধূলা কেন ঢাকার রাস্তায়! কন্সট্রাকশন ওয়ার্ক কি পৃথিবীর আর কোন শহরে হয় না?
ঢাকা তো একবার তাকাতে পারে চট্টগ্রাম শহরের দিকে। ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রাম অনেক বেশি পরিস্কার। ঢাকায় একটা পরিচ্ছনতা অভিযান চালানো যায় না! প্রথমে কাজ হবে, ঢাকার রাস্তা নথেকে ধূলাবালিকাদা অপসারণ। দরকার হলে ৭ দিন ধরে সব কাজকর্ম বন্ধ করে ট্রাক লাগিয়ে, জুতা আবিস্কারের মতো করে ঢাকার রাস্তাঘাট পরিস্কার করতে হবে। এই সরকার একটাব ভালো কাজ করেছে। পলিথিন বন্ধ করে দিয়েছে। এতে জঞ্জাল অনেক কমেছে আশা করি। এরপর আসছে নতুন আপদ। প্লাস্টিকের তৈরি পানির বোতল। প্রথম দিকে সবাই কিপ্টের মতো বোতল জমিয়ে রাখতো। এখন ফেলে দিচ্ছে। এগুলো রিসাইকেল করার বিষয়ে এ দেশে কোন বাধ্যবাধকতা নাই। এ বিষয়ে নিয়ম করতে হবে। এই সরকার আরো একটা ভালো কাজ করেছে, টুস্ট্রোক ইঞ্জিন নিষিদ্ধ করে। এ বিষয়ে কোন ধরণের শিথিলতা দেখানোর দরকার নেই।
এখন আরেকটা কাজ করা দরকার। ঢাকার রাস্তার দুধার ঘেঁষে বড়বড় মার্কেট হচ্ছে যেগুলোর পার্কিং প্লেস নাই। এ রকমটা চলতে পারে না। এক: মার্কেটে আসা গাড়িগুলোর জন্য চাই নিজস্ব পার্কিং। দুই: এ ছাড়া ট্যাক্সি, বেবিট্যাক্সি, রিকশা যোগে অনেকেই আসেন, তাদের ভিড়বার জন্য চাই জায়গা। আমার প্রস্তাব হলো, বহুতল মার্কেটে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং তো লাগবেই। রাস্তার তলাটা ছাড়তে হবে এই সব রিকশা-বেবিট্যাক্সি থামানোর জন্য। একেকটা বিল্ডিং কী করে রাস্তার একদম গা ঘেষে এক ইঞ্চি জায়গা না ছেড়ে আকাশের দিকে ওঠে?
বহুতল ভবন উঠছে ঢাকায়। এদেশে মানুষ বেশি, জায়গা কম। বহুতলকে নিষিদ্ধ করার কোন কারণ দেখি না। কিন্তু দেখতে হবে, সেসব নিয়ম মেনে উঠছে কিনা। ফায়ারস্কেপ আছে? একটা ২০ তলা ভবনে আগুন লাগলে কী হবে? কেউ জানে না। আমাদের দমকল বাহিনীকেও সাজাতে হবে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে। বহুতলে আগুন লাগলে যেন তারা তা প্রতিরোধ করতে যেতে পারে।
ঢাকার পার্কগুলো বেদখল হয়ে আছে। এগুলো উদ্ধার করতে হবে। ভরে দিতে হবে গাছেগাছে। স্কুলকলেজগুলোতে খেলার মাঠ চাই। মাঠ ছাড়া স্কুল তো আমরা কল্পনাও করতে পারি না। যা কল্পনা করা যায় না তাই আছে বাস্তবে। মাঠবিহীন স্কুল।
আমাদের নদী বাঁচাতে হবে। বুড়িগঙ্গা আর শীতলক্ষ্যা আর তুরাগ বাঁচাতে হবে। আমাদের জলাশয়গুলো ভরাট হওয়া রোধ করতে হবে, আমাদের ট্যানারির দূষণ রোধ করতেহ হবে, তবে সবার আগে করা দরকার অভ্যাস বদলানো। আমাদের শপথ করতে হবে, আমরা নোংরা হবো না, আমাদের শহর নোংরা রাখব না। সরকার কত টাকা খরচ করে কিছু করছে, ঢাকার রাস্তাঘাট পরিস্কার করার জন্য কিছু করতে পারে না। পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রাক আর প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক কি তারা কাজে লাগাতে পারে না? এটাকে কি একটা ক্রাশ প্রোগাম হিসাবে নেওয়া যায় না?
আর দরকার ঢাকার ফুটপাথগুলাকে চালু করা। বেবিট্যাক্সি কমছে কমুক, রিকশাও সব রাস্তায় চাই না। বদলে হাটতে চাই। কিন্তু হাঁটব কীভাবে? ফুটপাথ আছে! ফুটপাথ হয় নাই, নয়তো বেদখল নয়তো ডাস্টবিনের দখলে, নয়তো নোংরা কাদায় পরিপূর্ণ।
বাইরের লোকেরা এই শহরে এসে কী যে ভাবে? ভাবে যে তারা নরকে এসে পড়েছে! ভাবে এটা সভ্যতার বাইরের কোন একটা অঞ্চল। ভাবে যে এরা মানুষের পরেই সবচেয়ে সভ্য প্রাণী। যা হোক ঢাকাকে আমরা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন দেখতে চাই। এ কথা বললেই বলা হয়, এত লোক, এটা ম্যানেজ করা অসম্ভব। ঢাকা শহরে প্রায় ৭/৮ লক্ষ রিকশা চলে। একটা রিকশা চালায় কমপক্ষে দু’জন শ্রমিক। তাহলে রিকশাওয়ালা আছেন ১৬ লক্ষ। তাদের পরিবার পরিজন আছে ৫০ লক্ষ লোক। আর আছে গার্মেন্টস শ্রমিক। এরাও হয়তো বলবে ২৫ লক্ষ গার্মেন্টসগুলোকে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের পথে নেওয়া দরকার। গার্মেন্টস মালিকরা রাজি। তারা সরকারের কাছে জায়গা চান। সরকার কি একটা গার্মেন্টস পল্লীর জায়গা দিতে পারে না। রিকশা বন্ধ করে এত লোককে পথে বসানোর কথা আমি বলতে পারি না। তবে, বিকল্প কর্মসংস্থান কি করা যায় না! ঢাকামুখী জনশ্রোত রোধ করতে বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। সেটার কোন লক্ষণ তো দেখি না।
আর আজ হোক, কাল হোক, রিকশা তুলে দিতেই হবে। ২০০৬ সালে রিকশা তুলে দেবো, এই লক্ষ্য নির্ধারণ করে রিকশাওয়ালাদের জন্য বিকল্প কাজের কথা ভাবা দরকার। আসলে দরকার বিকেন্দ্রীকরণ। ঢাকামূখী জনস্রোত বন্ধ করতে হবে। সেটা করতে গিয়ে কেবল জুলুম করতে চলবে না, জোর করে রিকশা-বস্তি উঠিয়ে দিলেই চলবে না। ঢাকার বাইরে সারাদেশে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। যেন নিজ নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষ বস্তিবাসী হওয়ার জন্য ঢাকায় আসতে বাধ্য না হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে নীতি-নির্ধারকদের আদৌ কোন ভাবনা আছে বলে তো মনে হয় না। কিন্তু এই বিষয়ে ভাবতে হবে, কাজ করতে হবে। স্থানীয় সরকারগুলো শক্তিশালী করা থেকে শুরু করে। সারাদেশের সমউন্নয়ন নিশ্চিত করা দরকার। আজ থেকে ১৫ বছর পরে এই ঢাকা শহরের কি হবে, কেউ জানে না। আমি মাঝেমধ্যে দু:সপ্ন দেখি: ঢাকা একটা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছি। পানি, বিদ্যুত, গ্যাসের অভাবে, পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থার অপ্রতুলতায়, যানজটে, মানুষের ঘনত্বে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে গিয়ে ঢাকা শহরের মানুষ মরে পড়ে থাকবে। ভবিষ্যতে বাইরের মানুষ সেই শহরে এসে দেখবে এখানে একদা একটা শহর ছিল.... এখন শহর আছে মানুষ নাই... আছে শুধু কঙ্কাল...’
আগের তুলনায় অনেক স্বচ্ছন্দে রাস্তাটি ব্যবহার করে জনসাধারণ। এছাড়া, গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনে হলুদ রংয়ের রিকশা এবং ‘ঢাকা চাকা’ নামের উন্নত বাস সেবা চালু করেন তিনি। মহাখালীর সঙ্গে সংযোগ সড়ক বাদে গুলশানের বাকি সড়কগুলোকে অন্যান্য গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় সমালোচিতও হয়েছেন। মহাখালী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে ইউলুপ যোগ করার উদ্যোগ নেন, যে কাজ এখনও চলছে। যানজট কমাতে এ উদ্যোগ। এছাড়া আরো কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলেন আনিসুল হক। লক্ষ্যের পুরোটা বাস্তবায়ন করতে পারলেন না। পাড়ি দিতে হলো না ফেরার দেশে। ঢাকা শহরকে পরিস্কার, পরিচ্ছন্ন করা, আরো বাসযোগ্য করে তোলার এই স্বপ্নটা আরো আগে থেকেই দেখতেন আনিসুল হক। মেয়র হওয়ার ১৩ বছর আগে ২০০২ সালে গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে প্রাক্তন ছাত্রদের পুনর্মিলনী উপলক্ষ্যে ছাপা হওয়া অংকুর নামের প্রকাশনায় তিনি একটি লেখা লিখেছিলেন। সেখানে তিনি তুলে ধরেছিলেন- ঢাকাকে নিয়ে তার স্বপ্ন। শহরকে আরো উন্নত ও বাসযোগ্য করে তুলতে নানা প্রস্তাব রেখেছিলেন নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশ্যে। লিখেছিলেন, ঢাকাকে নিয়ে ভাবতে হবে। কাজ করতে হবে। ঢাকার বেহাল দশা নিয়ে আকুতি স্পষ্ট ছিল তার লেখনীতে। পাঠকদের জন্য আনিসুল হকের ওই লেখাটি এখানে তুলে ধরা হলো। লেখাটির শিরোনাম ছিল: ‘ঢাকার কোন ভবিষ্যত নাই’।
আনিসুল হক লিখেছিলেন,
‘ঢাকা এত নোংরা কেন? পৃথিবীর যেকোন নরক, তা যেখানেই অবস্থিত হোক না কেন, ঢাকার চেয়ে সুন্দর, ঢাকার চেয়ে ভালো, ঢাকার চেয়ে পরিস্কার। আমাদের নীতিনির্ধারকেরা, কর্তারা, নেতারা, পৌরপিতারা, নিশ্চয় দেশের বাইরে যান। অন্তত একটু আনন্দ করতে, ফুর্তি করতে ব্যংককে যান নাই, তা হতেই পারে না। ওখানে কি কোন রাস্তায় কাদা দেখেছেন। কিংবা দেখেছেন ডাস্টবিন উপচে পড়ছে রাস্তার ধারে, ময়লা-আবর্জনা নিয়ে মোচ্ছব বসিয়েছে কাক ও কুকুর। ব্যাংককে বস্তি আছে, গরিবও আছে বিস্তর। আমাদের দেশের মতো থাইল্যান্ডও এশিয়ারই দেশ। কৃষিনির্ভর দেশ। কিন্তু ব্যাংককের রাস্তায় নোংরা ময়লা নেই মোটেও। পরিচ্ছন্নতা ধনীর ধন নয়, ওটা সভ্যের স্বভাব। সভ্যতা বলতে শুধু যন্ত্র সভ্যতা বলছি না, যারা যা সংস্কৃতি, তা ভূমি বা বনকেন্দ্রিক হরেও আমার কাছে তাকে উন্ন বলতে আমার অসুবিধা নাই। যেমন আমাদের সাঁওতাল বাড়িগুলো বাঙালি কৃষকের বাড়ির থেকে অনেক পরিস্কার। আর আমরা ঢাকাটাকে কী বানিয়ে রেখেছি? রাস্তা জুড়ে থিকথিক করছে কাদা। বাতাস জুড়ে সীসা, কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার তো আছেই। আর আছে ধূলা। এতো ধূলা কেন ঢাকার রাস্তায়! কন্সট্রাকশন ওয়ার্ক কি পৃথিবীর আর কোন শহরে হয় না?
ঢাকা তো একবার তাকাতে পারে চট্টগ্রাম শহরের দিকে। ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রাম অনেক বেশি পরিস্কার। ঢাকায় একটা পরিচ্ছনতা অভিযান চালানো যায় না! প্রথমে কাজ হবে, ঢাকার রাস্তা নথেকে ধূলাবালিকাদা অপসারণ। দরকার হলে ৭ দিন ধরে সব কাজকর্ম বন্ধ করে ট্রাক লাগিয়ে, জুতা আবিস্কারের মতো করে ঢাকার রাস্তাঘাট পরিস্কার করতে হবে। এই সরকার একটাব ভালো কাজ করেছে। পলিথিন বন্ধ করে দিয়েছে। এতে জঞ্জাল অনেক কমেছে আশা করি। এরপর আসছে নতুন আপদ। প্লাস্টিকের তৈরি পানির বোতল। প্রথম দিকে সবাই কিপ্টের মতো বোতল জমিয়ে রাখতো। এখন ফেলে দিচ্ছে। এগুলো রিসাইকেল করার বিষয়ে এ দেশে কোন বাধ্যবাধকতা নাই। এ বিষয়ে নিয়ম করতে হবে। এই সরকার আরো একটা ভালো কাজ করেছে, টুস্ট্রোক ইঞ্জিন নিষিদ্ধ করে। এ বিষয়ে কোন ধরণের শিথিলতা দেখানোর দরকার নেই।
এখন আরেকটা কাজ করা দরকার। ঢাকার রাস্তার দুধার ঘেঁষে বড়বড় মার্কেট হচ্ছে যেগুলোর পার্কিং প্লেস নাই। এ রকমটা চলতে পারে না। এক: মার্কেটে আসা গাড়িগুলোর জন্য চাই নিজস্ব পার্কিং। দুই: এ ছাড়া ট্যাক্সি, বেবিট্যাক্সি, রিকশা যোগে অনেকেই আসেন, তাদের ভিড়বার জন্য চাই জায়গা। আমার প্রস্তাব হলো, বহুতল মার্কেটে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং তো লাগবেই। রাস্তার তলাটা ছাড়তে হবে এই সব রিকশা-বেবিট্যাক্সি থামানোর জন্য। একেকটা বিল্ডিং কী করে রাস্তার একদম গা ঘেষে এক ইঞ্চি জায়গা না ছেড়ে আকাশের দিকে ওঠে?
বহুতল ভবন উঠছে ঢাকায়। এদেশে মানুষ বেশি, জায়গা কম। বহুতলকে নিষিদ্ধ করার কোন কারণ দেখি না। কিন্তু দেখতে হবে, সেসব নিয়ম মেনে উঠছে কিনা। ফায়ারস্কেপ আছে? একটা ২০ তলা ভবনে আগুন লাগলে কী হবে? কেউ জানে না। আমাদের দমকল বাহিনীকেও সাজাতে হবে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে। বহুতলে আগুন লাগলে যেন তারা তা প্রতিরোধ করতে যেতে পারে।
ঢাকার পার্কগুলো বেদখল হয়ে আছে। এগুলো উদ্ধার করতে হবে। ভরে দিতে হবে গাছেগাছে। স্কুলকলেজগুলোতে খেলার মাঠ চাই। মাঠ ছাড়া স্কুল তো আমরা কল্পনাও করতে পারি না। যা কল্পনা করা যায় না তাই আছে বাস্তবে। মাঠবিহীন স্কুল।
আমাদের নদী বাঁচাতে হবে। বুড়িগঙ্গা আর শীতলক্ষ্যা আর তুরাগ বাঁচাতে হবে। আমাদের জলাশয়গুলো ভরাট হওয়া রোধ করতে হবে, আমাদের ট্যানারির দূষণ রোধ করতেহ হবে, তবে সবার আগে করা দরকার অভ্যাস বদলানো। আমাদের শপথ করতে হবে, আমরা নোংরা হবো না, আমাদের শহর নোংরা রাখব না। সরকার কত টাকা খরচ করে কিছু করছে, ঢাকার রাস্তাঘাট পরিস্কার করার জন্য কিছু করতে পারে না। পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রাক আর প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক কি তারা কাজে লাগাতে পারে না? এটাকে কি একটা ক্রাশ প্রোগাম হিসাবে নেওয়া যায় না?
আর দরকার ঢাকার ফুটপাথগুলাকে চালু করা। বেবিট্যাক্সি কমছে কমুক, রিকশাও সব রাস্তায় চাই না। বদলে হাটতে চাই। কিন্তু হাঁটব কীভাবে? ফুটপাথ আছে! ফুটপাথ হয় নাই, নয়তো বেদখল নয়তো ডাস্টবিনের দখলে, নয়তো নোংরা কাদায় পরিপূর্ণ।
বাইরের লোকেরা এই শহরে এসে কী যে ভাবে? ভাবে যে তারা নরকে এসে পড়েছে! ভাবে এটা সভ্যতার বাইরের কোন একটা অঞ্চল। ভাবে যে এরা মানুষের পরেই সবচেয়ে সভ্য প্রাণী। যা হোক ঢাকাকে আমরা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন দেখতে চাই। এ কথা বললেই বলা হয়, এত লোক, এটা ম্যানেজ করা অসম্ভব। ঢাকা শহরে প্রায় ৭/৮ লক্ষ রিকশা চলে। একটা রিকশা চালায় কমপক্ষে দু’জন শ্রমিক। তাহলে রিকশাওয়ালা আছেন ১৬ লক্ষ। তাদের পরিবার পরিজন আছে ৫০ লক্ষ লোক। আর আছে গার্মেন্টস শ্রমিক। এরাও হয়তো বলবে ২৫ লক্ষ গার্মেন্টসগুলোকে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের পথে নেওয়া দরকার। গার্মেন্টস মালিকরা রাজি। তারা সরকারের কাছে জায়গা চান। সরকার কি একটা গার্মেন্টস পল্লীর জায়গা দিতে পারে না। রিকশা বন্ধ করে এত লোককে পথে বসানোর কথা আমি বলতে পারি না। তবে, বিকল্প কর্মসংস্থান কি করা যায় না! ঢাকামুখী জনশ্রোত রোধ করতে বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। সেটার কোন লক্ষণ তো দেখি না।
আর আজ হোক, কাল হোক, রিকশা তুলে দিতেই হবে। ২০০৬ সালে রিকশা তুলে দেবো, এই লক্ষ্য নির্ধারণ করে রিকশাওয়ালাদের জন্য বিকল্প কাজের কথা ভাবা দরকার। আসলে দরকার বিকেন্দ্রীকরণ। ঢাকামূখী জনস্রোত বন্ধ করতে হবে। সেটা করতে গিয়ে কেবল জুলুম করতে চলবে না, জোর করে রিকশা-বস্তি উঠিয়ে দিলেই চলবে না। ঢাকার বাইরে সারাদেশে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। যেন নিজ নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষ বস্তিবাসী হওয়ার জন্য ঢাকায় আসতে বাধ্য না হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে নীতি-নির্ধারকদের আদৌ কোন ভাবনা আছে বলে তো মনে হয় না। কিন্তু এই বিষয়ে ভাবতে হবে, কাজ করতে হবে। স্থানীয় সরকারগুলো শক্তিশালী করা থেকে শুরু করে। সারাদেশের সমউন্নয়ন নিশ্চিত করা দরকার। আজ থেকে ১৫ বছর পরে এই ঢাকা শহরের কি হবে, কেউ জানে না। আমি মাঝেমধ্যে দু:সপ্ন দেখি: ঢাকা একটা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছি। পানি, বিদ্যুত, গ্যাসের অভাবে, পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থার অপ্রতুলতায়, যানজটে, মানুষের ঘনত্বে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে গিয়ে ঢাকা শহরের মানুষ মরে পড়ে থাকবে। ভবিষ্যতে বাইরের মানুষ সেই শহরে এসে দেখবে এখানে একদা একটা শহর ছিল.... এখন শহর আছে মানুষ নাই... আছে শুধু কঙ্কাল...’
No comments