বগুড়ায় সেনাসদস্য হত্যা মামলার দুই আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আহত
বগুড়ার
শাজাহানপুর উপজেলার শাকপালা এলাকায় এলপিআরে থাকা সেনা সার্জেন্ট শফিকুল
ইসলামকে (৪৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা এবং ডাকাতি মামলায় ৪ আসামি গ্রেফতার হয়েছে।
শুক্রবার রাতে একই এলাকায় অস্ত্র ও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারে গেলে পুলিশের
সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর
রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই সময় পুলিশের এক
কর্মকর্তাসহ ৪ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ৭.৬৫ ক্যালিবারের একটি বিদেশি
পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন, ২ রাউন্ড গুলির খোসা ও হত্যায়
ব্যবহৃত ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার এক আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায়
স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে শাজাহানপুর থানায় অস্ত্র আইনে ও পুলিশের
ওপর হামলার ঘটনায় পৃথক মামলা হয়েছে। তবে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী
দাবি করেছেন, গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ওই হত্যাকাণ্ডের পর দিন পুলিশ তাদের
গ্রেফতার করেছিল। শুক্রবার রাতে দুজনকে ফুলতলা পার্কের কাছে এনে পুলিশ
অন্তত ২০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ সময় দুজন পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে পুলিশ
কর্মকর্তারা এ অভিযোগ দৃঢতার সঙ্গে অস্বীকার করেছেন। পুলিশ ও এলাকাবাসী
জানান, নরসিংদী জেলার মনোহরদি উপজেলার হালুকদিয়া গ্রামের মৃত আবদুল গফুরের
ছেলে সেনা সার্জেন্ট শফিকুল ইসলাম সম্প্রতি এলপিআরে যান। পরিবার নিয়ে
বগুড়ার জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাসের কোয়ার্টারে থাকতেন। যশোর সেনানিবাসে
প্রশিক্ষণে থাকা তার সৈনিক ছেলে আশরাফুল ইসলাম গত মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে
শাকপালা বাসস্ট্যান্ডে নামেন। বাবা শফিকুল ইসলাম তাকে আনতে যান। বাবা ও
ছেলে হেঁটে নিকটেই কোয়ার্টারে ফিরছিলেন। তারা মিলেনিয়াম স্কলাস্টিকা
স্কুলের সামনে পৌঁছলে একদল ছিনতাইকারী তাদের পথরোধ করে। ছিনতাইকারীরা বাবা
শফিকুল ইসলামকে ধরে পাশে শাকপালা পার্কের ভেতরে নিয়ে পেটে ছুরিকাঘাতে
হত্যা করে।
এ ছাড়া অন্যদের সঙ্গে ছেলে সৈনিক আশরাফুলের ধস্তাধস্তি হয়।
একপর্যায়ে তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পাশেই সেনানিবাসের প্রধান ফটকে খবর দিতে
যান। এ ব্যাপারে নিহতের ছেলে আশরাফুল ইসলাম বুধবার শাজাহানপুর থানায়
অজ্ঞাত ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতি মামলা করেন। শাজাহানপুর থানার
ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম ও কৈগাড়ি ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর আনিসুর রহমান জানান, এ
হত্যা ও ডাকাতি মামলায় শুক্রবার সকালে শহরের খান্দার এলাকার মৃত সোলায়মান
আলীর ছেলে ফুলমিয়া ওরফে বিষু (২২), শাকপালার জিয়াউল হক মোল্লার ছেলে
রাকিবুজ্জামান রাকিব (২৪), একই এলাকার সৈয়দ আলীর ছেলে আবদুল হালিম বগা (২৮)
এবং বেলাল হোসেনের ছেলে রবিউল ইসলামকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে
বিষু সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামরুজ্জামানের আদালতে ১৬৪ ধারায়
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার স্বীকারোক্তি ও অন্যদের তথ্য অনুসারে
অস্ত্র এবং ডাকাতির মালামাল উদ্ধারে শুক্রবার রাত ২টার দিকে বগা ও রাকিবকে
নিয়ে শাকপালা পার্কের কাছে যাওয়া হয়। এ সময় তাদের সঙ্গীরা পুলিশকে লক্ষ্য
করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। তখন জানমাল রক্ষায় পুলিশ অন্তত ২০ রাউন্ড পাল্টা
গুলি করে। তখন পালানোর চেষ্টা করলে রাকিব ও বগা হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ হন।
সন্ত্রাসীদের হামলায় এএসআই তাহের, কনস্টেবল রেজাউল করিম ও আবদুর রশিদসহ ৪
পুলিশ আহত হন। তাদের পুলিশলাইনস হাসপাতালে এবং গুলিবিদ্ধ রাকিব ও বগাকে
বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর পরই সন্ত্রাসীদের ফেলে
যাওয়া একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগজিনসহ তিন রাউন্ড গুলি, পিস্তলের গুলির
দুটি খোসা ও সেনাসদস্য শফিকুল ইসলাম হত্যায় ব্যবহৃত ছোরা উদ্ধার করা হয়।
No comments