পুলিশের আশ্বাসে অনশন ভাঙলেন দিয়াজের মা
চট্টগ্রাম
জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে গতকাল শনিবার রাতে আমরণ অনশন
ভেঙেছেন দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। গতকাল রাত নয়টার দিকে
চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পানি পান করিয়ে জাহেদা আমিন
চৌধুরীর অনশন ভাঙান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আজ রোববার দুপুরে প্রথম
আলোকে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন দিয়াজের বড় বোন জুবাঈদা ছরওয়ার
চৌধুরী। তিনি আজ দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তারা আমার মাকে বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। এই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে
মা তাঁদের হাতে পানি খেয়ে অনশন ভেঙেছেন। মায়ের শরীর দুর্বল। তাই তাঁকে রাইস
স্যুপ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।’ দিয়াজের পরিবার, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র
জানায়, জাহেদা আমিন চৌধুরীকে দেখতে ও তাঁর অনশন ভাঙাতে গতকাল রাতে
হাসপাতালে যান চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা, অতিরিক্ত পুলিশ
সুপার মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ ও মশিউদ্দোলাহ রেজা, চট্টগ্রাম বারের সভাপতি
রতন কুমার রায়, সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ, সদস্য ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী,
সাবেক সভাপতি মুজিবুল হক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার সাইমুম প্রমুখ।
দিয়াজ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক ছিলেন। কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে
যাওয়ার আগে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।
দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির
কর্মচারী। তাঁদের বাসা ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট এলাকায়। গত বছরের ২০
নভেম্বর এই বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
সেদিন বাসায়
দিয়াজ ছাড়া পরিবারের আর কেউ ছিলেন না। ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে—এই অভিযোগ
এনে গত বছরের ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা
ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু (বর্তমানে স্থগিত কমিটি), সাবেক সহকারী
প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীসহ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। দিয়াজ
হত্যা মামলার আসামিরা সব ‘প্রভাবশালী’। ক্ষমতার দাপটে তাঁরা পার পেয়ে যেতে
পারেন—শুরু থেকেই এই আশঙ্কা ছিল মা জাহেদা আমিন চৌধুরীর। এ কারণে ছেলের
হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, রাজনৈতিক নেতা ও
পুলিশের কাছে ধরনা দেওয়া এবং খোলা চিঠি লেখা—সবই করেছেন তিনি। গত এক বছর
এভাবেই কেটেছে তাঁর। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য বারবার আকুতি জানান তিনি।
কিন্তু কিছুই হয়নি। ছেলে হত্যার বিচারের কোনো আশা দেখতে না পেয়ে প্রতিবাদী
এই মা অসুস্থ অবস্থায় গত সোমবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসের বঙ্গবন্ধু চত্বরে আমরণ অনশন শুরু করেন। দুপুরে ক্যাম্পাসের
শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। সেদিন অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে হাসপাতালে এবং পরে
চট্টগ্রাম শহরের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। কিছুতেই তাঁর অনশন ভাঙানো
যাচ্ছিল না। অনশনের পঞ্চম দিন দুপুরে চট্টগ্রাম শহরের নিজ বাসায় অসুস্থ হয়ে
পড়লে তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান পরিবারের সদস্যরা। দিয়াজের
মরদেহের প্রথম ময়নাতদন্ত হয় গত বছরের ২১ নভেম্বর। ২৩ নভেম্বর পুলিশ জানায়,
দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে—এমন আলামত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মেলেনি। ওই
প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে দিয়াজের পরিবারসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রলীগের একটি অংশ। পরে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর দিয়াজের লাশ কবর থেকে তুলে
পুনরায় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। ১১ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজের
ফরেনসিক বিভাগে লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, দিয়াজকে
শ্বাসরোধ করে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। দিয়াজ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের
মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী
ছিলেন। হত্যা মামলার আসামিদের অধিকাংশই নাছিরের অনুসারী।
No comments