‘ট্রফি থেকে এক হাত দূরে মাশরাফি’
কথাটা নিছক রসিকতার ছলে বলা। মাশরাফি মুর্তজাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ট্রফি থেকে কতদূরে আছেন? তার সপ্রতিভ উত্তর, ‘এক হাত দূরে।’ সংবাদ সম্মেলনে হাসির ঢেউ উঠল। ট্রফিটা তখন সত্যিই তার এক হাত দূরে। মাশরাফি বেশ ভালো করেই জানেন যে, ট্রফিটা যতই কাছে থাকুক, আসলে তো অনেক দূরে। সেই কঠিন যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ বাংলাদেশের। শুরুতেই সামনে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। শুরুটা হয়েছিল ১৯ বছর আগে বাংলাদেশের মাটিতেই। ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে নয়টি দল নিয়ে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বসেছিল আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম আসর। তখন অবশ্য মিনি বিশ্বকাপ বা আইসিসি নকআউট ট্রফি নামে পরিচিত ছিল এই টুর্নামেন্ট। প্রথম আসরের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা ছিল শুধুই আয়োজক হিসেবে। বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্বিতীয় সেরা এই বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের অষ্টম আসরে পর্দা উঠছে আজ ইংল্যান্ডে। এবার উদ্বোধনী দিনেই থাকছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের সেরা আট দলের প্রতিযোগিতায় নিজেদের যোগ্যতা দিয়েই জায়গা করে নিয়েছে টাইগাররা। এবার মূল আসরে নিজেদের উন্নতির গ্রাফটা আরও উঁচুতে তুলে ধরার চ্যালেঞ্জ। লন্ডনের ওভালে আজ টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এ-গ্রুপে বাংলাদেশের অন্য দুই প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড।
আর বি-গ্রুপে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতের সঙ্গে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা ও পাকিস্তান। দুই গ্রুপের দুটি করে শীর্ষ দল যাবে সেমিফাইনালে। ১৮ জুন ওভালে ফাইনাল। ১৮ দিনের প্রতিযোগিতায় তিনটি ভেন্যুতে মোট ম্যাচ ১৫টি। এর মধ্যে গ্রুপ পর্বে রয়েছে ১২টি ম্যাচ। প্রতিটি দল তিনটি করে ম্যাচ খেলবে। এরপর দুটি সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। অর্থাৎ পাঁচটি ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন! অবশ্য অন্য ম্যাচের ফল অনুকূলে থাকলে গ্রুপ পর্বে একটি বা দুটি ম্যাচ জিতেও সেমিফাইনালে ওঠা সম্ভব। শেষ চারের টিকিট কারা পাবেন তা সময়ই বলবে। তবে অধিকাংশ ক্রিকেটবোদ্ধা সেমিফাইনালের সম্ভাব্য চার দল হিসেবে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে বেছে নিয়েছেন। এর মধ্যে শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার ভাবা হচ্ছে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে। আর ‘কালো ঘোড়ার’ মর্যাদা পাচ্ছে নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ সবশেষ অংশ নিয়েছিল ২০০৬ আসরে। এরপর ১১ বছরের বিরতি। শুরুর দিকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে সম্ভাব্য সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে আইসিসি। সেই সুবাদে ২০০৪ সালের আসরে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত খেলেছে। নিজেদের খেলা আগের চার আসরে বাংলাদেশের ভূমিকাও ছিল অংশগ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সব মিলিয়ে আট ম্যাচে সাত হারের বিপরীতে বাংলাদেশের জয় মোটে একটি। সেই জয়ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। অনেক অদল-বদলের পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সেরা আট দলের টুর্নামেন্টে রূপ নেয়ার পর এবারই প্রথম খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। গত তিন বছরে ওয়ানডেতে সমীহ জাগানো এক দল হয়ে ওঠা বাংলাদেশ শুধু সংখ্যা বাড়াতে যায়নি ইংল্যান্ডে। ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের ছয় নম্বরে উঠে এসেছেন মাশরাফিরা। শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের কাছে ২৪০ রানের শোচনীয় হারে আত্মবিশ্বাসে একটু ধাক্কা লাগলেও বিষয়টিকে পাত্তা দিচ্ছেন না কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ভারতের ৩২৪ রানের জবাবে মাত্র ৮৪ রানে অলআউট হওয়াটা খুব বড় কিছু মনে হচ্ছে না তার কাছে! গা গরমের প্রস্তুতি ম্যাচের ফলকে গুরুত্ব দিতেই রাজি নন হাথুরুসিংহে। মূল প্রতিযোগিতায় এমনটা হবে না বলেই বিশ্বাস তার। আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আত্মবিশ্বাসী এক বাংলাদেশকেই দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা। ইংল্যান্ডকে হারিয়েই ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। পরে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজেও ইংল্যান্ড-বধের সুখস্মৃতি আছে মাশরাফিদের। তবে এবার খেলা হবে ইংলিশ কন্ডিশনে। আর এটাই বড় চ্যালেঞ্জ। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর নিজেদের খোলনলচে বদলে ফেলেছে ইংল্যান্ড। ওয়ানডেতে তারাই এখন সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক ক্রিকেট খেলছে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডও বড় টুর্নামেন্টে জ্বলে উঠতে অভ্যস্ত। এই গ্রুপ থেকে সেমিফাইনালে যেতে তাই দারুণ কিছুই করতে হবে বাংলাদেশকে। শেষ পর্যন্ত ১৮ জুন ট্রফিটা যে দলের হাতেই উঠুক-না কেন, প্রযুক্তির ব্যবহারের দিক থেকে এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দারুণ সব চমক নিয়েই হাজির হচ্ছে। প্রতিযোগিতার তিনটি ভেন্যুতেই (ওভাল, এজবাস্টন ও কার্ডিফ) থাকছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি-প্লেয়ার ট্র্যাকিং সিস্টেম, হক আই, রিভার্স স্টাম্প ও স্পাইডার ক্যামেরা। এছাড়া ম্যাচের দিন প্রতিটি স্টেডিয়ামই পরিণত হবে ওয়াই-ফাই জোনে। গ্যালারিতে বসে উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন দর্শকরা। এসব কারণে প্রতিযোগিতার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দর্শক পেতে যাচ্ছে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এখন মাঠের লড়াই কতটা উপভোগ্য হয় সেটাই দেখার।
No comments