হলুদের দাম বাড়ায় ঘুরে দাঁড়ানোর আশা চাষিদের
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতি মণ হলুদের দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কয়েক বছর ধরে উপজেলার হলুদচাষিরা ন্যায্য দাম পাননি। লোকসানের কারণে এ বছর হলুদ চাষও কম হয়েছে। তবে দাম বাড়ার এই প্রবণতা বজায় থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে উঠবেন বলে মনে করছেন চাষিরা। উপজেলার প্রধান হলুদ উৎপাদনকারী এলাকা উথলী গ্রামে ১৬ ফেব্রুয়ারি গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা গ্রামে ঘুরে ঘুরে কাঁচা হলুদ কিনে চাতালে শুকাচ্ছেন। এরপর তা সরবরাহ করছেন ঢাকায়। গত বছর প্রতি মণ কাঁচা হলুদ গড়ে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এ বছর প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকায়। উথলী গ্রামের চার-পাঁচজন হলুদচাষি জানান, পাঁচ বছর আগেও প্রতি মণ কাঁচা হলুদ বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ২০০ টাকায়। বাড়তি লাভের আশায় অনেক চাষি তখন হলুদ চাষে ঝুঁকেছিলেন। কিন্তু পরের বছরই হলুদের দাম কমে প্রতি মণ ৫০০ টাকায় নেমে আসে। শেষ পর্যন্ত গত বছর প্রতি মণ হলুদ ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়। দাম বাড়তে থাকায় আগামী বছর হলুদ চাষ আবারও বাড়বে বলে তাঁরা মনে করছেন। বকুল সাহা (৪০) নামের এক কৃষক হলুদ শুকানোর কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, এ বছর তাঁর ৪০ শতাংশ জমিতে হলুদের আবাদ করেছিলেন।
সার, বীজ, কীটনাশক মিলে খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। এখান থেকে তিনি হলুদের ফলন পেয়েছেন ৮০ মণ। প্রতি মণ কাঁচা হলুদ বিক্রি করেছেন ১ হাজার ২০০ টাকায়। হলুদচাষি এনামুল হক (৪৫) বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রতি মণ হলুদের দাম গড়ে ৩০০ টাকা করে বেড়েছে। এ বছর হলুদের ফলন ভালো হয়েছে। দামও বেড়েছে। এমন দাম পেলে আমরা আবার হলুদ চাষে উৎসাহ পাব।’ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন (৪২) বলেন, ‘উথলীর হলুদের মান খুবই ভালো। আমরা এখান থেকে হলুদ সংগ্রহ করে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করি।’ উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উথলী এবং এর আশপাশের আরও ছয় গ্রামে হলুদের চাষ হয়ে থাকে। এবার এলাকায় ৩৭০ হেক্টর জমিতে কুকুরমণি জাতের হলুদ চাষ হয়েছে। হলুদের আবাদ বেশ সময়সাপেক্ষ। ফলন উঠতে বছর লেগে যায়। সাড়ে চার মণ কাঁচা হলুদ সেদ্ধ করে শুকানোর পর পাওয়া যায় এক মণ। বাজারে প্রতি মণ শুকনো হলুদ বর্তমানে ৫ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এজাজ কামাল জানান, উথলী এলাকার মাটি হলুদ চাষের জন্য খুব উপযোগী। আর এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এবার ফলন ভালো হওয়ায় এবং দাম বেশি পাওয়ায় হলুদচাষিরা খুব খুশি।
No comments