মায়াকানন-সবুজকানন পানিতে ময়লা-দুর্গন্ধ
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীর পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা মায়াকানন, সবুজকানন, মুগদা ও আশপাশের এলাকায় ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে কিছুটা গন্ধ। কিন্তু প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বাসাবাড়িতে কল (ট্যাপ) খুললেই আসছে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি। সবুজকানন এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন, এই পানি পান করা দূরে থাক, ব্যবহারেরও অযোগ্য। বিশুদ্ধ পানির জন্য ওয়াসার পানির পাম্পে ভিড় করছে এলাকাবাসী। গতকাল বুধবার এলাকায় গিয়ে এ অবস্থার কথা জানা যায়। সবুজকাননের বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, বাসায় ওয়াসার লাইনে আসা পানিতে গোসল পর্যন্ত করা যাচ্ছে না। তিনি মতিঝিলে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন, অফিসে গিয়েই গোসল করেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী-কন্যাকে বাসাতেই থাকতে হচ্ছে। মুগদায় ওয়াসার পাম্প থেকে পানি আনেন বড় জারে (পানির পাত্র) করে। তা দিয়ে কোনো রকমে চলছে। কিন্তু এভাবে আর কত দিন সম্ভব? গতকাল সকালে মুগদায় ওয়াসার ১ নম্বর পানির পাম্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পানি নিতে এসেছে চারপাশের লোকালয়ের বাসিন্দারা। কমলাপুর বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা মায়াকাননের বাসিন্দা সাইফুল হক ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, গরম পড়তে শুরু করেছে, কিন্তু পানির সমস্যার জন্য গোসল পর্যন্ত করা যাচ্ছে না। ওই পানিতে গোসল করে তাঁদের একান্নবর্তী পরিবারে ছোটদের গায়ে চুলকানি হয়েছে। কল খুললেই ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি আসছে। সবুজকানন এলাকায় বসবাস করেন মরিয়ম বেগম। তিনি কাজের বুয়াকে নিয়ে এসেছেন। পানির পাত্র নিয়ে পাম্পের কলপাড়ে বুয়া।
দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত মরিয়ম বেগম বলেন, গত বছরও এই সময়ে এলাকার পানির এমন অবস্থা হয়েছিল। গত কয়েক দিন পানির অবস্থা দেখে মনে হতে পারে, ওয়াসা যেন ময়লা আর দুর্গন্ধ মিশিয়ে পানি সরবরাহ করছে। বাসাবো-কদমতলার পানির পাম্পেও ভিড়। সেখানে বৌদ্ধমন্দিরের কল থেকেও পানি সংগ্রহ করে মানুষ। কদমতলার পাম্পে স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও আশপাশ এলাকার ছোট-বড় সব বয়সের নারী-পুরুষ পানি সংগ্রহে ব্যস্ত। হাঁড়ি-কলস, বিভিন্ন ধরনের জারিকেনের লাইন। গভীর নলকূপ থেকে উত্তোলিত পানি পাইপের লাইনে ঢোকার আগে মোটামুটি বিশুদ্ধ থাকে। তাই ওয়াসার পাম্প থেকে পানি নিলে তুলনামূলক বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায় বলে বাসিন্দারা জানান। বৌদ্ধমন্দির পানির পাম্পেও প্রচুর মানুষের ভিড়। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এলাকায় এমন কোনো পরিবার পাওয়া যাবে না, যারা ওয়াসার সরবরাহ করা পানির ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারে। বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহে প্রতি পরিবারে একজন না একজনকে ছুটতেই হয়। বাসার পানি ফুটিয়ে পান করলেও লাভ নেই। এসব এলাকা ঢাকা ওয়াসার ১ নম্বর আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীন। যোগাযোগ করা হলে নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ উদ্দিন বলেন, অভিযুক্ত এলাকাগুলোয় সায়েদাবাদ শোনাগারের পানি সরবরাহ করা হয়। শুকনা মৌসুম বলে এই সময়ে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি খারাপ থাকে। শোধন করতে সমস্যা হয়। স্বাভাবিকভাবেই পানিতে ওষুধের গন্ধ হতে পারে। এ ছাড়া পানিতে ময়লা হতে পারে বিশেষত পানির পাইপলাইনে ফুটোর কারণে। অবৈধ সংযোগ নেওয়ার কারণে পাইপ ফুটো হয়ে যায়। সেই পথে ময়লা পানি ঢুকে পড়ে। পানির প্রকৃত অবস্থা জানতে শিগগিরই তিনি এলাকায় লোক পাঠাবেন বলে জানান।
No comments