সদরঘাটে হয়রানির শেষ নেই
যাত্রীদের বিশ্রামাগার, পন্টুন, গ্যাংওয়ে সবখানেই ভবঘুরেদের দৌরাত্ম্য। মালামাল বহনের জন্য বেশি টাকা আদায়ের অভিযোগ। নেই পর্যাপ্ত টয়লেট। যা আছে তাতেও দুর্গন্ধ, নোংরা। সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রীদের নানা অভিযোগ। রাজধানীতে প্রবেশের অন্যতম বড় পথ সদরঘাট। পুরান ঢাকার বাকল্যান্ড বাঁধের এই টার্মিনালে গতকাল দেখা যায়, নিজেদের ইচ্ছেমতো ভবঘুরেরা আসা-যাওয়া করছে। যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে তারা শুয়ে থাকে। আমিনা খাতুন মেঝেতে চারটি ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এক ভবঘুরের মাথার কাছে জায়গা পেলেও বসেননি। তিনি বলেন, ‘আগেও একবার ব্যাগ হারাইছে। ওগো কাছে বইতে ভয় লাগে।’ পন্টুনে ঢোকার গ্যাংওয়েতে শুয়ে আছে ভবঘুরেরা। পন্টুনেও তারা ঘোরাঘুরি করছে। কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করলেন, ভিড় বা সন্ধ্যার পরে এরা ব্যাগ ধরে টান দেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে টার্মিনালে কাজ করা এক নারী বলেন, সন্ধ্যার পর মাদকের আড্ডা বেড়ে যায়। আশপাশের এলাকা গাঁজার গন্ধে ভরে যায়। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অনুসন্ধানকেন্দ্রটি ফাঁকা ছিল। বেলা দেড়টার সময় সেখানে একজনকে দেখা যায়। মালামাল পরিবহনের জন্য কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট ফির তালিকা টানিয়েছে। কিন্তু গতকাল এক ব্যক্তির কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা দাবি করা হয়। কুলিদের সঙ্গে তিনি বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং অতিরিক্ত টাকা দিয়েই মালামাল ছাড়ান। বেশির ভাগ মানুষের অভিযোগ, কুলিদের সঙ্গে তর্ক করে কোনো লাভ হয় না। তাঁরা যা দাবি করেন, সেটাই করতে হয়। অন্যথায় তাঁরা মালামাল ধরে টানাটানি করেন। এর আগে কুলিদের সঙ্গে যাত্রীদের মারামারির ঘটনাও ঘটেছে টার্মিনালে। একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ,
টার্মিনালের কর্তাদের প্রশ্রয়ের কারণেই কুলিরা এ ধরনের আচরণ করে থাকেন। সদরঘাটে পর্যাপ্ত টয়লেট নেই। ভিআইপি গেটের কাছে পুরুষ ও নারীদের একটি করে টয়লেট আছে। মহিলাদের টয়লেটে পানির ট্যাপ ভাঙা, অনবরত পানি পড়ছে। এ ছাড়া দুটি টয়লেটই কাদা-পানিতে একাকার। পা ফেলার জায়গা নেই। মাঝের গেটেও দুটি টয়লেট আছে। সবগুলোতেই দুর্গন্ধ। খুব বিপদে না পড়লে কেউ এসব মাড়ান না। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনের ঢাকা বন্দরের যুগ্ম সচিব মো. গুলজার আলী বলেন, বিভিন্ন সমস্যার কারণে ইজারাদার বাতিল করা হয়েছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে কর্তৃপক্ষ নিজেরাই পরিচালনা করে। এ সময়ের মধ্যে তাঁরা কোনো অভিযোগ পাননি। তিনি আরও বলেন, ‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট তো ঠিক করা সম্ভব না। কিছু সমস্যা হয়তো এখনো আছে। আমরা চেষ্টা করছি।’ জানালেন, নতুন টয়লেট নির্মাণ হচ্ছে। সদরঘাটে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৬৫টি লঞ্চ চলাচল করে। দিনে যাত্রী হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার। বিভিন্ন উপলক্ষে এর সংখ্যা আরও বাড়ে। বিশেষ করে বড় ছুটির সময় টার্মিনালে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পটুয়াখালীর নাসিম মোল্লা এ পথের একজন নিয়মিত যাত্রী। তিনি বলেন, সদরঘাটে ঝামেলার শেষ নেই। মানুষের কাছে এটা একটা বিশৃঙ্খল জায়গা হিসেবেই পরিচিত। কর্তৃপক্ষ একটু নজর দিলে এটা দর্শনীয় জায়গাও হতে পারে। কিন্তু সবাই আশ্বাস দেন, কেউ সেটা করেন না।
No comments