শিশু সনুর ঘরে ফেরা
কেউ রাষ্ট্রনায়ক, কেউ নায়ক বা মহানায়ক। কিন্তু এমন একজন আছেন যিনি নায়ক-মহানায়ক কিছুই নন, তিনি মহান ত্রাতা। তাঁর সংগ্রামের কারণে দিল্লি থেকে অপহৃত হওয়া শিশু সনু গতকাল মা-বাবার কাছে ফিরতে পেরেছে। তিনি বরগুনার বেতাগী উপজেলার জামাল ইবনে মুসা। এ জন্য মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছেন, চাকরি হারিয়েছেন, দিল্লিতে গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ভারতের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র বজরঙ্গি ভাইজান-এর গল্পকেও হার মানায় মুসার মহিমা। এই নিষ্ঠুর সময়ে মুসা দেখিয়ে দিলেন, মানুষ হারতে পারে কিন্তু মানবিকতা হারে না। মানব পাচারকারীদের চক্করে পড়ে দিল্লির সনু ছয় বছর আগে এসে ঠেকে বেতাগী উপজেলার এক বাড়িতে। সেই বাড়ির কর্ত্রীর নির্যাতনে প্রায়ই পালিয়ে যেত সনু। আর ঢাকায় চাকরি করা মুসা গ্রামে গিয়ে এই ঘটনায় বিচলিত হন। পালিয়ে যাওয়া সনুকে একবার তিনি উদ্ধারও করেন। কিন্তু নির্যাতকের হাতে দেওয়ার বদলে তাকে রাখেন স্থানীয় সাংসদের জিম্মায়। এরপর মুসা নামেন আরও দীর্ঘ ও জটিল লড়াইয়ের ময়দানে।
অসহায় শিশুটিকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আইনি লড়াইয়ে নামেন। এ জন্য সনুর দখলদার হাসি বেগম মুসা, তাঁর পুত্র ও আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে মামলা দেন। মুসা দুই দফায় এক মাস ২৪ দিন জেলও খাটেন। তবু থামেননি। শেষমেশ আদালত জড়িত হন, জড়িত হয় ভারতীয় হাইকমিশন, দিল্লিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকেও স্বয়ং জড়িত করেন মুসা। খুঁজে বের করেন সনুর বাবা-মাকে। বাকি গল্প হৃদয়স্পর্শী মিলনের, বাকি গল্প এক মানবীয় জাগরণের। মুসা কে আসলে? ৫২ বছর বয়সী এক পিতা, এক সজ্জন বাংলাদেশি নাগরিক। অন্যরা যখন আহা-উহু করে দায় সেরেছে, তখন মুসা দায় নিয়েছেন। তাঁর অদম্য মহানুভবতায় একটি শিশু ঘরে ফিরেছে, অনেক মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসার তরঙ্গ বয়ে গেছে। একটি শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে নির্যাতিত মুসার জন্য কি কিছু করতে পারে না সরকার? আরও আরও সনুদের ঘরে ফেরানোর জন্য এ রকম উদ্যোগকে উৎসাহিত করাই তো আমাদের দায়িত্ব।
No comments