ন্যাটোয় আস্থা শেষ, নিজস্ব সামরিক বাহিনী গড়বে ইইউ
বাইরের হুমকি থেকে নিজেদের সুরক্ষার ব্যাপারে সামরিক জোট ন্যাটোর ওপর আর আস্থা রাখতে পারছে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সম্মিলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এবার নিজস্ব সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার কথা ভাবছে ২৭ রাষ্ট্রের এই জোট সংস্থাটি। এ ব্যাপারে ইইউর বিদেশনীতি প্রধান ফেডরিকা মঘরিনি ডেইলি এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘যে কোনো ব্যাপারে স্বাধীনভাবে ভূমিকা রাখার জন্য নিজস্ব বাহিনী গঠনের কথা ভাবা হচ্ছে। এছাড়া ক্ষমতার ভারসাম্যের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটা সম্মানজনক সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্যও বিশ্বস্ত ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’ ব্রেক্সিটের মাধ্যমে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ার আগে থেকেই এই প্রস্তাব আলোচনায় থাকলেও ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পর ইউনিয়নের জন্য এটি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন ফেডরিকা। তবে এ উদ্যোগের সমালোচনা করেছে ব্রিটেন। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মিশেল ফ্যালকন বলেন, ‘কোনো রাষ্ট্রই চাইবে না যে ব্রাসেলস থেকে তাদের বাহিনীর ওপর কোনো আদেশ চাপিয়ে দেয়া হোক।’ এ ব্যাপারে ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে ব্রিটেন।
সুতরাং তাদের যেন কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।’ ইইউর নিজস্ব বাহিনীর সম্পর্কে রয়টার্স বলেছে, নিরাপত্তার পাশাপাশি এই বাহিনী ইউরোপের সীমান্ত পাহারায় কাজ করবে। এর ফলে অবাধে শরণার্থীর প্রবেশ রোধ করা হবে। তবে এর ফলে জলসীমায় ব্রিটিশ জাহাজের অবাধ চলাচলে বিঘœ ঘটতে পারে।’ এদিকে ব্রাসেলসভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবিত ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজি’ সংক্রান্ত তথ্য থেকে জানা যায়, আগামী সপ্তাহে নতুন প্রস্তাবের বিস্তারিত খসড়া তুলে দেয়া হবে ইইউ নেতাদের হাতে। ইইউর বিদেশনীতি পরিকল্পনার নথিতে বলা হয়েছে, ‘ইউরোপিয়ান হিসেবে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিজেদেরই সুরক্ষা বলয় গড়ে তুলতে হবে। ডেইলি এক্সপ্রেস জানায়, খসড়া নথিতে আরও বলা আছে, ‘ন্যাটো বাইরের হুমকি তার সদস্যদের রক্ষা করার জন্য কাজ করে- যদিও এর অধিকাংশ সদস্যই ইউরোপিয়ান কিন্তু ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোকে সাংগঠনিকভাবে আরও আধুনিক অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণে সজ্জিত হতে হবে এবং যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত স্বাধীনভাবে কাজ করার সক্ষমতা অর্জন করাটাও অন্যতম উদ্দেশ্য।’ এছাড়া খসড়ায় আরও বলা আছে, ‘আমরা অভ্যন্তরীণভাবেও অস্তিত্ব সংকটে পড়ে গেছি। আমাদের ইউনিয়ন এখন হুমকির মুখে আছে। আমাদের পূর্বাঞ্চলে ইউরোপীয় নিরাপত্তা আদেশ ঠিকমতো পালন করা হচ্ছে না। আবার উত্তর ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটছে। ইউরোপও সহিংসতার ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়।’
অবশ্য ব্রেক্সিটের আগে ইউরোপিয়ান সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন নেই বলে প্রস্তাবটির বিরোধিতা করেছে ১০নং ডাউনিং স্ট্রিট। তবে এখন আর এ বিষয়ে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা নেই বলেও জানিয়েছে ডেইলি এক্সপ্রেস। অন্যদিকে ইউরোপীয় সংসদীয় কমিটির বিদেশবিষয়ক প্রধান এলমার ব্রুক বলেন, ‘ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা নীতিতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’ রোববার ইউরোপীয় সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তিনি আরও বলেন, ‘ইউরোপীয় কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন থেকে নিজস্ব বাহিনী গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে- এবার তা বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেয়ার সময় এসেছে।’ এদিকে রয়টার্স জানায়, ২০১৫ সালেই ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট জিন ক্লাউড জাঙ্কার সম্মিলিত সামরিক বাহিনী গঠনের জন্য ইইউভুক্ত রাষ্ট্রগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইউরোপে রাশিয়ার আধিপত্য বিস্তার রোধ করা এবং নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জোটের সামরিক বাহিনী গঠন করা উচিত। নিজস্ব বাহিনী গঠনের মাধ্যমে জোটের রাষ্ট্রগুলো নিজেদের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে পারবে এবং প্রতিবেশীদের নিরাপত্তা প্রদানেও সাহায্য করবে।’ কিন্তু পিউ জরিপে দেখা যায়, ইউরোপীয় নাগরিকরা অস্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা অর্জন করার বিপক্ষে এবং প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর ব্যাপারেও তাদের অনীহা। কিন্তু রাষ্ট্র ও সরকারগুলো প্রতিরক্ষার উন্নয়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
No comments