কে বেশি যোগ্য, হিলারি না বার্নি?
নিউইয়র্কে প্রাইমারি নির্বাচন সামনে রেখে দুই ডেমোক্রেটিক প্রার্থী
হিলারি ক্লিনটন ও বার্নি স্যান্ডার্স তুমুল বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন।
দুজনই হাতের মখমলের দস্তানা খুলে হাওয়ায় কথা চালাচালি করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে কে বেশি যোগ্য, তা নিয়ে চলছে
এই যুদ্ধ। কথাটা প্রথমে তুলেছিলেন হিলারি। বার্নি স্যান্ডার্স
অযোগ্য—আক্ষরিকভাবে এ কথা তিনি বলেননি। তবে পরোক্ষভাবে হলেও তাঁর যোগ্যতা
নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গত এক সপ্তাহে একাধিকবার আক্রমণের তির ছুড়েছেন।
প্রথমে নিউইয়র্কে, পরে ফিলাডেলফিয়ার জনসভায় হিলারি প্রশ্ন তোলেন,
স্যান্ডার্স নানা প্রস্তাব করেছেন বটে, কিন্তু তাঁর বেশির ভাগই বাস্তবসম্মত
নয়। নিউইয়র্কে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির পরবর্তী প্রাইমারি
নির্বাচন ১৯ এপ্রিল। এই নির্বাচন সামনে রেখে সেখানকার ডেইলি নিউজ পত্রিকায়
গত সপ্তাহে বার্নি একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তাঁর অর্থনৈতিক পরিকল্পনা
বিষয়ে বেশ কিছু কথা বলেন। এগুলোর জন্য হিলারির শিবির থেকে তাঁকে অস্বচ্ছ ও
অগভীর বলে সমালোচনা করা হয়েছে। হিলারি বলেন, এসব কথা বলার আগে বার্নি
‘হোমওয়ার্ক’ করেননি। বার্নির ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতি আনুগত্য নিয়েও
প্রশ্ন তোলেন হিলারি। তিনি বলেন, ভারমন্টের এই প্রবীণ সিনেটর
ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সিনেটে ভোটাভুটিতে অংশ নিলেও নিজেকে ‘স্বতন্ত্র’ ও
‘সমাজতন্ত্রী’ হিসেবে পরিচয় দিতেই ভালোবাসেন। জবাবে পাল্টা আঘাত হেনে
বার্নি প্রশ্ন করেন, তাঁকে অযোগ্য বলার আগে হিলারি নিজে প্রেসিডেন্ট হওয়ার
যোগ্যতা রাখেন কি না, ভাবা দরকার। তিনি বলেন, ওয়ালস্ট্রিট থেকে কোটি কোটি
ডলার চাঁদা নেওয়ার পর হিলারি নিজেকে আর যোগ্য ভাবতে পারেন না।
আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে বার্নির বিরোধিতা নিয়ে হিলারি বলেছেন,
বেপরোয়া গুলিবর্ষণে যেসব স্কুলছাত্র মারা গেছে, তাদের মা-বাবার কাছে
বার্নির ক্ষমা চাওয়া উচিত। পাল্টা অভিযোগ তুলে বার্নি বলেন, ইরাক যুদ্ধে
যে হাজার হাজার মানুষ মারা গেল, হিলারির উচিত হবে তাদের পরিবারের কাছে
ক্ষমা চাওয়া। তিনি দাবি করেন, ইরাক যুদ্ধ প্রস্তাবে সমর্থন অথবা পানামা
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে সমর্থনের কারণে হিলারি প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা
হারিয়েছেন। হিলারির যোগ্যতা নিয়ে বার্নির এই সমালোচনা হিলারির মিত্রদের
কাছে ভালো লাগেনি। নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাজিও ও মিসৌরির সিনেটর
ক্লেয়ার ম্যাককস্কাল কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ভারমন্টের এই স্বতন্ত্র
সিনেটর ‘সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছেন’। ক্লিনটনের সমর্থকেরা অবশ্য এ নিয়ে
সচেতন যে স্যান্ডার্সকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করলে তার উল্টো ফল হতে পারে।
হিলারি নিউইয়র্কে জনমত জরিপে বার্নির চেয়ে প্রায় ১০ পয়েন্টে এগিয়ে
থাকলেও জাতীয় পর্যায়ে তিনি পিছিয়ে। জাতীয় পর্যায়ে মাত্র ৪৬ শতাংশ
হিলারিকে সমর্থন করে। ৫০ শতাংশ সমর্থন করে না। মেয়েদের মধ্যে ৫৮ শতাংশ
হিলারিকে সমর্থন করে না। হিলারি জাতীয় পর্যায়ে বার্নির চেয়ে এখন পর্যন্ত
সামান্য এগিয়ে থাকলেও আফ্রিকান-আমেরিকান ও হিস্পানিকদের মধ্যে বার্নির
সমর্থন দ্রুত বাড়ছে। ফলে এই স্বঘোষিত ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’–এর প্রতি
ব্যক্তিগত আক্রমণ শুরু হলে তার নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে। এই আশঙ্কা
মাথায় রেখে হিলারি গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, বার্নি
যোগ্য নন, এ কথা তিনি মোটেই বলেননি। যেকোনো রিপাবলিকান প্রার্থীর জায়গায়
বার্নিকে সর্বদাই সমর্থন করবেন বলে তিনি জানান। ডেলিগেট ও সুপার ডেলিগেট
সংখ্যার হিসাবে হিলারি সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও বার্নি যে লড়াইয়ের
ময়দান থেকে সরে দাঁড়াবেন না, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তার প্রধান কারণ,
গত আট রাজ্যের প্রাইমারি নির্বাচনে সাতটিতে তিনি জিতেছেন। এর চেয়েও বড়
কথা, গত তিন মাসে হিলারির চেয়ে অনেক বেশি চাঁদা তুলতে সক্ষম হয়েছেন
বার্নি। যতক্ষণ তাঁর তহবিলে অর্থ আছে, ততক্ষণ রণে ভঙ্গ দেওয়ার কোনো চাপ
তাঁর ওপরে নেই। অনেকেই মানেন, সুপার ডেলিগেটের কারণে জুলাই মাসের পার্টি
কনভেনশনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে হিলারিরই মনোনীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ
কারণে বার্নি ডেমোক্রেটিক সুপার ডেলিগেটদের কাছে যুক্তি দেখানো শুরু
করেছেন। জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, একমাত্র তিনিই সব রিপাবলিকান প্রার্থীকে
সহজে পরাস্ত করতে সক্ষম। অতএব সুপার ডেলিগেটদের হিলারিকে নয়, তাঁকেই
সমর্থন জানানো উচিত হবে। এখন পর্যন্ত কোনো সুপার ডেলিগেট মত বদলাননি। তবে
অবস্থা বদলে যাবে, যদি বার্নি নিউইয়র্কে হিলারিকে হারিয়ে দিতে সক্ষম হন।
এমনটা ঘটলে বার্নি দলের কাছে শুধু বেশি পছন্দেরই নয় রিপাবলিকানদের ঠেকাতে
পারেন এমন প্রার্থী হিসেবেও শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারবেন।
মোট ডেলিগেট
হিলারি ক্লিনটন (১৭৪৯), বার্নি স্যান্ডার্স (১০৬১)
মনোনয়নের জন্য প্রয়োজন ২ হাজার ৩৮৩ ডেলিগেট
মোট ডেলিগেট
হিলারি ক্লিনটন (১৭৪৯), বার্নি স্যান্ডার্স (১০৬১)
মনোনয়নের জন্য প্রয়োজন ২ হাজার ৩৮৩ ডেলিগেট
No comments